বাংলাদেশ ব্যাংক আর বিএসইসির শীর্ষ ব্যক্তিরাও ব্যাংকের এমডি হতে পারবেন
Published: 27th, November 2025 GMT
বাংলাদেশ ব্যাংকসহ ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও এখন থেকে যেকোনো ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হতে পারবেন।
এ জন্য তাঁদের নিয়ন্ত্রক সংস্থায় ২৫ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আর হতে হবে প্রথম শ্রেণি বা সমমানের কর্মকর্তা এবং জাতীয় বেতন কাঠামোর দ্বিতীয় গ্রেডভুক্ত। ব্যাংকের শীর্ষ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে এই প্রথম ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের জন্য সুযোগ তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংকের এমডি ও সিইও নিয়োগসংক্রান্ত নীতিমালায় নতুন এই বিধান যুক্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল বুধবার একটি আদেশ জারি করেছে। এর ফলে ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক; আর্থিক খাতের মধ্যে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ব্যাংকের এমডি ও সিইও হতে পারবেন।
ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর বর্তমান শীর্ষ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সাবেকরাও ব্যাংকের এমডি ও সিইও হতে পারবেন বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান। তাঁরা বলেন, আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ পদ থেকে অবসরের বয়সসীমা ৫৯ বছর। আর ব্যাংকের এমডি বা সিইওর বয়সসীমা ৬৫ বছর পর্যন্ত। সেই হিসাবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ পদ থেকে অবসরে যাওয়া শীর্ষ কর্মকর্তারা পাঁচ বছর পর্যন্ত ব্যাংকের এমডি ও সিইও হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন। তবে নিয়োগ হবে নির্ধারিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।
নতুন বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসিতে প্রথম শ্রেণির সমমানের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করে যাঁরা ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, তাঁরা ব্যাংকের এমডি ও সিইও হওয়ার সুযোগ পাবেন। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্বাহী পরিচালকের (ইডি) নিচের কোনো কর্মকর্তা এই সুযোগ পাবেন না। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির নির্বাহী পরিচালকের পদই কেবল জাতীয় বেতন কাঠামোর দ্বিতীয় গ্রেডভুক্ত।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের শীর্ষ পদের দায়িত্ব ভিন্ন ভিন্ন, চ্যালেঞ্জও ভিন্ন ভিন্ন। তাই আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থায় কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকলেও নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, এমডি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি)।এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘ব্যাংক খাতের শীর্ষ পদে অভিজ্ঞ ও যোগ্য লোকের ঘাটতি রয়েছে। সে জন্য ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থায় যাঁরা দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে এ ধরনের বিধান করা হয়েছে। আমরা মনে করি, ব্যাংকসহ আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থায় এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা ব্যাংকের এমডি ও সিইও হওয়ার যোগ্য। এত দিন এই সুযোগ ছিল না, এখন সেটি তৈরি হবে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে যাঁরা এসব পদে যেতে আগ্রহী হবেন, তাঁদের যথাযথ প্রক্রিয়া ও শর্তপূরণ সাপেক্ষেই সেখানে যেতে হবে।’
এদিকে ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নতুন বিধানের ফলে স্বার্থের সংঘাত দেখা দিতে পারে। এমনকি ব্যাংকের শীর্ষ পদে নিয়োগ পেতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়োগকারীদের একধরনের যোগসাজশ তৈরি হতে পারে। আবার একাধিক ব্যাংকার বলছেন, এই বিধানের ফলে ব্যাংকের এমডি ও সিইও নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বার্থের সংঘাত তৈরি হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, ধরা যাক কোনো একটি ব্যাংকের এমডি পদে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন প্রার্থী রয়েছেন, আর রয়েছেন বেসরকারি ব্যাংকের একাধিক প্রার্থী। সবাই যোগ্য ও অভিজ্ঞ। চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক যখন এই প্যানেল থেকে নিয়োগ দিতে যাবে, তখন সহকর্মীর প্রতি তাঁদের কিছুটা হলেও সহানুভূতি বেশি থাকবে। আবার ব্যাংকগুলোর পর্ষদও এমডি ও সিইও নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তাদের বেশি প্রাধান্য দেবে। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে সুযোগ–সুবিধা পাওয়া ও সংস্থাটির সঙ্গে লিয়াজোঁর ক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠানের সাবেক কর্মকর্তারা অগ্রাধিকার পেতে পারেন।
এ নিয়ে বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) এমডি ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘নতুন বিধানের ফলে এমডি ও সিইও হওয়ার অভিজ্ঞ ব্যক্তির তালিকা বা পুলটি আরও বেশি সমৃদ্ধ ও বিস্তৃত হবে। কারণ, আমাদের ব্যাংক খাতে শীর্ষ পদে অভিজ্ঞ লোকের ঘাটতি রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে স্বার্থের কোনো সংঘাত ঘটবে কি না, সেটি গভীরভাবে বিচার–বিশ্লেষণ দরকার। আবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের শীর্ষ পদের দায়িত্ব ভিন্ন ভিন্ন, চ্যালেঞ্জও ভিন্ন ভিন্ন। তাই আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার অভিজ্ঞতা থাকলেও নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।’
ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অতীতেও বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার বাণিজ্যিক ব্যাংকের এমডি হওয়ার নজির রয়েছে। তবে এত দিন এ ধরনের বিধান ছিল না। এখন বিধান করা হয়েছে।
এর আগে ২০২৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকের এমডি বা সিইও কারা হতে পারবেন, সেই বিষয়ে পরিপত্র জারি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই পরিপত্রে ব্যাংক-কোম্পানির এমডি বা সিইও পদে নিয়োগ এবং দায়দায়িত্ব–সম্পর্কিত বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।
সেই পরিপত্রের ২(গ) (১০) নম্বর অনুচ্ছেদে সিইও পদে নিয়োগের শর্তগুলো উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ব্যাংকিং পেশায় সক্রিয় কর্মকর্তা হিসেবে কমপক্ষে ২০ বছরের অভিজ্ঞতাসহ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ঠিক আগের পদে কমপক্ষে ২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। গতকালের পরিপত্রে সেই অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপন করে নতুন অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয়েছে।
ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়োগের সুযোগ তৈরির পাশাপাশি নতুন অনুচ্ছেদে আরও বলা হয়েছে, ব্যাংকের এমডি ও সিইও নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংকিং পেশায় ২০ বছরের সক্রিয় অভিজ্ঞতার পাশাপাশি উপব্যবস্থাপনা পরিচালক বা অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে একক বা উভয়ভাবে ৩ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত দ র ক র শ র ষ পদ কর মকর ত র র কর মকর ত অন চ ছ দ ক র এমড ব এসইস প রব ন বলছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
নেগেটিভ ইক্যুইটি ও লস প্রভিশনিংয়ের সময় পাচ্ছে আরো ৮ প্রতিষ্ঠান
পুঁজিবাজারের মধ্যস্থতাকারী আরো ৮ প্রতিষ্ঠানের নেগেটিভ ইক্যুইটি ও আনরিয়েলাইজড লসের প্রভিশন সংরক্ষণ ও সমন্বয়ের জন্য শর্তসাপেক্ষে সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এই তালিকায় স্টকব্রোকার, ডিলার ও মার্চেন্ট ব্যাংকসহ একাধিক বাজার মধ্যস্থতাকারী রয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৮৫তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আরো পড়ুন:
ডিএসইতে সূচকের সামান্য পতন, সিএসইতে বড় উত্থান
পুঁজিবাজারে বড় উত্থান, লেনদেনে বেড়েছে গতি
প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- সিটি ব্রোকারেজ লিমিটেড, ওয়ান সিকিউরিটিজ লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক সিকিউরিটিজ, বিডি সানলাইফ সিকিউরিটিজ লিমিটেড, আইএফআইসি সিকিউরিটিজ, এপেক্স ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড, এবাসি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং সোনালী ইনভেস্টমেন্ট পিএলসি।
বিএসইসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আটটি প্রতিষ্ঠানের নেগেটিভ ইক্যুইটি ও আনরিয়েলাইজড লসের প্রভিশন সংরক্ষণ ও সমন্বয়সংক্রান্ত অ্যাকশন প্ল্যান বিবেচনা করে শর্তসাপেক্ষে সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গত ১৪ নভেম্বর ৯৮৪তম কমিশন সভায় ২৮ প্রতিষ্ঠানকে নেতিবাচক ইক্যুইটি ও অবাস্তব লোকসানের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ ও সমন্বয়ের জন্য শর্তসাপেক্ষে সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।
ঢাকা/এনটি/বকুল