বার্সেলানা ৩–৩ ইন্টার মিলান! ফুটবলপ্রেমীরা তো এমন রাতের অপেক্ষাতেই থাকেন। ৬ গোলের থ্রিলারে ম্যাচ শেষ হওয়ায় রাত জেগে খেলা দেখাকে সার্থক বলতেই হচ্ছে। এস্তাদি অলিম্পিক লুইস কোম্পানিসে চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালের প্রথম লেগে কাল সেয়ানে সেয়ানে টক্কর হয়েছে। ম্যাচ শেষে বার্সা–ইন্টারের খেলোয়াড় ও কোচদের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে রেটিং করেছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েবসাইট গোল ডটকম। কে কত নম্বর পেলেন, একনজরে দেখে নিন—বার্সেলোনার পারফরম্যান্স রেটিংগোলকিপার

ভয়চেক সেজনি (৬/১০)

যে তিনটি গোল হজম করেছেন, সেগুলো ঠেকানোর কোনো সুযোগ ছিল না। তবে বার্সার হাইলাইন ডিফেন্সের ফাঁদ গলে ইন্টার যে কয়টি সুযোগ তৈরি করেছিল, এর দুটি ব্যর্থ করে দিয়েছেন।

ডিফেন্ডার

জুলস কুন্দে (৫/১০)

বল ঠিকমতো বিপদমুক্ত করতে না পারাতেই ইন্টার প্রথম গোল পেয়ে যায়। এ ছাড়া আর কোনো ভুল করেননি। যখনই বল পেয়েছেন, লামিনে ইয়ামালের দিকে বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন। হয়তো আরও ভালো করতে পারতেন। কিন্তু চোটের কারণে বিরতির আগেই মাঠ ছাড়তে হয়েছে।

পাও কুবারসি (৬/১০)

পাসিংয়ে দারুণ দক্ষতা দেখিয়েছেন। খুব কমই ভুল করেছেন। তবে রক্ষণ সামলানোয় আরও উন্নতি করতে হবে।

ইনিগো মার্তিনেজ (৬/১০)

একবার পা পিছলে পড়ে গেলেও ভালোভাবেই সামলে নিয়েছেন। লম্বা করে বাড়ানো বলে দুবার কঠিন পরীক্ষায় পড়েছিলেন। দ্বিতীয়ার্ধে লেফটব্যাক হিসেবে যে অবদান রেখেছেন, তা প্রশংসনীয়।

জেরার্দ মার্তিন (৪/১০)

কখনোই স্বচ্ছন্দ্য মনে হয়নি। বাতাসে ভেসে আসা বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। যার ফলে ইন্টার দ্বিতীয় গোলটা পেয়েছে। কোচ হান্সি ফ্লিক প্রথমার্ধ শেষেই তাঁকে তুলে নিয়েছেন।  

মিডফিল্ডার

ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং (৭/১০)

এরিয়াল ডুয়েলে দুবার বল হারিয়েছেন, এর মধ্যে একটি বার্সার প্রথম গোল বিল্ডআপের সময়। তবে বল মাটিতে থাকা অবস্থায় সবকিছু নিখুঁতভাবে করেছেন।

পেদ্রি (৭/১০)

মৌসুমের সেরা মিডফিল্ডার বলা হচ্ছে তাঁকে। কাল আরেকটি চিত্তাকর্ষক পারফরম্যান্সে সেটির ছাপ রেখেছেন। তাঁর চমৎকার ক্রস থেকেই বার্সার দ্বিতীয় গোলটি করে ফেরান তোরেস। তবে ডেনজেল ডামফ্রিস ইন্টারের দ্বিতীয় গোল করার সময় মাথা সরিয়ে নিয়েছিলেন। এ কারণে সমালোচিত হতেই পারে।

দানি ওলমো (৬/১০)

বেশ পরিশ্রম করে খেলেছেন। ইন্টার গোলকিপার ইয়ান সোমারকে দুবার পরীক্ষায় ফেলেছিলেন। কিন্তু ইন্টারের রক্ষণ সেভাবে চিরতে পারেননি। দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি সময়ে তাঁকে তুলে নেওয়া হয়।

ফরোয়ার্ড

রাফিনিয়া (৭/১০)

ম্যাচজুড়ে ইন্টারের রক্ষণভাগে ভীতি ছড়িয়েছেন। বার্সার দ্বিতীয় গোলে সহায়তা করেছেন, তৃতীয় গোলটি আত্মঘাতী হলেও কৃতিত্বটা তাঁরই। সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে পারফর্ম করেছেন, কাল হয়তো ততটা পারেননি। তবু অনেক ক্ষেত্রে ব্যবধান গড়ে দিয়েছেন।

ফেরান তোরেস (৭/১০)

প্রথমার্ধে তাঁর গোলেই বার্সা সমতা ফেরায়। তখন থেকেই তাঁকে বেশ আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল। আক্রমণ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সতীর্থদের সঙ্গে সমন্বয় ভালো ছিল।

লামিনে ইয়ামাল (৯/১০)

প্রথমার্ধে চোখে লেগে থাকার মতো এক গোল করেছেন। ম্যাচজুড়ে তাঁর ক্রসিং ইন্টার শিবিরে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। তবে দ্বিতীয়ার্ধে খেলার ধার কিছুটা কমে যায়।

কোচ

হান্সি ফ্লিক (৫/১০)

মৌসুম শেষে তাঁর হাইলাইন কৌশলের খেসারত দিতে হতে পারে। তবে দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে গোলক্ষুধা অব্যাহত থাকলে দারুণ কিছু করার সুযোগ বাড়বে।  

ইন্টার মিলানের পারফরম্যান্স রেটিংগোলকিপার

ইয়ান সোমার (৬.

৫/১০)

যেসব গোল হজম করেছেন, সেগুলো আটকানোর কোনো সুযোগ ছিল না। বার্সার শেষ গোলটা তাঁর আত্মঘাতী হিসেবে লেখা আছে ঠিকই, কিন্তু এতে তাঁর কোনো দোষ নেই। দারুণ এক সেভে বার্সাকে জিততে না দেওয়ার কৃতিত্বটা তাঁর।  

ডিফেন্ডার

ইয়ান বিসেক (৫/১০)

বেঞ্জামিন পাভার চোটের কারণে শুরুর একাদশে তাঁকে রাখা হয়। কিন্তু আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি। বার্সার দ্বিতীয় গোলে বল বানিয়ে দেওয়া রাফিনিয়াকে থামাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন।

ফ্রান্সেসকো আসেরবি (৬.৫/১০)

ডামফ্রিসের অসাধারণ গোলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু অভিজ্ঞ এই ডিফেন্ডার পরে ফেরান তোরেসের কাছে পরাস্ত হন এবং তাঁকে গোল করার সুযোগ করে দেন। তবে ইন্টার যে বার্সার মাঠ থেকে ড্র করে ফিরেছে, তাতে দৃঢ়ভাবে রক্ষণ সামলানোয় তাঁর বড় অবদান আছে।

আলেসসান্দ্রো বাস্তোনি (৬.৫/১০)
ডুয়েলে বেশ কয়েকবার জিতেছেন, লম্বা সময় বল পায়ে রাখতে পেরেছেন। কিন্তু লামিনে ইয়ামালকে আটকাতে সতীর্থ ফেদেরিকো দিমার্কোকে আরও সহায়তা করার প্রয়োজন ছিল।

মিডফিল্ডার

ডেনজেল ডামফ্রিস (৯.৫/১০)

এককথায় ‘চাঞ্চল্যকর পারফরম্যান্স’! যতবার বল তাঁর পায়ে এসেছে, ততবারই বার্সার জন্য ঝামেলা সৃষ্টি করেছেন। মিড উইংয়ে খেলেও ইন্টারের তিন গোলেই অবদান রেখেছেন। দুটি গোল করেছেন নিজে, অন্যটিতে করেছেন সহায়তা।

নিকোলা বারেল্লা (৭/১০)

ইন্টারের একমাত্র মিডফিল্ডার, যিনি বার্সার ব্যাকলাইনের দুর্বলতা ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছেন। ম্যাচের শুরুতেই মার্কাস থুরামের গোলে অবদানটা তাঁর।

হাকান চালহানোয়লু (৩/১০)

সম্ভব হলে কালকের রাতটা দ্রুত ভুলে যেতে চাইবেন। বেশির ভাগ সময়ই বলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন। পেদ্রিকে ফাউল করে হলুদ কার্ডও দেখেছেন। পারফরম্যান্স আশাব্যঞ্জক না হওয়ায় ৭০ মিনিটে তাঁকে তুলে নেন ইন্টার কোচ সিমোন ইনজাগি।

হেনরিখ মিখিতারিয়ান (৫/১০)

খুব পরিশ্রম করে খেলেছেন। ইন্টারের হাতে গোনা যে কজন খেলোয়াড় বলের দখল ধরে রাখতে পেরেছেন, তাঁদের মধ্যে একজন তিনি। কিন্তু লামিনে ইয়ামালের সেই গোলের আগে তাঁকে ট্যাকল করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

ফেদেরিকো দিমার্কো (৩/১০)
ফর্মের বিচারে এর চেয়ে হয়তো বাজে খেলা যায় না। তাঁকে প্রতিনিয়ত পরাস্ত করেছেন লামিনে ইয়ামাল। ইতালিয়ান এই লেফটব্যাক বলতে গেলে ম্যাচে তেমন কোনো অবদান রাখতে পারেননি।

ফরোয়ার্ড

লাওতারো মার্তিনেজ (৬/১০)

কয়েকটি দুর্দান্ত আক্রমণের সূত্রপাত হয়েছে তাঁর মাধ্যমে। তিনিই ইন্টারের অচলায়তন ভেঙেছেন। কিন্তু বিরতির ঠিক আগে চোট পান, দ্বিতীয়ার্ধে আর মাঠে নামা হয়নি। এটি ইন্টারের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে। পুরো ম্যাচ খেলতে পারলে ফলটা হয়তো নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসতে পারতেন। তাঁর চোট গুরুতর হয়ে থাকলে ফিরতি লেগের আগে ইন্টারের কপালে নিশ্চিত চিন্তার ভাঁজ পড়বে।

মার্কাস থুরাম (৮/১০)

পেশির চোট থেকে সেরে ওঠার পর এটিই ছিল তাঁর প্রথম ম্যাচ। দুর্দান্ত ব্যাক হিলে ম্যাচের প্রথম মিনিটেই তিনি ইন্টারকে এগিয়ে দেন। এর পর থেকেই বার্সার রক্ষণভাগ তাঁকে কড়া মার্কিংয়ে রেখেছে, যা অন্যদের কিছুটা স্বাধীনভাবে খেলার সুযোগ করে দিয়েছে। ৮১ মিনিটে তাঁকে তুলে নেওয়ার আগপর্যন্ত দারুণ খেলেছেন।

কোচ

সিমোন ইনজাগি (৭/১০)

তাঁর স্কোয়াডের সবচেয়ে শক্তিশালী ও আক্রমণাত্মক লাইনআপ খেলতে নামিয়েছিলেন। সেই সাহসিকতার পুরস্কার হিসেবে বার্সার মাঠে পেয়েছেন তিন গোল। কিন্তু দলের রক্ষণভাগ নিয়ে নিশ্চয় অসন্তুষ্ট হবেন। বারবার এগিয়ে গিয়েও বার্সাকে সমতা ফেরানোর সুযোগ করে দিয়েছেন ডিফেন্ডাররা। তবে শেষ দিকে জয়ের সম্ভাবনাও জাগিয়েছিল তাঁর দল। ফিরতি লেগের আগে যা তাঁকে অনপ্রাণিত করবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রফরম য ন স ইন ট র র র প রথম গ ল কর প র নন কর ছ ন অবদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

তাইজুলকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে অবমূল্যায়িত বোলার’ বললেন তামিম

চট্টগ্রাম টেস্টে আজ প্রথম দিনে জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংসে ৬০ রানে ৫ উইকেট পেয়েছেনতাইজুল ইসলাম। টেস্টে এ নিয়ে ১৬তমবার ইনিংসে ৫ উইকেট পেলেন  বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনার। প্রথম দিনের খেলা শেষে তাইজুলের প্রশংসা করে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দেন তামিম ইকবাল।

আরও পড়ুনতাইজুলের মনে হয় না তারা খেলা বোঝে১ ঘণ্টা আগে

বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়কের পেজে তাইজুলের একটি ছবি পোস্ট করে লেখা হয়, ‘এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে অবমূল্যায়িত (আন্ডাররেটেড) বোলার। এখন খেলা অন্য বোলারদের পরিসংখ্যান দেখুন, তাহলে আমার কথাটা বুঝতে পারবেন। আরেকবার ৫ উইকেট নিয়ে দারুণ খেলেছ তাইজুল।’

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে টেস্ট ও ডিসেম্বরে ওয়ানডে অভিষেক তাইজুলের। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক ২০১৯ সালে। ওয়ানডে (২০) ও টি-টোয়েন্টির (২) চেয়ে টেস্ট ম্যাচই (৫২) বেশি খেলেন তাইজুল। চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চলতি টেস্টে প্রথম দিনের পারফরম্যান্সসহ মোট ৫৩ টেস্টে এ পর্যন্ত ২২৪ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল। তাঁর টেস্ট সংস্করণের পারফরম্যান্সটা যাচাই করে দেখা যায়।

এখনো যাঁরা খেলছেন তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট নাথান লায়নের। অস্ট্রেলিয়ার অফ স্পিনারের টেস্ট অভিষেক ২০১১ সালে। তাইজুলের টেস্ট অভিষেকের সময় থেকে লায়নের পারফরম্যান্স—   ১০৩ টেস্টে ২৯.৪৮ গড়ে ৪৪১ উইকেট। মোট ২৪ বার ৫ উইকেট নিলেও তাইজুলের অভিষেকের পর থেকে ১৯ বার ৫ উইকেট নেন লায়ন। তবে অস্ট্রেলিয়া দল বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি টেস্ট খেলায় লায়ন এ সময়ে তাইজুলের চেয়ে অনেক বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছেন। বোলিং গড় এবং স্ট্রাইকরেটে লায়ন ও তাইজুলের মাঝে ব্যবধান বেশি না। তাইজুলের বোলিং গড় ৩১.৫৬, স্ট্রাইক রেট ৬১.৯, যেখানে লায়নের স্ট্রাইকরেট ৬১.৬ ও গড় ৩০.১৯।

আরও পড়ুনতাইজুলের ভেলকি, শেষ সেশনে গেল ৭ উইকেট২ ঘণ্টা আগে

ভারতের স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন গত বছর ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়েন। টেস্টে তার অভিষেক ২০১১ সালে। তাইজুলের টেস্ট অভিষেক থেকে এই সংস্করণে ৮৫ ম্যাচে ২২.৮৪ গড়ে ৪৩০ উইকেট নেন অশ্বিন। এ সময়ে ২৮ বার পেয়েছেন ৫ উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার মতো ভারতও বেশি বেশি টেস্ট খেলায় স্বাভাবিকভাবেই এ সময়ে তাইজুলের তুলনায় বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছেন অশ্বিন।

ভারতের আরেক স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজার ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। তাইজুলের অভিষেকের দুই বছর আগে টেস্টে অভিষেক জাদেজার। তাইজুলের অভিষেকের সময় থেকে এ পর্যন্ত ৬৮ টেস্টে ২৭৮ উইকেট নিয়েছেন জাদেজা। তবে তাঁর চেয়ে এ সময়ে বেশি সংখ্যকবার ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল। জাদেজা এ সময়ে ৫ উইকেট নিয়েছেন ১৩ বার, তাইজুল নিয়েছেন ১৬ বার।

তাইজুল ৫ উইকেট নেওয়ার পর তাঁকে জড়িয়ে ধরেন অধিনায়ক নাজমুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
  • মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের
  • আজিজুল হাকিমের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স, কলম্বোয়ও হেসেছে বাংলাদেশ
  • ‘বাজপাখি’ মার্তিনেজের বাজে ফর্ম, আর্জেন্টিনার জন্য কতটা দুশ্চিন্তার
  • সমালোচকরা খেলা বোঝে না!—আক্ষেপ তাইজুলের
  • তাইজুলকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে অবমূল্যায়িত বোলার’ বললেন তামিম