Samakal:
2025-11-17@10:12:08 GMT

টাকা জমিয়ে মারবেল খেলা

Published: 14th, January 2025 GMT

টাকা জমিয়ে মারবেল খেলা

ছোট ছোট জটলা। শিশু থেকে প্রৌঢ়। প্রতিটি জটলায় সব বয়সের মানুষ। তাদের চোখেমুখে আনন্দের রোশনাই। দৃষ্টি সবার মাটিতে; মার্বেলে। ঐতিহ্যের মার্বেল খেলায় মেতেছে সবাই। 
গতকাল মঙ্গলবার বরিশালের আগৈলঝাড়ায় এ দৃশ্য চোখে পড়ে। উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রামানন্দের আঁক গ্রামে প্রতিবছর পৌষসংক্রান্তিতে বসে এ মেলা। আশপাশের কয়েকটি উপজেলা ও জেলার অসংখ্য মানুষের সমাগম ঘটে এ মেলায়। 
কথিত আছে, রামানন্দের আঁক গ্রামের মেয়ে সোনাই চাঁদের ২৪৫ বছর আগে ৬ বছর বয়সে বিয়ে হয়। ৭ বছর বয়সে স্বামী মারা গেলে নিঃসন্তান অবস্থায় শ্বশুরবাড়িতে একটি নিমগাছের গোড়ায় শিবের আরাধনা ও পূজা-অর্চনা শুরু করেন তিনি। ক্রমশ তাঁর অলৌকিকত্ব ছড়িয়ে পড়লে সেই স্থানে বার্ষিক পূজার আয়োজন করা হয়। এর পর তিনি মা সোনাই চাঁদ আউলিয়া হিসেবে এলাকায় পরিচিতি পান। মা সোনাই চাঁদ আউলিয়ার জীবদ্দশায় আনুমানিক ১৭৮০ সাল থেকে শুরু করে অদ্যাবধি প্রতিবছর পৌষসংক্রান্তির দিনে মেলা হয়।
মেলায় মার্বেল খেলা প্রধান আকর্ষণ হলেও থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বৈষ্ণব সেবা, নিরামিষ খাবার, নবান্ন উৎসব তো থাকেই। নাম সংকীর্তন, কবিগান শেষে সোয়া মণ চালের গুঁড়ার সঙ্গে সোয়া মণ গুড়, ৫০ জোড়া নারকেল, কলা মিশিয়ে নবান্ন তৈরি করে দর্শনার্থীদের প্রসাদ  দেওয়া হয়।
মেলায় ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে এসেছেন শিখা বিশ্বাস। ঢাকার নবাবগঞ্জ থেকে আসেন সুকদেব বিশ্বাস। আগত দর্শনার্থী সুচিত্রা বিশ্বাস বলেন, তিনিও পরিবারের সবাইকে নিয়ে মারবেল মেলায় এসেছেন। এখানে মারবেল খেলতে পেরে আনন্দিত তারা। ঢাকা থেকে আসা কলেজছাত্রী মৌপিয়া ঘোষ মোম জানান, তিনিও প্রতিবছর এই দিনে রামানন্দের আঁক গ্রামে মামার বাড়িতে আসেন। সবার সঙ্গে মারবেল খেলায় অংশ নেন।

স্থানীয় মণিমোহন বালা ও রিপন বিশ্বাস জানান, তাদের পূর্বপুরুষ এই মার্বেল খেলার মাধ্যমে মেলার প্রচলন করেন, যা আজও অব্যাহত আছে। তারাও ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। 
সরেজমিন দেখা গেছে, প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মারবেল খেলা চলছে। রাস্তার ওপর, বাড়ির আঙিনা, অনাবাদি জমি, পুকুরপাড়, বাগানসহ সর্বত্র মারবেল খেলার আসর বসেছে। বিশ্বাস বাড়ির মন্দিরের পাশের জমিতে বসেছে বাঁশ-বেতের সামগ্রী, মণিহারি, খেলনা, মিষ্টি, ফলসহ নানা পণ্যের দোকান। মারবেল বিক্রেতা ত্রিমুখী গ্রামের প্রদীপ বল্লভ বলছিলেন, প্রতিবছর মারবেল বিক্রির জন্য এই দিনের অপেক্ষায় থাকেন। এ বছরের বেচাকেনা অন্য বছরের চেয়ে ভালো। ১০০ মারবেল ২০ টাকায় বিক্রি করেন তিনি।
বাকাল গ্রামের স্কুলছাত্র মিরাজ ফকির ও পশ্চিম রাজিহার গ্রামের ভূমিকা তালুকদারও এসেছে মেলায়। তারা জানাল, সারাবছর টাকা জমিয়েছে এই মারবেল খেলার জন্য।
মেলার নির্দিষ্ট কোনো জায়গা না থাকায় দর্শনার্থীদের একটু অসুবিধা হচ্ছে জানিয়ে মেলা কমিটির সভাপতি নির্মল মণ্ডল ও আয়োজক প্রকৌশলী নীহার রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, মন্দিরের পার্শ্ববর্তী পুকুর ভরাট করা হলে সবার সুবিধা হবে।
 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

নওগাঁ-২ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবিতে মানববন্ধন

নওগাঁ-২ (পত্নীতলা-ধামইরহাট) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর পৌরসভার জিরো পয়েন্ট এলাকায় এ কর্মসূচির আয়োজন করেন মনোনয়নবঞ্চিত এক প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকেরা।

নওগাঁ-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক সামসুজ্জোহা খানের নাম ঘোষণা করেছে দলটি। এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন পত্নীতলা উপজেলা বিএনপির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরী।

খাজা নাজিবুল্লাহর সমর্থকেরা বেলা ১১টার দিকে নজিপুর জিরো পয়েন্ট এলাকায় নওগাঁ-নজিপুর সড়কের একপাশে দাঁড়িয়ে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে মানববন্ধন করেন। এ কর্মসূচিতে পত্নীতলা ও ধামইরহাট উপজেলার ১৯টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভা থেকে আসা নেতা–কর্মীরা অংশ নেন। তাঁদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণও এতে অংশ নেন। মানববন্ধনের আগে জিরো পয়েন্ট এলাকায় কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে নওগাঁ-২ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিতর্কিত ব্যক্তি সামসুজ্জোহা খানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি মাঠে ছিলেন না। আওয়ামী লীগের সময়ে হরতালসহ বিভিন্ন আন্দোলনে খাজা নাজিবুল্লাহর নেতৃত্বে তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা মাঠে ছিলেন। তাঁরা নওগাঁ-২ আসনে মনোনয়নের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে খাজা নাজিবুল্লাহকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার অনুরোধ জানান।

নজিপুরের সাবেক পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন বলেন, নাজিবুল্লাহ ত্যাগী, পরীক্ষিত ও বারবার কারা নির্যাতিত নেতা। তাঁর নেতৃত্বেই পত্নীতলা ও ধামইরহাট বিএনপি ঐক্যবদ্ধ। অথচ তৃণমূলের মতামত অগ্রাহ্য করে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে। খাজা নাজিবুল্লাহকে প্রার্থী ঘোষণা না করা হলে তৃণমূল বিএনপি বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবে।

ধামইরহাট উপজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক রুহুল আমিন বলেন, ২০১৪ সাল থেকে আওয়ামী লীগবিরোধী সব আন্দোলনে যাঁরা মাঠে সক্রিয় ছিলেন, তাঁরা সবাই খাজা নাজিবুল্লাহর পক্ষে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন। তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হোক—এটি শুধু বিএনপির নেতা–কর্মীদের চাওয়া নয়, দুই উপজেলার সব মানুষের চাওয়া। তাই এখানে মনোনয়নের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে আহ্বান জানাতে এই কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া সামসুজ্জোহা খান বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। যাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করা হবে।’

মনোনয়নবঞ্চিত খাজা নাজিবুল্লাহ বলেন, ‘সব আন্দোলন–সংগ্রামে মাঠে সক্রিয় ছিলাম। দুর্দিনে তৃণমূল নেতাদের পাশে ছিলাম, আছি ও থাকব। আমরা কেউ দলের ঊর্ধ্বে নই। দলের জন্য কাজ করছি। পুনর্বিবেচনা হলে মনোনয়ন পেতে পারি। দলই সবার আগে।’

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নজিপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পত্নীতলা উপজেলা বিএনপির সদস্য আনোয়ার হোসেন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন পত্নীতলা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য মিজানুর রহমান, ধামইরহাট উপজেলা বিএনপির সদস্য রেজাউল ইসলাম, ধামইরহাট মহিলা দলের সহসভাপতি নাহিদা সুলতানা, জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দল ধামইরহাট শাখার আহ্বায়ক রকিবুল হাসান, পত্নীতলা উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য আবু তাহের প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ