জুলাই সনদ কি পর্বতের মূষিক প্রসব
Published: 18th, October 2025 GMT
জুলাই সনদে মোটামুটি সব দলই স্বাক্ষর করেছে। শুধু যেসব তরুণকে শান্ত করতে ইউনূস সরকার সংস্কার ও সনদ শুরু করেছিল, তাঁরাই স্বাক্ষর করেননি। তাঁরা এখন পর্যন্ত ‘অশান্তই’ রয়ে গেলেন। তবু স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পর মোটামুটি এখন সবারই জন্য স্বস্তি। নির্বাচনে যেতে এখন আর বাধা নেই।
গত এক বছরে জুলাই সনদ নিয়ে কম কসরত হয়নি। মনে হচ্ছিল, এই ‘ম্যাগনাকার্টা’ করতে না পারলে আমাদের নির্বাচন, সরকার, রাজনীতি সব অচল হয়ে যাবে।
আমরা যাঁরা সাধারণ মানুষ, তাদের জন্য সনদের এতসব ধারা–উপধারা, কে কোনটি মানল, কোনটি কখন বাদ গেল, আবার কখন কোনটি সংশোধন করা হলো—এসবের হদিস রাখা কঠিন হয়ে উঠেছিল। তবে সংবাদমাধ্যমগুলো সংক্ষেপে আমাদের সামনে যা তুলে ধরেছে , তার থেকে সনদের কার্যক্রমের তিনটি অধ্যায় আমাদের সবার নজরে এসেছে—
১.
২. সনদ কীভাবে গৃহীত হবে তা নিয়ে মত-মতান্তর।
৩. সনদে কে স্বাক্ষর দেবেন কিংবা কে স্বাক্ষর দেবেন না, তা নিয়ে টালবাহানা।
তিনটি পর্বই বেশ উপভোগ্য ছিল। আজ যিনি পক্ষে, কাল চলে গেলেন বিপক্ষে; আবার তাঁকে বুঝিয়ে নিমরাজি করানো হলো।
বিএনপি নেতারা বলেছিলেন, সনদ করবে জনগণের পার্লামেন্ট, এই সরকার সনদ করার কে? তাঁরা লাল কালিতে কিছু ‘ডিসেন্ট’ দিয়ে, কালো কালিতে স্বাক্ষর দিয়ে দিয়েছেন।
ইসলামি দলগুলো এত দিন বেঁকে বসেছিল—পিআর ছাড়া সনদ নয়, তাঁরাও স্বাক্ষর দিয়ে দিয়েছে। এখন শুধু এনসিপিকে নিয়ে বিপদ। তারা একদম কলমে তালা দিয়ে আছে। তাদের স্বাক্ষরের জন্য সনদে জায়গা রেখে দেওয়া হয়েছে, যেকোনো সময় তারা স্বাক্ষর দিয়ে দিতে পারে।
রাজনীতিবিদেরা সনদকে নিজেদের আয়ত্তে রাখতে গিয়ে সেটিকে বেশ রুগ্ণ করে ফেলেছেন। কমিশনের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব এসেছে, যার কোনটি কী বিরাট উপকারে আসবে তা বোঝা মুশকিল।
যেমন উচ্চ পরিষদ সংসদকে ভারী করা ছাড়া দেশের কোনো কাজে লাগবে বলে মনে হয় না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহানও একই কথা বলেছেন সিপিডির এক সভায়। এখানে একটি প্রশ্ন কি করা যায়—সংস্কার কমিশন সনদ লেখার আগে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করল না কেন?
আরও পড়ুনজুলাই সনদ বাস্তবায়ন আর গণভোটের রাজনীতি১৬ অক্টোবর ২০২৫অবশ্যই কিছু ভালো জিনিস রয়েছে সনদে। অন্তত এগুলোর শিরোনাম শুনতেও ভালো লাগে। যেমন নিরপেক্ষ সরকারের অধীন জাতীয় নির্বাচন; কিন্তু সনদের ‘নিরপেক্ষ’ সরকারের ‘রেসিপি’ কতটুকু নিরপেক্ষ হবে? ইংরেজিতে একটি কথা বলে, ‘ডেভিলস ইন ডিটেলস’। বাংলায় বলা যায় ‘শয়তান লুকিয়ে থাকে বিস্তারিতর মধ্যেই।’
১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছিলেন ওয়াল্টার মনডেল। তিনি তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিকে ব্যঙ্গ করে একটি হ্যামবার্গার কোম্পানির বিজ্ঞাপন থেকে ধার নিয়ে বলেছিলেন, ‘হয়্যার ইজ দ্য বিফ?’ শুধু তো রুটি, মাংস কোথায়?
এরপর প্রতিটি নির্বাচনে কথাটা কোনো না কোনোভাবে চলে আসে। আমাদের সনদের দেশে আবার সনদ হচ্ছে; কিন্তু সনদের ভেতর কী আছে? সত্যি কি কোনো ‘মাংস’ আছে? ‘হয়্যার ইজ দ্য বিফ?’
আমরা একটু বুঝতে চেষ্টা করব, সনদ মেনে কতটুকু নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার হবে!
জুলাই সনদে স্বাক্ষরের আগে কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য কমিশনে আলোচনা করেন রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ল ই সনদ আম দ র র জন ত সনদ র সরক র সনদ ক
এছাড়াও পড়ুন:
থাইল্যান্ড: পরাধীনতাকে জয় করা এক জাতির গল্প
বিশ্বের মানচিত্রে বিজয়ের সংজ্ঞা সব সময় যুদ্ধক্ষেত্র বা বারুদের গন্ধে সীমাবদ্ধ থাকে না। কখনো কখনো বিজয় মানে হলো হাজারো ঝড়ের মধ্যেও মাথা নত না করা। আজ ৫ ডিসেম্বর, আমাদের প্রতিবেশী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ডের ‘জাতীয় দিবস’। একই সঙ্গে দিনটি উদ্যাপিত হয় দেশটির ‘ফাদার্স ডে’ বা বাবা দিবস হিসেবেও। কারণ, ১৯২৭ সালের এই দিনেই জন্ম নিয়েছিলেন থাইল্যান্ডের আধুনিক ইতিহাসের রূপকার প্রয়াত রাজা ভূমিবল অতুল্যতেজ (নবম রামা)।
ডিসেম্বর মাসের বিজয়ের গল্পে থাইল্যান্ডের নাম উঠে আসে এক অনন্য কারণে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে থাইল্যান্ড (সাবেক নাম ‘শ্যামদেশ’) কখনোই ইউরোপীয় কোনো শক্তির উপনিবেশ ছিল না। যখন প্রতিবেশী মিয়ানমার, লাওস, কম্বোডিয়া বা ভিয়েতনাম ব্রিটিশ কিংবা ফরাসি শাসনের শৃঙ্খলে বন্দী ছিল, তখন থাইল্যান্ড তার কূটনৈতিক প্রজ্ঞা ও জাতীয় ঐক্যের জোরে স্বাধীন অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছিল। তাদের এই স্বাধীনতা রক্ষা করাটাই ছিল সবচেয়ে বড় বিজয়। আর আধুনিক যুগে সেই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে আগলে রাখার প্রতীক ছিলেন রাজা ভূমিবল।
থাইল্যান্ডের আধুনিক ইতিহাসের রূপকার রাজা ভূমিবল অতুল্যতেজ