এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।

চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।

টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর। 

গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।

দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।

সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত। 

শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।

মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।  

সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রফরম য ন স উইক ট শ ক র ৫ উইক ট র ন কর ত ইজ ল প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

‘বাজপাখি’ মার্তিনেজের বাজে ফর্ম, আর্জেন্টিনার জন্য কতটা দুশ্চিন্তার

২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপ থেকে ‘বাজপাখি’ বিশেষণটা নিজের নামের সঙ্গে জুড়ে নিয়েছেন এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। গোলপোস্টের নিচে কখনো কখনো মার্তিনেজের সামর্থ্য ছাড়িয়ে গেছে বাজপাখির ক্ষিপ্রতাকেও। বিশেষ করে পেনাল্টি শুটআউটে পোস্টের নিচে মার্তিনেজ রীতিমতো তুলনাহীন।

আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ এবং টানা দুবার কোপা আমেরিকা জয়ের অন্যতম নায়কও মার্তিনেজ। শুধু আর্জেন্টিনার হয়েই নয়, অ্যাস্টন ভিলাকেও অসংখ্য ম্যাচে একাই উদ্ধার করেছেন এই গোলরক্ষক। এমন পারফরম্যান্সের স্বীকৃতিস্বরূপ পরপর দুবার ব্যালন ডি’অরের সেরা গোলরক্ষকের লেভ ইয়েশিন ট্রফিও উঠেছে মেসির এই প্রিয় সতীর্থের হাতে।

সব ভালো কিছুই অবশ্য কখনো না কখনো শেষ হয়। মার্তিনেজের সেই ভালো সময়টা কি শেষ হতে চলল কি না, সেই প্রশ্নও এখন উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে অ্যাস্টন ভিলার হয়ে করা কিছু ভুলের পরই মূলত মার্তিনেজের ছন্দ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যা বিশ্বকাপের ১৩ মাস আগে নতুন করে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের জন্যও।

আরও পড়ুনমার্তিনেজ আর্জেন্টিনার ‘নায়ক’, ভিলার কি ‘খলনায়ক’২৩ এপ্রিল ২০২৫

মার্তিনেজ শুধু নিজের গোলকিপিং দক্ষতার কারণেই নয়, নিজের দৃঢ় ও হার না–মানা মানসিকতার কারণেও ভক্ত–সমর্থকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। একইভাবে যেসব আচরণের জন্য ভক্তদের কাছে তিনি জনপ্রিয়, একই আচরণ তাঁকে অজনপ্রিয় করেছে প্রতিপক্ষ সমর্থকদের মধ্যে। তবে ব্যক্তি মার্তিনেজ যেমনই হোক, পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগই দেননি এই গোলরক্ষক।

তবে সেই সময়টা বোধ হয় পেছনে ফেলে এসেছেন মার্তিনেজ। সাম্প্রতিক সময়ের করা কিছু ভুল সেই ইঙ্গিতই বারবার দিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনালের ফিরতি লেগে পিএসজির বিপক্ষে তাঁর পারফরম্যান্সের কথা।

সেদিন পিএসজির ফরোয়ার্ড ব্রাডলি বারকোলার ক্রস খুব বাজেভাবে ঠেকান মার্তিনেজ। বলটি নিজের নিয়ন্ত্রণেও রাখতে পারেননি। যার ফলে আশরাফ হাকিমির পায়ে চলে যায় বল এবং মার্তিনেজের এই ভুল কাজে লাগিয়ে পিএসজির হয়ে গোল করেন হাকিমি।

এরপর ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে ম্যাচে করা ভুলটি তো আরও বাজে। সেদিন ম্যাচের শুরুতে বের্নার্দো সিলভার গোল এগিয়ে দেয় সিটিকে। কিন্তু সেই গোল খাওয়ার পুরো দায় মার্তিনেজরই। যেভাবে সেদিন মার্তিনেজ গোল হজম করেছেন, তা বেশ দৃষ্টিকটু।
ম্যাচের ৭ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে ভিলার বক্সে ঢুকে পড়েন সিটি তারকা ওমর মারমোশ।

এরপর মারমোশের ক্রস ভিলার লেফটব্যাক লুকাস দিনিয়ের পায়ে লেগে চলে আসে বক্সের মধ্যে ফাঁকা জায়গায়। এমন সুযোগ কাজে লাগাতে ছুটে এসে শট নেন সিলভা। শটে যে অনেক জোর ছিল, তা–ও নয় এবং মার্তিনেজও ছিলেন বলের লাইনে। যাঁর নাম ‘বাজপাখি’, তাঁর জন্য এই গোল বাঁচানো নৈমিত্তিক কাজ হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু মার্তিনেজ পারেননি সেই শট ঠেকাতে। তাঁর হাতে লেগেই বল ঢুকে যায় ভেতরে।

তবে এই দুটি উদাহরণই শুধু নয়, সাম্প্রতিক সময়ে আরও একাধিক ম্যাচে বাঁচানোর সুযোগ থাকার পরও পারেননি মার্তিনেজ। এর মধ্যে কিছু হয়তো ক্ষেত্রে হয়তো তাঁর সরাসরি ভুল ছিল না। কিন্তু বিশ্বসেরা স্বীকৃতি পাওয়া যেকোনো গোলরক্ষকের এ ধরনের গোল সহজেই বাঁচানো উচিত ছিল।

আরও পড়ুনশাস্তি মেনে নিয়ে ক্ষমা চাইলেন আর্জেন্টিনার গোলকিপার মার্তিনেজ০১ অক্টোবর ২০২৪

তেমনই একটি গোল মার্তিনেজ হজম করেছিলেন নিউক্যাসলের বিপক্ষে অ্যাস্টন ভিলার ৪–১ গোলে জেতা ম্যাচে। সেদিন ১৮ মিনিটে ফাবিয়ান শরের গোলে সমতায় ফেরায় নিউক্যাসল। হার্ভে বার্নসের ক্রসে শর যখন হেড করছিলেন, তখন বলের লাইনেই ছিলেন মার্তিনেজ। কিন্তু ক্লোজ রেঞ্জের সেই শটটি শরীর এলিয়ে দিয়েও রুখতে পারেননি মার্তিনেজ।

একইভাবে উল্লেখ করা যায় ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে ওয়েম্বলিতে এফএ কাপ সেমিফাইনাল হজম করা গোলের কথা। সেদিন ৩১ মিনিটে প্যালেসের হয়ে প্রথম গোলটি করেন এবেরেচি এজে। অসাধারণ গোল ছিল, কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু লক্ষ করলে দেখা যাবে মার্তিনেজ একেবারেই মনোযোগী ছিলেন না, ছিলেন না নিজের যথাযথ পজিশনেও। এমনকি শটের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখানোর ক্ষেত্রেও দেরি করেছেন। যার ফলাফল হচ্ছে প্রথম গোলটি। এই গোলের পেছনে মার্তিনেজের দায় দেখেছেন ফুটবল–বিশ্লেষক ইয়ান রাইটও।

এমিলিয়ানো মার্তিনেজ হতাশায় মুখ ঢাকছেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সেয়ানে সেয়ানে টক্করে বার্সা ও ইন্টারের কে কত নম্বর পেলেন
  • সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
  • আজিজুল হাকিমের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স, কলম্বোয়ও হেসেছে বাংলাদেশ
  • ‘বাজপাখি’ মার্তিনেজের বাজে ফর্ম, আর্জেন্টিনার জন্য কতটা দুশ্চিন্তার
  • বিজয়-সাদমানের শতরানের জুটি, প্রথম সেশন বাংলাদেশের
  • সাদমানের ফিফটি
  • সাদমান-বিজয়ের জুটির ফিফটি
  • প্রথম বলেই তাইজুলের আঘাত, ২২৭ রানে অলআউট জিম্বাবুয়ে
  • বার্সেলোনা ও পিএসজি ছাড়া যে কীর্তি গড়ার সুযোগ নেই এবার আর কারও