ট্রাম্পের ৫ কোটি ডলারের পুরস্কার ঘোষণা কি মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে
Published: 27th, November 2025 GMT
ভেনেজুয়েলার সাবেক কৌঁসুলি মারিয়া (ছদ্মনাম) যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের হিউস্টনে বসবাস করেন। গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোকে ধরতে ঘোষিত পুরস্কারের অর্থের পরিমাণ বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার পর মারিয়া বলেছিলেন, তিনি ‘স্বীকৃতি’ বোধ করছেন। মনে হচ্ছে, তাঁর চোখে মাদুরো যেমন অপরাধী, অন্যরাও তাঁকে তেমনটাই ভাবেন।
পুরস্কারের অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি করে পাঁচ কোটি ডলার করা হয়েছে, যা মার্কিন সরকার ঘোষিত সর্বোচ্চ অঙ্কের পুরস্কারগুলোর একটি।
মারিয়া ২০১৭ সালে ভেনেজুয়েলা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান। মাদুরো সরকারের তোপের মুখে পড়ার আশঙ্কায় তিনি ছদ্মনামে কথা বলেছেন। মারিয়ার কাছে মাদুরোর বিরুদ্ধে এই পুরস্কার ঘোষণার অর্থ হলো মানবাধিকার লঙ্ঘন, নির্বিচার আটক, নির্যাতনসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত একটি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পথ তৈরি হওয়া।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদুরোকে ধরিয়ে দিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে পুরস্কারের কৌশল নিয়েছেন, তা হিতে বিপরীত হতে পারে। তা ভেনেজুয়েলাকে আরও বেশি করে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অ্যালেক্স ডাউনস বলেন, ‘ধারণাটা এমন যে খারাপ লোকটাকে সরাতে পারলেই সবকিছু ভালো হয়ে যাবে, কিন্তু বিষয়টা এত সহজ নয়।’
ডাউনস সতর্ক করে বলেন, কোনো সহজ সমাধান পাওয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায় শাসনব্যবস্থা বদলের পক্ষে জনসমর্থন থাকলেও তা বাস্তবে হয় না। কারণ, দেশের ভেতরে নানা সমস্যা লুকিয়ে থাকে। আর ভেনেজুয়েলার ক্ষেত্রে বড় বিপদটা হলো এর সব ব্যবস্থা ধসে পড়তে পারে।’
ট্রাম্প ও মাদুরোর মধ্যকার দীর্ঘদিনের শত্রুতার সর্বশেষ সংযোজন এটি।
ট্রাম্প প্রথমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা বদলের কথা বলছিলেন।
২০১৭ সালে ট্রাম্প প্রশাসন মাদুরোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তাদের অভিযোগ, মাদুরো ভেনেজুয়েলার গণতন্ত্রকে ক্ষুণ্ন করছেন। এরপর ২০১৯ সালে মাদুরোর পরিবর্তে দেশটির বিরোধী নেতা হুয়ান গুইদোকে বৈধ প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ট্রাম্প।
এ সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছিল, ট্রাম্প নাকি ব্যক্তিগতভাবে মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ‘সামরিক পদক্ষেপ’ নেওয়ার কথাও বিবেচনা করছিলেন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদের শেষ বছরে ট্রাম্প আরও চাপ বৃদ্ধি করেন। তিনি মাদুরোকে গ্রেপ্তারের জন্য ১ কোটি ৫০ লাখ ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করেন। পাশাপাশি ভেনেজুয়েলার প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির তথ্য চেয়েও বড় অঙ্কের পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলই মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পুরস্কার ঘোষণা করার নীতিকে সমর্থন দিয়ে আসছে।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ডেমোক্রেটিক দলের নেতা জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হন। বাইডেনের প্রশাসন মাদুরোর বিরুদ্ধে ট্রাম্প ঘোষিত পুরস্কারের অঙ্ক বাড়িয়ে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার করেন।
ট্রাম্প চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই পুরস্কারের অঙ্ক আরও বাড়িয়ে দেন।
গত আগস্টে এক বিবৃতিতে মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি বলেন, ‘বিচারের মুখোমুখি হওয়া থেকে মাদুরো বাঁচতে পারবেন না। তাঁর ঘৃণ্য অপরাধের জন্য তাঁকে জবাবদিহি করতেই হবে।’
যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় অঞ্চলে তাদের সামরিক উপস্থিতি আরও বাড়িয়েছে। ক্যারিবীয় সাগরে বেশ কিছু নৌকায় বোমা হামলা চালানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, ওই সব নৌকায় ভেনেজুয়েলা থেকে মাদক পাচার করা হচ্ছে।
দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা এখন গত কয়েক বছরের তুলনায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে।
‘শূন্য সাফল্য’
বিদেশি শত্রুকে ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করাটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন কিছু নয়, তবে বিদেশে সরকার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পুরস্কার ঘোষণা কার্যকরী হাতিয়ার কি না, তা নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অ্যালেক্স ডাউনস প্রশ্ন তুলেছেন।
ডাউনস ১৯৮৯ সালের ডিসেম্বরে পানামার সামরিক স্বৈরশাসক ম্যানুয়েল নরিয়েগার মাথার জন্য ১০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণার প্রসঙ্গটি সামনে টেনে আনেন। বলেন, পুরস্কার ঘোষণার পর শত শত তথ্য পেন্টাগনে এসে পৌঁছেছিল ঠিকই, তবে মার্কিন বাহিনী পানামায় অভিযান চালানোর আগপর্যন্ত তাঁকে আটক করা যায়নি।
২০০৩ সালে ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের জন্য ২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের পুরস্কার ঘোষণার কথাটিও উল্লেখ করেছেন ডাউনস। বলেছেন, সরকারের অবস্থা নড়বড়ে হয়ে যাওয়ায় সাদ্দাম আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলেন। তাঁকে শেষ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, তবে এটা যে পুরস্কার ঘোষণার কারণে সম্ভব হয়েছে, তা নয়, এটা সম্ভব হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়ে।
তবে ডাউনস স্বীকার করেছেন, সাদ্দামের পুত্রদের অবস্থান শনাক্তের ক্ষেত্রে ১ কোটি ৫০ ডলারের পুরস্কার ঘোষণার বিষয়টি ভূমিকা রেখেছিল, তবে সেটা ইরাকে মার্কিন আগ্রাসন শুরু হওয়ার অনেক পরে সম্ভব হয়েছে।
ডাউনস উল্লেখ করেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নেতাদের ক্ষমতাচ্যুতির পরই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি সেখানে সামরিক পদক্ষেপও চলছিল।
ডাউনস আরও প্রশ্ন তোলেন, শুধু পুরস্কার ঘোষণা করেই পুরোপুরি সাফল্য পাওয়া সম্ভব হয়েছে কি না।
ডাউনস স্পষ্টভাবে বলেন, ‘শূন্য সাফল্য। কোনো পুরস্কার ঘোষণার মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন ঘটানোর মতো কোনো নজির নেই। কিছু পুরস্কার তো ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরই ঘোষণা করা হয়েছে।’
ডাউনস আরও বলেন, ভেনেজুয়েলায় হঠাৎ সরকারের পতন ঘটলে ক্ষমতার শূন্যতা তৈরি হতে পারে, যা দেশটিকে আরও বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
ভেনেজুয়েলা ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক দমন–পীড়নের মুখোমুখি হয়েছে। ব্যাপক মূল্যস্ফীতি ও চরম দারিদ্র্যের মতো অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছে তারা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটি খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য মৌলিক সামগ্রীর ঘাটতিতে পড়েছে।
ডাউনস মনে করেন, ভেনেজুয়েলায় নতুন সরকার আসতে পারে ঠিকই, তবে তারা দেশের সব এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। তখন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সাহায্য নিতে হবে।
ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নিকোলাস গ্রসম্যানও সতর্ক করে বলেন, মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার মধ্য দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য অপ্রত্যাশিত জটিল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ষমত চ য ত কর য ক তর ষ ট র র প রস ক র র র জন য ড উনস সরক র আরও ব
এছাড়াও পড়ুন:
খেলাপি ঋণ বেড়ে সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকা, যেসব ব্যাংক বেশি দায়ী
দেশের ব্যাংকগুলো যত টাকা ঋণ দিয়েছে, তার এক-তৃতীয়াংশের বেশিই এখন খেলাপি। মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকা।
গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতের বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ ১৮ লাখ ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। যার ৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ এখন খেলাপি। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কম করে দেখানোর যে প্রবণতা ছিল, তা এখন হচ্ছে না। ফলে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র উঠে আসছে। কিছুদিন পর বরং খেলাপি ঋণের হার আরও বাড়বে।
২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার গঠিত হওয়ার সময় খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের হিসাব করে থাকে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে অর্থাৎ তিন মাস পরপর। গত জুন মাসে খেলাপি ঋণ ছিল ৬ লাখ ৮ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ৩৬ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে অনিয়ম, জালিয়াতি, প্রতারণা ও দুর্নীতি এত বেশি মাত্রায় হয়েছে যে খেলাপি ঋণের এ উচ্চ হার সেই চিত্রেরই প্রমাণ দিচ্ছে। এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, হল-মার্ক গ্রুপসহ আরও গ্রুপ এবং বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির কারণে খেলাপি ঋণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৪১ দশমিক ১ শতাংশ। ২০১১ সালে খেলাপি ঋণের হার ৬ দশমিক ১ শতাংশে নেমে এলেও বড় বড় কেলেঙ্কারির পরে তা বাড়তে থাকে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক মইনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শেখ হাসিনার টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর একটা অপপ্রয়াস ছিল। তথ্য বিকৃত করে লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা আমরা দেখেছি। সঠিকভাবে হিসাব করায় সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি হার প্রায় ৩৬ শতাংশ হয়েছে। এটা অবিশ্বাস্য হলেও অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিছুদিনের মধ্যে এ হার বরং ৪০ শতাংশও ছাড়িয়ে যেতে পারে।’
করণীয় জানতে চাইলে মইনুল ইসলাম বলেন, ‘বহু বছর ধরে আমি একটা কথা বলে আসছি, আবার বলছি, প্রত্যেক ব্যাংকের শীর্ষ ১০ খেলাপির জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনাল করতে হবে। নইলে এ থেকে আমরা মুক্তি পাব না।’
বৃদ্ধির পেছনে অন্য যে কারণআন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ও হার নির্ধারণে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকাররা বলছেন, এ কারণেও খেলাপি ঋণের পরিমাণ ও হার বেড়েছে। খেলাপি ঋণ নীতিমালা অনুযায়ী, ঋণের কিস্তি পরিশোধের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরদিন থেকে সেই ঋণ বকেয়া হিসেবে বিবেচিত হবে। গত এপ্রিলের আগপর্যন্ত কিস্তি পরিশোধের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯ মাস পর্যন্ত খেলাপি হিসেবে গণ্য করা হতো না। অর্থাৎ ৯ মাস শেষে গিয়ে খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হতো। এখন বকেয়া হওয়ার তিন মাস পরেই খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বাড়ছে প্রভিশন ঘাটতিওখেলাপি ঋণ বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রভিশন ঘাটতিও ব্যাপক বাড়ছে। খেলাপি ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তাব্যবস্থা হিসেবে ব্যাংক তাদের আয় থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সঞ্চিতি হিসেবে রাখে। কোনো কারণে ঋণ আদায় না হলেও গ্রাহকদের আমানতকে সুরক্ষা দেওয়াই হচ্ছে এর অন্যতম কারণ। প্রভিশন ঘাটতি হচ্ছে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন রাখতে না পারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ২৩১ কোটি টাকা। তিন মাস আগে যা ছিল ৩ লাখ ১৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ২৪ হাজার ৫১১ কোটি টাকা।
যেসব ব্যাংক বেশি দায়ীকম-বেশি সব ব্যাংকেই খেলাপি গ্রাহক আছে। তবে বিদেশি ব্যাংকে কম ও রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকে বেশি। জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংকে খেলাপির পরিমাণ তুলনামূলক বেশি। তবে মোট খেলাপি বৃদ্ধিতে একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকের দায় কম নয়। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক একীভূত হতে যাচ্ছে। এ পাঁচ ব্যাংকের প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে দেড় লাখ কোটি টাকা খেলাপি।
এক্সিম ব্যাংক ছাড়া বাকি চারটিই ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে। তারা এসব ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ টাকা তুলে নিয়েছে, যা এখন খেলাপি।
রাষ্ট্রমালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, দুই লাখ থেকে চার লাখ কোটি, চার লাখ থেকে ছয় লাখ কোটি আর এখন সাড়ে ছয় লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে খেলাপি ঋণ। ব্যাংকগুলো বছরের পর বছর খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশের পরিবর্তে বরং গোপন করেছে এবং তথ্য-উপাত্ত জালিয়াতি করে দেখিয়েছে মুনাফা।
সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, বিষয়টি আর কিছুই নয়, আগের সরকারের আমলের অনিয়ম-দুর্নীতির ফল। অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর বাংলাদেশ ব্যাংক বলে দিয়েছে, খেলাপি ঋণের হিসাব হবে স্বচ্ছ এবং তথ্য-উপাত্তের জালিয়াতি আর করা যাবে না। খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়লেও সত্য তথ্য উঠে আসছে—এটাই হচ্ছে ইতিবাচক দিক।