বিনন্দ ঋষির বয়স ২২ বছরের মতো। রুগ্ণ শরীর, এক পায়ে পরানো লোহার শিকল। মন চাইলেও কোথাও ছুটতে পারেন না। শিকলে সীমাবদ্ধ জায়গাতেই তাঁর হাসি-কান্না। ছয় বছর বয়স থেকেই বিনন্দকে শিকলবন্দী করে রাখতে হয়েছে পরিবারের। অর্থাভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন অসুস্থ ছেলের চিকিৎসাও করাতে পারেননি বাবা। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায়।
ফুলবাড়িয়া পৌরসভার হাসপাতাল সড়কের বাসিন্দা নিমাই চন্দ্র ঋষির ছেলে বিনন্দ ঋষি। নিমাই চন্দ্র কামারের কাজ করে জীবন চালান। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে পঞ্চম বিনন্দ। তাঁকে বাড়ির আঙিনায় শিকলে আটকে রাখতে হয়।
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, বিনন্দ অন্য শিশুদের মতো স্বাভাবিকভাবে জন্ম নিয়ে বেড়ে উঠছিল। বয়স যখন তিন বছর, তখন হঠাৎ মুখে একধরনের ঘা দেখা দেয়। এর পর থেকে ক্রমাগত মুখ থেকে লালা পড়তে শুরু করে। কিন্তু তাঁর চিকিৎসা করাতে পারেনি পরিবার। একসময় অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে। নিজের বাড়ির জিনিসপত্র ভাঙচুর, অন্যের বাড়িতে গিয়ে জিনিসপত্রের ক্ষতি করা এবং বাড়ি থেকে চলে যেত। ছেলের এমন আচরণের কারণে ছয় বছর বয়স থেকে তাঁকে শিকলবন্দী করে রাখতে শুরু করেন মা–বাবা। আর রাতের বেলায় ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়। শিকল ছাড়া থাকলে তিনি বিভিন্ন জায়গায় চলে যান, পরে খুঁজে আনতে হয়।
বিনন্দের মা চাম্মুনি ঋষি বলেন, ছেলের যখন চার বছর, তখন থেকেই তাঁর আচরণ কেমন জানি অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। সারা দিন শুধু চিল্লাচিল্লি করে। মানুষরে মারধর করে, ভাঙচুর করে, বাড়ি থেকে চলে যায়। তখন ছেলেকে শিকল দিয়ে রাখতে শুরু করেন। দরিদ্র বলে ছেলের চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য তাঁদের নেই।
বাবা নিমাই চন্দ্র ঋষি বলেন, কামারের কাজ করে কোনো রকমে সংসার চালান। ছেলের চিকিৎসা করানোর টাকা তাঁদের নেই। সরকারিভাবে চিকিৎসার কোনো সুযোগ থাকলে তার ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানান তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা শামীম আহম্মেদ বলেন, ‘ছেলেটি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হওয়ার পর থেকেই শিকলবন্দী অবস্থায় কাটাচ্ছে। বছর দু-এক আগেও শারীরিকভাবে হৃষ্টপুষ্ট ছিল, এখন দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। ছেলেটা চিকিৎসা পেলে সুস্থ হয়ে উঠত। কিন্তু বিনন্দের পরিবার খুবই দরিদ্র।’
বিনন্দের বিষয়টি নজরে আনা হলে ফুলবাড়িয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘আমরা শিকলবন্দী তরুণের খোঁজ নেব। স্থানীয় ফুলবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য পরিবার নিয়ে গেলে আমরা আর্থিক সহযোগিতা করব। এ ছাড়া যদি উন্নত চিকিৎসার জন্য পাবনা বা অন্য কোথাও নিতে হয়, সে ক্ষেত্রে যে ধরনের সহযোগিতা করা দরকার তা করা হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ কলবন দ ব নন দ র পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
বর্ষার শুরুতেই সপ্তাহব্যাপী বৃষ্টির বার্তা
আজ আষাঢ়ের প্রথম দিন। বর্ষার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো। বর্ষার প্রথম দিন থেকেই বৃষ্টির বার্তা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, আজ রোববার বৃষ্টি হবে। পরদিন থেকে বৃষ্টিপাত বাড়বে। আগামী ২২ জুন পর্যন্ত সারাদেশে প্রতিদিন বৃষ্টি হবে। ফলে চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙামাটি ও কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কোথাও কোথাও অস্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে। এ সময় দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে কখনও কখনও হতে পারে বজ্রপাত। বজ্রপাতে অনেক প্রাণহানি হচ্ছে ইদানীং। সে জন্য বজ্রধ্বনি শুনলেই ঘরে যেতে হবে। এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশের ওপর মৌসুমি বায়ু এখন কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। ফলে বিভিন্ন স্থানে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তবে তাপদাহ নিয়ে অস্বস্তির মধ্যে আজ রোববার থেকে টানা বৃষ্টির আভাস রয়েছে। ঢাকাসহ চারটি জেলা ও পাঁচটি বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি কোথাও কোথাও বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল রংপুরের ডিমলায়। এ ছাড়া বান্দরবানে সর্বনিম্ন ২৪ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
টানা কয়েকদিনের তীব্র তাপপ্রবাহের পর গতকাল ময়মনসিংহসহ দেশের বেশ কয়েক এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ রোববার রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ মাঝারি ধরনের বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে।
তাপপ্রবাহের বিষয়ে বলা হয়েছে, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মাদারীপুর ও কিশোরগঞ্জসহ রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা কিছু কিছু জায়গায় প্রশমিত হতে পারে।