কিছু রাজনৈতিক দল জাতীয় ঐকমত্যের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে একটি কাগজে সই করছে: নাহিদ ইসলাম
Published: 17th, October 2025 GMT
কিছু রাজনৈতিক দল জাতীয় ঐকমত্যের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে একটি কাগজে সই করছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর ইস্কাটনে এনসিপির শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে নাহিদ ইসলাম এই মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন নাহিদ ইসলাম। এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের সময় অনেকগুলো কমিশন হয়েছে। শ্রম কমিশন হয়েছে। কিন্তু এই কমিশন নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। স্বাস্থ্য কমিশন নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। মানুষের জীবনের সঙ্গে যে যে জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠান জড়িত, যে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান জড়িত, তার সংস্কার নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক ছয়টি সংস্কার কমিশন নিয়ে ঐকমত্য কমিশন গঠন হয়েছে।
সেখানেও গণতন্ত্রের জন্য সবার ভালো ইন্টেনশন (উদ্দেশ্য) দেখতে পাননি তাঁরা।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ফলে তাঁরা মনে করেন, বাংলাদেশের যে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের লড়াই শুরু করেছেন, এর পাশাপাশি তাঁদের যে অর্থনৈতিক রূপান্তরের লড়াই, যেটাকে তাঁরা বলছেন বৈষম্যবিরোধী সমাজব্যবস্থা, ইনসাফভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, সেই ব্যবস্থার জন্য তাঁরা লড়াই করবেন। ছাত্র-শ্রমিকসহ পেশাজীবী সব মানুষ একত্রিত হয়ে এই লড়াই করবেন।
বাংলাদেশের সব উন্নয়নের কেন্দ্রে মানবিক মর্যাদা থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন এনসিপির আহ্বায়ক। তিনি বলেন, তাঁরা মনে করেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে উন্নয়নের গালগল্প শোনানো হয়েছে, যেই প্রবৃদ্ধির গল্প গল্প শোনানো হয়েছে, সেই কাঠামো থেকে দেশকে বের করতে হবে। বাংলাদেশের সব উন্নয়নের কেন্দ্রে থাকতে হবে মানবিক মর্যাদা, একটি মর্যাদাপূর্ণ কর্মসংস্থান, শ্রমিকের ন্যায্য হিস্যা। এই মর্যাদাপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, মর্যাদাপূর্ণ কর্মসংস্থান ও একটি দায়-দরদের সমাজ প্রতিষ্ঠাই তাঁদের লক্ষ্য।
নাহিদ ইসলাম বলেন, জাতীয় শ্রমিক শক্তি আজ আত্মপ্রকাশ করছে। রাজপথে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে। অন্যদিকে, এই দিনে কিছু রাজনৈতিক দল জাতীয় ঐকমত্যের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে একটি কাগজে সই করছে।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘আমরা সব সময় জানি, রাজপথের শক্তি জয়ী হয়। ইনশা আল্লাহ, জাতীয় শ্রমিক শক্তিও জয়ী হবে। জাতীয় নাগরিক পার্টি শ্রমিকদের পক্ষে রাজনীতি করবে। শ্রমিকের অধিকার আদায়ের রাজনীতি করবে।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এখনো শ্রমিকেরা ন্যায্য মজুরির জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন। গার্মেন্টসে আগুন লাগছে। বস্তিতে আগুন লাগছে। কলকারখানায় আগুন লাগছে। শ্রমিক মারা গেলে দুই লাখ, তিন লাখ টাকায় জীবনের দাম নির্ধারণ করা হয়। শ্রমিকের জীবনের কোনো মূল্য হয় না। শ্রমিকের শ্রমকে কেবল অর্থনীতি শোষণের কেন্দ্রে ভাবলে চলবে না। বাংলাদেশে যে লুটপাট হয়েছে, যে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, সেখান থেকে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের দিকে যেতে হবে।
ফ্যাসিবাদী আমলে যেসব রাঘব ছিল, মাফিয়া অলিগার্ক ছিল, তাদের বিচারের আওতায় আনা হয়নি বলে মন্তব্য করেন এনসিপির আহ্বায়ক। তিনি বলেন, এই রাঘব, মাফিয়া অলিগার্কদের ব্যবসা এখনো রক্ষা করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এই সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে সেই মাফিয়াদের, যারা শ্রমিকদের এতকাল ধরে শোষণ করেছে। তাই তাঁরা সেই অলিগার্কি ব্যবস্থার পরিবর্তন চান।
অনুষ্ঠানে নতুন সংগঠনের নেতাদের নাম ঘোষণা করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, জাতীয় শ্রমিক শক্তির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মাজহারুল ইসলাম ফকির। সদস্যসচিব শ্রমিকনেতা রিয়াজ মোর্শেদ। মুখ্য সংগঠক শ্রমিক নেতা আরমান হোসেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম ব যবস থ ঐকমত য
এছাড়াও পড়ুন:
আইনি ভিত্তি ছাড়া জুলাই সনদ স্বাক্ষর করব না: নাহিদ
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “আমরা আইনি ভিত্তি এবং অর্ডারের ব্যাপারে নিশ্চয়তা ছাড়া যদি জুলাই সনদে স্বাক্ষর করি, সেটা মূল্যহীন হবে। পরের সরকার এলে কীসের পরিপ্রেক্ষিতে দেবে, কী টেক্সট হবে, সে নিশ্চয়তা আমরা চাই। সেই বিষয়টা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা জুলাই সনদের স্বাক্ষরের যেই অনুষ্ঠান বা যেই আয়োজনটা চলছে, সেখানে আমরা নিজেরা অংশীদার হব না।”
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর বাংলা মোটরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেছেন।
নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ সনদ স্বাক্ষরের আগেই প্রকাশ করতে হবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায় অনুসারে প্রধান উপদেষ্টা জারি করবেন। জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগেই সনদ বাস্তবায়নের যে আদেশটা হবে, সে আদেশের খসড়ায় আমাদের ঐকমত্য হতে হবে। তার ওপর ভিত্তি করে আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষরের বিষয়টা বিবেচনা করব।”
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, “আদেশের টেক্সট যেটা, তার খসড়া আমরা আগে দেখতে চাই। ড. ইউনূস তিনি যেহেতু জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শক্তিতে সরকার গঠন করেছেন, সেই জায়গা থেকে সেটা প্রেসিডেন্ট নয়, বরং গভর্মেন্ট হিসেবে ড. ইউনূস জারি করবেন।”
তিনি আরো বলেন, “জুলাই সনদের ৮৪টি সংস্কারের বিষয় একত্রে গণভোটে যাবে। গণভোটে নোট অব ডিসেন্টের আলাদা কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। গণভোটের প্রশ্ন কী হবে, তা আগেই চূড়ান্ত করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে সেটা দেখাতে হবে।”
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম এই নেতা বলেন, “গণভোট দ্বারা জনগণ সনদ অনুমোদন করলে অর্থাৎ সনদের পক্ষে ভোট দিলে পরের সংসদকে কনস্টিটিউট পাওয়ার ডেলিগেট করা হবে। সনদ অনুযায়ী সংবিধান সংস্কার করার জন্য এই দাবির সঙ্গে মোটামুটি সবাই এখন একমত। আমাদের কাছে কিন্তু এখনো স্পষ্ট হয়নি, এটার কী সংশোধনী হবে?”
ঢাকা/রায়হান/রফিক