তিন বিষয়ে একমত এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলন
Published: 1st, May 2025 GMT
বিএনপির পর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং চরমোনাইর পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনও বিভিন্ন দলের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করেছে। গতকাল বুধবার এবি পার্টি এবং এনসিপির সঙ্গে রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে আলোচনায় বসে ইসলামী আন্দোলন। এর আগে গণসংহতি আন্দোলনের সঙ্গে বাংলামটরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে বৈঠক করে এনসিপি।
যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র এবং সমমনা দলগুলোর সঙ্গে এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে ধারাবাহিক বৈঠক করছে বিএনপি। গণঅধিকার পরিষদ, সিপিবি-বাসদ, বিজেপি, ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে ইতোমধ্যে বৈঠক করেছে তারা। এনসিপি এই সময়ে বৈঠক করেছে খেলাফত মজলিস ও হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে।
২৩ এপ্রিল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টির সঙ্গে বৈঠক করে আগামী সংসদ নির্বাচনে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর ভোট এক বাক্সে আনার ঘোষণা দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন। একই দিনে নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করে দলটি।
আগে স্থানীয় নির্বাচনের দাবি
গতকালের বৈঠকে ইসলামী আন্দোলন ও এনসিপি তিন বিষয়ে একমত হয়েছে। জনদুর্ভোগ কমাতে দ্রুত স্থানীয় নির্বাচনের ব্যাপারে তারা ঐকমত্যে পৌঁছেছে। মৌলিক সংস্কার শেষে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতেও একমত তারা। দল দুটি চায়, গণহত্যার ও ফ্যাসিবাদে জড়িতদের দ্রুত বিচার এবং দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার। বিচার চলাকালে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত রাখার দাবিতেও একমত হয়েছে ইসলামী আন্দোলন ও এনসিপি।
ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম এবং এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, গণপরিষদ নির্বাচন, সংসদের উভয় কক্ষে আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন, সংস্কার এবং রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে লিয়াজোঁ কমিটি গঠনেও আলোচনা হয়।
নাহিদ ইসলাম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ঐকমত্যে তৈরি হয়েছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। রাখাইনে মানবিক সহায়তার জন্য বাংলাদেশ থেকে করিডোর কোন পদ্ধতিতে হবে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি কীভাবে হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। মানবিক করিডোরের বিষয়টি নিয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দল যে বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছে, এর সঙ্গে এনসিপি একমত।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠায় ঐক্য সৃষ্টিতে অন্য দলের সঙ্গে বৈঠক চলছে জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, সংবিধানের মৌলিক সংস্কারের কেন গণপরিষদ নির্বাচন প্রয়োজন, তা এনসিপি ব্যাখ্যা করেছে। ইসলামী আন্দোলন ভেবে দেখার কথা বলেছে। সারাদেশে চাঁদাবাজি, লুটপাট এবং জনঅধিকার
হরণের মতো কর্মকাণ্ড বেড়ে যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সব দল দাঁড়াবে।
সংলাপে ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন দলের মহাসচিব ইউনুস আহমেদ, প্রেসিডিয়াম
সদস্য মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা। এনসিপির পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব, যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মুজাহিদ, সরোয়ার তুষার, আশরাফ উদ্দিন মাহদী প্রমুখ।
জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা চলছে
এর আগে এবি পার্টির সঙ্গে সংলাপে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুত সময়ে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনসহ ১১ দফায় ঐকমত্যের কথা জানান চরমোনাই পীর। আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলো একে অপরকে আঘাত করে কথা না বলার সিদ্ধান্তেও ঐকমত্য হয়েছে দু’দল।
চরমোনাই পীর বলেন, আগামী নির্বাচনে ইসলামপন্থি দলগুলোর ভোট এক বাক্সে আনার সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছে। এর অংশ হিসেবে পাঁচটি দল এক হয়েছে। জামায়াতও ইসলামিক দল। তারাও পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে। তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিক আলাপ চলছে।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন মানি না। এতে নারীকে অবমাননা করা হয়েছে। এবি পার্টি এবং ইসলামী আন্দোলন এই বিষয়ে একমত। আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন, পতিত স্বৈরাচারের বিচারের দাবিতেও ঐকমত্য হয়েছে তারা।
সংলাপে এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান লে.
নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কারে ঐকমত্য
আওয়ামী লীগের বিচার এবং নির্বাচনের ঘোষিত সময়ের মধ্যে মৌলিক সংস্কারে একমত হয়েছে এনসিপি ও গণসংহতি। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে গণসংহতির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, সংস্কারের জন্য ন্যূনতম ঐকমত্য দ্রুত তৈরি হোক। সংস্কার কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, সে বিষয়েও যাতে ঐকমত্যে আসতে পারি। আওয়ামী লীগের যারা গত ১৫ বছরের গুম-খুন, হামলা-মামলা ও লুটপাটে যুক্ত এবং সর্বশেষ জুলাই-আগস্টে হত্যাকাণ্ডে যারা দায়ী, তাদের প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, প্রধানমন্ত্রীর পদের সীমা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন, নারী আসন, স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণসহ বিভিন্ন মৌলিক সংস্কার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান সাকি।
নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে বৈঠকে এনসিপির পক্ষে বৈঠকে ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম, আশরাফ উদ্দীন মাহাদী, অনিক রায়, যুগ্ম সদস্য সচিব মোল্লা ফারুক, এহসান শুভ্রসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা।
গণসংহতির পক্ষে ছিলেন নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য তাসলিমা আখতার, হাসান মারুফ রুমি ও মনির উদ্দিন পাপ্পু।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনস প ন হ দ ইসল ম র জন ত ক এনস প র দলগ ল র ঐকমত য আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
‘জুলাই সনদের’ দাবিতে শাহবাগে অবরোধ, যানজট
রাজধানীতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে এই অবরোধ শুরু হয়েছে। ‘জুলাই সনদের’ দাবিতে জুলাই যোদ্ধারা এই অবরোধ করছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর বলেন, তিন থেকে চারশো মানুষ শাহবাগ অবরোধ করেছেন। এতে শাহবাগ মোড় ও এর আশপাশের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানে যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা শেষ করে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করতে চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তবে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের আলোচনা এখনো শেষ হয়নি।
জুলাই জাতীয় সনদের খসড়া নিয়ে আপত্তির কথা জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের দুই বছরের মধ্যে সনদে অন্তর্ভুক্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করা হবে—সনদের এ বিষয়টি নিয়েই মূলত আপত্তি। দলগুলো বলছে, জুলাই সনদকে একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে এনে তা বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা দিতে হবে। না হলে পুরো সংস্কারপ্রক্রিয়া অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। তবে এ খসড়ার সঙ্গে মোটামুটি একমত বিএনপি।