মুনীর চৌধুরীর নাটক কেন এত শক্তিশালী
Published: 28th, November 2025 GMT
মুনীর চৌধুরীর নাটকের শক্তি কোথায়, এটা বোঝার জন্য তাঁর নাটকে ঢুকতে হবে। আমরা সরাসরি একটা নাটকে ঢুকে এই নাট্যকারকে বোঝার চেষ্টা করি। নাটকের নাম ‘গুর্গণ খাঁর হীরা’। এটি একটি অনুবাদমূলক একাঙ্কিকা। এই নাটক নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয়নি। তবে একজন নাট্যকারের শক্তির জায়গা বোঝার জন্য তাঁর যেকোনো পূর্ণ নাটকই অবলম্বন হতে পারে। মুনীর চৌধুরী এটিকে ‘রহস্যময় প্রহসন’ হিসেবে নির্দেশ করেছেন। প্রহসন কি না, যথাস্থানে আলোচনা করা যাবে। আগে নাটকটি পড়া যাক।
নাটকের চরিত্র মাত্র পাঁচটি—মা, বাবা, মেয়ে, আগন্তুক ও আবিদ। কাহিনি সংঘটনের স্থান শহরের উপকণ্ঠে কোনো মধ্যবিত্তের বাড়ি। সেই বাড়ির বসার ঘরেই পুরো ঘটনা ঘটেছে। সেখানে বাবা খবরের কাগজ পড়ছেন, মা সোয়েটার বুনছেন, আর তাঁদের মেয়ে একটা মোটা বইয়ে মনোযোগ দিয়েছে। একই ঘরে পরিবারের তিনজনের উদাস-অবসর সন্ধ্যা কাটানোর ব্যাপারটি ষাটের দশকে, এমনকি পরবর্তী আরও দুই দশকে বাংলাদেশের শহরেও দেখা যেত। তবে সেটি তুলে ধরা নাট্যকারের উদ্দেশ্য নয়। কারণ, মূল নাটকেও সে রকম আছে।
লিখিত নাটক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সংলাপকে প্রধান বিবেচনায় নিতে হয়। সংলাপের মধ্য দিয়ে নাটক এগিয়ে চলে, সংলাপের মধ্য দিয়ে নাট্যিক দ্বন্দ্বও প্রকাশিত হয়। একাঙ্কিকাটি শুরু হয়েছে মায়ের সংলাপের মধ্য দিয়ে। মা বলছেন, ‘এই একঘেয়ে জীবনের মধ্যে কোনো আনন্দ নেই।’ বাবা ‘হুম’ বলে চুপ করে যান। মেয়ে দুজনের দিকে একবার তাকিয়ে বইয়ে মন দেয়। মা আবার বলে, ‘বিকেল থেকে সময় আর কাটতে চায় না। সেই একই রকম সন্ধ্যা, একই রকম রাত। চা খাও, ঝিমোও। ভাত খাও, ঘুমোও। রোজই এক রকম। কোনো রদবদল নেই।’ বাবা সায় দেন, ‘শুধু তোমার একার নয়, আমাদের সকলের জীবনই ওই রকম।’
‘গুর্গণ খাঁর হীরা’ নাটকটি যেহেতু ‘অ্যালান মংকহাউসের দ্য গ্র্যান্ড চ্যাম’স ডায়মন্ড’-এর রূপান্তর, সুতরাং এটিকে পাঠ করতে হবে মূলের সঙ্গে মিলিয়ে। মূল নাটকের শুরুও একইভাবে, প্রায় একই সংলাপ দিয়ে। তাহলে প্রশ্ন, অনুবাদের মধ্য দিয়েও মুনীর চৌধুরী শক্তিশালী নাট্যকার হয়ে ওঠেন কীভাবে। ভালো নাট্যকারে এটি দুভাবে ঘটে—প্রথমত তাঁর অনুবাদের ভাষা পাঠকের কাছে কখনো খটমট ঠেকে না, দ্বিতীয়ত তিনি দেশীয় সমাজবাস্তবতায় কাহিনিকে সংস্থাপন করতে পারেন।
মুনীর চৌধুরীর নাটকের শক্তি কোথায়, এটা বোঝার জন্য তাঁর নাটকে ঢুকতে হবে। আমরা সরাসরি একটা নাটকে ঢুকে এই নাট্যকারকে বোঝার চেষ্টা করি। নাটকের নাম ‘গুর্গণ খাঁর হীরা’। এটি একটি অনুবাদমূলক একাঙ্কিকা। এই নাটক নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয়নি।মুনীর চৌধুরীর নাটকের ভাষা বাংলা বাক্যের সংগঠন ও ধরনকে গ্রহণ করে বাংলাই থেকেছে। মূল নাটকে মা চরিত্রের মিসেস পারকিনস বলছেন, “ইট মেকস আ লং ইভনিং’ অব ইট। সেম এভরি নাইট। উই ’অ্যাভ আওয়ার টি অ্যান্ড দেন উই জাস্ট সেট ডাউন টিল ইটস টাইম টু গো টু বেড। ইটস নট ফেয়ার।” সাধারণ অনুবাদে সংলাপটি এমন হওয়ার কথা: ‘এটা সন্ধ্যাটাকে দীর্ঘ করে দেয়। প্রতি রাতে একই রকম। আমরা চা পান করি এবং তারপর কেবল বসে থাকি বিছানায় শুতে যাওয়ার সময় না হওয়া পর্যন্ত। এটা ঠিক নয়।’
শহীদ অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী (২৭ নভেম্বর ১৯২৫—১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১).উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ন র চ ধ র র ন টক ন টক র এই ন ট অন ব দ
এছাড়াও পড়ুন:
মুনীর চৌধুরীর নাটক কেন এত শক্তিশালী
মুনীর চৌধুরীর নাটকের শক্তি কোথায়, এটা বোঝার জন্য তাঁর নাটকে ঢুকতে হবে। আমরা সরাসরি একটা নাটকে ঢুকে এই নাট্যকারকে বোঝার চেষ্টা করি। নাটকের নাম ‘গুর্গণ খাঁর হীরা’। এটি একটি অনুবাদমূলক একাঙ্কিকা। এই নাটক নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয়নি। তবে একজন নাট্যকারের শক্তির জায়গা বোঝার জন্য তাঁর যেকোনো পূর্ণ নাটকই অবলম্বন হতে পারে। মুনীর চৌধুরী এটিকে ‘রহস্যময় প্রহসন’ হিসেবে নির্দেশ করেছেন। প্রহসন কি না, যথাস্থানে আলোচনা করা যাবে। আগে নাটকটি পড়া যাক।
নাটকের চরিত্র মাত্র পাঁচটি—মা, বাবা, মেয়ে, আগন্তুক ও আবিদ। কাহিনি সংঘটনের স্থান শহরের উপকণ্ঠে কোনো মধ্যবিত্তের বাড়ি। সেই বাড়ির বসার ঘরেই পুরো ঘটনা ঘটেছে। সেখানে বাবা খবরের কাগজ পড়ছেন, মা সোয়েটার বুনছেন, আর তাঁদের মেয়ে একটা মোটা বইয়ে মনোযোগ দিয়েছে। একই ঘরে পরিবারের তিনজনের উদাস-অবসর সন্ধ্যা কাটানোর ব্যাপারটি ষাটের দশকে, এমনকি পরবর্তী আরও দুই দশকে বাংলাদেশের শহরেও দেখা যেত। তবে সেটি তুলে ধরা নাট্যকারের উদ্দেশ্য নয়। কারণ, মূল নাটকেও সে রকম আছে।
লিখিত নাটক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সংলাপকে প্রধান বিবেচনায় নিতে হয়। সংলাপের মধ্য দিয়ে নাটক এগিয়ে চলে, সংলাপের মধ্য দিয়ে নাট্যিক দ্বন্দ্বও প্রকাশিত হয়। একাঙ্কিকাটি শুরু হয়েছে মায়ের সংলাপের মধ্য দিয়ে। মা বলছেন, ‘এই একঘেয়ে জীবনের মধ্যে কোনো আনন্দ নেই।’ বাবা ‘হুম’ বলে চুপ করে যান। মেয়ে দুজনের দিকে একবার তাকিয়ে বইয়ে মন দেয়। মা আবার বলে, ‘বিকেল থেকে সময় আর কাটতে চায় না। সেই একই রকম সন্ধ্যা, একই রকম রাত। চা খাও, ঝিমোও। ভাত খাও, ঘুমোও। রোজই এক রকম। কোনো রদবদল নেই।’ বাবা সায় দেন, ‘শুধু তোমার একার নয়, আমাদের সকলের জীবনই ওই রকম।’
‘গুর্গণ খাঁর হীরা’ নাটকটি যেহেতু ‘অ্যালান মংকহাউসের দ্য গ্র্যান্ড চ্যাম’স ডায়মন্ড’-এর রূপান্তর, সুতরাং এটিকে পাঠ করতে হবে মূলের সঙ্গে মিলিয়ে। মূল নাটকের শুরুও একইভাবে, প্রায় একই সংলাপ দিয়ে। তাহলে প্রশ্ন, অনুবাদের মধ্য দিয়েও মুনীর চৌধুরী শক্তিশালী নাট্যকার হয়ে ওঠেন কীভাবে। ভালো নাট্যকারে এটি দুভাবে ঘটে—প্রথমত তাঁর অনুবাদের ভাষা পাঠকের কাছে কখনো খটমট ঠেকে না, দ্বিতীয়ত তিনি দেশীয় সমাজবাস্তবতায় কাহিনিকে সংস্থাপন করতে পারেন।
মুনীর চৌধুরীর নাটকের শক্তি কোথায়, এটা বোঝার জন্য তাঁর নাটকে ঢুকতে হবে। আমরা সরাসরি একটা নাটকে ঢুকে এই নাট্যকারকে বোঝার চেষ্টা করি। নাটকের নাম ‘গুর্গণ খাঁর হীরা’। এটি একটি অনুবাদমূলক একাঙ্কিকা। এই নাটক নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয়নি।মুনীর চৌধুরীর নাটকের ভাষা বাংলা বাক্যের সংগঠন ও ধরনকে গ্রহণ করে বাংলাই থেকেছে। মূল নাটকে মা চরিত্রের মিসেস পারকিনস বলছেন, “ইট মেকস আ লং ইভনিং’ অব ইট। সেম এভরি নাইট। উই ’অ্যাভ আওয়ার টি অ্যান্ড দেন উই জাস্ট সেট ডাউন টিল ইটস টাইম টু গো টু বেড। ইটস নট ফেয়ার।” সাধারণ অনুবাদে সংলাপটি এমন হওয়ার কথা: ‘এটা সন্ধ্যাটাকে দীর্ঘ করে দেয়। প্রতি রাতে একই রকম। আমরা চা পান করি এবং তারপর কেবল বসে থাকি বিছানায় শুতে যাওয়ার সময় না হওয়া পর্যন্ত। এটা ঠিক নয়।’
শহীদ অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী (২৭ নভেম্বর ১৯২৫—১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১)