সিলিকন ভ্যালি প্রযুক্তি জগতের কেন্দ্রবিন্দু। সিলিকন ভ্যালির অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ৮ ঘণ্টার কর্মদিবসের ধারণাকে অপ্রচলিত মনে করেন। অনেকেই সফলতা অর্জনের জন্য দীর্ঘ সময় কাজ করাকে অপরিহার্য বলে বিশ্বাস করেন। ব্যক্তিগত এমন দৃষ্টিভঙ্গি শুধু ব্যক্তির জায়গাতে নয়, তাঁদের প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের ওপরও প্রভাব পড়ে অনেক সময়।

সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক। তিনি সপ্তাহে ১০০ ঘণ্টার বেশি সময় কাজের পক্ষের লোক। টেসলা, স্পেসএক্স ও এক্সের প্রধান নির্বাহী বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে প্রায়ই ৮০ থেকে ১২০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করার কথা জানান। তাঁর ভাষ্যে, যদি অন্যরা ৪০ ঘণ্টা কাজ করেন আর আপনি ৮০ ঘণ্টা করেন, তাহলে আপনি ছয় মাসে যা অর্জন করবেন, অন্যরা তা এক বছরে করবেন। যদিও দীর্ঘ কর্মঘণ্টা মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশ্বাস করেন ইলন মাস্ক। শোনা যায়, কাজের জন্য ইলন মাস্ক বাড়িতে কম যান অনেক সময়। এমনকি হোয়াইট হাউসে কাজের সময় বাড়ি ফিরতে রাত হবে দেখে হোয়াইট হাউসে থাকতেন তিনি।

আরেক বিখ্যাত প্রযুক্তি উদ্যোক্তা মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস তাঁর কর্মজীবনের প্রথম দিকে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৮০ ঘণ্টা কাজ করতেন। নিজের জীবনীগ্রন্থ ‘সোর্স কোড’ থেকে এ তথ্য জানা যায়। মাইক্রোসফটের যেন কোনো ভুল না হয়, সে জন্য দীর্ঘ ঘণ্টা কাজ করতেন বিল গেটস। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সপ্তাহে ৮০ ঘণ্টার বেশি কাজ করতেন বিল। মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেলা সপ্তাহে ১০০ ঘণ্টা কাজ করেন। শুধু কাজই করেন না, পাশাপাশি নিয়মিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হাজির হন তিনি।

অন্যদিকে মার্ক জাকারবার্গ দ্রুত কাজের সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী। মার্ক সপ্তাহে ৫০-৬০ ঘণ্টা কাজ করেন। জানা যায়, মার্ক অনেক কর্মীর চেয়ে তাঁর অফিসে আগে আসেন। মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ তাঁর প্রতিষ্ঠানে দ্রুত কাজের সংস্কৃতি গড়ে তুলেছেন। গুগলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুন্দর পিচাই রাত জেগে কাজ করার জন্য বন্ধুমহলে পরিচিত। সকাল ৮টায় অফিসে পা রাখেন সুন্দর। রাত ১০টার দিকে অফিস ছাড়েন এই কর্মকর্তা। প্রতিদিন একই নিয়ম অনুসরণ করেন।

অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস সপ্তাহে ৫০ ঘণ্টা কাজ করেন। এ ছাড়া নিজের ও কর্মীদের ৮ ঘণ্টা ঘুমের বিষয়টিকে বেশ গুরুত্ব দেন তিনি। অ্যাপলের সিইও টিম কুক দীর্ঘ সময় ধরে কাজের জন্য আলোচিত। টিমের দিন শুরু হয় ভোর ৪টায়। সকাল থেকেই বিভিন্ন সভায় ব্যস্ত থাকেন টিম। শুক্রবার টিম বাড়ি থেকে কাজ করেন বলে জানা যায়। অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস সপ্তাহে প্রায় সাতদিনই কাজ করতেন। জবস দিনে ১০-১৩ ঘণ্টা অফিস করতেন। ম্যাকিনটোস দলকে সপ্তাহে ৯০ ঘণ্টা কাজের প্রেশার দিতেন স্টিভ জবস।

চীনের উদ্যোক্তা আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা দিনে ১২ ঘণ্টার কাজের পক্ষে কথা বলেন। তিনি চীনের ৯৯৬ কর্মকৌশলের ভক্ত। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা সপ্তাহে ৬ দিন কাজের পক্ষে জ্যাক মা।

সেমিকন্ডাক্টর প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা জেনসেন হুয়াং দিনে ১৪ ঘণ্টা কাজ করেন বলে জানা যায়। দিনের শুরু করেন সকাল ৬টায়। এমনকি ছুটির দিনেও ১৪ ঘণ্টা কাজ করেন তিনি। টুইটারের সাবেক নির্বাহী জ্যাক ডরসি দিনে ১৮ ঘণ্টা করে কাজ করতেন বলে জানা যায়। সকাল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত কাজ করেন জ্যাক। গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিন সপ্তাহে ৬০ ঘণ্টা কাজে বিশ্বাসী। গুগলের কর্মীদের সপ্তাহে ৬০ ঘণ্টার বেশি কাজ না করতে পরামর্শ দেন তিনি।

সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক জ করত ন ইলন ম স ক ক জ কর ন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

পদ্মা নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাট

পদ্মা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ভাঙন বেড়ে যাওয়ায় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাট ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। এ ছাড়া ঘাটসংলগ্ন বহু স্থাপনা রয়েছে ভাঙনের ঝুঁকিতে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা কার্যালয় সূত্র জানায়, দৌলতদিয়ার সাতটি ফেরিঘাটের মধ্যে ৩, ৪ ও ৭ নম্বর ঘাট সচল। ৬ নম্বর ঘাট থাকলেও এখনো সচল করা যায়নি। এ ছাড়া কয়েক বছর আগে ১, ২ ও ৫ নম্বর ঘাট নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।

গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরিঘাটসহ মধ্যবর্তী এলাকার ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে ৪ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাটে কিছু বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) সূত্র বলছে, দৌলতদিয়া ঘাটের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দেওয়ায় বর্তমানে সচল সব ঘাটই (৩, ৪ ও ৭ নম্বর) ভাঙনের ঝুঁকিতে। এর মধ্যে ৪ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাট বেশি ঝুঁকিতে।

বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘ভাঙন দেখা দেওয়ায় ফেরিঘাট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিআইডব্লিউটিএকে ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছি। তিনটি ঘাট সচল থাকলেও ভাঙন আরও বৃদ্ধি পেলে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নেপাল চন্দ্র দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ফেরিঘাটের দুই কিলোমিটারজুড়ে ভাঙন দেখা দেয়। ৪ ও ৭ নম্বর ঘাট বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় জরুরি মেরামত ও সংরক্ষণকাজের অংশ হিসেবে তিন দিনে প্রায় সাত শ বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। তবে ফেরিঘাটের মধ্যবর্তী এলাকায় বস্তা ফেলা হয়নি। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ মিললে বাকি কাজ করা যাবে।

ঘাটসংলগ্ন এলাকায় ভাঙনের ঝুঁকি

ঘাটসংলগ্ন বাহিরচর ছাত্তার মেম্বার পাড়া, মজিদ মাতুব্বর পাড়া, শাহাদত মেম্বার পাড়া, বাজার, মসজিদ, স্কুলসহ একাধিক স্থাপনা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে অনেকে স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছেন। ছাত্তার মেম্বার পাড়ার চারটি পরিবার তাদের ঘর সরিয়ে নিয়েছে।

ছাত্তার মেম্বার পাড়ার নদীর পাড়ের শেষ বসতি আলতাফ মোল্লার পরিবারের। বসতভিটা রক্ষা করতে না পেরে দুটি ঘর অন্যত্র সরিয়ে ফেলছে পরিবারটি। আলতাফ মোল্লার স্ত্রী সূর্য বেগম ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘ছয়বার ভাঙনে ভিটামাটি হারায়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এইবার ভাঙলে সাতবার হইবে। এখন কোথায় দাঁড়াব বলতে পারছি না। ঘর, টিনের চাল, জিনিসপত্র ভেঙে পাশে রাখছি। এখন কোথাও জায়গা হলে চলে যাব।’

স্থানীয় আলতাফ মোল্লা, শাহাদৎ প্রামাণিক ও ময়ান সরদার বলেন, ‘কয়েক দিনে যে হারে ভাঙছে, এভাবে ভাঙন চললে ফেরিঘাট, বাহিরচর ছাত্তার মেম্বার পাড়া, মজিদ মাতুব্বর পাড়া, শাহাদত মেম্বার পাড়াসহ অনেক স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ