শেষ পর্যন্ত খনিজ চুক্তিতে স্বাক্ষর করলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন
Published: 1st, May 2025 GMT
কয়েক মাস আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে একরকম অপমান করেই হোয়াইট হাউস থেকে বের করে দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই বৈঠকে তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে খনিজ চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। তবে উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে সেটি হয়নি। বুধবার শেষ পর্যন্ত সেই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন।
চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, রাশিয়ার সাথে শান্তি চুক্তি করার পর ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা এবং পুনর্গঠনে মার্কিন বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার জন্য এটি একটি অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্রদান করবে।
চুক্তি স্বাক্ষরের পর মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এই চুক্তি রাশিয়ার কাছে স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে ট্রাম্প প্রশাসন দীর্ঘমেয়াদে একটি মুক্ত, সার্বভৌম এবং সমৃদ্ধ ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে শান্তি প্রক্রিয়ার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
তিনি বলেছেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউক্রেনের স্থায়ী শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতি উভয় পক্ষের প্রতিশ্রুতি প্রদর্শনের জন্য আমেরিকান জনগণ এবং ইউক্রেনীয় জনগণের মধ্যে এই অংশীদারিত্বের কল্পনা করেছিলেন। স্পষ্ট করে বলতে গেলে, রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্রকে অর্থায়ন বা সরবরাহকারী কোনো রাষ্ট্র বা ব্যক্তিকে ইউক্রেনের পুনর্গঠন থেকে উপকৃত হতে দেওয়া হবে না।”
ইউক্রেনের প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী, ইউলিয়া সভিরিডেনকো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে নিশ্চিত করেছেন যে তিনি বুধবার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন।
তিনি বলেছেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একসাথে, আমরা এমন একটি তহবিল তৈরি করছি যা আমাদের দেশে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে।”
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা চুক্তির বিশদ বিবরণ প্রকাশ করেছেন। তারা চুক্তিটিকে ন্যায়সঙ্গত এবং ইউক্রেনকে তার প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার অনুমতি প্রদানকারী হিসাবে চিত্রিত করেছেন।
ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্যামিহাল জানিয়েছেন, তহবিলটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউক্রেনের মধ্যে ৫০-৫০ ভাগে ভাগ করা হবে এবং প্রতিটি পক্ষকে সমান ভোটাধিকার দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ইউক্রেন “তার খনিজ সম্পদ, অবকাঠামো এবং প্রাকৃতিক সম্পদের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে” এবং শুধুমাত্র নতুন বিনিয়োগের সাথে সম্পর্কিত হবে, যার অর্থ এই চুক্তিতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে কোনো ঋণের বাধ্যবাধকতা থাকবে না।
বুধবার শ্যামিহাল এই চুক্তিকে “ইউক্রেনের উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধারে যৌথ বিনিয়োগের বিষয়ে সত্যিই একটি ভালো, সমান এবং উপকারী আন্তর্জাতিক চুক্তি” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
চুক্তির সমালোচকরা বলেছিলেন যে হোয়াইট হাউস যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির ভবিষ্যৎকে তার সম্পদ থেকে প্রাপ্ত রাজস্বের সাথে যুক্ত করে ইউক্রেনের সুবিধা নিতে চাইছে। ফেব্রুয়ারিতে বেসেন্টের প্রস্তাবিত শর্তাবলীর তুলনায় চূড়ান্ত শর্তাবলী ইউক্রেনের জন্য অনেক কম কঠিন ছিল। সেখানে একটি ধারা অন্তর্ভুক্ত ছিল যে তহবিল থেকে প্রাপ্ত রাজস্বের ১০০% মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করবে।
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউক র ন র প র কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগের সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায় বলে দাবি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)।
রবিবার (২ নভেম্বর) ডাকসুর ভিপি মো. আবু সাদিক, জিএস এসএম ফরহাদ ও এজিএস মুহা: মহিউদ্দিন খান স্বাক্ষরিত ‘রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কাৃরের বিরোধিতা এবং ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো অক্ষুণ্ন রাখার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ডাকসুর প্রতিবাদ' শীর্ষক এক প্রতিবাদলিপিতে এ কথা বলা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করতে ২ কমিটি
ঢাবিতে সপ্তাহব্যাপী শিল্পকর্ম প্রদর্শনী শুরু
প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, জুলাই বিপ্লব ছিল বৈষম্য, অবিচার ও ফ্যাসিবাদী শাসনকাঠামোর বিরুদ্ধে এ দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার এক সম্মিলিত বিপ্লব। কেবল সরকার পরিবর্তন নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ, স্বাধীন ও শক্তিশালী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গঠন, প্রশাসনিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং একটি বৈষম্যহীন-ন্যায়ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল এই বিপ্লবের মূল ভিত্তি। নতুন প্রজন্ম চেয়েছিল এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে কোন প্রকার বৈষম্য ও রাজনৈতিক একচেটিয়া কর্তৃত্বের জায়গা থাকবে না।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ধারাবাহিকভাবে সংস্কার কার্যকর করার বিরোধিতা করে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। বিশেষত বিএনপি এমন সব মৌলিক সংস্কারের বিরোধিতা করেছে যা সরাসরি ছাত্র–জনতার স্বপ্নের সঙ্গে জড়িত। পিএসসি, দুদক, ন্যায়পাল ও মহা-হিসাব নিরীক্ষকের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগ নিশ্চিত করার সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তারা ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়।
যে বৈষম্যমূলক চাকরি ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করেই জুলাই বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল সেই কাঠামো পরিবর্তনের বিরুদ্ধাচরণ করে বিএনপি নতুন প্রজন্মের ন্যায্য দাবি অস্বীকার করছে। পাশাপাশি জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশনের বিরোধিতা, অনুচ্ছেদ–৭০ সংস্কারে আপত্তি, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান আলাদা দুজন ব্যক্তির মতো আধুনিক গণতান্ত্রিক প্রস্তাবে বিরোধিতা, আইন পেশায় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা, স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস গঠনে তাদের আপত্তি রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নির্মাণের পথে বড় বাঁধার সৃষ্টি করছে। এভাবে বিএনপি মূলত জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে অস্বীকার করে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে।
প্রতিবাদলিপিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, এই সংস্কারগুলো ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থ নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তৈরির লক্ষ্যেই প্রস্তাবিত হয়েছে। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গঠনের নৈতিক দায়িত্ব ছাত্র ও সর্বস্তরের জনগণের। তাই সংস্কারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জনগণ থেকে নিতে হবে। আর গণভোটই জনগণের ম্যান্ডেট নিশ্চিতের উপযুক্ত মাধ্যম। গণভোটের মাধ্যমেই জনগণ ঠিক করবে দেশের স্বার্থে কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবনাগুলোকে তারা সমর্থন দিবে।
কোনো রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাব যদি রাষ্ট্রগঠনমূলক সংস্কারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তবে ছাত্র-জনতা সেই বাধা অতিক্রমে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেবে জানিয়ে প্রতিবাদলিপিতে আরো বলা হয়, জুলাই বিপ্লব শুধু শাসক বা সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন নয় বরং জুলাই বিপ্লব হলো ফ্যাসিবাদী কাঠামো বিলোপ করে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণ।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী