কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে হাতুড়ি ও লাঠিসোঁটা দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে যুবদল - স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের যদুবয়রা পুরাতন বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

আহত আওয়ামী লীগ নেতার নাম আব্দুল লতিফ লাইফা (৬০)। তিনি যদুবয়রা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি। ভয়ে তিনি নিজ বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

আজ বুধবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নিজ বাড়ির একটি কক্ষে শুয়ে আছেন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল লতিফ লাইফা। মাথায় ব্যান্ডেজ, পায়ে ও শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের ক্ষত। তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে বাজারে চা পান করছিলাম। সে সময় হঠাৎ যদুবয়রা ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক শামিম হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক ও ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আনিসুর রহমান, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রিপন আলীসহ ১৫-২০ লাঠিসোঁটা ও হাতুড়ি নিয়ে হামলা চালান। 

তার ভাষ্য, আবারও হামলা হতে পারে, সেই ভয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যাননি। থানাতেও লিখিত অভিযোগ করেননি।

তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে যদুবয়রা ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক শামিম হোসেন বলেন, ৫০-৬০ জনের একটি মোটরসাইকেল বহর ছিল মঙ্গলবার রাতে। বহর নিয়ে এনায়েত বাজারে পৌঁছে শুনলাম মারামারি হয়েছে। কে বা কারা করেছে তা জানি না।

অভিযোগ অস্বীকার করে যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক আনিসুর রহমান বলেন, ঘটনাস্থলে ছিলাম না। কারা মারামারি করেছে তা জানি না।

অভিযোগ অস্বীকার করে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি রিপন আলী বলেন, বাজারে গিয়ে দেখি স্থানীয় লোকজন একজনকে মারধর করছে। কাউকে মারছে চিনি না।

রাতে যদুবয়রাতে উত্তেজনা ছিল, তবে মারামারির খবর জানা নেই বলে জানিয়েছেন কুমারখালী থানার ওসি মো.

সোলায়মান শেখ। তিনি বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ ব এনপ য বদল ম রধর আওয় ম য বদল

এছাড়াও পড়ুন:

এবার মেডিকেলে ৫% আসন কমল

এবার সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৫ শতাংশ আসন কমিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। অবকাঠামো ও জনবল-ঘাটতি আছে এমন কলেজে আসন কমেছে। মন্ত্রণালয় বলছে, চিকিৎসা শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া মন্ত্রণালয় দুটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছর শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এগুলো হলো মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুর ভুইয়া মেডিকেল কলেজ ও শরীয়তপুরের মনোয়ারা সিকদার মেডিকেল কলেজ। অবশ্য এসব কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

গত শিক্ষাবর্ষে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ছিল ৫ হাজার ৩৮০টি। এবার ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে ১৪টি মেডিকেল কলেজের আসন কমানো হয়েছে ৩৫৫টি। ৩টি মেডিকেল কলেজের আসন বাড়ানো হয়েছে ৭৫টি। বাকি কলেজগুলোর আসন অপরিবর্তিত আছে। এভাবে সরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন কমেছে ২৮০টি, বর্তমান যা ৫ হাজার ১০০ রয়েছে।

আরও পড়ুনমেডিকেল-ডেন্টালে ভর্তিতে আবেদন শুরু, সরকারি মেডিকেলে আসন পুনর্বিন্যাস১১ নভেম্বর ২০২৫

৬৬টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত শিক্ষাবর্ষে আসন ছিল ৬ হাজার ২৯৩টি। এর মধ্যে মন্ত্রণালয় ১০টিতে আসন কমিয়েছে, দুটিতে আসন বাড়িয়েছে এবং বাকিগুলোতে আসন ঠিক রেখেছে। এতে বেসরকারি মেডিকেলে ২৯২টি আসন কমেছে।

সব মিলিয়ে গত বছরের চেয়ে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছর আসন কমেছে মোট ৫৭২টি। ১০ নভেম্বর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

অনেকে অভিযোগ করেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো মেডিকেল কলেজ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বেসরকারি মেডিকেল নিয়ে সমালোচনা হলেও সরকারি মেডিকেলের মান নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক কম হয়। মেডিকেল শিক্ষার জন্য অবকাঠামো, দক্ষ জনবল ও আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম ব্যবস্থা থাকা অপরিহার্য। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি দলিলে বলা হচ্ছে, বিগত সময়ে অবিবেচনাপ্রসূতভাবে প্রতিষ্ঠিত মেডিকেল কলেজসমূহে এসব কিছু না থাকায় প্রতিবছর যথাযথ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ঘাটতি নিয়ে বের হচ্ছেন হাজার হাজার চিকিৎসক, যা আগামী দিনে স্বাস্থ্য খাতের জন্য হুমকিস্বরূপ।

আরও পড়ুনমেডিকেল ও ডেন্টালে ভর্তির নীতিমালা প্রকাশ, নম্বর কাটাসহ যে যে পরিবর্তন৩০ অক্টোবর ২০২৫কেন আসন কমল

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, মেডিকেল কলেজগুলোর পরিস্থিতি জানার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবার কাঠামোবদ্ধ মূল্যায়ন পদ্ধতি (ম্যাট্রিক্স) ব্যবহার করেছে। মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) মেডিকেল কলেজগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করেছে। আবার প্রতিটি কলেজকে নিজেকে নিজের মূল্যায়ন করতে বলা হয়েছে। এই দুটি মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে মন্ত্রণালয় আসন ও শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী এ বছর মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুর ভুইয়া মেডিকেল কলেজ কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না। মন্ত্রণালয় বলছে, এই কলেজের জন্য ২৫০ শয্যার হাসপাতাল দরকার, আছে ৭০ শয্যার হাসপাতাল। কলেজটিতে অডিটরিয়াম, টিউটোরিয়াল কক্ষ, শ্রেণিকক্ষ, ল্যাব, লেকচার গ্যালারি, শিক্ষা উপকরণের ব্যাপক ঘাটতি আছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক কলেজে নেই। যাঁরা আছেন, তাঁরা সপ্তাহে দু-তিন দিন ক্লাস নেন। শিক্ষকদের বেতন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে জমা হয় না। প্রায় একই ধরনের পরিস্থিতির কারণে শরীয়তপুরের মনোয়ারা সিকদার মেডিকেল কলেজে এ বছর শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না।

সব মিলিয়ে গত বছরের চেয়ে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছর আসন কমেছে মোট ৫৭২টি। ১০ নভেম্বর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এর আগে বিভিন্ন সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও চারটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছিল। এই তালিকায় আছে: আইচি মেডিকেল কলেজ (ঢাকা), নর্দার্ন ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ (ঢাকা), নর্দার্ন প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ (রংপুর) ও শাহ মাকদুম মেডিকেল কলেজ (রাজশাহী)।

যে ১০টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আসন কমানো হয়েছে তার একটি রাজধানীর শ্যামলী এলাকার ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ। এই কলেজের ৯০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন আছে। মন্ত্রণালয় অনুসন্ধানে দেখেছে, কলেজটির নিজের নামে কোনো জমি নেই। দুটি একাডেমিক ভবন ভাড়া বাড়িতে। এই কলেজের জন্য ৪৫০ শয্যার হাসপাতাল দরকার। হাসপাতালে শয্যা আছে ৩৮৪টি। আরও নানা ঘাটতির কারণে মন্ত্রণালয় মনে করেছে, বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার সামর্থ্য কলেজটির নেই। তাই ১৫টি কমিয়ে আসনসংখ্যা ৭৫টি করা হয়েছে।

বাকি নয়টি কলেজেরও প্রায় একই ধরনের ঘাটতি আছে। এগুলোর মধ্যে আছে ঢাকার সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ, সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ, এমএইচ শমরিতা মেডিকেল কলেজ, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ, ডেলটা মেডিকেল কলেজ, মার্কস মেডিকেল কলেজ, গাজীপুরের সিটি মেডিকেল কলেজ, ফরিদপুরে ডায়াবেটিক মেডিকেল কলেজ ও কিশোরগঞ্জের আ. হামিদ মেডিকেল কলেজ।

এ বছর একটি নতুন মেডিকেল কলেজ অনুমোদন দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এটি ঢাকার জুরাইনের ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক মেডিকেল কলেজ। কলেজটি এ বছর ৫০ জন দেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে।

আরও তিনটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এ বছর শুধু ৫০ জন করে দেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে। এর মধ্যে আছে: সাউথ অ্যাপোলো মেডিকেল কলেজ (বরিশাল), আহসানিয়া মিশন মেডিকেল কলেজ (উত্তরা, ঢাকা) ও ফজলুর রহমান মেডিকেল কলেজ (গেন্ডারিয়া, ঢাকা)।

আরও আছে ৭ কলেজ

দেশে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী পরিচালিত মেডিকেল কলেজ আছে ৭টি। এর মধ্যে নতুন নেভি মেডিকেল কলেজে (চট্টগ্রাম) আসন ৫০টি। আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের আসনসংখ্যা ১২৫। বাকি পাঁচটি আর্মি মেডিকেল কলেজ। এগুলোর আসনসংখ্যা ৫০ করে। দুটি আর্মি মেডিকেলের আসন ১০টি করে বাড়ানোর কথা জানা গেছে মন্ত্রণালয় থেকে।

সরকারের এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ খায়রুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের কঠোরতা কম দেখা গেছে। একাধিক সরকারি মেডিকেলে ভর্তি এ বছর বন্ধ রাখা উচিত ছিল, যেমন দেখা গেছে বেসরকারি ক্ষেত্রে। সব মেডিকেলের মান ঠিক না হলে মানহীন চিকিৎসক আমরা পেতেই থাকব।’

এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মনে করেন, মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ হয়তো সঠিক ছিল, কিন্তু তা সম্পূর্ণ ছিল না। মানের প্রশ্নে সমঝোতা বা আপস করা ঠিক হয়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ