প্রযোজক তার সঙ্গে রাত কাটাতে বলেন: অঞ্জনা
Published: 1st, May 2025 GMT
রুপালি জগতের ঝলমলে আলোর অন্তরালে লুকিয়ে আছে আঁধার। এই অঙ্গনে কাজ করতে গিয়ে অনেক তারকা অভিনেত্রী কুপ্রস্তাব পেয়েছেন। ভারতীয় বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী অঞ্জনা বসুও তার ব্যতিক্রম নন। তিক্ত সেই অভিজ্ঞতা ভক্তদের জন্য ভাগ করে নিয়েছেন।
ভারতীয় একটি গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন অঞ্জন বসু। এ আলাপচারিতায় একটি ঘটনা বর্ণনা করেন। ‘বধূবরণ’ তারকা বলেন, “রামকৃষ্ণ ও সারদা সিরিয়ালে যখন সুযোগ পাই, কাজ পাকা হওয়ার পর ধারাবাহিকটির নির্বাহী প্রযোজক আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তার সঙ্গে রাত না কাটালে আমি নাকি সেই ধারাবাহিক থেকে বাদ পড়ব।”
এরপর অঞ্জনা প্রযোজককে সাফ জানিয়ে দেন, এটা পারবেন না। প্রয়োজনে তারা তাকে বাদ দিতে পারেন। যদিও তেমন কিছু ঘটেনি। কারণ সেই ধারাবাহিকের জন্য অঞ্জনাকে নির্বাচন করেছিলেন পরিচালক। যদিও আতঙ্কে থাকতেন এই অভিনেত্রী।
আরো পড়ুন:
চলচ্চিত্রে পা রাখছেন শাশ্বত কন্যা
অরিন্দমের বিরুদ্ধে স্ত্রীর গুরুতর অভিযোগ
এই প্রস্তাব পাওয়ার ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলেন অঞ্জনা। তার মতে, “ফোনে জবাব দেওয়ার পর সারারাত ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলাম। ওই লোকটার ভয়ে গ্রিনরুমে সারাক্ষণ দরজা বন্ধ করে থাকতাম। ওর কোনো কাজ আমি করিনি। তবে অনেক পরে কারো সঙ্গে রাত না কাটিয়েও যে টলিউডে কাজ করা যায়, তা বোঝাতে ওর একটি বিজ্ঞাপনে দ্বিগুণ টাকা নিয়ে কাজ করেছিলাম।”
পরে বিজ্ঞাপনের পারিশ্রমিকের টাকা বিছানায় বিছিয়ে তার ওপরে ঘুমিয়েছিলেন অঞ্জনা। কারণ এর মাধ্যমে অতীতের দুঃসহ সেই স্মৃতি ভুলতে চেয়েছিলেন এই অভিনেত্রী।
অসংখ্য টিভি সিরিয়ালে যেমন অভিনয় করেছেন, তেমনি ভারতীয় বাংলা সিনেমায়ও তার সরব উপস্থিতি। প্রযোজক ছাড়াও এক পরিচালক অঞ্জনাকে কুপ্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই ঘটনাও বর্ণনা করেছেন ‘বাই বাই ব্যাংকক’ তারকা।
অঞ্জনা বসু বলেন, “এক নামি পরিচালক তার বয়স এখন অনেক। তিনি তার সিনেমায় আমাকে নিতে চেয়েছিলেন। এরপর তার অফিসে গিয়ে, তাকে সঙ্গ দিতে বলেন। জানিয়েছিলেন সেই সময়ের অনেক নামি অভিনেত্রীরা নাকি তাকে সঙ্গ দেন। কিন্তু আমি সাফ জানিয়ে দিই যাব না। তাতে আমাকে বাদও দিতে পারেন। কাজ পেতে কখনো আপোস করিনি।”
অঞ্জনা বসু অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো— ‘যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল’, ‘ছ-এ ছুটি’, ‘বাই বাই ব্যাংকক’, ‘ল্যাপটপ’, ‘ব্যোকেশ ফিরে এলো’, ‘আবার বসন্ত’, ‘কিসমিস’ প্রভৃতি।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র
এছাড়াও পড়ুন:
কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়
রাজধানীর সবুজবাগের প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের সঙ্গে থাকা আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁকে ছয় টুকরা করে লাশ বস্তায় ঢুকিয়ে কাছের একটি ঝোপের ভেতরে পুঁতে রাখা হয়। এর আগে আজহারুল ইসলাম (গ্রেপ্তার) মুঠোফোনে সবুজবাগের ভাইগদিয়ায় তাঁর ভাড়া বাসায় জাকিরকে (৫৫) ডেকে নেন।
গ্রেপ্তার আজহারুল ইসলাম (৩৯) আজ শুক্রবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আদালত তাঁর জবানবন্দি নিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী (৪৪), মো. রাজীব (২৬) ও স্বপনকে (২৫) পাঁচ দিন করে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী পেশায় রাজমিস্ত্রি এবং বাকিরা রংমিস্ত্রি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সবুজবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সামছুল আমিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় দুপুরে তাঁদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আজহারুল আদালত জবানবন্দি দেন। অপর তিনজন জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। পরে তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, জাকির হোসেনের সঙ্গে তাঁদের চারজনের (আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন) বন্ধুত্ব ছিল। তাঁরা একসঙ্গে আড্ডা দিতেন। মাঝেমধ্যে জাকিরের সঙ্গে তাঁর ভাইগদিয়ার ভাড়া বাসায় তাঁরা একসঙ্গে মদ্যপান করতেন। ৪ জুন রাতে জাকির নন্দীপাড়ায় শেখের বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তখন আজহারুল মুঠোফোনে জাকিরকে তাঁর বাসায় ডেকে নেন। ওই বাসায় আজহার একা থাকতেন। আগেই জাকির তাঁদের জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা আছে এবং ডেমরার আমুলিয়া পশুরহাট থেকে কোরবানির জন্য গরু কিনবেন। জাকির তাঁর বাসায় পৌঁছানোর পর ওই টাকার ওপর তাঁদের সবার লোভ জাগে। তাঁরা টাকা ছিনিয়ে নিতে গেলে জাকির বাধা দেন। তখন ইস্পাতের পাইপ দিয়ে জাকিরের মাথায় সজোরে আঘাত করেন আজহারুল। এতে জাকির অচেতন হয়ে যান। এ সময় তাঁর কাছ থেকে এক হাজার টাকার দুটি বান্ডিল ছিনিয়ে নিয়ে সেই টাকা শুক্কুর আলীর কাছে জমা রাখেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতকে জানান, জাকিরকে বাঁচিয়ে রাখা হলে তাঁরা সবাই ফেঁসে যাবেন—এমন আশঙ্কায় জাকিরকে হত্যা করে লাশ গুম করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জাকিরের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এরপর শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন তাঁর শরীর টুকরা টুকরা করেন। পরে লাশের ছয়টি টুকরা রঙের দুটি পাত্রে ভরে একটি অটোরিকশায় করে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় নিয়ে যান। শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন অন্য পথ দিয়ে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় আসেন। তখন তাঁরা সবাই মিলে বালতিভর্তি লাশের টুকরাগুলো পাশের ঝোপে নিয়ে যান। এরপর সেখানে খুঁড়ে লাশের টুকরাগুলো পুঁতে রাখেন।
আজহারুল আদালতকে বলেন, জাকিরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া টাকা ভাগাভাগি করার আগেই তাঁরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, আজহারুলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাহেরচরে। বাকি তিনজন ঢাকার সবুজবাগের ভাইগদিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা।
প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন সপরিবার সবুজবাগ থানার ভাইগদিয়া এলাকায় থাকতেন। ৪ জুন জাকির হোসেন নিখোঁজ হন। এরপর স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান পাননি। পরদিন জাকির নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাঁর স্ত্রী রেখা বেগম সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর মধ্যে জাকিরের খোঁজ না পাওয়ায় তিনি ১০ জুন আজহার আলীসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সবুজবাগ থানায় একটি অপহরণের মামলা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, এ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এলাকার ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত আজহারুলকে শনাক্ত করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আজহারের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় জড়িত অভিযোগে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অপর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাতে জাকির হোসেনকে ভাইগদিয়ায় দাফন করা হয়।
সবুজবাগ থানার ওসি ইয়াছিন আলী প্রথম আলোকে বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে জাকিরকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করলেও তদন্তে এখন পর্যন্ত এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। জাকির হত্যায় আরও একজন জড়িত। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।