সকালে সূর্যের আলো পড়তেই ঝলমল করত হ্রদের পানি। ছিল দৃষ্টিনন্দন ঘাট। সেই সঙ্গে হ্রদে ঘুরে বেড়ানো যেত নৌকা নিয়ে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ভিড় করতেন সেখানে। গল্পে-আড্ডায় খুঁজতেন প্রশান্তি। তবে এখন আর সেই দিন নেই। দীর্ঘদিনের অবহেলায় হ্রদটি নাব্যতা হারিয়েছে। প্রতিনিয়ত ময়লা–আবর্জনা ফেলায় পরিণত হয়েছে ভাগাড়ে। এ নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
চুয়েটের মূল ফটক পেরিয়ে ডান পাশে কিছু দূর গেলেই দেখা মিলবে হ্রদটির। সরেজমিন দেখা যায়, হ্রদের বিভিন্ন স্থানে জমেছে ময়লার স্তূপ। ঘোলাটে পানির ওপরে ময়লার স্তর, উড়ছে মশার ঝাঁক। সেই সঙ্গে দুর্গন্ধ তো রয়েছেই। এ কারণে মানুষজনের উপস্থিতিও দেখা যায়নি।
গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানের পর নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নিলে হ্রদটির সংস্কারের দাবি তোলেন শিক্ষার্থীরা। এরপর এটি সংস্কারের উদ্যোগও নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। তবে তা বাস্তবায়িত হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, হ্রদ সংস্কারের জন্য আলাদা কোনো প্রকল্প নেই। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত বছর জুনে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। আগামী বছর জুনে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। ব্যয় ধরা হয় ৮৮ লাখ টাকা। নির্মাণকাজটি করছে ঠিকাদার মোহাম্মদ রোকন উদ্দিনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মেসার্স আইএস ট্রেডিং ও জেজে ট্রেডার্স। এ পর্যন্ত প্রকল্পের ২০ ভাগ বাস্তবায়ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
দীর্ঘদিন ধরে অযত্ন-অবহেলায় হ্রদটি পড়ে থাকায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন উপায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দৃষ্টিনন্দন হ্রদটির স্মৃতিচারণা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী সাঈদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৯ সালে সুবর্ণজয়ন্তী ও সমাবর্তনের অনুষ্ঠান উপলক্ষে লেকের সংস্কারসহ আশপাশের এলাকা দৃষ্টিনন্দন করে তোলা হয়েছিল। আমরা লেকের পাশে বসে আড্ডা দিতাম, সময় কাটাতাম। এমনকি নৌকা নিয়ে লেকের এক পার থেকে আরেক পারে যেতাম। হ্রদের বিপরীত পাশে একটি পদ্মপুকুরও ছিল। তবে এখন আর সেই দিন নেই।’
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হ্রদের সৌন্দর্যবর্ধনের পর থেকে আর কোনো ধরনের সংস্কার বা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হয়নি। এ জন্য আবর্জনা পড়ে ধীরে ধীরে হ্রদটি নষ্ট হয়ে গেছে।
হ্রদের চিত্র ছিল এ রকম। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তোলা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রকল প র
এছাড়াও পড়ুন:
গিনি-বিসাউয়ে ক্ষমতা দখল করল সেনাবাহিনী, প্রেসিডেন্ট গ্রেপ্তার
গিনি-বিসাউয়ের একদল সেনা কর্মকর্তা দেশটির ‘সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ’ নিজেদের হাতে নেওয়ার দাবি করেছেন। এর এক দিন আগে দেশটির প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দুই শীর্ষ প্রার্থীই নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করেছিলেন।
এই কর্মকর্তারা নিজেদের ‘হাই মিলিটারি কমান্ড ফর দ্য রিস্টোরেশন অব অর্ডার’ নামে পরিচয় দিয়েছেন। গতকাল বুধবার টেলিভিশনে দেওয়া এক বিবৃতিতে তাঁরা জানান, দেশের নির্বাচনপ্রক্রিয়া “পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত” তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
সেনাবাহিনীর যে কর্মকর্তা অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সেই ডেনিস এন’কানহা প্রেসিডেন্ট গার্ডের প্রধান ছিলেন। যাঁর দায়িত্ব ছিল প্রেসিডেন্টকে রক্ষা করা, তিনিই প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তার করেছেন।নিকোলাস হক, আল-জাজিরার সংবাদদাতাএ ছাড়া সেনা কর্মকর্তারা দেশের সব স্থল, আকাশ ও জলসীমা বন্ধ ঘোষণা করেন এবং রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করেন।
এই ঘোষণার আগে রাজধানী বিসাউয়ে নির্বাচন কমিশনের দপ্তর, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে টানা গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়।
সেনা কর্মকর্তারা দেশের সব স্থল, আকাশ ও জলসীমা বন্ধ ঘোষণা করেন এবং রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করেন। এর আগে রাজধানী বিসাউয়ে নির্বাচন কমিশনের দপ্তর, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে টানা গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়।গত রোববার পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল। নির্বাচনে মুখোমুখি ছিলেন প্রেসিডেন্ট উমারো সিসোকো এমবালো ও তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ফার্নান্দো দিয়াস।
‘আমাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে’, ফরাসি গণমাধ্যম ফ্রান্স২৪-কে ফোনে বলেন এমবালো। তিনি জানান, এখন তিনি ‘সেনাবাহিনীর প্রধান দপ্তরে’ আছেন।
গতকাল প্রতিবেশী সেনেগাল থেকে আল-জাজিরার নিকোলাস হক জানান, প্রেসিডেন্ট এমবালোকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রধান বিরোধী দল পিএআইজিসির নেতা ডোমিঙ্গোস সিমোয়েস পেরেইরাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান হক। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, সামরিক বাহিনী ইন্টারনেট বন্ধের চেষ্টা করছে। দেশে কারফিউ চলছে।’
আমাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে।উমারো সিসোকো এমবালো, গিনি-বিসাউয়ের প্রেসিডেন্টহক জানান, সেনাবাহিনীর যে কর্মকর্তা অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সেই ডেনিস এন’কানহা প্রেসিডেন্ট গার্ডের প্রধান ছিলেন। যাঁর দায়িত্ব ছিল প্রেসিডেন্টকে রক্ষা করা, তিনিই প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তার করেছেন।’
প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছে গোলাগুলির ঘটনার পর গাড়িতে তল্লাশি করছেন সেনাবাহিনীর সদস্য