প্রশ্নের উত্তরটা মুখে হাসি রেখেই দিয়েছেন নাজমুল হোসেন। কিন্তু ‘লেবু কচলানোর’ মতো হয়ে যাওয়া সাকিব আল হাসান প্রসঙ্গে বলতে যে খুব একটা স্বস্তি বোধ করেননি, তা স্পষ্ট হয়েছে বাংলাদেশ অধিনায়কের কথাতেই। অবশ্য সাকিবকে নিয়ে আসাটা খুব অপ্রাসঙ্গিক কিছুও নয়।

আগামীকাল রাতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই টুর্নামেন্টে যে তারা আট দলের একটি হয়ে যাচ্ছে, এর একটা বড় কৃতিত্ব তো সাকিবেরই। ২০২৩ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কাকে হারানো ওই বিতর্কিত ম্যাচটি দিয়েই বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলা নিশ্চিত হয়। সেই ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ে ব্যাট ও বল হাতে বড় অবদান ছিল সাকিবের।

ম্যাচটা বিতর্কিত হওয়ার কারণটা আরেকবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া যাক—আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম টাইমড আউটের ঘটনা সেই ম্যাচে। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে ওই আউট করার সময়ে বাংলাদেশের অধিনায়ক ছিলেন সাকিব। শ্রীলঙ্কাকে যে ম্যাচটিতে ২৭৯ রানে আটকে রাখা গিয়েছিল, তাতে ওই আউটের একটা ভূমিকা তো ছিলই, সাকিব বল হাতেও নিয়েছিলেন ২ উইকেট।

পরে আসল কাজটা সাকিব করেন ব্যাট হাতে। ৪১ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর নাজমুল হোসেনের সঙ্গে ১৪৯ বলে ১৬৯ রানের একটা বড় জুটি গড়েন। নিজে ৬৫ বলে ৮২ রানের দুর্দান্ত একটা ইনিংসও খেলেন সাকিব। নিয়তির কী লিখন, এত কিছু করে যে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশের জায়গা নিশ্চিত করলেন, সাকিব তাতে যেতে পারছেন না বছর দেড়েক পরে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশেই ফিরতে পারছেন না আওয়ামী লীগের সাবেক এই সংসদ সদস্য। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর ক্যারিয়ারও তাই ঝুলে আছে। তাঁর অভাব বোধ করবেন কি না, আজ সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নটা আসার পর নাজমুলের উত্তর, ‘সাকিব ভাইকে অবশ্যই মিস করব। এই প্রশ্ন কেন করলেন, আমি জানি না। সাকিব ভাইকে মিস করব, থাকলে ভালো হতো…অনেকবার এই উত্তর পেয়েছেন, খেলোয়াড়েরা দিয়েছে। আমার মনে হয় না একটা টুর্নামেন্টে যাওয়ার আগে এই প্রসঙ্গে কথা বলাটা যৌক্তিক হবে।’

এরপর অবশ্য শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওই ম্যাচে সাকিবের অবদানকেও নতুন করে স্বীকার করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘নির্দিষ্ট করে যদি বলেন, ব্রিলিয়ান্ট ব্যাটিং করেছেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে। আমার মনে হয়, ওই ইনিংসটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, আমাদের দলকে জেতাতে অনেক সহায়তা করেছে।’

চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সাকিবের জায়গা কে নেবেন, এ প্রশ্নের উত্তর অবশ্য ‘যে দায়িত্ব পাবে’ এতটুকু বলেই দিয়েছেন নাজমুল।

সাকিব না হয় বাদ, কিন্তু বাংলাদেশের স্কোয়াডে নেই লিটন দাসও। ফর্মের কারণে বাদ পড়া এই ক্রিকেটার বিপিএলে ফেরার বার্তা দিয়েছেন। ১১ ম্যাচে ১৪৩.

১৯ স্ট্রাইক রেটে ৩৬৮ রান করেছেন। এর বাইরেও কি কাউকে মিস করবেন? নাজমুল ‘ফেলে আসাদের’ নিয়ে ভাবছেনই না, ‘যে ১৫ জন ক্রিকেটার স্কোয়াডে আছে, সবাইকে নিয়ে খুবই খুশি ও আত্মবিশ্বাসী আমি। যে–ই খেলবে, একা হাতে ম্যাচ জেতাতে পারে, এই সামর্থ্য সবার আছে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অবশ য র একট

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ