মহান মে দিবসে আজ সন্ধ্যা সাতটায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে প্রদর্শিত হবে আরণ্যকের আলোচিত নাটক ‘রাঢ়াঙ’। নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন মামুনুর রশীদ।
প্রতিবছরের মতো ১ মে সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ও সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমিতে মে দিবস পালন করবে আরণ্যক। সকাল ১০টায় শহীদ মিনারে আরণ্যকের সদস্যদের সম্মিলিত কণ্ঠে আন্তর্জাতিক সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হবে।
এরপর আলোচকদের আলোচনা, গান, আবৃত্তি ও পথনাটকের অভিনয় হবে। দুটি পথনাটক পরিবেশন করা হবে। আরণ্যক নাট্যদল অভিনয় করবে পথনাটক ‘মাটির মহাজন’। নাটকটি রচনা করেছেন অপু মেহেদী, নির্দেশনা দিয়েছেন হাশিম মাসুদ। আমন্ত্রিত দল হিসেবে নাটকের দল থিয়েটার অভিনয় করবে পথনাটক ‘অদৃশ্য হাত’। নাটকটি রচনা করেছেন খুরশীদ আলম, নির্দেশনা দিয়েছেন রবিন বসাক।
এবারের মে দিবসের আলোচক নাট্যকার, অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী। আরও আলোচনা করবেন আরণ্যক নাট্যদলের প্রধান সম্পাদক হারুন রশীদ। প্রতিবছরই মে দিবস সামনে রেখে আরণ্যক ‘মে দিবসের কাগজ’ প্রকাশ করে। এবারও ‘মে দিবসের কাগজ’–এর নতুন সংখ্যা প্রকাশিত হবে।
স্বাধীনতাত্তোর নাট্যচর্চায় অগ্রণী ভূমিকা রেখে আসছে আরণ্যক নাট্যদল। ‘নাটক শুধু বিনোদন নয়, শ্রেণিসংগ্রামের সুতীক্ষ্ণ হাতিয়ার’—এই ভাবনা সামনে রেখে ১৯৮১ সাল থেকে নিয়মিত মহান মে দিবস পালন করে আসছে আরণ্যক।
ওরা কাজ করে নগরে বন্দরে
মহান মে দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের উদ্যোগে আজ আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নন্দন উন্মুক্ত মঞ্চে শুরু হবে ‘ওরা কাজ করে নগরে বন্দরে’ শীর্ষক অনুষ্ঠান।
এতে সভাপতিত্ব করবেন সংগঠনের সভাপতি শিল্পী কাজী মিজানুর রহমান; আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন সংগঠনের সহসভাপতি গণসংগীতশিল্পী ফকির সিরাজ ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী। অনুষ্ঠানে থাকবে একক ও দলীয় গান, আবৃত্তি।
উদীচীর আয়োজন
মে দিবস উপলক্ষে এবার রাজধানীজুড়ে বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। বিভিন্ন স্থানে শ্রমিক অঞ্চলে এসব কর্মসূচি থেকে মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ে সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হবে।
আজ বেলা তিনটায় মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বর থেকে সেনপাড়া ভিশন মোড় পর্যন্ত লাল পতাকা মিছিলে অংশ নেবে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদ। পরে বিকেল চারটায় সেনপাড়া পর্বতার ভিশন মোড়ে আয়োজিত হবে সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ ছাড়া গেন্ডারিয়ায় উদীচীর উদ্যোগে হবে গণসংগীত ও শোভাযাত্রা এবং বাড্ডায় ট্রাকে করে বিভিন্ন পয়েন্টে গণসংগীত পরিবেশন করবেন উদীচীর শিল্পীরা।
আরও পড়ুননাট্যকর্মীদের মে দিবস পালন০১ মে ২০১৩.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন গণস গ ত র আল চ করব ন
এছাড়াও পড়ুন:
ব্যয় বাড়ল ১৪৪ কোটি টাকা
‘খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ’ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয় ২০১১ সালে। ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। এর পর আটবার প্রকল্পের সময় বেড়েছে, দুই দফা সংশোধনের পর ব্যয় বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। এ অবস্থায় প্রকল্পটি শেষ হওয়া নিয়ে হতাশা দেখা দেয়।
আশার কথা, নতুন জেলা কারাগারের কাজ শেষ হয়েছে। গত ২৫ মে গণপূর্ত বিভাগের কাছ থেকে নতুন কারাগারটি বুঝে নেওয়ার কথা ছিল কারা কর্তৃপক্ষের। কিছু কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় হস্তান্তর হয়নি। চলতি জুন মাসে যে কোনো সময় নতুন কারাগার হস্তান্তরের কথা রয়েছে। জনবল পদায়ন হলেই নতুন কারাগারে বন্দি স্থানান্তর শুরু হবে।
১৯১২ সালে নগরীর ভৈরব নদীতীরে নির্মাণ করা হয় খুলনার প্রথম কারাগার। সেখানে বন্দি ধারণক্ষমতা ৬৭৮ জনের। রয়েছেন ১ হাজার ৪শর বেশি বন্দি। ১১৩ বছরের পুরোনো জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হয় তাদের। এসব বিবেচনায় নিয়েই নতুন কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
খুলনার সিটি (রূপসা সেতু) বাইপাস সড়কের জয় বাংলা মোড়ের অদূরে প্রায় ৩০ একর জমির ওপর নতুন কারাগার নির্মাণ হচ্ছে। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী নতুন কারাগারে ৪ হাজার বন্দি থাকতে পারবেন। প্রকল্পের আওতায় আপাতত ২ হাজার বন্দি রাখার অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। পরে প্রয়োজন পড়লে পৃথক প্রকল্প নিয়ে অন্য অবকাঠামো নির্মাণ হবে।
নতুন কারাগার হবে সংশোধনাগার
কারাগার ঘুরে দেখা গেছে, ভেতরে সাজানো-গোছানো অভিজাত আবাসিক এলাকার মতো পরিবেশ। রং দেওয়া নতুন ভবন, পথের ধারে
ফুল, দামি পার্কিং টাইলস দেওয়া ফুটপাত ধরে হাঁটলে এটি কারাগারই মনে হয় না। নতুন এ কারাগার নির্মাণ হচ্ছে সংশোধনাগার হিসেবে। এখানে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের পৃথক স্থানে রাখা হবে। কিশোর ও কিশোরী বন্দিদের জন্য রয়েছে পৃথক ব্যারাক। নারীদের জন্য পৃথক হাসপাতাল, মোটিভেশন সেন্টার ও ওয়ার্কশেড আছে। একইভাবে বন্দিদের জন্য ৫০ শয্যার হাসপাতাল থাকবে।
আরও থাকবে কারারক্ষীদের সন্তানদের জন্য স্কুল, বিশাল লাইব্রেরি, ডাইনিং রুম, আধুনিক স্যালুন ও লন্ড্রি। কারাগারে শিশুসন্তানসহ নারী বন্দিদের জন্য থাকবে পৃথক ওয়ার্ড ও ডে-কেয়ার সেন্টার। এ ওয়ার্ডটিতে সাধারণ নারী বন্দি থাকতে পারবেন না। সেখানে শিশুদের জন্য লেখাপড়া, খেলাধুলা, বিনোদন ও সংস্কৃতি চর্চার ব্যবস্থা থাকবে। কারাগারে পুরুষ ও নারী বন্দিদের হস্তশিল্পের কাজের জন্য আলাদা আলাদা ওয়ার্কশেড, বিনোদন কেন্দ্র ও নামাজের ঘর রয়েছে। মোট ৫২টি স্থাপনা রয়েছে এ কারাগারে।
গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাশিদুল ইসলাম জানান, বন্দিদের প্রতিটি ব্যারাকের চারপাশে পৃথক সীমানাপ্রাচীর রয়েছে। এক শ্রেণির বন্দিদের অন্য শ্রেণির বন্দিদের সঙ্গে মেশার
সুযোগ নেই। কারাগারের ভেতরে শুধু সীমানাপ্রাচীরই রয়েছে প্রায় ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের। ভেতরে ড্রেন, ফুটপাত, নিজস্ব পয়োবর্জ্য শোধন কেন্দ্র, ওয়াকওয়ে, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা, দুটি পুকুর ও সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সবকিছুর কাজ শেষ।
সময় বেড়েছে আটবার, ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ
২০১১ সালের অনুমোদিত খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১৪৪ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ৬ জুন প্রকল্পটি প্রথম দফা সংশোধন করা হয়। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৫১ কোটি টাকা। নতুন লক্ষ্য নেওয়া হয় ২০১৯ সালের ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার। এর পর পাঁচ দফায় পাঁচ বছর সময় বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু কাজ আর শেষ হয়নি। ২০২৩ সালের মে মাসে দ্বিতীয় দফায় প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছে। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮৮ কোটি টাকায়।
হস্তান্তর ও চালু কবে
খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, নতুন কারাগারের সব কাজ শেষ। কয়েকটি স্থাপনায় রঙের শেষ প্রলেপসহ টুকটাক কাজ বাকি রয়েছে। আগে করলে এসব নষ্ট হয়ে যাবে। এ কারণে হস্তান্তর তারিখ নির্ধারণ হলেই এসব কাজ করা হবে।
খুলনার জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান বলেন, কিছু কাজ বাকি ছিল, সেগুলো শেষ করতে বলা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে চলতি জুন মাসেই আমরা কারাগার বুঝে নেব। তিনি আরও বলেন, কারাগার পরিচালনার জন্য ৬০০ জনবলের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পুরোনো কারাগারে প্রায় ২০০ জনবল রয়েছে। স্থাপনা বুঝে নেওয়ার পর কারাগার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।