কুষ্টিয়ায় সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে অবৈধভাবে গড়ে উঠছে ইটভাটা। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধ ভাটা চালিয়ে যাচ্ছেন মালিকরা। শুধু তাই নয়, কৃষিজমিতে গড়ে ওঠা ইটভাটাগুলোতে প্রকাশ্যে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, যা স্থানীয় জনজীবন ও কৃষির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলার ছয় উপজেলায় ইটভাটার সংখ্যা ২১৩টি। এর মধ্যে বৈধ ছাড়পত্র নিয়ে চালানো হচ্ছে মাত্র ১৭টি। বাকী ১৯৬টি চলছে ছাড়পত্র ও লাইসেন্সবিহীন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী বৈধ ইটভাটর মধ্যে ভেড়ামারা উপজেলায় ৩টি, দৌলতপুরে ১টি, কুমারখালী উপজেলায় ৯টি এবং খোকসা উপজেলায় ৪টি ইটভাটা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২টি অটো ব্রিকস এবং বাকী ১৫টি জিগ-জ্যাগ। তবে কুষ্টিয়া সদর এবং মিরপুর উপজেলায় নেই কোনো বৈধ ইটভাটা। অবৈধ ১৯৬টি ইটভাটার মধ্যে ১টি অটো, ৪২টি জিগ-জ্যাগ, ২৯টি ড্রাম চিমনি এবং ১২৪টি পাকা ফিক্সড চিমনি। এই ১৯৬টি ইটভাটার মধ্যে ২১টি ইটভাটার মালিক হাইকোর্টে রিট করার কারণে রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তর ওই সব ইটভাটার বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে না বলে কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তর জানিয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি,সরকারি আইনে কৃষি নষ্ট করে ইটভাটা স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু তা সত্ত্বেও কমপক্ষে প্রতিটি ইটভাটার জন্য তিন-চার একর কৃষিজমি নষ্ট করে ইটভাটা স্থাপন করেছে প্রভাবশালীরা। প্রতি বছরের মতো এবারো চলতি মৌসুমের শুরুতেই কৃষিজমি ও নদীর পলি মাটি কেটে ইটভাটাগুলোতে প্রস্তুত করা হচ্ছে নতুন ইট। এতে জেলায় কৃষিজমি হ্রাস ও উদ্বেগজনকভাবে খাদ্যশস্য উৎপাদন কমছে। ভাটার লাইসেন্স পেতে প্রস্তাবিত আবেদন পত্রের সঙ্গে ইট তৈরিতে মাটির উৎস উল্লেখ করে জেলা প্রশাসকের কাছে হফলনামা দাখিলের বাধ্যতামূলক শর্ত থাকলেও ভাটা মালিকদের অধিকাংশই তা মানছে না।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন বৈধ ইটভাটামালিক বলেন, ইটভাটা মালিক সমিতির শক্তিশালী সিন্ডিকেটের প্রভাব, অর্থবিত্ত ও তদবিরে পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা অবৈধ ভাটা উচ্ছেদে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না। এছাড়া কতিপয় ভাটা মালিক উচ্চ আদালতের দারস্থ হয়ে সৃষ্টি করেছে আইনি প্রতিবন্ধকতা। প্রতি বছর কিছু সংখ্যক ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হলেও পরবর্তী সময়ে অদৃশ্য কারণে তা আর আগায় না বেশি দূর।
পরিবেশ বিষয়ক গবেষক গৌতম কুমার রায় বলেন, “দেশের ১০ হাজার ইটভাটার মধ্যে ৪ হাজার অবৈধ। প্রত্যেক ভাটায় কমবেশি ৯৫ শতাংশ কাঠ পোড়ানো হয়। তাতে আমাদের দেশে বছরে ইটভাটায় ২৫০ লাখ মেট্রিক টন কাঠ পোড়ানো হয়। মাটির উপরিভাগে (টপ সোয়েল) বৃষ্টি, বন্যার পানি, গাছপালা পঁচার কারণে উর্বরা শক্তি থাকে। সেই সাথে পরিবেশবান্ধব অনুজীব থাকে। মাটি পোড়ানোর কারণে টপ সোয়েল টোটালি ধ্বংস করে ফেলছে। ফলে উর্বরাশক্তি হারাচ্ছে। এছাড়া মাটি কাটার ফলে ওই জমি কৃষি কাজ কিংবা জলাশয় কোনো কাজেই আসছে না। পাশাপাশি নির্মল বায়ু দূষিত হচ্ছে। ধোঁয়ার সাথে ক্ষার ছড়াচ্ছে। মানুষের নিঃশ্বাসে ভেতরে ঢুকে ক্ষতি করছে। গাছের বেঁচে থাকার শক্তি নষ্ট হচ্ছে।
কুষ্টিয়া ইটভাটা মালিক সমিতি একাংশের সাধারণ সম্পাদক শাহীন আলী বলেন, “আমাদের নিয়ন্ত্রণে ৭৩ ইটভাটা রয়েছে। ৮/৯টা বাদে সবাই কয়লা ব্যবহার করেন।”
পরিবেশের ছাড়পত্র আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, “বাংলাদেশের কারো পরিবেশের ছাড়পত্র নেই। যদি তাই হয় তাহলে সবাই অবৈধ। আমরা নিয়মিত সরকারকে রাজস্ব দিচ্ছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমল থেকেই বন্ধ রয়েছে।”
জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপপরিচালক মো.
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “পর্যায়ক্রমে সকল ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেয়া হবে।”
ঢাকা/কাঞ্চন কুমার/শাহেদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ধ ইটভ ট ইটভ ট র ম ছ ড়পত র উপজ ল য়
এছাড়াও পড়ুন:
বৈধ ইটভাটা ১৭টি আর অবৈধ ১৯৬টি
কুষ্টিয়ায় সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে অবৈধভাবে গড়ে উঠছে ইটভাটা। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধ ভাটা চালিয়ে যাচ্ছেন মালিকরা। শুধু তাই নয়, কৃষিজমিতে গড়ে ওঠা ইটভাটাগুলোতে প্রকাশ্যে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, যা স্থানীয় জনজীবন ও কৃষির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলার ছয় উপজেলায় ইটভাটার সংখ্যা ২১৩টি। এর মধ্যে বৈধ ছাড়পত্র নিয়ে চালানো হচ্ছে মাত্র ১৭টি। বাকী ১৯৬টি চলছে ছাড়পত্র ও লাইসেন্সবিহীন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী বৈধ ইটভাটর মধ্যে ভেড়ামারা উপজেলায় ৩টি, দৌলতপুরে ১টি, কুমারখালী উপজেলায় ৯টি এবং খোকসা উপজেলায় ৪টি ইটভাটা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২টি অটো ব্রিকস এবং বাকী ১৫টি জিগ-জ্যাগ। তবে কুষ্টিয়া সদর এবং মিরপুর উপজেলায় নেই কোনো বৈধ ইটভাটা। অবৈধ ১৯৬টি ইটভাটার মধ্যে ১টি অটো, ৪২টি জিগ-জ্যাগ, ২৯টি ড্রাম চিমনি এবং ১২৪টি পাকা ফিক্সড চিমনি। এই ১৯৬টি ইটভাটার মধ্যে ২১টি ইটভাটার মালিক হাইকোর্টে রিট করার কারণে রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তর ওই সব ইটভাটার বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে না বলে কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তর জানিয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি,সরকারি আইনে কৃষি নষ্ট করে ইটভাটা স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু তা সত্ত্বেও কমপক্ষে প্রতিটি ইটভাটার জন্য তিন-চার একর কৃষিজমি নষ্ট করে ইটভাটা স্থাপন করেছে প্রভাবশালীরা। প্রতি বছরের মতো এবারো চলতি মৌসুমের শুরুতেই কৃষিজমি ও নদীর পলি মাটি কেটে ইটভাটাগুলোতে প্রস্তুত করা হচ্ছে নতুন ইট। এতে জেলায় কৃষিজমি হ্রাস ও উদ্বেগজনকভাবে খাদ্যশস্য উৎপাদন কমছে। ভাটার লাইসেন্স পেতে প্রস্তাবিত আবেদন পত্রের সঙ্গে ইট তৈরিতে মাটির উৎস উল্লেখ করে জেলা প্রশাসকের কাছে হফলনামা দাখিলের বাধ্যতামূলক শর্ত থাকলেও ভাটা মালিকদের অধিকাংশই তা মানছে না।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন বৈধ ইটভাটামালিক বলেন, ইটভাটা মালিক সমিতির শক্তিশালী সিন্ডিকেটের প্রভাব, অর্থবিত্ত ও তদবিরে পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা অবৈধ ভাটা উচ্ছেদে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না। এছাড়া কতিপয় ভাটা মালিক উচ্চ আদালতের দারস্থ হয়ে সৃষ্টি করেছে আইনি প্রতিবন্ধকতা। প্রতি বছর কিছু সংখ্যক ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হলেও পরবর্তী সময়ে অদৃশ্য কারণে তা আর আগায় না বেশি দূর।
পরিবেশ বিষয়ক গবেষক গৌতম কুমার রায় বলেন, “দেশের ১০ হাজার ইটভাটার মধ্যে ৪ হাজার অবৈধ। প্রত্যেক ভাটায় কমবেশি ৯৫ শতাংশ কাঠ পোড়ানো হয়। তাতে আমাদের দেশে বছরে ইটভাটায় ২৫০ লাখ মেট্রিক টন কাঠ পোড়ানো হয়। মাটির উপরিভাগে (টপ সোয়েল) বৃষ্টি, বন্যার পানি, গাছপালা পঁচার কারণে উর্বরা শক্তি থাকে। সেই সাথে পরিবেশবান্ধব অনুজীব থাকে। মাটি পোড়ানোর কারণে টপ সোয়েল টোটালি ধ্বংস করে ফেলছে। ফলে উর্বরাশক্তি হারাচ্ছে। এছাড়া মাটি কাটার ফলে ওই জমি কৃষি কাজ কিংবা জলাশয় কোনো কাজেই আসছে না। পাশাপাশি নির্মল বায়ু দূষিত হচ্ছে। ধোঁয়ার সাথে ক্ষার ছড়াচ্ছে। মানুষের নিঃশ্বাসে ভেতরে ঢুকে ক্ষতি করছে। গাছের বেঁচে থাকার শক্তি নষ্ট হচ্ছে।
কুষ্টিয়া ইটভাটা মালিক সমিতি একাংশের সাধারণ সম্পাদক শাহীন আলী বলেন, “আমাদের নিয়ন্ত্রণে ৭৩ ইটভাটা রয়েছে। ৮/৯টা বাদে সবাই কয়লা ব্যবহার করেন।”
পরিবেশের ছাড়পত্র আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, “বাংলাদেশের কারো পরিবেশের ছাড়পত্র নেই। যদি তাই হয় তাহলে সবাই অবৈধ। আমরা নিয়মিত সরকারকে রাজস্ব দিচ্ছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমল থেকেই বন্ধ রয়েছে।”
জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপপরিচালক মো. ইমদাদুল হক বলেন, “অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকীগুলোতেও অভিযান চালানো হবে।”
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “পর্যায়ক্রমে সকল ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেয়া হবে।”
ঢাকা/কাঞ্চন কুমার/শাহেদ