ঢাকায় ‘এয়ার পিউরিফায়ার’ বায়ুদূষণ কমাতে পারবে কি
Published: 1st, May 2025 GMT
রাজধানীর বায়ুদূষণ রোধে নগরীর অন্তত ৫০টি জায়গায় ডিএনসিসির এয়ার পিউরিফায়ার (বায়ু পরিশোধন যন্ত্র) স্থাপনের পরিকল্পনা স্বল্পমেয়াদি প্রচেষ্টা হিসেবে প্রশংসনীয় হলেও দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই সমাধান নয় বলে বলছেন বায়ুগবেষকেরা। বায়ুদূষণ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে মূল কারণগুলোর বিরুদ্ধে সমন্বিত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার পরামর্শ তাঁদের।
গত সোমবার গুলশানে ঢাকা উত্তর সিটির নগর ভবনে এক পলিসি ডায়ালগে এসব যন্ত্র বসানোর পরিকল্পনার কথা জানান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। প্রতিটি যন্ত্র ১০০ গাছের সমপরিমাণ বায়ু পরিশোধন ও শীতলীকরণে সক্ষম বলে দাবি করা হয়েছে।
ডিএনসিসি প্রশাসক আরও জানান, এ উদ্যোগের জন্য পৃষ্ঠপোষক বা স্পনসর পাওয়া গেছে এবং চলতি মাসেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি সইয়ের পরিকল্পনা রয়েছে। এতে সিটি করপোরেশনের কোনো অর্থ খরচ হবে না।
এদিকে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন মোহাম্মদ এজাজ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমরা একটি পাইলট প্রকল্প করে দেখতে চাই, ফলাফল কী আসে। এ নিয়ে পরবর্তী সময়ে আমরা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসব। যদি ইতিবাচক না হয়, আমরা ভিন্ন উদ্ভাবনের দিকে যাব।’
বায়ুদূষণ নিয়ে কাজ করা গবেষকেরা বলছেন, ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে এ ধরনের পিউরিফায়ার স্থাপন করে সামগ্রিক বায়ুমানে উল্লেখযোগ্য উন্নতি আনা কঠিন। বায়ুদূষণ রোধে স্বীকৃত উপায়গুলোর মধ্যে এয়ার পিউরিফায়ার নেই। এটি ছোট পরিসরে সাময়িক স্বস্তি পেতে পরীক্ষামূলকভাবে বসানো যেতে পারে।এয়ার পিউরিফায়ার কীএয়ার পিউরিফায়ার ক্ষুদ্র ধূলিকণা, জীবাণু ও দূষণ সৃষ্টিকারী গ্যাসীয় পদার্থ শোষণ করে বাতাসকে পরিশুদ্ধ করে। যন্ত্রগুলোতে সাধারণত ফিল্টার, কার্বন ফিল্টার বা ইলেকট্রোস্ট্যাটিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এয়ার পিউরিফায়ারের বড় আকারের ইউনিটগুলো নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে বায়ু শোধনে সক্ষম হলেও এগুলোর প্রভাব মূলত সীমিত এলাকাজুড়ে।
ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, এইচডিসিটি ৫১০০০ মডেলের ৫০টি স্থির বায়ু পরিশোধন যন্ত্র বসানো হবে রাজধানীতে, যা প্রতি মিনিটে ৩০ হাজার ঘনফুট বায়ু পরিশোধন করতে পারবে। যন্ত্রটি বাতাসে থাকা অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত পরিশোধন করতে সক্ষম বলে যন্ত্র বিবরণী থেকে জানা গেছে।
একেকটি যন্ত্রের ওজন ১ হাজার ৫০০ কিলোগ্রাম, যা গড়পড়তা একটি টয়োটা করোলা গাড়ির সমান। যন্ত্রটি চালাতে ২২০ ভোল্ট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে, অর্থাৎ এটি বাসাবাড়িতে চালানো ফ্রিজ বা ওয়াশিং মেশিনের মতো ভোল্টেজে চলবে।
যন্ত্রটির বিবরণীতে বলা হয়েছে, এটি উচ্চ জনসমাগম এলাকাগুলোর জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশিকা অনুযায়ী, এটি বাতাসে অতিক্ষুদ্র কণার উপস্থিতির স্তর স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।
যন্ত্রটি যানবাহন ও শিল্প খাতের ধোঁয়াসহ সিগারেটের মতো ক্ষতিকর ধোঁয়া বাতাস থেকে টেনে নিতে সক্ষম।
গুলশানে ঢাকা উত্তর সিটির নগরভবনে ‘দূষণমুক্ত ন্যায্য নগর গঠনে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ভূমিকা’ শীর্ষক পলিসি ডায়ালগে বক্তব্য দেন ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ড এনস স
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।