দেশের সিংহভাগ আমদানি-রপ্তানি হয় চট্টগ্রামে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর দিয়ে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য আমদানি হওয়ার পর সেগুলো বিভিন্ন লাইটার জাহাজের মাধ্যমে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন ঘাট হয়ে গুদামজাত হয়। এরপর সেখান থেকে যায় বিভিন্ন বাজারে। লাইটার জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের সঙ্গে জড়িত শত শত শ্রমিক দিন রাত পরিশ্রম করেন। তারপরও কষ্টে চলে তাদের সংসার।
চট্টগ্রাম মহানগরীর মাঝিরঘাট এলাকায় ১৭টি ঘাটে আমদানি পণ্য খালাস হয়। আর এসব খালাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রায় ৪ হাজার ঘাট শ্রমিক। এই শ্রমিকরা পালাক্রমে কাজ করেন ঘাটে। দিন-রাত হাড় ভাঙা খাটুনির পরও দিন যায় কষ্টে। সময়ের সঙ্গে তাদের শ্রমের মূল্য বাড়লেও তা বর্তমান বাজার পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য নয়।
চট্টগ্রাম গুদাম ও ঘাট শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা আবদুল খালেক রাইজিংবিডিকে বলেন, “প্রতি বছর মে দিবসে অনেকেই আমাদের স্মরণ করেন। কিন্তু বছর জুড়ে আমাদের অবহেলা আর বঞ্ছনার জীবন। সারা দিন কাজ করে ঘাট শ্রমিকরা ৭০০ থেকে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পেয়ে থাকে। কিন্তু এর বিনিময়ে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ভারী বস্তা বহন করে শ্রম দিতে হয়। কখনো কখনো এই পারিশ্রমিকও জোটে না। আবার সব শ্রমিকের প্রতিদিন কাজও জোটে না।”
ঘাট শ্রমিক আবদুল মতিন জানান, বিভিন্ন দেশ থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন ঘাটে আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে চাল, ডাল, গম, সার, চিনি, সাদা মটর, পাথর, কয়লা, ফ্লাইঅ্যাশ, বল ক্লে, লাইম স্টোন, জিপসাম, সিমেন্ট ক্লিংকারসহ বিভিন্ন ধরনের ভারী পণ্য। এসব পণ্য মাদার ভেসের থেকে লাইটার জাহাজে খালাসের পর মাঝিরঘাটের বিভিন্ন গুদামে আনা হয়। সেখান থেকে শ্রমিকরা খালাস করে বিভিন্ন ট্রাকে লোড করেন, আবার ট্রাক থেকে বিভিন্ন গুদামে মজুদের জন্য আনলোড করেন। প্রতিদিন একজন শ্রমিক একশ’ দেড়শো বস্তা পর্যন্ত পণ্য বহন করেন। ভোর ৬টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শ্রমিকরা ভারী পণ্য বহনের এসব কাজ করেন। এতে তাদের দৈনিক মজুরি মিলে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা।
মনিরুল মোল্লা নামে আরেক শ্রমিক রাইজিংবিডিকে বলেন, “আমরা দিনে হাজার টাকা পর্যন্ত মজুরি পেলেও সংসার চালাতে কষ্ট হয়। বস্তা বহন অতি পরিশ্রমের কাজ। এ জন্য আমাদের অনেক খাওয়া-দাওয়া করতে হয়। প্রতিদিন একজন শ্রমিকের ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা খরচ করতে হয় খাওয়ার পেছনে। এতে দিনের আয়ের অর্ধেক চলে যায়। বাকি অর্ধেক টাকা দিয়ে ৫-৬ জন সদস্যের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। পরিবার সন্তানদের জন্য মাসে এক দুই বার মাছ মাংস খাওয়া সম্ভব হয় না।”
আবদুল সবুর নামের অপর একজন ঘাট শ্রমিক রাইজিংবিডিকে বলেন, “আমাদের শ্রমে-ঘামে দেশের আমদানি রপ্তানি বড় কার্যক্রম চলে চট্টগ্রামে। কিন্তু আমাদের জীবন চলে অনেক কষ্টে। অসুস্থ হলে কাজ জোটে না, খাবার জোটে না। এভাবেই চলছে আমাদের জীবন।”
ঘাট শ্রমিক ফরিদুল মোস্তফা বলেন, “৪ সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে ৬ সদস্যের পরিবার। প্রতিদিন যা আয় করি তার অর্ধেক চলে যায় ব্যক্তিগত খরচে। বাকি অর্ধেক দিয়ে পুরো সংসার চালাতে হয়। জিনিসপত্রের যা দাম অর্ধেক আয় দিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিন বেলা খাওয়াও কষ্ট।”
সফি মোল্লা নামের অপর এক শ্রমিক বলেন, “ভারী কাজ প্রতিদিন করা সম্ভব হয় না। সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়া কাজ করতে গিয়ে অনেক শ্রমিক আহত হন। অনেকেই কর্মক্ষমতা হারায়। কিন্তু আমাদের দেখার কেউ নাই। এছাড়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে অনেক সময় ঘাট বন্ধ থাকে। তখন কাজ থাকে না। এতে আমাদের অভাবের শেষ থাকে না।”
ঢাকা/ইভা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র ক জ কর আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত, সচিব কমিটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠাবে
পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে অধ্যাদেশের খসড়াটি সচিব কমিটির মাধ্যমে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের জন্য যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশনের কাঠামো ও কার্যক্রমের খসড়া তৈরি করেছে।
খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এই কমিশনের চেয়ারপারসন হবেন। সদস্য থাকবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ; গ্রেড-২ পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা; অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা; পুলিশ একাডেমির একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ; আইন, অপরাধবিজ্ঞান বিষয়ের একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক; ১৫ বছর অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন একজন মানবাধিকারকর্মী।
আরও পড়ুনপুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে স্বাধীন কমিশন অপরিহার্য৮ ঘণ্টা আগেকমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন।কমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন। সদস্যরা যোগদানের দিন থেকে চার বছর নিজ নিজ পদে থাকবেন। মেয়াদ শেষে কোনো সদস্য আবার নিয়োগের যোগ্য হবেন না।
অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, পুলিশ কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ প্রতিপালনে বাধ্যবাধকতার বিষয়ে বলা হয়েছে—এই কমিশন যেকোনো কর্তৃপক্ষ বা সত্তাকে কোনো নির্দেশ দিলে উক্ত কর্তৃপক্ষ বা সত্তা অনধিক তিন মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। তবে কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ বাস্তবায়নে কোনো অসুবিধা হলে সে ক্ষেত্রে নির্দেশ বা সুপারিশ পাওয়ার অনধিক তিন মাসের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। কমিশন বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে যে নির্দেশ বা সুপারিশ পাঠাবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেই নির্দেশ বা সুপারিশ কমিশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করে কমিশনকে জানাতে হবে।
আরও পড়ুনকোনো দল নয়, পুলিশের আনুগত্য থাকবে আইন ও দেশের প্রতি৯ ঘণ্টা আগেপুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।এই কমিশনের সদস্য পদে নিয়োগের সুপারিশ প্রদানের জন্য সাত সদস্যের সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি গঠন করা হবে। খসড়া অধ্যাদেশে প্রধান বিচারপতির মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপারসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির মনোনীত একজন সরকারদলীয় এবং একজন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যকে বাছাই কমিটিতে রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ন্যূনতম পাঁচ সদস্যের উপস্থিতিতে বাছাই কমিটির কোরাম হওয়া ও বাছাই কমিটির বাছাই প্রক্রিয়া শুরুর ৩০ দিনের মধ্যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে খসড়া প্রস্তাবে।
আরও পড়ুন‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা১৭ ঘণ্টা আগেপুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ খসড়ায় কমিশন প্রতিষ্ঠা, কার্যালয়, সদস্যদের নিয়োগ, মেয়াদ, কমিশনের সদস্য হওয়ার জন্য কারা অযোগ্য, সদস্যদের পদত্যাগ, অপসারণ, পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা বৃদ্ধি, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি, নাগরিকের অভিযোগ অনুসন্ধান-নিষ্পত্তি, পুলিশ সদস্যদের সংক্ষোভ নিরসন, পুলিশপ্রধান নিয়োগ, আইন-বিধি, নীতিমালা প্রণয়ন ও গবেষণা বিষয়েও প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
আরও পড়ুনমাঝেমধ্যে শুনতে হয়, ‘উনি কি আমাদের লোক’: আইজিপি১৭ ঘণ্টা আগে