পরিবার বলছে পরিকল্পিত হত্যা, মামলা নেয়নি পুলিশ
Published: 1st, May 2025 GMT
গাজীপুর মহানগরের হায়দরাবাদ তাল গাছিয়ারটেক এলাকায় গাছে বেঁধে নির্যাতনের শিকার এক ইমাম কারাগারে মারা গেছেন। পরিবারের অভিযোগ, তাঁকে অপবাদ দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা নেয়নি পুলিশ। মারা যাওয়া মাওলানা রইস উদ্দিন ওই এলাকার আখলাদুল জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব ছিলেন।
গত রোববার সকালে মসজিদ থেকে রইস উদ্দিনকে তুলে নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে গলায় পরিয়ে দেওয়া হয় জুতার মালা। এরপর তাঁর ওপর চলতে থাকে নির্মম নির্যাতন। একদল ব্যক্তি অনেক মানুষের সামনে তাঁকে বেদম পিটিয়ে পুলিশে খবর দেয়। নির্যাতনকারীদের অভিযোগ, রইস উদ্দিন শিশু-কিশোরদের ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করতেন।
পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আদালতের নির্দেশে তাঁকে গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। ওই রাতেই কারাগারে মারা যান রইস উদ্দিন।
গাজীপুর জেলা কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার রফিকুল কাদের বলেন, রইসকে কারাগারে গ্রহণ করার সময় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপত্র তাঁর সঙ্গে ছিল। রাতে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে দ্রুত তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।’
তবে নিহতের পরিবার ও স্থানীয়দের দাবি, রইস উদ্দিনকে একটি পক্ষ পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। পরিবার বলছে, রইসের বয়ান মসজিদের এক পক্ষ পছন্দ করত না। দীর্ঘদিন ধরেই তারা বিরোধ সৃষ্টি করে রেখেছিল। এই বিরোধ থেকেই নাটক সাজিয়ে এক কিশোরের মাধ্যমে তাকে ফাঁসানো হয়।
রইস উদ্দিন চাঁদপুরের মতলব থানার মৃত বাদশা মিয়ার ছেলে। গাজীপুর মহানগরের ঝাজর এলাকায় জমি কিনে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন।
ঘটনার পরদিন নিহত ইমামের স্ত্রী মাজেদা আক্তার বাদী হয়ে পূবাইল থানায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৩০ জনকে আসামি করে একটি এজাহার জমা দেন।
এজাহারে তিনি লিখেছেন, তাঁর স্বামী নিয়মিত জুমার নামাজ ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে বয়ান দিতেন। তবে হায়দরাবাদ এলাকায় দুইটি পক্ষ ছিল। এক পক্ষ তাঁর বয়ান পছন্দ করত, অপর পক্ষ হিংসা করত এবং তাঁকে মসজিদ থেকে বিতাড়িত করতে চাইত। পরে নাটক সাজিয়ে তাঁকে গাছে বেঁধে নির্মমভাবে মারধর করা হয়। মাথার চুল কেটে গলায় জুতার মালা পরিয়ে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ঘটনাটি পরিবারকে না জানিয়ে চার ঘণ্টা পর পুলিশে খবর দেয় নির্যাতনকারীরা। অতিরিক্ত মারধরের কারণে কারাগারে নেওয়ার পর রাতেই তাঁর মৃত্যু হয়।
ঘটনার চার দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও মামলা রেকর্ড হয়নি, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা। তারা দ্রুত বিচার ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে গাজীপুর মহানগরের পূবাইল থানার ওসি আমিরুল ইসলাম বলেন, মাওলানা রইস উদ্দিনের স্ত্রী বাদী হয়ে এজাহার দিয়েছেন। তবে তারা একটি সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে বিষয়টি তদন্ত করছেন। মামলা রেকর্ড হয়নি।
এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল বুধবার গাজীপুর শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত। এতে নেতৃত্ব দেন ইসলামী বক্তা গিয়াস উদ্দিন আত্ব তাহেরী। তিনি বলেন, মতাদর্শিক ভিন্নতার কারণে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রইস উদ্দিনকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?