‘কুরুলুস উসমান’ সিরিজে ‘তুরগুত আল্প’, ভক্তদের উচ্ছ্বাস
Published: 1st, May 2025 GMT
জনপ্রিয় তুর্কি টেলিভিশন সিরিজ ‘কুরুলুস উসমান’-এ যুক্ত হয়েছেন তুরগুত আল্প বা তুরগুত বে চরিত্র রূপায়নকারী জেনজিস জোশকুন। তাকে কুরুলুস ওসমানের ষষ্ঠ সিজনের ১৯০তম পর্বে দেখা যাচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) প্রকাশিত কুরুলুস উসমানের ১৯০তম পর্বের দ্বিতীয় ট্রেইলারে দেখা গেছে জেনজিস জোশকুনকে। এরপর থেকে উচ্ছ্বাসে মেতেছেন বাংলাদেশি তুর্কি সিরিজপ্রেমীরা। বুধবার (৩০ এপ্রিল) দিবাগত মধ্যরাতে তুরস্কের টেলিভিশন চ্যানেল এটিভি’তে প্রচার হয় পর্বটি। বৃহস্পতিবার (১ মে) থেকে বাংলা সাবটাইটেল যুক্ত ১৯০তম পর্ব বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পাওয়া যাচ্ছে।
‘দিরিলিস আর্তুগ্রুল’ সিরিজে আর্তুগ্রুল গাজীর চরিত্রে অভিনয় করেন এনজিন আলতান। তার সহচর হিসেবে তুরগুগ বে চরিত্রে অভিনয় করেছেন জেনজিস জোশকুন। তখন থেকে জেনজিস জোশকুন বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।
আরো পড়ুন:
সিদ্দিককে লাঞ্ছিত, শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলা: যা বললেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি
অভিনেতা সিদ্দিককে গণধোলাই দিয়ে থানায় সোপর্দ
দীর্ঘদিন ধরেই কুরুলুস উসমান সিরিজে জেনজিস জোশকুনের আগমনের অপেক্ষায় ছিলেন দর্শকরা। অবশেষে এ অপেক্ষার অবসান হলো। তার ফিরে আসা কুরুলুস উসমান সিরিয়ালকে আরো প্রাণবন্ত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে বিশেষ করে বাংলাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে ‘দিরিলিস আর্তুগ্রুল’ ও ‘কুরুলুস উসমান’ সিরিজ। ‘দিরিলিস আর্তুগ্রুল’ সিরিজ বহু আগেই শেষ হয়েছে। বর্তমানে চলছে ‘কুরুলুস উসমান’ এর ১৯০তম পর্ব।
‘কুরুলুস উসমান’ উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা উসমান গাজী প্রথমের জীবন এবং তার সংগ্রাম নিয়ে নির্মিত। সিরিজটি ইতিহাস, রাজনীতি, সামরিক কৌশল এবং মুসলিম ঐতিহ্যের একটি চমৎকার মিশ্রণ উপস্থাপন করেছে, যা দর্শকদের মধ্যে গভীর আকর্ষণ সৃষ্টি করেছে।
ঐতিহাসিক চরিত্র তুরগুত আল্প (জন্ম আনুমানিক ১২০০-মৃত্যু ১৩২৩/২৪) ছিলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রথম দিকের গাজীদের একজন। তিনি তুর্কি ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এবং বিখ্যাত যোদ্ধা ছিলেন। তিনি ছিলেন আর্তুগ্রুল গাজীর আজীবন বন্ধু, রক্তের ভাই এবং ঘনিষ্ঠ আত্মবিশ্বাসী। সেইসঙ্গে তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত অনুগামী ও সহায়ক একজন বুদ্ধিমান ও দক্ষ ব্যক্তি।
যদিও তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না। তবে এটি ভালোভাবেই জানা যায়, তিনি শুধু একজন ঐতিহাসিক চরিত্রই নন, বরং লোককাহিনিতেও একজন কিংবদন্তি বীর হিসেবে আবির্ভূত হন। পাশাপাশি তার যুদ্ধ জীবনের অভিযান ও কৃতিত্ব প্রথম উসমানীয় ইতিহাসবিদদের লেখায় এবং কিছু বাইজেন্টাইন উৎসে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
দীর্ঘ জীবন পেয়েছিলেন তুরগুত আল্প। আর্তুগ্রুল বেইমের মৃত্যু পরও ৩৫ বছর বেঁচে ছিলেন এবং ১২৫ বছর বয়সে যুদ্ধক্ষেত্রে, তার কিংবদন্তিসম কুঠার (ব্যাটল-অ্যাক্স) হাতে নিয়ে শহীদ হন।
আর্তুগ্রুল গাজীর মৃত্যুর পর তুরগুত আল্প উসমান গাজীর প্রধান সহায়ক ও ঘনিষ্ঠ আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন এবং উসমানের মৃত্যুর (৬৭ বছর বয়সে) সময় পর্যন্ত তার পাশে থাকেন।
প্রথম উসমানীয় উৎস অনুযায়ী, তুরগুত আলপ ১২৯১ সালে কারাচাহিসার দুর্গের দ্বিতীয় বিজয়ে উসমান বেইয়ের পাশে ছিলেন এবং পরে উসমানের সব বিজয় অভিযানে অংশ নেন। ১২৯৯ সালে উসমান গাজী তাকে ইনেগোল (প্রাচীন নাম: অ্যাঞ্জেলাকোমা) দখলের দায়িত্ব দেন। বিজয়ের পর, শহরটির শাসন এবং প্রশাসনের দায়িত্ব তুরগুত আল্পের হাতে অর্পিত হয়। তিনি ৩৬ বছর শাসন করেন এবং সেই সময়ে ইনেগোলে শান্তি ও সমৃদ্ধি বজায় ছিল।
উসমান গাজীর মৃত্যুর পরও প্রবীণ তুরগুত সুলতান ওরহান গাজীকে একইরূপে সমর্থন প্রদান অব্যাহত রাখেন এবং তার পরামর্শদাতা ও যুদ্ধে সহচর হিসেবে পাশে থাকেন, যতক্ষণ না তিনি যুদ্ধে শহীদ হন। তুরগুত আল্প ওরহানেলি দুর্গ (প্রাচীন নাম: আত্রানোস দুর্গ) বিজয়ের সময় শহীদ হন। তিনি আর্তুগ্রুল গাজী, উসমান গাজী এবং ওরহান গাজীর সময়ে আল্প বা যোদ্ধাদের প্রধান কমান্ডার ছিলেন।
তার মৃত্যুর পর, তুরগুত আল্পকে ইনেগোলের কাছে পাহাড়ি অঞ্চলের একটি শান্ত এবং নিভৃত কবরস্থানে সমাহিত করা হয়, যা বর্তমানে তুরগুত আল্প গ্রাম নামে পরিচিত। আর্তুগ্রুল গাজীর মাজারের বাইরে যে কবরটি দেখা যায়, সেটি কেবল একটি প্রতীকী (সম্মানসূচক) সমাধি, সেটি তার প্রকৃত কবর নয়।
ঢাকা/মেহেদি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ট ভ ন টক আর ত গ র ল গ জ র ক র ল স উসম ন উসম ন গ জ চর ত র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫