ছবি: প্রথম আলো

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

গ্রামাঞ্চলে নারীর কর্মসংস্থান: ক্ষুদ্র উদ্যোগ, নাকি বড় চ্যালেঞ্জ

সকালের উনুনে জ্বলা আগুনের দিকে তাকিয়ে থাকা গ্রামীণ নারীর জীবনও ঠিক ওই আগুনের মতোই। কখনো ইচ্ছা হয় তুমুল সম্ভাবনা নিয়ে জ্বলে ওঠার, আবার সেই ইচ্ছা নিভেও যায় নানা বাধায়। সংসারের কাজ সামলে তাঁরা চেষ্টা করেন পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা বাড়াতে। কিন্তু অবহেলার কারণে গ্রামীণ নারীর পরিশ্রম ও সম্ভাবনা সমাজে যথেষ্ট গুরুত্ব পায় না।

এ দেশের অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যা নারী। এ তথ্যই বলে দেয় তাঁদের অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ কতটা জরুরি। শহরে নারীর কর্মসংস্থান তুলনামূলকভাবে বাড়লেও গ্রামে এ অগ্রগতি এখনো ধীর। দেশের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হলে গ্রামীণ নারীর কর্মসংস্থানের প্রতি গুরুত্বারোপ করা ছাড়া বিকল্প নেই।

ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, বাংলার বাণিজ্য, তাঁতশিল্প, কুটিরশিল্প—সবকিছুর ভিত্তিই গড়ে উঠেছিল গ্রামীণ নারীর হাতের বুননে। কৃষির সূচনাতেও নারীর অবদান ছিল অপরিসীম।

আজও গ্রামীণ নারীদের বেশির ভাগই কৃষিকাজে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। বীজ বপন, ফসল প্রক্রিয়াকরণ, বিপণন, গবাদিপশু পালন থেকে শুরু করে অসংখ্য কাজ তাঁরা নীরবে করে থাকেন। যদি তাঁদের যথাযথ অর্থায়ন, প্রশিক্ষণ ও বাজার-সংযোগ নিশ্চিত করা যায়, তবে কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বাড়বে, খাদ্যনিরাপত্তা আরও দৃঢ় হবে।

অন্যদিকে কর্মসংস্থানের অভাবে অনেক নারী ঘরে বসেই নকশিকাঁথা, বেত-বাঁশের কারুশিল্প, মৃৎশিল্পসহ নানা পণ্য উৎপাদন করেন। কেউ কেউ প্রসাধনী দোকান, পারলার কিংবা মোবাইল সার্ভিস সেন্টারেও কাজ করেন। তাঁদের এ আগ্রহ প্রমাণ করে, সুযোগ দিলে তাঁরা সক্ষমতার নতুন দিগন্ত তৈরি করতে পারেন। প্রয়োজন কেবল সঠিক প্রশিক্ষণ, বাজারজ্ঞান ও আর্থিক সহায়তা।

আত্মনির্ভরতা নারীর আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। এতে নিজ সিদ্ধান্ত গ্রহণে, সন্তান লালন কিংবা ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য নিয়ে তাঁরা আরও সচেতন হয়ে ওঠেন। তাঁদের সৃজনশীলতা বিকাশের সুযোগ পেলে এ ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলো অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

উদ্যোক্তা হতে হলে প্রয়োজন হিসাবরক্ষণ, বিপণন দক্ষতা, ডিজিটাল সাক্ষরতা ও প্রযুক্তি ব্যবহারের জ্ঞান, যার অনেকটাই গ্রামীণ নারী পান না। ফলে তাঁদের মানসম্মত পণ্য শহরের বড় বাজারে পৌঁছায় না। অনেক ব্যাংকও নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে দ্বিধাবোধ করে। বিআইজিডির তথ্য বলছে, স্মার্টফোন হাতে থাকলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণ নারীর হাতে থাকে না। তা ছাড়া ইন্টারনেট সুবিধার অভাব তাঁদের উদ্যোগ সম্প্রসারণের পথও আটকে দেয়। ফলে কম লাভ ও বাজার সংকোচনের কারণে অনেক উদ্যোগ ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে।

বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে ডিজিটাল সাক্ষরতা, কারিগরি শিক্ষায় প্রবেশাধিকার ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে গ্রামীণ নারী এখনো শহুরে নারী-পুরুষের তুলনায় খুব পিছিয়ে।

তবু আশা আছে। নারীর ক্ষুদ্র উদ্যোগ দেশের বড় অর্থনৈতিক সাফল্য বয়ে আনতে পারে যদি আমরা তাঁদের সামান্য সহায়তাও নিশ্চিত করি। যেসব নারী অদৃশ্য শ্রমের ভেতরে থেকেও দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছেন, তাঁদের গল্পগুলো সামনে আনতে হবে, বাধাগুলো দূর করতে হবে। গ্রামীণ নারীর জীবনের উনুনে জ্বলতে থাকা ছোট্ট ইচ্ছাশিখাকে স্থায়ী অগ্নিশিখায় পরিণত করাই আমাদের দায়িত্ব। যা শুধু নারী নয়, দেশের সার্বিক উন্নয়নকেও ত্বরান্বিত করবে।

লাবনী আক্তার শিমলা শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ