ঘরে তেলাপোকার উপদ্রবে অতিষ্ঠ অনেকেই। ভয়ও পান কেউ কেউ। কিন্তু এই তেলাপোকা প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তেলাপোকার মতো স্থিতিস্থাপক পোকামাকড় বনাঞ্চলে পুষ্টির পুনর্ব্যবহারের জন্য অপরিহার্য। এসব পোকা বিভিন্ন প্রাণীর খাদ্যের উৎস হিসেবে কাজ করে এবং পচনে সহায়তা করে। এদের বিলুপ্তি ঘটলে খাদ্যশৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটবে। মাটির পুষ্টির বিকাশ ধীর হয়ে যাবে। পরিবেশগত স্বাস্থ্য নষ্ট হবে, যা আমাদের গ্রহের সূক্ষ্ম ভারসাম্যকে প্রভাবিত করবে।

অনেকেই তেলাপোকাবিহীন বিশ্বকে আরও পরিচ্ছন্ন ও শান্ত জায়গা হিসেবে কল্পনা করেন। রান্নাঘরে হঠাৎ দৌড়াদৌড়ি থাকবে না। কিচেন সিঙ্কের নিচে তাদের দেখা যাবে না। খাদ্য সংরক্ষণে কোনো উপদ্রব হবে না। এমন ধারণা আকর্ষণীয় মনে হলেও তখন কিন্তু বাস্তবতা অনেক বেশি জটিল হয়ে যাবে। তেলাপোকা লাখ লাখ বছর ধরে টিকে আছে। তারা এমন পরিবেশগত ভূমিকা পালন করে, যা অন্য প্রজাতি সহজে প্রতিস্থাপন করতে পারে না। আর তাই তেলাপোকা বিলুপ্ত হলে নীরবে আমাদের নির্ভরশীল প্রাকৃতিক ব্যবস্থা ব্যাহত হবে। প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেসের এক গবেষণায় দেখা যায়, তেলাপোকা অন্যান্য সহজীবী ব্যাকটেরিয়ার ওপর নির্ভর করে, যা বর্জ্য থেকে নাইট্রোজেনকে অত্যাবশ্যক পুষ্টিতে পুনর্ব্যবহার করে। তেলাপোকার অনেক প্রজাতি মানুষের বাড়ি থেকে দূরে বনের গভীরে বাস করে, যেখানে তারা পচনশীল কাঠ, পাতা ও উদ্ভিজ্জ পদার্থ খেয়ে বেঁচে থাকে। বিভিন্ন উপাদান ভেঙে ফেলার মাধ্যমে তেলাপোকা পচনের প্রক্রিয়াকে দ্রুত করে।

নাইট্রোজেন ও অন্যান্য অত্যাবশ্যক পুষ্টি উপাদানকে মাটিতে ফিরিয়ে দেয়। যদি তেলাপোকা অদৃশ্য হয়ে যায়, তবে বনের মেঝেতে আরও বেশি জৈব ধ্বংসাবশেষ জমা হবে। পুষ্টির চক্র ধীরগতিতে সম্পন্ন হবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তখন বনের গাছের বৃদ্ধি কমে যাবে।

তেলাপোকা টিকটিকি, ব্যাঙ, ছোট পাখি, ইঁদুরসহ অনেক প্রাণীর জন্য একটি নির্ভরযোগ্য খাদ্য উৎস। তেলাপোকা হারিয়ে গেলে খাদ্যশৃঙ্খলে তাৎক্ষণিকভাবে একটি শূন্যতা তৈরি করবে। যেসব শিকারি প্রাণী তেলাপোকার ওপর নির্ভর করে, তারা কম খাবারের জন্য প্রতিযোগিতা করতে বাধ্য হবে বা বিকল্প শিকারের দিকে ঝুঁকবে। এতে স্থানীয় বন্য প্রাণীর জনসংখ্যা অস্থিতিশীল হয়ে যাবে। পোকামাকড়কে তুচ্ছ মনে হতে পারে, কিন্তু বাস্তুতন্ত্রে তাদের স্থিতিশীল শক্তি স্থানান্তরের ওপর নির্ভর করে ভারসাম্য বজায় থাকে।

তেলাপোকার মধ্যে ব্লাট্টাব্যাকটেরিয়াম নামে একধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা বর্জ্য পণ্যকে অ্যামিনো অ্যাসিড ও ভিটামিনে রূপান্তরিত করে। এটি কঠোর, পুষ্টিহীন পরিবেশে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে তেলাপোকাকে। আর তাই তেলাপোকা এমন পরিবেশে থাকে, যেখানে খুব কম পোকামাকড় বেঁচে থাকতে পারে। এ ছাড়া উদ্ভিজ্জ বর্জ্য ও পশুর মল পচনে সহায়তা করে তেলাপোকা।

বিজ্ঞানীদের মতে, তেলাপোকাবিহীন পৃথিবী মানবসভ্যতার অবসান ঘটাবে না, তবে তেলাপোকারা হারিয়ে গেলে প্রাকৃতিক ব্যবস্থায় নীরবে শূন্যতা তৈরি হবে। বনাঞ্চলে পচন ধীর হবে, মাটি পুষ্টি হারাবে ও খাদ্যশৃঙ্খল কম স্থিতিশীল হবে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

টিএইচই ইন্টারডিসিপ্লিনারি সায়েন্স র‍্যাংকিংয়ে দেশ সেরা ঢাবি

টাইমস হায়ার এডুকেশন (টিএইচই) ইন্টারডিসিপ্লিনারি সায়েন্স র‍্যাংকিং ২০২৬-এ দেশ সেরা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। একইসঙ্গে গ্লোবাল র‍্যাংকিংয়ে ঢাবি ৫২তম অবস্থান নিশ্চিত করেছে।

বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) এ র‌্যাংকিং প্রকাশ করে টিএইচই। র‍্যাংকিংয়ে দেশের সেরা ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। 

আরো পড়ুন:

গবেষণায় অনুদান পেলেন নোবিপ্রবির ১৮ শিক্ষক

নোবিপ্রবির আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তা স্থায়ী বহিষ্কার 

দেশ সেরা ১০ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (বিশ্বে ৩০১–৩৫০),  ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (বিশ্বে ৩৫১–৪০০), মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (বিশ্বে ৪০১–৫০০), ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (বিশ্বে ৪০১–৫০০), যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বিশ্বে ৪০১–৫০০), নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বিশ্বে ৫০১–৬০০), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (বিশ্বে ৫০১–৬০০), খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (বিশ্বে ৬০১–৮০০) এবং শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বিশ্বে ৬০১–৮০০)।

বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ১০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, নানইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি, ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়, জর্জিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর, ওয়াখেনিনগেন ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড রিসার্চ (নেদারল্যান্ডস) ও পার্ডিউ ইউনিভার্সিটি।, ওয়েস্ট লাফায়েত রয়েছে।

দ্বিতীয়বারের মতো প্রকাশিত এই র‍্যাংকিং শুরু হয় ২০২৪ সালের নভেম্বরে। এটি চালু করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক খ্যাতনামা শিক্ষা সাময়িকী টাইমস হায়ার এডুকেশন, যা শিমিড সায়েন্স ফেলোস এর সহযোগিতায় পরিচালিত হয়।

এবারের র‍্যাংকিংয়ে বিশ্বের ৯৪টি দেশের ৯১১টি বিশ্ববিদ্যালয় অংশ নিয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় অংশগ্রহণে প্রায় ২২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

র‍্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ইনপুট (অর্থায়ন ও সুবিধা), প্রক্রিয়া (সফলতা, প্রশাসনিক সহায়তা) ও আউটপুট (গবেষণা প্রকাশনা, মান ও খ্যাতি)-এই তিনটি মূল দিক বিবেচনা করা হয়েছে। এছাড়া এবার ইন্টারডিসিপ্লিনারি পরিধি সম্প্রসারিত করা হয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা কার্যক্রমের বিস্তৃততা প্রতিফলিত করে।

ঢাকা/শফিউল্লাহ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ