‘একদিন দেখি পশুরমতো ঘরের কোণে বসে কাঁপছে ববি’
Published: 1st, May 2025 GMT
বলিউডের অন্যতম সাড়া জাগানো অভিনেত্রী পারভীন ববি। সত্তর ও আশির দশকে রূপ ও অভিনয় গুণে দর্শক মাতিয়েছেন। স্বাধীনচেতা এই নায়িকা পর্দায় হাজির হয়ে দর্শকদের কাছ থেকে পেয়েছিলেন ‘সেক্স সিম্বল’ তকমা।
পারভীন ববির একাধিক প্রেমের গুঞ্জন শোনা গেছে। তার প্রেমিকের তালিকায় ছিলেন অভিনেতা ড্যানি ডেনজংপা, কবির বেদি, নির্মাতা মহেশ ভাট। আলিয়া ভাটের বাবা মহেশ ভাট ববির সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা অকপটে স্বীকার করেছেন। পারভীন ববির সঙ্গে তার প্রেম-বিচ্ছেদ নিয়ে বিবিসি হিন্দির সঙ্গে কথা বলেছেন বরেণ্য এই পরিচালক।
মহেশ ভাটের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর আগে পারভীন ববির বিয়ে হয়েছিল। এ তথ্য উল্লেখ করে মহেশ ভাট বলেন, “পারভীন ববি বিবাহিত— এ তথ্য জানার আগেই তার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলাম। তার মা জুনগড় থেকে আসতেন, তখন মাঝে মাঝে এই বিষয়ে আলোচনা করতেন তিনি। কিন্তু ততদিনে আমরা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছি। আমি তার (ববি) সঙ্গে থাকতাম। তারপর জানতে পারি, ববির একবার বিয়ে হয়েছিল। এরপর লোকটি (ববির স্বামী) পাকিস্তানে চলে যায়।”
এর কয়েক বছর পর কারা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে যোগ দিতে পাকিস্তানে যান মহেশ ভাট। তখন পারভীন ববির স্বামী তার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনি বলেও জানান মহেশ ভাট।
লিভ-টুগেদার করার কারণে পারভীন ববির বিভিন্ন পরিস্থিতি সামনে থেকে দেখেছেন মহেশ ভাট। তা জানিয়ে এই নির্মাতা বলেন, “আমি তাকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে দেখেছি। আমিও তার সঙ্গে এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছি। আপনার সামনে যখন কাউকে ভেঙে পড়তে দেখেন…।”
সিজোফ্রেনিয়া এমন একটি মানসিক রোগ, যা অনেকেই অবহেলা করে এড়িয়ে চলেন। কিন্তু চিকিৎসা না হলে এই রোগ বিপজ্জনক হতে পারে। এমনকি হত্যা বা আত্মহত্যার ঝুঁকিও তৈরি হয়। পারভীন ববি এই রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
এ বিষয়ে মহেশ ভাট বলেন, “সকালবেলায় আমি তাকে মেকআপ করে শুটিংয়ের জন্য বেরিয়ে যেতে দেখেছি। কিন্তু সন্ধ্যায় যখন আমি ফিরে আসি, তখন দেখি পশুরমতো ঘরের এককোণে বসে কাঁপছে ববি। সে বারবার বলছিল, ‘কেউ আমাকে মেরে ফেলবে।’ আসলে সে সিজোফ্রেনিয়া রোগে ভুগছিল।”
পারভীন ববির সঙ্গে সম্পর্কের ইতি টানার কারণ ব্যাখ্যা করে মহেশ ভাট বলেন, “আমি বুঝতে পারছিলাম ববি আত্মহত্যার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সেই পুরো চক্রটি থেকে তাকে বের করার শক্তি আমার ছিল না। এরপর আমরা আলাদা হয়ে যাই।”
১৯৭২ সালে মডেলিংয়ের মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করেন পারভীন ববি। তখনই সুযোগ পান অভিনয়ের। এর পরের বছর মুক্তি পায় তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘চরিত্র’। অর্থাৎ ১৯৭৩ সালে এ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক ঘটে তার। অভিনয় ক্যারিয়ারে ‘মজবুর’, ‘দিওয়ার’, ‘সুহাগ’, ‘অমর আকবর অ্যান্টনি’, ‘কালা পাথর’, ‘শান’-এর মতো সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি।
পারভীন ববিই প্রথম বলিউড তারকা, যে টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে মডেল হন। ১৯৭৬ সালের ১৯ জুলাই সাময়িকীটির ইউরোপীয় সংস্করণের প্রচ্ছদে দেখা যায় তাকে।
অভিনেতা ড্যানি, কবির বেদি এমনকি অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে পারভীন ববির প্রেমের খবর চাউর হয়েছিল। পরিচালক মহেশ ভাটের সঙ্গে শেষমেশ প্রণয়ে জড়ান। মহেশ ভাট সেটা বরাবরই স্বীকার করেছেন। যদিও মহেশ সেসময় বিবাহিত, তবু নিঃসঙ্গ পারভীনের প্রেমে পড়েছিলেন তিনি।
২০০৫ সালের ২০ জানুয়ারি নিঃসঙ্গ পারভীন ববির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মৃত্যুর তিন দিন পর পচন ধরা নিথর দেহটা উদ্ধার করা হয়েছিল। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫০ বছর।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
মিরাজ বীরত্বে দারুণ প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখলো বাংলাদেশ
পরাজয়ের গ্লানি থেকে গর্বের গাঁথায় ফেরার গল্প যখন লেখা হয়, সেখানে একজন নায়ক থাকেন। এইবার সেই নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। সিলেটের লজ্জাজনক হার ভুলিয়ে দিয়ে চট্টগ্রামে দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ যেন ঘুরে দাঁড়াল মেঘ ফুঁড়ে রোদ ওঠার মতো। অলরাউন্ড মিরাজের ব্যাটে-বলে দ্যুতি ছড়ানো আর তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে বিধ্বস্ত জিম্বাবুয়ে। ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয়ে দুই ম্যাচের সিরিজ শেষ হলো ১-১ সমতায়।
প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়েকে কোনো সুযোগই দেয়নি বাংলাদেশ। তাইজুল ও নাঈম ইসলামের নির্ভুল বোলিংয়ে মাত্র ২২৭ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারীরা। এরপর ব্যাট হাতে পাল্টা জবাব দেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। সাদমান ইসলামের ধারাবাহিকতা আর মিরাজের সংগ্রামী সেঞ্চুরিতে দল পৌঁছে যায় ৪৪৪ রানে। নেয় ২১৭ রানের লিড।
সাদমান তুলে নেন দারুণ এক সেঞ্চুরি, কিন্তু ম্যাচের মূল চিত্রনাট্য লিখলেন মিরাজ। টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতকে তিনি ছিলেন নির্ভার, নিবেদিত এবং নিখুঁত। ১৪৩ বলের ইনিংসে ১১টি চার ও একটি ছক্কায় সাজানো তার ১০৪ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস শুধু দলীয় সংগ্রহে রানের সংযোজন ছিল না, ছিল প্রতিরোধ আর প্রতিশোধের প্রতীক।
আরো পড়ুন:
বাংলাদেশের বিপক্ষে দারুণ বোলিং করে মুজারাবানির ইতিহাস
ইনিংস ব্যবধানে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে বদলা নিলো বাংলাদেশ
তাইজুলের সঙ্গে অষ্টম উইকেটে গড়েন ৬৩ রানের জুটি। এরপর তানজিম হাসান সাকিবের সঙ্গে নবম উইকেটে যোগ করেন আরও ৯৬ রান। তানজিম নিজেও খেলেন ৪১ রানের কার্যকর ইনিংস। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মিরাজ যখন আউট হন, তখন স্কোরবোর্ডে বাংলাদেশ—৪৪৪।
প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলতে নামা জিম্বাবুয়ের মাসেকসা ১১৫ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নিয়ে রেখেছিলেন আলোচনার খোরাক।
দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবুয়ের ইনিংস যেন শুরুই হলো পতনের ধ্বনি বাজিয়ে। মাত্র ৮ রানেই পড়ল ২ উইকেট। তাইজুল প্রথমে বোল্ড করলেন ব্রিয়ান বেনেটকে। এরপর এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেললেন নিক ওয়েলচকে। স্কোর যখন ৬৯, তখন উইকেট ৫টি। এরপর নাম মাত্র প্রতিরোধ গড়ে বেন কুরান ও ক্রেইগ আরভিন। কুরান করেন সর্বোচ্চ ৪৬ রান, আরভিন ২৫। বাকিরা যেন শুধুই আনুষ্ঠানিকতা সারলেন। ১১১ রানে অলআউট হয়ে লজ্জার হার বরণ করে নেয় জিম্বাবুয়ে।
মিরাজ বল হাতেও রচনা করলেন অনন্য মহাকাব্য। ২১ ওভারে ৮ মেডেনসহ মাত্র ৩২ রানে শিকার ৫ উইকেট। এটি তার ক্যারিয়ারের ১৩তম পাঁচ উইকেট শিকার। তাকে দারুণ সহায়তা দেন তাইজুল, ৩টি উইকেট নেন ৪২ রানে। নাঈম ইসলামের ঝুলিতে যায় ১ উইকেট।
একই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও ফাইফার, এমন কীর্তির সাক্ষী হওয়া সবসময় ঘটে না। মেহেদী হাসান মিরাজ সেই বিরল অর্জনের মালিক হয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন। শুধু এখানেই শেষ নয়, দুই টেস্টে মোট ১৫ উইকেট ও একটি দুর্দান্ত সেঞ্চুরির সুবাদে সিরিজ সেরার পুরস্কারও উঠেছে তার হাতেই।
চট্টগ্রামে এই জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ শুধু সিরিজে সমতা ফেরায়নি, সিলেটের ক্ষতচিহ্নও কিছুটা মুছে দিয়েছে। মিরাজের ব্যাট-বলের বীরত্বে লেখা হলো এক প্রত্যাবর্তনের মহাকাব্য—যেখানে বাংলাদেশের ক্রিকেট আবারও প্রমাণ করেছে, তারা হার মানে না, হারিয়ে দিতে জানে।
ঢাকা/আমিনুল