পশ্চিম তীরে তীব্র হামলা ইসরায়েলের, নিহত আরও ২ ফিলিস্তিনি
Published: 23rd, January 2025 GMT
তৃতীয় দিনের মতো দখলকৃত পশ্চিম তীরের জেনিনে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অভিযান চলছে। পশ্চিম তীরজুড়ে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে চলমান হামলা আরও তীব্র হয়েছে। বুরকিন এলাকায় ইসরায়েলি হামলায় বৃহস্পতিবার রাতে দুই ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে জেনিন প্রদেশে তিন দিনের অভিযানে মৃতের সংখ্যা ১২ বলে আলজাজিরা জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যম আল কুদস টুডে জানিয়েছে, নিহত মুহাম্মদ আবু আল-আসাদ ও কুতাইবা আল-শালাবি দীর্ঘক্ষণ ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। তারা দু’জনেই ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের সদস্য এবং চলতি মাসে কালকিলিয়া প্রদেশের ফুন্দুক গ্রামে ইসরায়েলি নাগরিকদের ওপর হামলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে দাবি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর। ওই হামলায় তিনজন ইসরায়েলি নিহত ও ছয়জন আহত হয়। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মরদেহগুলো এখনও হস্তান্তর করেনি ইসরায়েল।
ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানায়, বুরকিনে অভিযানের সময় ইসরায়েলি বাহিনী একটি বাড়ি ঘিরে ফেলে, সেখানে গুলি ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে পরে তা বুলডোজার দিয়ে ধ্বংস করা হয়। বুরকিনের মেয়র হাসান সোবহ অভিযোগ করেছেন, ইসরায়েলি সেনারা হামলার সময় ফিলিস্তিনি নারীদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে।
এদিকে জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা বলেছেন, গাজায় সাহায্য সংস্থাগুলো খাদ্য বিতরণের কাজ বৃদ্ধি করছে। এ ছাড়া ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর হাসপাতালগুলো পুনরুদ্ধার ও পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়েছে। অনেক স্থানে পানি সবরাহ ব্যবস্থা মেরামত করছে। এরই মধ্যে ফিলিস্তিনি সাংবাদিকরা ইনস্টাগ্রামে ভিডিও শেয়ার করেছেন যেখানে দেখা যাচ্ছে, গাজায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা সাদা কাফনে মোড়ানো লাশের মধ্যে তাদের স্বজনকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে আবারও বুদাপেস্ট সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে হাঙ্গেরি। দেশটি জানিয়েছে, তারা নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) কর্তৃক জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করবে না।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দাবানলে পুড়ছে ইসরায়েল, ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা
ইসরায়েলের জেরুজালেম শহরের কাছে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ দাবানল। শুষ্ক আবহাওয়ায় তীব্র বাতাসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছেন অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা। এমন পরিস্থিতিকে ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ। খবর সিএনএন, টাইমস অব ইসরায়েল, বিবিসি, আল জাজিরার
দাবানল নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছে ইসরায়েল। দাবানলে এ পর্যন্ত অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন। তবে কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
দাবানলকবলিত কয়েকটি এলাকার মানুষজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্তজ বলেছেন, এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জাতীয় জরুরি অবস্থার মধ্যে আছি।’
জেরুজালেমের অগ্নিনির্বাপণ বিভাগের কমান্ডার শমুলিক ফ্রিডম্যান বলেন, ইসরায়েলের ইতিহাসে এটি সম্ভবত সবচেয়ে বড় দাবানল। সতর্ক করে তিনি বলেন, কিছু সময়ের মধ্যে ঘণ্টায় ৬০ মাইলের বেশি গতিতে বাতাস বইতে পারে, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলতে পারে।
এই দাবানলের কারণে বুধবার ইসরায়েলের মেমোরিয়া ডেতে তেল আবিব ও জেরুজালেমের মধ্যে সংযোগকারী প্রধান সড়ক ‘রুট-১’ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, ঘন ধোঁয়ার মধ্যে মানুষ সড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।
কয়েক ঘণ্টা পরে জরুরি সেবাকর্মীরা মহাসড়কে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা সারি সারি গাড়ি তল্লাশি করে দেখছিলেন, ওই সব গাড়ির মধ্যে কেউ আটকে আছেন কি না।
অগ্নিনির্বাপণ বিভাগের কমান্ডার শমুলিক ফ্রিডম্যান বলেন, আমরা এখনো জানি না, কী কারণে আগুন লেগেছে। আমরা এখন পর্যন্ত কোনো সূত্রও খুঁজে পাইনি। এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।
ইসরায়েলি পুলিশ বলেছে, তারা সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। ওই ব্যক্তি একটি খোলা মাঠে আগুন লাগানোর চেষ্টা করছিলেন বলে পুলিশের দাবি।
এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি পুলিশ দাবি করেছে, জেরুজালেমের পুলিশ কর্মকর্তারা পূর্ব জেরুজালেমের একজন বাসিন্দাকে হাতেনাতে ধরে ফেলেছে। ওই ব্যক্তি তখন শহরের দক্ষিণ প্রান্তের একটি খোলা মাঠে আগুন লাগানোর চেষ্টা করছিলেন। তার কাছ থেকে একটি লাইটার, তুলা ও অন্যান্য দাহ্য পদার্থ উদ্ধার করা হয়েছে।
ইসরায়েলি পুলিশের দাবি, ৫০ বছর বয়সী সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তি পূর্ব জেরুজালেমের উম তুবা এলাকার বাসিন্দা। উম তুবা এলাকায় আরব ফিলিস্তিনিরা বসবাস করে থাকে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদন সার দাবানল মোকাবিলায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, এমন ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে কথা বলছেন। তিনি তাদের কাছ থেকে উড়োজাহাজের সহায়তা চেয়েছেন। ইতালি ও মেসিডোনিয়া থেকে তিনটি উড়োজাহাজ শিগগিরই ইসরায়েলে পৌঁছাবে বলে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল জানিয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দাবানল ছড়িয়ে পড়া এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্তজ বলেন, ‘আমরা জাতীয় জরুরি অবস্থার মধ্যে আছি। জীবন বাঁচাতে এবং দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে সব বাহিনীকে সক্রিয় করতে হবে।’
ইসরায়েলের ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ সার্ভিস জানিয়েছে, প্রায় ১২০টি দল এবং ১২টি অগ্নিনির্বাপণ বিমান ও হেলিকপ্টার দাবানল মোকাবিলায় কাজ করছে।
শামির মেডিকেল সেন্টার ও কপলান মেডিকেল সেন্টারের তথ্যমতে, দাবানলের কারণে অন্তত ডজন খানেক মানুষকে এই দুটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে জেরুজালেমের উপকণ্ঠে অবস্থিত হাদাসা মেডিকেল সেন্টারের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের প্রতি অনুরোধ করা হয়েছে, ‘জরুরি প্রয়োজন ছাড়া’ কেউ যেন হাসপাতালে না আসেন। হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও যাদের অবস্থা গুরুতর নয়, তাদের হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে দাবানলে আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
গত সপ্তাহে যে এলাকায় দাবানল দেখা দিয়েছিল, এবারও দাবানল প্রায় একই জায়গায় ছড়িয়েছে।