বাকৃবি গবেষকের সাফল্য: ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাবে রঙি
Published: 26th, January 2025 GMT
বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে ধান চাষের ঐতিহ্য বহু পুরোনো। এক সময় বাঙালির প্রধান খাবার ছিল মাছ ও ভাত। তবে কালের পরিক্রমায় খাদ্যাভ্যাসে বিভিন্ন পরিবর্তন আসলেও ভাত খাওয়ার মধ্যে বাঙালিরা তৃপ্তি খুঁজে পান।
ধান ও চালের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং পুষ্টিমান বৃদ্ধিতে নানা ধরনের গবেষণা চলমান রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রঙিন চাল নিয়ে গবেষণা নতুন আলো ছড়াচ্ছে। এই চালের খাদ্যগুণ, ঔষধি গুণাবলী ও অর্থনৈতিক মূল্য আমাদের খাদ্যশৃঙ্খলকে সমৃদ্ধ করতে পারে।
রঙিন চালের অন্যতম বিশেষত্ব এর পুষ্টিগুণ। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, আঁশ, আয়রন ও ভিটামিন বি পাওয়া যায়। বিশেষ করে এতে থাকা অ্যান্থোসায়ানিন নামক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান, যা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এমনকি এটি ক্যান্সার প্রতিরোধেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে দাবি গবেষক দলের।
রঙিন চালের চাষ পদ্ধতি, ফলন ও পুষ্টিগুণ নিয়ে গবেষণা করে তিন বছরের এমন সাফল্য পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড.
গবেষক দলের অন্য সদস্যরা হলেন, একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন-২, স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস ও সাগরিকা খাতুন।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গবেষণার বিষয়ে এসব তথ্য জানান প্রধান গবেষক ড. মো. ছোলায়মান আলী ফকির।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নেছার উদ্দিন, ড. মো. আলমগীর হোসেন-১ ও ড. মো. আলমগীর হোসেন-২।
গবেষণার বিষয়ে প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মো. ছোলায়মান আলী ফকির বলেন, রঙিন চাল (Oryza sativa L. ) মূলত পাহাড়ি অঞ্চলে এবং উদ্ভাবনী কৃষকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে এটি এখন সাধারণ মানুষের মাঝেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চালের রং লাল, কালো, বাদামি কিংবা বেগুনি হতে পারে। আমরা মূলত লাল ও কালো রঙের চালটি নিয়ে গবেষণা করে এর মধ্যে থাকা পুষ্টিগুণের মাত্রা বের করেছি।”
তিনি বলেন, “গবেষণায় দেখা গেছে, সাদা চালের চেয়ে কালো চালের ব্রাণে ২-৩ গুণ খনিজ পদার্থ বিশেষত আয়রন ও জিংক বিদ্যমান। এগুলোর বাইরের আবরণে থাকা অ্যান্থোসায়ানিন এবং অন্যান্য ফাইটো-কেমিক্যাল উপাদান এ চালকে অনন্য করেছে। অ্যান্থোসায়ানিনের উপস্থিতির কারণে ব্রাণের রং লাল হয়ে থাকে।”
রঙিন চালের পুষ্টিগুণের বিষয়ে প্রধান গবেষষক বলেন, “এ চাল শুধু দেখতে সুন্দরই নয়, এর রয়েছে অপরিসীম পুষ্টিগুণ ও ঔষধি গুণাবলী। কালো, লাল, বেগুনি, এমনকি বাদামি রঙের এ চাল শুধু তার বাহারি চেহারার জন্য নয়, বরং স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্যও দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। রঙিন চাল থেকে ভাত, খিচুড়ি, বিরিয়ানি থেকে শুরু করে মুড়ি, চিড়া এবং বিভিন্ন ধরণের পিঠা তৈরিও সম্ভব। সাধারণ সাদা চালের তুলনায় এতে বেশি পরিমাণে প্রোটিন, আঁশ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে।”
চাষাবাদ ও ফলন সম্পর্কে প্রধান গবেষক বলেন, “রঙিন চাল চাষ সাধারণ ধানের মতোই সহজ। এটি মূলত আমন মৌসুমে চাষ হয়। তবে বোরো মৌসুমেও ফলন সম্ভব। দোআঁশ মাটি থেকে শুরু করে কাদামাটিতেও এ ধান ভালো জন্মায়। উপযুক্ত সার প্রয়োগে (ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি) প্রতি একরে ফলন প্রায় সাড়ে তিন টন পর্যন্ত হতে পারে।”
সীমাবন্ধতা নিয়ে ড. মো. ছোলায়মান আলী বলেন, “যদিও এর ফলন সাধারণ সাদা ধানের তুলনায় কিছুটা কম। তবে বাজারমূল্য অধিক হওয়ায় কৃষকরা পুষিয়ে নিতে পারবে। এ ধানের একটি চ্যালেঞ্জ হলো কম রাসায়নিক সার সহনশীলতা এবং পাখি বা রোগবালাইয়ের প্রতি সংবেদনশীল। তাই উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন এবং আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন রয়েছে।”
গবেষণার বিষয়ে সহযোগী গবেষক অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন-২ বলেন, “রঙিন চালের পুষ্টি উপাদান মূল বাইরের আবরণে থাকে। সাধারণ মিলে ছাঁটাইয়ের ফলে এর পুষ্টিগুণ কিছুটা কমে যেতে পারে। তবে বেশি পরিমাণে কমবে না। সবচেয়ে ভালো হয়, ঢেকিতে ছাঁটাই করে খাবারের জন্য ব্যবহার করা।”
ঢাকা/লিখন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আলমগ র হ স ন
এছাড়াও পড়ুন:
কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস
বিংশ শতাব্দীর আগে পৃথিবীর মানচিত্রে কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান নামের এই পাঁচটি দেশ ছিলো না। মূলত ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই রাষ্ট্রগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। পরে চীনের সহায়তায় ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলগুলো বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল হিসেবে পুনরুত্থান হয়েছে। এখন প্রশ্ন করা যেতে পারে, চীন কেন আবারও এই অঞ্চলগুলোকে শক্তিশালী করে তুলছে?
ঐতিহাসিকভাবে মধ্য এশিয়া অঞ্চল সিল্করোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো। যা চীনকে মধ্যপ্রাচ্য এবং রোমান সভ্যতার সাথে যুক্ত করেছিলো। বীজ গণিতের জনক আল খারিজমি, আবু সিনার মতো বিজ্ঞানীদের জন্ম হয়েছে এখানে। যাদের লেখা বই ইউরোপে শত শত বছর ধরে চিকিৎসা ও নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। চেঙ্গিস খানও এই অঞ্চলে তার সম্রাজ্যের নিদর্শন রেখে গেছেন। পাশাপাশি ঘোড়ার পিঠে আদিম যাযাবর জীবনের ঐতিহ্যও টিকে আছে এখানে।
আরো পড়ুন:
রাশিয়ার বিরুদ্ধে এবার রোমানিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ
রাশিয়ায় ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামির সতর্কতা
রাজনৈতিক প্রভাব ও সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করেছিলো রুশরা। উপনিবেশিক শাসন এমনভাবে চালু করেছিলো, যা অনেকটা ব্রিটিশ বা ফরাসি সম্রাজ্যের মতো দেখতে।
রাজ্যগুলোকে শিল্পায়ন ও আধুনিকায়নের ফলে বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এমনকি যাযাবর জাতিকে যুদ্ধ যেতে বাধ্য করা হয়েছিলো। আর যাযাবর জাতিকে বসতি স্থাপনে বাধ্য করা হয়েছিলো। এরপর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ফলে কাজাখ জনগোষ্ঠীর চল্লিশ শতাংশ অর্থাৎ ২৫ শতাংশ মানুষ অনাহারে মারা যায়। এবং যাযাবর জনগোষ্ঠীর যে অর্থনীতি, তা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। কারণ সোভিয়েত আমলে কাজাখ যাযাবররা যে পশুপালন করতো তার নব্বই শতাংশই মারা যায়। ফলে বাধ্য হয়ে কাজাখদের যাযাবর জীবনযাত্রা ছেড়ে দিতে হয়। বলতে গেলে সোভিয়েত আমলে কাজাখ সভ্যতা ও সংস্কৃতির বেদনাদায়ক পুনর্গঠনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
১৯৯১ সালে সোভিয়েন ইউনিয়নের পতন হয়, সৃষ্টি হয় এই পাঁচটি স্বাধীন দেশের। এই দেশগুলো স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী বিশ্বে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের ব্যাপক সংগ্রাম করতে হয়। তবে বিগত কয়েক দশক ধরে মধ্য এশিয়ার যাযাবর জাতিগুলো নিজস্ব সীমানার মধ্যে এক অনন্য পরিচয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। যদিও তাদের ওপর বাইরের প্রভাবও রয়েছে। তুরস্ক এই অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি আরও বেশি জানান দিচ্ছে। সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত মিল আছে। এমনকি শিক্ষাগত কাঠামোতেও মিল রয়েছে। তুরস্ক মধ্য এশিয়ায় রাশিয়ার পণ্য রফতানির একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবেও বিবেচিত।
জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় এক কোটি উইঘুর বাস করেন। যাদের বেশিরভাগই মুসলিম। এদের নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া উইঘুর পরিচয় মুছে ফেলতে তাদের পুনঃশিক্ষা শিবিরে আটকে রাখার অভিযোগও আছে। যদিও চীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
বৈশ্বিক অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর চীন মধ্য এশিয়ায় ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। এই অঞ্চলটিকে বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত করতে চাইছে, যা অনেকটা সিল্করুটের মতোই।
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় প্রাচীন সিল্ক রোড পুনরুজ্জীবিত করার একটি সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এই রোড পুনরুজ্জীবিত হলে রাশিয়া আর চীনের প্রভাব বলয়ে থাকা এই অঞ্চলের ভূ রাজনৈতিক গুরুত্ব কতটা বাড়বে-সেটাও সময় বলে দেবে।
ঢাকা/লিপি