বিএনপির পর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং চরমোনাইর পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনও বিভিন্ন দলের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করেছে। গতকাল বুধবার এবি পার্টি এবং এনসিপির সঙ্গে রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে আলোচনায় বসে ইসলামী আন্দোলন। এর আগে গণসংহতি আন্দোলনের সঙ্গে বাংলামটরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে বৈঠক করে এনসিপি। 

যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র এবং সমমনা দলগুলোর সঙ্গে এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে ধারাবাহিক বৈঠক করছে বিএনপি। গণঅধিকার পরিষদ, সিপিবি-বাসদ, বিজেপি, ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে ইতোমধ্যে বৈঠক করেছে তারা। এনসিপি এই সময়ে বৈঠক করেছে খেলাফত মজলিস ও হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে। 
২৩ এপ্রিল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টির সঙ্গে বৈঠক করে আগামী সংসদ নির্বাচনে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর ভোট এক বাক্সে আনার ঘোষণা দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন। একই দিনে নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করে দলটি। 

আগে স্থানীয় নির্বাচনের দাবি

গতকালের বৈঠকে ইসলামী আন্দোলন ও এনসিপি তিন বিষয়ে একমত হয়েছে। জনদুর্ভোগ কমাতে দ্রুত স্থানীয় নির্বাচনের ব্যাপারে তারা ঐকমত্যে পৌঁছেছে। মৌলিক সংস্কার শেষে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতেও একমত তারা। দল দুটি চায়, গণহত্যার ও ফ্যাসিবাদে জড়িতদের দ্রুত বিচার এবং দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার। বিচার চলাকালে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত রাখার দাবিতেও একমত হয়েছে ইসলামী আন্দোলন ও এনসিপি। 

ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম এবং এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, গণপরিষদ নির্বাচন, সংসদের উভয় কক্ষে আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন, সংস্কার এবং রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে লিয়াজোঁ কমিটি গঠনেও আলোচনা হয়। 

নাহিদ ইসলাম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ঐকমত্যে তৈরি হয়েছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। রাখাইনে মানবিক সহায়তার জন্য বাংলাদেশ থেকে করিডোর কোন পদ্ধতিতে হবে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি কীভাবে হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। মানবিক করিডোরের বিষয়টি নিয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দল যে বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছে, এর সঙ্গে এনসিপি একমত।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠায় ঐক্য সৃষ্টিতে অন্য দলের সঙ্গে বৈঠক চলছে জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, সংবিধানের মৌলিক সংস্কারের কেন গণপরিষদ নির্বাচন প্রয়োজন, তা এনসিপি ব্যাখ্যা করেছে। ইসলামী আন্দোলন ভেবে দেখার কথা বলেছে। সারাদেশে চাঁদাবাজি, লুটপাট এবং জনঅধিকার 

হরণের মতো কর্মকাণ্ড বেড়ে যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সব দল দাঁড়াবে। 
সংলাপে ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন দলের মহাসচিব ইউনুস আহমেদ, প্রেসিডিয়াম 

সদস্য মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা। এনসিপির পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব, যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মুজাহিদ, সরোয়ার তুষার, আশরাফ উদ্দিন মাহদী প্রমুখ। 

জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা চলছে

এর আগে এবি পার্টির সঙ্গে সংলাপে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুত সময়ে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনসহ ১১ দফায় ঐকমত্যের কথা জানান চরমোনাই পীর। আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলো একে অপরকে আঘাত করে কথা না বলার সিদ্ধান্তেও ঐকমত্য হয়েছে দু’দল। 

চরমোনাই পীর বলেন, আগামী নির্বাচনে ইসলামপন্থি দলগুলোর ভোট এক বাক্সে আনার সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছে। এর অংশ হিসেবে পাঁচটি দল এক হয়েছে। জামায়াতও ইসলামিক দল। তারাও পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে। তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিক আলাপ চলছে।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন মানি না। এতে নারীকে অবমাননা করা হয়েছে। এবি পার্টি এবং ইসলামী আন্দোলন এই বিষয়ে একমত। আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন, পতিত স্বৈরাচারের বিচারের দাবিতেও ঐকমত্য হয়েছে তারা। 
সংলাপে এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান লে.

কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা অংশ নেন। 

নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কারে ঐকমত্য

আওয়ামী লীগের বিচার এবং নির্বাচনের ঘোষিত সময়ের মধ্যে মৌলিক সংস্কারে একমত হয়েছে এনসিপি ও গণসংহতি। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে গণসংহতির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, সংস্কারের জন্য ন্যূনতম ঐকমত্য দ্রুত তৈরি হোক। সংস্কার কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, সে বিষয়েও যাতে ঐকমত্যে আসতে পারি। আওয়ামী লীগের যারা গত ১৫ বছরের গুম-খুন, হামলা-মামলা ও লুটপাটে যুক্ত এবং সর্বশেষ জুলাই-আগস্টে হত্যাকাণ্ডে যারা দায়ী, তাদের প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, প্রধানমন্ত্রীর পদের সীমা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন, নারী আসন, স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণসহ বিভিন্ন মৌলিক সংস্কার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান সাকি। 

নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে বৈঠকে এনসিপির পক্ষে বৈঠকে ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম, আশরাফ উদ্দীন মাহাদী, অনিক রায়, যুগ্ম সদস্য সচিব মোল্লা ফারুক, এহসান শুভ্রসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা। 
গণসংহতির পক্ষে ছিলেন নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য তাসলিমা আখতার, হাসান মারুফ রুমি ও মনির উদ্দিন পাপ্পু। 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এনস প ন হ দ ইসল ম র জন ত ক এনস প র দলগ ল র ঐকমত য আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

অনির্বাচিত সরকারের করিডোর দেওয়ার এখতিয়ার নেই: বিএনপি

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই মিয়ানমারের রাখাইনে মানবিক করিডোর দেওয়ার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ের দিকে সরকার অগ্রসর হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি। দলটির নেতারা মনে করেন, দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিষয়ে জনগণের ম্যান্ডেটহীন একটি অনির্বাচিত সরকারের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া সরকার এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলে ভবিষ্যতে সেটি বাংলাদেশের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। তাই এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে রাজনৈতিক মতৈক্যে সিদ্ধান্ত নিতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি। 
গত সোমবার রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এমন আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। 

এদিকে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের রাখাইনের মধ্যে মানবিক করিডোর স্থাপন নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কারও সঙ্গে সরকারের আলোচনা হয়নি বলে দাবি করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে মানবিক করিডোর নিয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন তিনি। 

এর আগে গত রোববার বিকেলে মানবিক করিডোর নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো, তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, এ বিষয়ে আমরা নীতিগতভাবে সম্মত। কারণ এটি একটি মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ হবে। তবে আমাদের কিছু শর্ত আছে। সেই শর্ত যদি পালন করা হয়, অবশ্যই আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।  

বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মানবিক করিডোরের ব্যাপারে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিএনপি মনে করছে, সরকার এককভাবে স্পর্শকাতর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। দায়িত্বশীল ও দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি এই ইস্যুতে মিত্র দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। একই সঙ্গে রাখাইনের বাস্তব পরিস্থিতি এবং এটা নিয়ে সরকার কী করছে, সেগুলোর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবে। এর পর সংবাদ সম্মেলন করে এর যৌক্তিকতা জাতির সামনে তুলে ধরবে। 
বৈঠকে বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, যেখানে মিয়ানমারে একটি যুদ্ধ অবস্থা বিরাজ করছে; দেশটির সামরিক জান্তার সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘাত চলছে; আরাকান আর্মিকে কোণঠাসা করতে জান্তা সরকার সব ধরনের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে– এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মানবিক করিডোর দেওয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। 

নেতারা আরও বলেন, শেখ হাসিনার আমলে রাখাইন রাজ্য থেকে ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। তারা বাংলাদেশের জন্য বিরাট বোঝা। এ অবস্থায় জাতিসংঘ রাখাইনে যে মানবিক বিপর্যয়, দুর্ভিক্ষের কথা বলছে, সেটি নিয়ে বিএনপিও উদ্বিগ্ন। করিডোর দেওয়ার আগে রাখাইন রাজ্য নিয়ে প্রতিবেশী দুটি দেশ চীন ও ভারতের অবস্থান কী, সেটা নিয়েও আমাদের ভাবার প্রয়োজন রয়েছে। সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা এবং রাজনৈতিক মতৈক্য ছাড়া এটা করলে তা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য বিপদ হতে পারে। তাই এমন স্পর্শকাতর একটি ইস্যুতে সরকারের রাজনৈতিক মতৈক্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। 

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা এখনও বিষয়টি (রাখাইনে মানবিক করিডোর) পুরোপুরি জানি না। পত্রপত্রিকায় দেখেছি, সরকার একতরফাভাবে দেশের জনগণ তথা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা শুনেছি, মানবিক কারণে তারা এই করিডোর দেবে। কিন্তু সেটা কীভাবে দেবে, তা জানি না। এটাও শুনেছি– কিছু শর্ত আছে। শর্তগুলো কী, জানি না। সরকারের উচিত বিষয়গুলো জাতিকে সুস্পষ্টভাবে জানানো। আমরাও এ বিষয়ে নানা তথ্য-উপাত্ত নিয়ে জানার চেষ্টা করছি। এর পর আমরা দলের তরফ থেকে এ বিষয়ে অবস্থান জানাব।

গত সোমবার ঠাকুরগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মানবিক করিডোর দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের কথা বলে নেওয়া উচিত ছিল। তারা (সরকার) একক সিদ্ধান্তে মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ করে দিচ্ছে। মানুষকে সাহায্য করার ব্যাপারে আমাদের আপত্তি নেই। জাতিসংঘ যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে আমাদের আপত্তি নেই। তবে এটা হতে হবে সব মানুষের সমর্থনে। 
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বেগম সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

লজিস্টিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত, এটাই বাংলাদেশের অবস্থান: প্রেস সচিব
প্রেস সচিব শফিকুল আলম দাবি করেন, জাতিসংঘের নেতৃত্বে রাখাইনে মানবিক সহায়তা পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হলে বাংলাদেশ লজিস্টিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত– এটাই বাংলাদেশের অবস্থান। তিনি বলেন, সংকটকালে অন্য দেশকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বরাবরই ভূমিকা রয়েছে। যার সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো মিয়ানমারে ভূমিকম্পের পর আমাদের সহায়তা। আমাদের আশঙ্কা, রাখাইন থেকে আরও মানুষের অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে, যা আমারা সামাল দিতে পারব না। বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, জাতিসংঘের নেতৃত্বে মানবিক সহায়তা রাখাইনকে স্থিতিশীল রাখতে এবং শরণার্থীদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে সাহায্য করবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ হয়ে ত্রাণ পাঠানোর বিষয়ে লজিস্টিক সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে নীতিগতভাবে সম্মতি সরকার। যদিও রাখাইনে ত্রাণ পাঠানোর বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আমরা যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। যথাসময়ে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শ করা হবে।

হেফাজতে ইসলামের প্রতিবাদ
করিডোর দেওয়ার খবরে প্রতিবাদ জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন সংগঠনটির নেতারা। গতকাল রাজধানীর খিলগাঁওয়ে জামিয়া ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায়  সংবাদ সম্মেলনে এ অবস্থান জানিয়েছেন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশকে ব্যবহার করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে– দেশপ্রেমিক শক্তি হিসেবে হেফাজতে ইসলাম কোনোভাবেই এটি সমর্থন করে না। 

জাতীয় ঐকমত্য তৈরির পরামর্শ চরমোনাইয়ের
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম কুমিল্লা মহানগরের শূরা সম্মেলনে বলেছেন, বিস্তর বোঝাপড়া এবং রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা ছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না।

স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে সংকটে ফেলবে: সিপিবি
মানবিক করিডোরের খবরে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ জানিয়েছে সিপিবি। সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, এ ধরনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। সরকার দেশের বিদ্যমান সংবিধান লঙ্ঘন করে এই ভয়ংকর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে সংকটে ফেলবে।

এটি জাতিকে নিয়ে পাশা খেলার শামিল: বাসদ
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বিবৃতিতে বলেন, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করে একতরফাভাবে সরকারের এমন সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আলোচনা ও সম্মতি ছাড়া অনির্বাচিত সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া জাতিকে নিয়ে পাশা খেলার শামিল।

জাতীয় ঐকমত্য অত্যন্ত জরুরি: গণসংহতি আন্দোলন
মানবিক করিডোর বিষয়ে অবিলম্বে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন। দলটি বলেছে, আলোচনার ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেলের বরাত দিয়ে দলটি বিবৃতিতে জানায়, রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এ বিষয়ে বিশদ আলাপ আলোচনা ও ঐকমত্য প্রয়োজন। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’ সব সুপারিশে একমত নয় ইসি
  • সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনসহ ১১ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন ও এবি পার্টির ঐকমত্য
  • চলছে বৈঠকের রাজনীতি
  • বৈঠকে আওয়ামী লীগের বিচার ও মৌলিক সংস্কার প্রশ্নে একমত এনসিপি ও গণসংহতি আন্দোলন
  • কানাডার প্রধানমন্ত্রী কার্নিকে অভিনন্দন জানালেন ট্রাম্প
  • অনির্বাচিত সরকারের করিডোর দেওয়ার এখতিয়ার নেই: বিএনপি
  • জাতীয় স্বার্থে আমরা কি একমত হতে পারি না
  • গণভোটে সংস্কার চায় নুরের গণঅধিকার
  • সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর বয়স ন্যূনতম ২৩ করার প্রস্তাব গণ অধিকার পরিষদের