রশিটানা নৌকায় নদী পার, শহরে যাতায়াত হেঁটে
Published: 1st, May 2025 GMT
এপার থেকে দেখলে মনে হবে নদীটির ওপারে সভ্য সমাজের বাইরের কোনো জনগোষ্ঠীর বসবাস। যাদের এ সমাজে বিচরণ সীমিত রাখতে নদীপথে একটি রশিটানা খেয়া নৌকা ছাড়া যাতায়াতের সব পথ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার এই অংশটুকু বিভক্ত করেছে জুড়ী নদী। যার এক প্রান্তে জুড়ী সদর এলাকার একাংশ। অপর প্রান্তে রয়েছে সাগরনাল ইউনিয়নের কাশিনগর, রানীমুড়া, পাতিলাসাঙ্গর ও বটনিঘাট, জায়ফরনগর ইউনিয়নের মনতৈল, চম্পকলতা, গৌরীপুর ও মোহাম্মদ নগর (সরকারি গুচ্ছগ্রাম) এবং গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের মাগুরা। এসব গ্রামে ১২ সহস্রাধিক মানুষের বসবাস। এ ইউনিয়নের মানুষকে জুড়ীর মূল অংশে আসতে হলে একমাত্র পথ হচ্ছে ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার হেঁটে ঘাটে এসে রশিটানা নৌকায় নদী পার হওয়ার পর আরও দুই কিলোমিটার হেঁটে শহরে পৌঁছানো।
উপজেলার এ অংশের বাসিন্দা ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ ক্ষোভ আর হতাশা নিয়ে বলেন, মাঝেমধ্যে মনে হয় আমরা সদর ও শহরের সভ্য, আধুনিক সমাজ থেকে বিচ্যুত। যাদের একটা ভালো সড়ক নাই, একটা স্কুল নাই, একটা সেতু জোটে না যে এলাকার মানুষের বারবার অনুরোধেও। তাদের আর কী বলা যায়।
সড়ক যোগাযোগ না থাকায় ব্রিটিশ শাসনামলে জুড়ী নদীর তৎকালীন সদজুড়ী খাল এ অংশ পারাপারের জন্য রশিটানা নৌকার ব্যবহার শুরু হয়। ২০২৫ সালে এসেও সেই রশি টানাটানি বন্ধ হয়নি।
উপজেলা সদরের নিকটবর্তী সাগরনাল ইউনিয়নের কাশিনগর গ্রাম থেকে বীর গোগালী গ্রামের (রানীমুড়া ঘাট) মধ্যে অবস্থিত জুড়ী নদী। এই নদীই স্থানীয় উপজেলার উল্লিখিত অংশের বাসিন্দাদের সদরসহ অন্য এলাকায় যাওয়ার একমাত্র পথ। এই নদী তাদের পার হতে হয় রশিটানা নৌকায় করে। স্থানীয় ব্যবসায়ী, কৃষকসহ অন্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের বাড়ির উঠানে কোনোদিন চাকাবিশিষ্ট কোনো যান যায়নি। নদীর এই অংশে একটা সেতু অন্তত ৫ থেকে ৭ হাজার মানুষের ভাগ্য আমূল পাল্টে দিতে পারে। কেন সেটা করা হচ্ছে, তা তাদের জানা নেই।
ইউনিয়নের একাধিক এলাকা ও ঘাটপাড় ঘুরে দেখা যায়, নদী পথে নিয়মিত পার হচ্ছেন গ্রামবাসী। সেজন্য ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার পথ হেঁটে স্থানীয়দের আসতে হয় ঘাটে। নৌকায় নদী পার হয়ে সেখান থেকে আবার দুই কিলোমিটার পথ হেঁটে পৌঁছাতে হয় উপজেলা শহরে।
যোগাযোগের দুরবস্থার কারণে উপজেলার এই অংশে নেই কোনো স্কুল বা বড় বাজার। ক্রমে ঝিমিয়ে পড়ছে সামাজিক অর্থনীতি ও উৎপাদনমুখী কৃষিখাত। একটি সেতুর অভাবে ওই তিন ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে উৎপাদিত কৃষিপণ্য সদরসহ জুড়ীর বিভিন্ন বাজারে যাইয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। এতে করে উপজেলার এই অংশের কৃষির সম্ভাবনা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন দুটিই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
জায়ফর নগর ইউপি চেয়ারম্যান মাছুম রেজা বলেন, পাশের ইউনিয়নের কাশিনগর গ্রামের মানুষের যাতায়াতের সমস্যা দীর্ঘদিনের। আধুনিক সমাজে এমন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন জনবসতি নেই। রশিটানা নৌকায় করে তাদের এ পারে আসতে হচ্ছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিশুরাও ওভাবে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। এ ঘাটে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা একান্ত দরকার।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাবলু সূত্রধর বলেন, কাশিনগর রানীমুড়া খেয়াঘাটে সেতুর প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত তাঁকে কিছুই জানানো হয়নি। সেখানকার মানুষের এ দুর্ভোগের কথা তিনি জানতেন না। শিগগিরই সরেজমিন সেখানকার পরিস্থিতি বিবেচনা করে পদক্ষেপের ব্যাপারে জোর তৎপরতা চালানো হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপজ ল র এ র এই অ শ ক শ নগর
এছাড়াও পড়ুন:
সাবেক সচিব মিহির কান্তিসহ ১০ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
সাবেক সচিব ও উদ্দীপনের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিহির কান্তি মজুমদারসহ ১০ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্লকের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মো. তানজির আহমেদ এ তথ্য জানান।
নিষেধাজ্ঞা পাওয়া অন্যরা হলেন- উদ্দীপনের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জাকিয়া কে হাসান, সাবেক কোষাধ্যক্ষ ড. মো. গোলাম আহাদ, সাবেক সদস্য মো. মাহবুবুর রহমান, সাবেক সদস্য, মো. নজরুল ইসলাম খান, নাহিদ সুলতান, ভবতোষ নাথ, ডা. আবু জামিন ফয়সাল, শওকত হোসেন ও সাবেক নির্বাহী পরিচালক বিদ্যুৎ কুমার বসু।
আবেদনে বলা হয়, দায়িত্ব পালনকালে পরস্পর যোগসাজশে ব্যক্তিগত লাভ ও আত্মসাতের উদ্দেশ্যে মাইক্রোক্রেডিট আইন (২০০৬)-এর ২৪/৩ ধারা ও বিধি (২০১০) এর বিধি ১৯(১) লঙ্ঘন করে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ক্ষুদ্রঋণ তহবিল হতে অনুমোদনহীন নামমাত্র ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট গোল্ডব্রিকস ও ব্যাটারি প্রকল্পে যথাক্রমে প্রায় ৮ কোটি ৯৭ লাখ ৮১ হাজার ৩৭৭ টাকা ও ৪ কোটি ৪৮ লাখ ৪৬৬ টাকা বিনিয়োগ দেখিয়ে তহবিল হতে স্থানান্তর করেছেন। উক্ত জালিয়াতি সম্পর্কিত একটি মামলা দুর্নীতি দমন কমিশনে তদন্তাধীন।