মদিনায় হিজরতের পর একটি মসজিদ নির্মাণ করা জরুরি হয়ে পড়ে। কুবা পল্লীতে একটি মসজিদের জায়গা পাওয়া যায়। কুবা মসজিদ নির্মাণকাজে সবার সঙ্গে মহানবী (সা.) নিজে অংশগ্রহণ করেন। কুলসুম (রা.)-এর নিজস্ব একখণ্ড জমিতে মসজিদটি নির্মিত হয়। পবিত্র কোরআনের সুরা তাওবায় এই মসজিদের উল্লেখ আছে। হিজরতের সময় মুহাম্মদ (সা.) মদিনায় আসার পথে কুবা নামক স্থানে এসে ১৪ দিন অবস্থান করেন। এখানে মসজিদটি নির্মাণ করেন। এটি নবীজির (সা.

) হাতে নির্মিত প্রথম মসজিদ। কোরআনে আছে, ‘মসজিদের ভিত্তি প্রথম দিন থেকেই ধর্মকর্মের জন্য স্থাপিত হয়েছে, ওখানেই নামাজের জন্য তোমার দাঁড়ানো উচিত। ওখানে পবিত্র হতে চায় এমন লোক তুমি পাবে, আর যারা পবিত্র হয় আল্লাহ্ তাদের পছন্দ করেন।’ (সুরা তওবা, আয়াত: ১০৮)

এ মসজিদে নামাজ আদায়ের ফজিলত প্রসঙ্গে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে যে, ‘মসজিদে কুবায় দুই রাকাত নামাজ একটি ওমরাহর সমান।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩২৪)।

আরও পড়ুন মসজিদে নববি ভ্রমণ করা যাবে ঘরে বসেই৩০ জানুয়ারি ২০২৩

ইতিহাস থেকে জানা যায়, কুবা মসজিদের জায়গাটি ছিল কুলসুম ইবনুল হিদম (রা.) নামের এক ব্যক্তির। খেজুর শুকানোর পতিত জমি। তিনি ছিলেন আমর ইবনে আওফের গোত্রপতি। এখানে রাসুল (সা.) ১৪ দিন অবস্থান করেন ও তার আতিথ্য গ্রহণ করেন।

মক্কা থেকে ৩২০ কিলোমিটার উত্তরে এবং মদিনার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত এই মসজিদ কুবা গ্রামে অবস্থিত। মসজিদে নববি থেকে এর দূরত্ব মাত্র পাঁচ কিলোমিটার কুবা একটি বিখ্যাত কূপের নাম। সময়ের পরিক্রমায় এ কূপকে কেন্দ্র করে যে জনবসতি গড়ে উঠেছে। এই সূত্রে মসজিদের নাম হয়ে যায় মসজিদে কুবা।

মসজিদে কুবা শুরু থেকে এ পর্যন্ত কয়েক দফা সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করা হয়। মহানবীর (সা.) আমলের পর ইসলামের তৃতীয় খলিফা উসমান (রা.) তার খেলাফতকালে মসজিদে কুবার সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে আরও বেশ কয়েকবার এই মসজিদের পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়। ৪৩৫ হিজরিতে আবু ইয়ালি আল-হোসায়নি মসজিদের মিহরাব তৈরি করেন। উসমানি সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ মসজিদটির সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করেন। ও তার ছেলে সুলতান প্রথম আবদুল মাজিদ ১২৪৫ হিজরিতে সর্বশেষ সংস্কার করেন।

আরও পড়ুনমদিনার প্রাণকেন্দ্র মসজিদে নববি০৩ জুন ২০২৪

১৯৮৬ সালে বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ আলে সৌদের সময় সম্প্রসারণ করা হয়। পুরো মসজিদে এক ধরনের সাদা পাথর ব্যবহার করা হয়, যা অন্য কোনো মসজিদে সাধারণত দেখা যায় না।

মসজিদে কুবায় চারটি উঁচু মিনার, ছাদে ১টি বড় গম্বুজ এবং ৫টি অপেক্ষাকৃত ছোট গম্বুজ রয়েছে। এছাড়া ছাদের অন্য অংশে ৫৬টি ছোট গম্বুজের অবয়ব রয়েছে। ২০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন এই মসজিদে।

মূল মসজিদ ছাড়াও এখানে রয়েছে আবাসিক এলাকা, অফিস, অজুখানা, দোকান ও লাইব্রেরি। তবে মসজিদের মূল আকর্ষণ বিশাল গম্বুজ এবং চার কোনায় চারটি সুউচ্চ মিনার। মসজিদের চতুর্দিকের সবুজ পাম গাছের বলয় মসজিদটিকে বাড়তি সৌন্দর্য দিয়েছে। মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন প্রচুর মানুষ আসেন। মসজিদে নারী ও পুরুষদের নামাজের জায়গা ও প্রবেশ পথ আলাদা। অজুর জায়গাও ভিন্ন। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মসজিদের ভেতরের কারুকাজও বেশ মনোমুগ্ধকর।

আরও পড়ুনযেভাবে নির্মিত হলো মসজিদে নববি২০ ডিসেম্বর ২০২৪

মূল মসজিদ ভবনের মাঝে একটি খালি জায়গা আছে, সেখানেও নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে। দামি কার্পেট বিছানো মেঝেতে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেন। এছাড়াও রয়েছে জমজম পানির ব্যবস্থা।

মসজিদে ৭টি মূল প্রবেশ দ্বার ও ১২টি সম্পূরক প্রবেশ পথ রয়েছে। প্রতিটি ১০ লাখ ৮০ হাজার থার্মাল ইউনিট বিশিষ্ট তিনটি কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র রয়েছে।

সম্প্রতি মসজিদে নববি থেকে মসজিদে কুবায় পায়ে হেঁটে যাওয়া সহজ করার জন্য কুবা স্কয়ার করা হয়েছে। মসজিদে নববি থেকে পায়ে হেঁটে যেতে প্রায় ৪৫ মিনিট সময় লাগে। ব্যাটারি চালিত গাড়িতেও যাওয়া যায়। ইবনে উমর (রা.)-এর হাদিস থেকে জানা যায়, রাসুল (সা.) মসজিদে কুবাতে যেতেন (কখনও) হেঁটে এবং কখনও বাহনে চড়ে। কুবা মসজিদে দুই রাকাত নামাজ পড়তেন। (বুখারি)

আরও পড়ুনমক্কার পর পবিত্রতম শহর মদিনা৩০ জুন ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র ম ণ কর মসজ দ র গম ব জ ণ কর ন প রথম অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিটের ভূমি অধিগ্রহণে জালিয়াতি, মামলার অনুমোদন

প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহণের ৪ কোটি ৭১ লাখ ৭৬ হাজার ৪১৮ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মো. রিয়াজ উদ্দীন নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুদকের ডেপুটি ডিরেক্টর আকতারুল ইসলাম (জনসংযোগ) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঢাকা ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (লাইন-১) অধীন রূপগঞ্জ উপজেলার পিতলগঞ্জ মৌজায় ডিপো এক্সেস করিডোর নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। জালিয়াতির মাধ্যমে মো. রিয়াজ উদ্দীন নামে এক ব্যক্তি প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তার ভূমি অধিগ্রহণের নামে সরকারি কোষাগার থেকে ৪ কোটি ৭১ লাখ ৭৬ হাজার ৪১৮ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।

আরো পড়ুন:

ফেনীতে ছাত্র হত্যা: শেখ হাসিনাসহ ২২১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

নূরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা, ১২ বছর পর তোলা হলো আবু বকরের দেহাবশেষ

দুদক জানায়, অভিযুক্ত ব্যক্তি রিয়াজ সংশ্লিষ্ট জমির মূল দলিল হারিয়ে গেছে মর্মে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানায় পাঁচটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরবর্তীতে তিনি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে ওই দলিলগুলোর সার্টিফায়েড কপি উত্তোলন করে ভূমি অধিগ্রহণ অফিসে জমা দেন এবং ক্ষতিপূরণের টাকা উত্তোলন করেন।

শুধু তাই নয়, ওই রিয়াজের বিরুদ্ধে বড় ধরনের প্রতারণার প্রমাণও পেয়েছে দুদক। সে তার জমি ইতোপূর্বে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (সোনালী ব্যাংক) কাছে বন্ধক রাখে এবং বন্ধকী দলিল এখনো কার্যকর রয়েছে।

প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করায় মো. রিয়াজ উদ্দীনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪০৬/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারায় মামলার অনুমোদন করা হয় বলে দুদক জানায়।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ