নাতি-নাতনির সঙ্গে গল্প করছিলেন, ভূমিকম্পে হঠাৎ ঘরের দেয়াল পড়ে কাজমের মৃত্যু
Published: 23rd, November 2025 GMT
মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগেও কাজম আলী ভূঁইয়া (৭৫) লাঠিতে ভর দিয়ে এলাকায় ঘুরে এসেছিলেন। বাড়ি ফিরে তিনি মাটির ঘরের দরজার সামনে নাতি-নাতনির সঙ্গে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন। শুক্রবার সকালে ভূমিকম্প শুরু হলে নাতি-নাতনিরা দ্রুত সরে যেতে পারলেও তিনি বয়সের কারণে পারেননি। হঠাৎ ওই মাটির ঘরের একটি দেয়াল ধসে পড়ে তাঁর ওপর।
নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় মাটির ঘরের ধসে পড়া দেয়ালের চাপায় নিহত কাজম আলী ভূঁইয়ার ছেলে সজল ভূঁইয়া ঘটনার এমন বর্ণনা দিচ্ছিলেন। নিহত কাজম আলী ভূঁইয়া উপজেলার চরসিন্দুর ইউনিয়নের মালিতা গ্রামের পশ্চিমপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
আরও পড়ুনভূমিকম্পে পলাশে মাটির ঘরের দেয়ালের চাপায় বৃদ্ধ নিহত২১ নভেম্বর ২০২৫মালিতা গ্রামের ওই বাড়িতে গিয়ে জানা গেছে, ভূমিকম্পের সময় বাড়িতে ছিলেন সজল ভূঁইয়া ও তাঁর ভাবি মাসুমা বেগম। বাড়িতে একাধিক টিনশেড ঘর ও একটি মাটির ঘর আছে। সাধারণত এ মাটির ঘরটিতে কেউ থাকেন না, সব সময় ফাঁকা থাকে।
নিহত ব্যক্তির ছেলে সজল ভূঁইয়া বলেন, বাবা মাটির ঘরটির দরজার ভেতরে বসে নাতি-নাতনিদের খেলা দেখছিলেন। ভূমিকম্পের তীব্র ঝাঁকুনিতে আতঙ্কিত নাতি-নাতনিরা দ্রুত সরে যেতে পারলেও বাবা পারেননি। তিনি উঠে দাঁড়িয়েছিলেন, কিন্তু বের হতে পারেননি। এ সময় ঘরের একটি দেয়াল ধসে তাঁর ওপরে পড়ে। এতে মাথা থেকে পা পর্যন্ত শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত পান তিনি।
আরও পড়ুনভূমিকম্পে নিহত বাবা-ছেলের দাফন সম্পন্ন, গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া১৮ ঘণ্টা আগেপরে তাঁর বাবা কাজম আলী ভূঁইয়াকে উদ্ধার করা হয়। তাঁকে পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাঁকে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে নেওয়া পর জরুরি বিভাগের ফটকের সামনে দুপুর ১২টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। পরে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করলে তাঁরা লাশ নিয়ে বাড়ি ফেরেন।
আরও পড়ুনভূমিকম্পে মৃত্যু: নরসিংদীর নাসির ‘আমাকে ধর’ বলতে বলতে লুটিয়ে পড়েন১৯ ঘণ্টা আগেনিহত বৃদ্ধের বড় ছেলে মনির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, হাসপাতালে নেওয়ার সময়ও বাবা তাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন।
শুক্রবার বাদ মাগরিব নিজ বাড়ির মসজিদ মাঠে কাজম আলী ভূঁইয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নেন এলাকার ও আশপাশের শত শত মানুষ। পরে পাশের সামাজিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ট র ঘর র ভ ম কম প
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকার সাত কলেজ : বিশ্ববিদ্যালয় শুরুর আগেই তীব্র সেশনজটে শিক্ষার্থীরা
ঢাকা কলেজ চত্বরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে শিক্ষার্থীরা ভর্তি-সংক্রান্ত কাগজপত্র পূরণ করছিলেন। তাঁদের কেউ এসেছেন অভিভাবক নিয়ে, কেউ আবার একাই। গত বৃহস্পতিবার ঢাকা কলেজে দেখা মিলল এমন দৃশ্যের। ঢাকার সাত কলেজ নিয়ে প্রস্তাবিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির’ অধীনে চলমান ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তির অংশ হিসেবে এখানে ভর্তি কার্যক্রম চলছে।
কিন্তু সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা যখন ভর্তির কাজ করছেন, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চলতি শিক্ষাবর্ষের প্রায় পাঁচ মাস ক্লাস করে ফেলেছেন। এমনকি আসন্ন ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তির আবেদনও ১৯ নভেম্বর শেষ হয়েছে। ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে ২৮ নভেম্বর, আর পর্যায়ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হবে ২০ ডিসেম্বর। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থাও প্রায় একই।
অথচ ঢাকার সরকারি সাত কলেজে ভর্তির কাজ শেষ করে এখনো ক্লাস শুরু হয়নি। আজ রোববার ক্লাস শুরুর সম্ভাব্য একটি তারিখ ছিল। কিন্তু নতুন করে ভর্তিসংক্রান্ত কার্যক্রমের সময় ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এখন ক্লাস শুরুর সম্ভাব্য তারিখ ৩০ নভেম্বর।
ঢাকা কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শিক্ষার্থী ভর্তি ও পাঠদান আইনসিদ্ধ নয়। ‘কাঠামো কী হবে, আমরা কোন অবস্থানে থাকব—এগুলো এখনো পরিষ্কার নয়। তাই এসব নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত প্রথম বর্ষে ক্লাস নেওয়ার পক্ষে নই,’ বলেন তিনি।
এ রকম পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই শিক্ষার্থীরা পড়েছেন তীব্র সেশনজটে। তাঁরা জানিয়েছেন, দ্রুত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে অধ্যাদেশ প্রকাশ ও ক্লাস শুরু না হলে তাঁরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন।
এ পরিস্থিতির সমাধান সহজ—কর্তৃপক্ষ যদি শিক্ষক ও অধিকাংশ শিক্ষার্থীর প্রত্যাশিত মডেলে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করে। এ কে এম ইলিয়াস, অধ্যক্ষ, ঢাকা কলেজ ও অন্তর্বর্তী প্রশাসক, ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটিসংকট ও শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনাআগে থেকেই ঢাকার এই সাত সরকারি কলেজে সংকট বিরাজ করছে। ২০১৭ সালে যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়াই এগুলোকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। সরকারি এই কলেজগুলো হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজ। এর মধ্যে ইডেন ও তিতুমীরে শুধু স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়; বাকি পাঁচটি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর—তিন স্তরেই পাঠদান হয়। এগুলোতে শিক্ষার্থী দেড় লাখের মতো। চলতি শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তিযোগ্য আসন ১১ হাজারের মতো। ৭ কলেজে মোট শিক্ষক হাজারের বেশি।
আলাদা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। ২১ অক্টোবর ২০২৪ তোলা