নরসিংদী জেলার শিক্ষাব্যবস্থায় যেন এক ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে। একের পর এক নামকরা কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে এবার ধস নেমেছে। এতে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা।

এমনকি দেশের অন্যতম সেরা বেসরকারি কলেজ হিসেবে পরিচিত আব্দুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজের ফলাফলও আশানুরূপ নয়। পূর্বে এই কলেজটি জাতীয় পর্যায়ে সেরা ফলাফলের জন্য পরিচিতি থাকলেও এবার ভরাডুবি লক্ষ্য করা গেছে।

আরো পড়ুন:

এইচএসসির ফলাফল: পঞ্চগড়ে ৩ কলেজে পাস করেনি কেউ

এইচএসসির ফলাফল: টাঙ্গাইলের ৭ কলেজে শতভাগ ফেল

শুধু তাই নয়, মোছলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া কলেজে এ বছর শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল করেছে, যা এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। নরসিংদী অক্সফোর্ড কলেজে ৪২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিলেও মাত্র তিনজন পাস করতে সক্ষম হয়েছে।

অপরদিকে, উদয়ন কলেজে ১৩৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১২০ জনই অকৃতকার্য। নরসিংদী সরকারি মহিলা কলেজে ফেল করেছে ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী, যা সরকারি কলেজের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক একটি পরিসংখ্যান।

নরসিংদী সরকারি শহীদ আসাদ কলেজের মোট ৯৯০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২০৩ জন ফেল, নরসিংদী আইডিয়াল কলেজের ১৯১ জনের ১১৩ জন ফেল এবং পলাশের ইউরিয়া সার কারখানা কলেজে শতভাগ ফেল করেছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান নিয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

শিক্ষার্থীদের এই বিপর্যয়ের পেছনে শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতা, পাঠদানের মানহীনতা, পরীক্ষার প্রস্তুতির ঘাটতি ও প্রশাসনিক নজরদারির অভাবকে দায়ী করছেন অভিভাবকরা। কেউ কেউ দাবি করছেন, শিক্ষাব্যবস্থায় বড় সংস্কার প্রয়োজন।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, এটা শুধু ১ বছরের সমস্যা নয়, বছরের পর বছর ধরে তৈরি হওয়া দুর্বল ভিত্তির ফলাফল আমরা এবার স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যৎ আরো অন্ধকার হয়ে যাবে।

নরসিংদী সরকারি শহীদ আসাদ কলেজের শিক্ষার্থী রিমা আক্তার বলেন, “আমরা ঠিকমতো ক্লাসই পাইনি। স্যাররা অনেক সময় ক্লাসে আসতেন না, আর এলেও পড়াতেন না। বোঝা না গেলে পরে বললেও কেউ সাহায্য করতেন না।”

মো.

কামাল হোসেন নামে মোছলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া কলেজের এক শিক্ষার্থী বাবা জানান, বছরের পর বছর ধরে ছেলেমেয়েরা একটা দুর্বল শিক্ষাব্যবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। কলেজের নাম আছে, কিন্তু ভিতরে শিক্ষার পরিবেশ একেবারেই নেই। এভাবে তো হবে না।

শহীদ আসাদ কলেজের শিক্ষার্থী সাদিয়া রহমান বলেন, “আমরা নিজেদের দায় এড়াতে পারি না। অনেকেই নিয়মিত পড়াশোনা করিনি। অবশ্য সঠিক গাইডলাইনও পাইনি। শেষ সময়ে এসে স্যার-ম্যাডামদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।”

জহুরা খাতুন নামে নরসিংদী অক্সফোর্ড কলেজের এক অভিভাবক বলেন, “আমার মেয়ে দিনরাত পরিশ্রম করেছে। কিন্তু কলেজের সাপোর্ট ছিল না। প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস তো একেবারেই হয়নি। এসব দেখার কেউ নেই।”

শিক্ষাব্যবস্থার এই ধস ঠেকাতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি উঠছে সর্বস্তরে। স্থানীয় শিক্ষা প্রশাসন বলছে, ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় তদন্ত ও সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

নরসিংদী জেলা শিক্ষা অফিসার এএসএম আব্দুল খালেক বলেন, “যেসব প্রতিষ্ঠান একেবারেই অকৃতকার্য হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। ভালো ফলাফল করার জন্য শিক্ষার্থীদের মনোযোগ সহকারে যাতে পড়ানো হয়, সে ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাব।”

ঢাকা/হৃদয়/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এইচএসস ফল শ ক ষ ব যবস থ পর ক ষ র র ফল ফল কল জ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

এইচএসসিতে বৃত্তি পাচ্ছেন সাড়ে ১০ হাজার শিক্ষার্থী, দেখুন বোর্ডভিত্তিক তালিকা

২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে রাজস্ব খাতভুক্ত মেধা ও সাধারণ বৃত্তির বোর্ডভিত্তিক কোটা বণ্টনের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ৯টি শিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী মোট মেধাবৃত্তি পাবেন ১ হাজার ১২৫ জন শিক্ষার্থী। আর সাধারণ বৃত্তি পাবেন ৯ হাজার ৩৭৫ জন।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে ২০২৫ সালের ২৬ নভেম্বর প্রকাশিত এক অফিস আদেশে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, কুমিল্লা, সিলেট, বরিশাল, যশোর, চট্টগ্রাম ও দিনাজপুর বোর্ডের চেয়ারম্যানদের পাঠানো হয়েছে এ আদেশ। আদেশে বলা হয়েছে, মেধাবৃত্তির হার মাসিক ৮২৫ টাকা ও এককালীন বার্ষিক অনুদান ১ হাজার ৮০০ টাকা। সাধারণ বৃত্তির হার মাসিক ৩৭৫ টাকা ও এককালীন বার্ষিক অনুদান ৭৫০ টাকা।

আরও পড়ুনজাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আবেদন শুরু, পরীক্ষা আবেদন শেষে ১৪ দিনের মাথায়২২ নভেম্বর ২০২৫বোর্ডভিত্তিক প্রাপ্য মেধাবৃত্তির সংখ্যা-

ঢাকা বোর্ডে ৪৬৫,

ময়মনসিংহ বোর্ডে ৫০,

রাজশাহী বোর্ডে ১৭৯,

কুমিল্লা বোর্ডে ৪৯,

সিলেট বোর্ডে ২৮,

বরিশাল বোর্ডে ৩০,

যশোর বোর্ডে ১০৬,

চট্টগ্রাম বোর্ডে ১০৮ ও

দিনাজপুর বোর্ডে ১১০ জন।

আরও পড়ুনজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা, আবেদনের ১১ ধাপে আবেদন, নেগেটিভ নম্বরসহ দেখে নিন বিস্তারিত২২ নভেম্বর ২০২৫সাধারণ বৃত্তির সংখ্যা-

ঢাকা বোর্ডে ৩ হাজার ৩২,

ময়মনসিংহ বোর্ডে ৫৫৬,

রাজশাহী বোর্ডে ১ হাজার ২৫৫,

কুমিল্লা বোর্ডে ৭৪০,

সিলেট বোর্ডে ৫৬১,

বরিশাল বোর্ডে ৬০০,

যশোর বোর্ডে ৮৪০,

চট্টগ্রাম বোর্ডে ৮৩৯ ও

দিনাজপুর বোর্ডে ৯৫২ জন।

আরও পড়ুনচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ২২ নভেম্বর ২০২৫বৃত্তি পেতে জুড়ে দেওয়া হয়েছে কয়েকটি শর্ত। শর্তগুলো হলো-

বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের বরাদ্দ করা বৃত্তির অর্থ জিটুপি পদ্ধতিতে ইএফটিয়ের মাধ্যমে তাঁদের ব্যাংক হিসাবে পাঠাতে অনলাইন সুবিধাসম্পন্ন তফসিলভুক্ত যেকোনো ব্যাংকে হিসাব খুলে উচ্চ শ্রেণিতে ভর্তির ৭ দিনের মধ্যে ব্যাংক হিসাব নম্বরসহ অন্যান্য তথ্য আবশ্যিকভাবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জমা প্রদানের জন্য শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দিতে হবে।

আগামী ৪ ডিসেম্বরের মধ্যে বৃত্তির গেজেট প্রকাশ করে হার্ডকপি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকে পাঠাতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বরসহ প্রকাশিত গেজেটের তথ্য এক্সএল এবং পিডিএফ ফাইলে ই-মেইলে ([email protected]) পাঠাতে হবে।

আরও পড়ুনজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, ফি ১০০০২৩ নভেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এসএসসি ও এইচএসসিতে নম্বর বাড়ানোর সংস্কৃতি ফিরবে না: শিক্ষা উপদেষ্টা
  • এইচএসসিতে বৃত্তি পাচ্ছেন সাড়ে ১০ হাজার শিক্ষার্থী, দেখুন বোর্ডভিত্তিক তালিকা