দলগুলো একমত হলে বর্ষপূর্তিতেই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ
Published: 31st, July 2025 GMT
ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হবে। বিশেষ করে নির্বাচিত সরকারের সংস্কার করা সংবিধানের প্রস্তাবনায় এই স্বীকৃতির উল্লেখ থাকবে। এ ছাড়া সংবিধানের তফসিলেও ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ সংযুক্ত থাকবে। এ ঘোষণাপত্র ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর বলে ধরে নেওয়া হবে।
বহুল আলোচিত জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ায় এ কথাগুলো বলা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে অন্যতম আলোচিত বিষয় এই ঘোষণাপত্র। অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি সামনে রেখে সম্প্রতি জুলাই ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়া বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বিভিন্ন দলকে পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। দলগুলোর সবুজ সংকেত পেলে অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতেই ঘোষণা করা হতে পারে জুলাই ঘোষণাপত্র।
ঘোষণাপত্রের খসড়ায় ২৬টি দফা রয়েছে। প্রথম ২১ দফায় মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের মানুষের অতীতের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম থেকে শুরু করে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট মোকাবিলায় গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত জনগণের সার্বভৌমত্বের প্রত্যয় ও প্রয়োগ রাজনৈতিক এবং আইনি উভয় দিক থেকে যুক্তিসংগত, বৈধ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।’
আরও পড়ুনমৌলিক সংস্কারের সব বিষয়ে মতৈক্য হয়নি ৫ ঘণ্টা আগেপরের পাঁচটি দফায় রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা, আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুম-খুন, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সব ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধের দ্রুত উপযুক্ত বিচার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি, শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে।
খসড়া ঘোষণাপত্রে শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের প্রতিষ্ঠিত বাকশাল বা একদলীয় শাসনব্যবস্থার সমালোচনা করা হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর দেশে সিপাহি জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব সংঘটিত হয় বলে ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের কথা যেমন এতে উল্লেখ রয়েছে, পাশাপাশি এক-এগারোর ‘ষড়যন্ত্রমূলক বন্দোবস্তের’ কড়া সমালোচনাও ঘোষণাপত্রে আছে।
জনগণের লড়াইকে সমর্থন দেয় সামরিক বাহিনীঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন, পিলখানা ট্র্যাজেডি, শাপলা চত্বরে গণহত্যার মতো আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম-খুন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, একদলীয় স্বার্থে সংবিধান সংশোধন ও পরিবর্তন বাংলাদেশের সব রাষ্ট্রীয় এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি চরম গণবিরোধী, একনায়কতান্ত্রিক ও মানবাধিকার হরণকারী শক্তি বাংলাদেশকে একটি ফ্যাসিবাদী, মাফিয়া ও ব্যর্থ রাষ্ট্রের রূপ দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।
অবৈধভাবে ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার তিনটি প্রহসনের নির্বাচনে (২০১৪, ’১৮ ও ’২৪) দেশের মানুষকে ভোটাধিকার ও প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত করে বলেও জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে। বলা হয়, তথাকথিত উন্নয়নের নামে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের নেতৃত্বে সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের মধ্য দিয়ে বিগত পতিত দুর্নীতিবাজ আওয়ামী সরকার বাংলাদেশ ও এর অমিত অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বিপর্যস্ত করে তোলে এবং এর পরিবেশ-জলবায়ু ও প্রাণবৈচিত্র্য বিপন্ন করে।
খসড়া ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবি ঘোষণা করে, যা পরে ১ দফায় রূপান্তরিত হয়। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা জনগণের গণতান্ত্রিক লড়াইকে সমর্থন দেন। তীব্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গণভবনমুখী জনতার উত্তাল যাত্রার মুখে অবৈধ, অনির্বাচিত, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট (২০২৪) পদত্যাগ করেন এবং তিনি মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক সরক র র উল ল খ আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, “জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর। আমরা যেসব বিষয়ে একমত হয়েছি, সেগুলো বাস্তবায়নের পথ রাজনৈতিক নেতারাই তৈরি করবেন। কমিশন সেখানে থাকবে অনুঘটক হিসেবে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে।”
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের সংলাপের শেষ দিনে তিনি এসব কথা বলেন।
আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), সিপিবি, ইসলামী আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
আরো পড়ুন:
সরকারের একটি অংশ অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে: তারেক রহমান
৫ আগস্ট ঘিরে নিরাপত্তা শঙ্কা নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
আলী রীয়াজ জানান, এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩টি বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। কিছু বিষয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ অর্থাৎ ভিন্নমতের সুযোগ রয়েছে। আলোচনা শেষে একমত ও ভিন্নমতের তালিকা দ্রুত দলগুলোর কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, জুলাই সনদে দুটি অংশ থাকবে— একটি ঐকমত্যের বিষয়, অন্যটি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি। ইতোমধ্যে খসড়া পাঠিয়ে সংশোধনী মতামত চাওয়া হয়েছে এবং তার ভিত্তিতে চূড়ান্ত টেক্সট তৈরি করা হচ্ছে।
আলী রীয়াজ বলেন, আজকের আলোচনায় কিছু অনালোচিত বিষয়েরও নিষ্পত্তি হবে। কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত ফ্লোর থেকেই নেওয়া হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আশা প্রকাশ করেন, আজকের মধ্যেই আলোচনা পর্বের সমাপ্তি টানা সম্ভব হবে। এর পর স্বাক্ষরের জন্য সনদের পরিকল্পনা করা হবে।
গত ২ জুন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় দফার সংলাপ শুরু হয়েছিল। এর উদ্বোধন করেন কমিশনের চেয়ারম্যান ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
এর আগে মার্চ থেকে মে পর্যন্ত প্রথম ধাপের সংলাপে ৫০টির বেশি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল। এ প্রক্রিয়ার লক্ষ্য— ২০২৫ সালের মধ্যে একটি জাতীয় সংলাপের ভিত্তিতে রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কারে ঐকমত্য গড়ে তোলা।
ঢাকা/এএএম/রফিক