বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে ধান চাষের ঐতিহ্য বহু পুরোনো। এক সময় বাঙালির প্রধান খাবার ছিল মাছ ও ভাত। তবে কালের পরিক্রমায় খাদ্যাভ্যাসে বিভিন্ন পরিবর্তন আসলেও ভাত খাওয়ার মধ্যে বাঙালিরা তৃপ্তি খুঁজে পান।

ধান ও চালের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং পুষ্টিমান বৃদ্ধিতে নানা ধরনের গবেষণা চলমান রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রঙিন চাল নিয়ে গবেষণা নতুন আলো ছড়াচ্ছে। এই চালের খাদ্যগুণ, ঔষধি গুণাবলী ও অর্থনৈতিক মূল্য আমাদের খাদ্যশৃঙ্খলকে সমৃদ্ধ করতে পারে।

রঙিন চালের অন্যতম বিশেষত্ব এর পুষ্টিগুণ। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, আঁশ, আয়রন ও ভিটামিন বি পাওয়া যায়। বিশেষ করে এতে থাকা অ্যান্থোসায়ানিন নামক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান, যা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এমনকি এটি ক্যান্সার প্রতিরোধেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে দাবি গবেষক দলের। 

রঙিন চালের চাষ পদ্ধতি, ফলন ও পুষ্টিগুণ নিয়ে গবেষণা করে তিন বছরের এমন সাফল্য পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড.

মো. ছোলায়মান আলী ফকির ও তার গবেষক দল।

গবেষক দলের অন্য সদস্যরা হলেন, একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন-২, স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস ও সাগরিকা খাতুন।

শনিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গবেষণার বিষয়ে এসব তথ্য জানান প্রধান গবেষক ড. মো. ছোলায়মান আলী ফকির।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নেছার উদ্দিন, ড. মো. আলমগীর হোসেন-১ ও ড. মো. আলমগীর হোসেন-২।  

গবেষণার বিষয়ে প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মো. ছোলায়মান আলী ফকির বলেন, রঙিন চাল (Oryza sativa L. ) মূলত পাহাড়ি অঞ্চলে এবং উদ্ভাবনী কৃষকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে এটি এখন সাধারণ মানুষের মাঝেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চালের রং লাল, কালো, বাদামি কিংবা বেগুনি হতে পারে। আমরা মূলত লাল ও কালো রঙের চালটি নিয়ে গবেষণা করে এর মধ্যে থাকা পুষ্টিগুণের মাত্রা বের করেছি।”

তিনি বলেন, “গবেষণায় দেখা গেছে, সাদা চালের চেয়ে কালো চালের ব্রাণে ২-৩ গুণ খনিজ পদার্থ বিশেষত আয়রন ও জিংক বিদ্যমান। এগুলোর বাইরের আবরণে থাকা অ্যান্থোসায়ানিন এবং অন্যান্য ফাইটো-কেমিক্যাল উপাদান এ চালকে অনন্য করেছে। অ্যান্থোসায়ানিনের উপস্থিতির কারণে ব্রাণের রং লাল হয়ে থাকে।”

রঙিন চালের পুষ্টিগুণের বিষয়ে প্রধান গবেষষক বলেন, “এ চাল শুধু দেখতে সুন্দরই নয়, এর রয়েছে অপরিসীম পুষ্টিগুণ ও ঔষধি গুণাবলী। কালো, লাল, বেগুনি, এমনকি বাদামি রঙের এ চাল শুধু তার বাহারি চেহারার জন্য নয়, বরং স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্যও দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। রঙিন চাল থেকে ভাত, খিচুড়ি, বিরিয়ানি থেকে শুরু করে মুড়ি, চিড়া এবং বিভিন্ন ধরণের পিঠা তৈরিও সম্ভব। সাধারণ সাদা চালের তুলনায় এতে বেশি পরিমাণে প্রোটিন, আঁশ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে।” 

চাষাবাদ ও ফলন সম্পর্কে প্রধান গবেষক বলেন, “রঙিন চাল চাষ সাধারণ ধানের মতোই সহজ। এটি মূলত আমন মৌসুমে চাষ হয়। তবে বোরো মৌসুমেও ফলন সম্ভব। দোআঁশ মাটি থেকে শুরু করে কাদামাটিতেও এ ধান ভালো জন্মায়। উপযুক্ত সার প্রয়োগে (ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি) প্রতি একরে ফলন প্রায় সাড়ে তিন টন পর্যন্ত হতে পারে।”

সীমাবন্ধতা নিয়ে ড. মো. ছোলায়মান আলী বলেন, “যদিও এর ফলন সাধারণ সাদা ধানের তুলনায় কিছুটা কম। তবে বাজারমূল্য অধিক হওয়ায় কৃষকরা পুষিয়ে নিতে পারবে। এ ধানের একটি চ্যালেঞ্জ হলো কম রাসায়নিক সার সহনশীলতা এবং পাখি বা রোগবালাইয়ের প্রতি সংবেদনশীল। তাই উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন এবং আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন রয়েছে।”

গবেষণার বিষয়ে সহযোগী গবেষক অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন-২ বলেন, “রঙিন চালের পুষ্টি উপাদান মূল বাইরের আবরণে থাকে। সাধারণ মিলে ছাঁটাইয়ের ফলে এর পুষ্টিগুণ কিছুটা কমে যেতে পারে। তবে বেশি পরিমাণে কমবে না। সবচেয়ে ভালো হয়, ঢেকিতে ছাঁটাই করে খাবারের জন্য ব্যবহার করা।”

ঢাকা/লিখন/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আলমগ র হ স ন

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের রানওয়েতে কুকুর, মেয়রকে পরিচালকের চিঠি

শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে ও অ্যাপ্রোন (র‍্যাম্প) এলাকায় ঘোরাঘুরি করে কুকুর। এতে প্রায় সময় উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন পাইলটরা। কয়েক দফা নিয়ন্ত্রণ টাওয়ারে অভিযোগও দিয়েছেন তাঁর। তবে এখতিয়ার না থাকায় সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারেননি বিমানবন্দরের পরিচালক। ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানালেন সিটি মেয়রকে।

২১ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেনকে চিঠি দিয়েছেন বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আবদুল্লাহ আলমগীর। সেখানে কুকুরের উৎপাতের কারণে সুষ্ঠুভাবে অপারেশনাল কাজ সম্পন্ন করতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানান তিনি। সবশেষ তিন দিন আগে ২৬ এপ্রিলও সিটি করপোরেশনকে আরেকটি চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে বিমানবন্দর সূত্র জানায়।

চিঠিতে উল্লেখ করা, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সম্প্রতি অ্যাপ্রোন (র‍্যাম্প) এবং রানওয়ে–সংলগ্ন এলাকায় কুকুরের উৎপাত বেড়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন এয়ারলাইনসের পাইলটরা নিয়ন্ত্রণ টাওয়ারে একাধিকবার অভিযোগ দিয়েছেন। এ অবস্থায় সুষ্ঠুভাবে অপারেশনাল কাজ সম্পন্ন করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

এ বিষয়ে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আবদুল্লাহ আলমগীরের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চিঠি পেয়েছি। তবে আসলে কুকুর তো নিধন করা যাবে না, আমরা টিকা দিয়ে রাখি, যাতে জলাতঙ্কের ঝুঁকি না থাকে। তবে যেহেতু কয়েক দফা চিঠি দিয়েছে, আমরা পরবর্তী সাধারণ সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘একদিন দেখি পশুরমতো ঘরের কোণে বসে কাঁপছে ববি’
  • বকেয়া রিকশা ভাড়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে আহত ৫০
  • চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের রানওয়েতে কুকুর, মেয়রকে পরিচালকের চিঠি
  • বিশ্বনেতাদের সতর্ক দৃষ্টির সামনেই ঘটছে গণহত্যা
  • শেখ হাসিনা ফিরে এলে সাধারণ মানুষই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে: মির্জা ফখরুল
  • শেখ হাসিনা ফিরে আসলে সাধারণ মানুষই ব্যবস্থা নেবে: মির্জা ফখরুল
  • রিকশা ভাড়ার ৫০ টাকা নিয়ে সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক
  • প্রত্যন্ত গ্রামে ক্লিনিক খুলে ‘এমবিবিএস ডাক্তার’ পরিচয়ে চিকিৎসা, এক বছরের কারাদণ্ড
  • ‘শি জিনপিং ফোন করেছিলেন’ ট্রাম্পের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান চীনের
  • শি জিনপিং ফোন করেছিলেন, ট্রাম্পের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান চীনের