এপার থেকে দেখলে মনে হবে নদীটির ওপারে সভ্য সমাজের বাইরের কোনো জনগোষ্ঠীর বসবাস। যাদের এ সমাজে বিচরণ সীমিত রাখতে নদীপথে একটি রশিটানা খেয়া নৌকা ছাড়া যাতায়াতের সব পথ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে।

মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার এই অংশটুকু বিভক্ত করেছে জুড়ী নদী। যার এক প্রান্তে জুড়ী সদর এলাকার একাংশ। অপর প্রান্তে রয়েছে সাগরনাল ইউনিয়নের কাশিনগর, রানীমুড়া, পাতিলাসাঙ্গর ও বটনিঘাট, জায়ফরনগর ইউনিয়নের মনতৈল, চম্পকলতা, গৌরীপুর ও মোহাম্মদ নগর (সরকারি গুচ্ছগ্রাম) এবং গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের মাগুরা। এসব গ্রামে ১২ সহস্রাধিক মানুষের বসবাস। এ ইউনিয়নের মানুষকে জুড়ীর মূল অংশে আসতে হলে একমাত্র পথ হচ্ছে ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার হেঁটে ঘাটে এসে রশিটানা নৌকায় নদী পার হওয়ার পর আরও দুই কিলোমিটার হেঁটে শহরে পৌঁছানো।

উপজেলার এ অংশের বাসিন্দা ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ ক্ষোভ আর হতাশা নিয়ে বলেন, মাঝেমধ্যে মনে হয় আমরা সদর ও শহরের সভ্য, আধুনিক সমাজ থেকে বিচ্যুত। যাদের একটা ভালো সড়ক নাই, একটা স্কুল নাই, একটা সেতু জোটে না যে এলাকার মানুষের বারবার অনুরোধেও। তাদের আর কী বলা যায়।

সড়ক যোগাযোগ না থাকায় ব্রিটিশ শাসনামলে জুড়ী নদীর তৎকালীন সদজুড়ী খাল এ অংশ পারাপারের জন্য রশিটানা নৌকার ব্যবহার শুরু হয়। ২০২৫ সালে এসেও সেই রশি টানাটানি বন্ধ হয়নি।

উপজেলা সদরের নিকটবর্তী সাগরনাল ইউনিয়নের কাশিনগর গ্রাম থেকে বীর গোগালী গ্রামের (রানীমুড়া ঘাট) মধ্যে অবস্থিত জুড়ী নদী। এই নদীই স্থানীয় উপজেলার উল্লিখিত অংশের বাসিন্দাদের সদরসহ অন্য এলাকায় যাওয়ার একমাত্র পথ। এই নদী তাদের পার হতে হয় রশিটানা নৌকায় করে। স্থানীয় ব্যবসায়ী, কৃষকসহ অন্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের বাড়ির উঠানে কোনোদিন চাকাবিশিষ্ট কোনো যান যায়নি। নদীর এই অংশে একটা সেতু অন্তত ৫ থেকে ৭ হাজার মানুষের ভাগ্য আমূল পাল্টে দিতে পারে। কেন সেটা করা হচ্ছে, তা তাদের জানা নেই।

ইউনিয়নের একাধিক এলাকা ও ঘাটপাড় ঘুরে দেখা যায়, নদী পথে নিয়মিত পার হচ্ছেন গ্রামবাসী। সেজন্য ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার পথ হেঁটে স্থানীয়দের আসতে হয় ঘাটে। নৌকায় নদী পার হয়ে সেখান থেকে আবার দুই কিলোমিটার পথ হেঁটে পৌঁছাতে হয় উপজেলা শহরে।

যোগাযোগের দুরবস্থার কারণে উপজেলার এই অংশে নেই কোনো স্কুল বা বড় বাজার। ক্রমে ঝিমিয়ে পড়ছে সামাজিক অর্থনীতি ও উৎপাদনমুখী কৃষিখাত। একটি সেতুর অভাবে ওই তিন ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে উৎপাদিত কৃষিপণ্য সদরসহ জুড়ীর বিভিন্ন বাজারে যাইয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। এতে করে উপজেলার এই অংশের কৃষির সম্ভাবনা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন দুটিই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জায়ফর নগর ইউপি চেয়ারম্যান মাছুম রেজা বলেন, পাশের ইউনিয়নের কাশিনগর গ্রামের মানুষের যাতায়াতের সমস্যা দীর্ঘদিনের। আধুনিক সমাজে এমন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন জনবসতি নেই। রশিটানা নৌকায় করে তাদের এ পারে আসতে হচ্ছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিশুরাও ওভাবে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। এ ঘাটে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা একান্ত দরকার।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাবলু সূত্রধর বলেন, কাশিনগর রানীমুড়া খেয়াঘাটে সেতুর প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত তাঁকে কিছুই জানানো হয়নি। সেখানকার মানুষের এ দুর্ভোগের কথা তিনি জানতেন না। শিগগিরই সরেজমিন সেখানকার পরিস্থিতি বিবেচনা করে পদক্ষেপের ব্যাপারে জোর তৎপরতা চালানো হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল র এ র এই অ শ ক শ নগর

এছাড়াও পড়ুন:

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম মো. আরিফুল। শুক্রবার বেলা এগারোটার দিকে তিনি ভবন থেকে পড়ে যান বলে জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক নিংতম বলেন, বেলা এগারোটার দিকে কয়েকজন ওই শ্রমিককে নিয়ে আসেন। অবস্থা গুরুতর দেখে তখনই তাঁকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

নির্মাণাধীন ভবনটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মোমিনুল করিম শুক্রবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ভবনটির নির্মাণকাজ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। তবে কিছু শ্রমিক ওই ভবনে থাকেন। দুপুরের দিকে তিনি জানতে পারেন একজন শ্রমিক ভবন থেকে পড়ে গেছেন। তাঁকে এনাম মেডিকেলে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিলো। সন্ধ্যাবেলায় তাঁকে জানানো হয় ওই শ্রমিক মারা গেছেন।

তবে এনাম মেডিকেলের ডিউটি ম্যানেজার সুলতান প্রথম আলোকে বলেন, জাহাঙ্গীরনগর থেকে একজন রোগীকে আনা হয়েছিল। উনি ছাদ থেকে পড়ে গেছেন বলে জানানো হয়। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তিনি মারা যান।

শুক্রবার রাত পৌনে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম রাশিদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আধা ঘণ্টা আগে খবর পেয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। এমন একটি ঘটনা আমাদের আগে জানানো হয়নি কেন, তা জিজ্ঞাসা করেছি। বিষয়টি প্রো-ভিসি (এডমিন) দেখছেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ