রপ্তানি খাতকে আরও প্রতিযোগিতা সক্ষম করতে আইএমএফের পরামর্শ মেনে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করতে হবে। বাজারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না। ‘বিশ্বব্যাপী আর্থিক প্রবণতা ও সংস্কার; বাংলাদেশের ওপর প্রভাব’ শীর্ষক এক সংলাপে এমন মত এসেছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশ (আইসিসিবি) এর আয়োজন করে।

আইসিসি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর জাকির হোসেন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেন আইসিসি বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ.

কে. আজাদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইসিসি গ্লোবাল ব্যাংকিং কমিশনের চেয়ারম্যান ফ্লোরিয়ান উইট।

জাকির হোসেন চৌধুরী বলেন, ব্যাংকিং খাতে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। এ খাতে ব্যাপক সংস্কার আনা হচ্ছে। এরই মধ্যে অর্থনীতিতে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকা রিজার্ভ বাড়ছে। বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা রয়েছে। আর্থিক খাতকে আরও শক্তিশালী অবস্থানে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

মাহবুবুর রহমান বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত শুল্কনীতি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় কমে ব্যাংকিং খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে তারল্য সংকট দেখা দেবে। খেলাপি ঋণ অনেক বাড়বে। এ কারণে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং বাইরের ধাক্কা সামলানোর প্রস্তুতি নিতে হবে।

ফ্লোরিয়ান উইট বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির কারণে সারাবিশ্বের অর্থনীতিতে একটি পরিবর্তন আসবে। কোনো কারণে আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচি আটকে গেলে বাংলাদেশের ঋণমান কমে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রসঙ্গত, বিনিময় হার বাজারভিত্তিক না করতে চাওয়ায় বাংলাদেশের ঋণের কিস্তি ঝুলিয়ে রেখেছে আইএমএফ।  

এ. কে. আজাদ বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে শিল্প ও সেবা খাত। রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি এককভাবে আসছে তৈরি পোশাক থেকে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্কে উৎপাদন খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উৎপাদন খাত ক্ষতির মুখে পড়লে স্বাভাবিকভাবে সেবা খাত ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে। তিনি উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতায় অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বীমা থাকার পরও তারা দাবি পাচ্ছে না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের তুলনায় অনেক দেশ এখন প্রতিযোগী সক্ষমতায় এগিয়ে আছে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভারতসহ অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের সুদহার বেশি। এখনই নীতি সহায়তার মাধ্যমে উৎপাদন খাতের প্রতিযোগী সক্ষমতা বাড়াতে হবে। রপ্তানিকারকদের সহায়তা করতে চাইলে আইএমএফের পরামর্শ মেনে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করতে হবে। ডলারের দরে কোনোভাবেই বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ রাখা যাবে না। 

বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পরিচালকদের সংগঠন বিএবির চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুর্বলতার কারণে আর্থিক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিআইবিএমের অধ্যাপক ড. শাহ মো. আহসান হাবিব বলেন, রপ্তানি খাতকে সুবিধা দিতে ব্যাক টু ব্যাক এলসি প্রথা যুগোপযোগী করা দরকার। ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, গত আগস্ট-সেপ্টেম্বর পরবর্তী সময়ে আমদানি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়ছে। এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব উর রহমান বলেন, রপ্তানি খাত এগিয়ে নিতে বাজারের পাশাপাশি নতুন ক্রেতা খুঁজে বের করতে হবে।

সংলাপে আরও বক্তব্য রাখেন এডিবির বাংলাদেশ অফিসের প্রাইভেট সেক্টর অপারেশন্স বিভাগের লিড ইনভেস্টমেন্ট অফিসার বিদ্যুৎ কুমার সাহা এবং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের করপোরেট, বাণিজ্যিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংকিংয়ের এমডি এনামুল হক। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আইস স ব আইস স

এছাড়াও পড়ুন:

চলতি বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি হবে ৩ শতাংশ, আইএমএফের নতুন পূর্বাভাস

চলতি বছরের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কিছুটা বাড়িয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ (শুল্ক) বৃদ্ধির ঝুঁকি ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অস্থিরতা বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি।

মঙ্গলবার প্রকাশিত আইএমএফের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হার ৩ শতাংশ হবে, যা গত এপ্রিলের পূর্বাভাসে ২ দশমিক ৮ শতাংশ বলা হয়েছিল। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি আগের চেয়ে শূন্য দশমিক ২ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়তে পারে। এ ছাড়া ২০২৬ সালের জন্য ৩ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তবে আইএমএফ জানিয়েছে, প্রবৃদ্ধির হার এখনো করোনাপূর্ব গড় প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৭ শতাংশের নিচে রয়ে গেছে। খবর রয়টার্সের

আইএমএফ জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের কার্যকর গড় শুল্কহার বর্তমানে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে, যা এপ্রিল মাসে ছিল ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ। তবে এই হার এখনো বছরের শুরুতে প্রাক্কলিত ২ দশমিক ৫ শতাংশের তুলনায় অনেক বেশি।

আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ পিয়ের-অলিভিয়ে গৌরিনশাস বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতি এখনো অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে। পাল্টা শুল্কহার বহাল থাকলে সেটি কমার সম্ভাবনা নেই।’

এদিকে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালে কমে ৪ দশমিক ২ শতাংশে নামতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ। তবে যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে শুল্কের প্রভাব সরাসরি ভোক্তাদের ওপর পড়তে পারে। ফলে দেশটির মূল্যস্ফীতি আবার বাড়তে পারে।

আইএমএফ বলছে, ওষুধ, কাঠ ও সেমিকন্ডাক্টরের ওপরও শিগগিরই উচ্চ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। এসব নতুন শুল্ক পরিকল্পনা তাদের পূর্বাভাসে ধরা হয়নি। বাস্তবে তা কার্যকর হলে, বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চলতি বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি হবে ৩ শতাংশ, আইএমএফের নতুন পূর্বাভাস