ট্রাম্প কেন ভারতের ওপর এমন চাপ দিচ্ছেন, কী বলছেন রাজনৈতিক নেতারা
Published: 31st, July 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পর বিরোধী দল কংগ্রেস বিজেপি সরকারকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেছে। কংগ্রেস পার্টির এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি পোস্টে লেখা হয়েছে, এখন দেশকে মোদির ‘বন্ধুত্বের মূল্য’ দিতে হচ্ছে।
কংগ্রেস ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে টেক্সাসে অনুষ্ঠিত ‘হাউডি মোদি’ অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের পক্ষে মোদির প্রচার চালানোকে আজকের পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছে।
কংগ্রেস বলেছে, ট্রাম্প ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন। এর সঙ্গে দণ্ড জরিমানাও দিয়েছেন। এখন দেশ মোদির বন্ধুত্বের খেসারত দিচ্ছে। মোদি ট্রাম্পের প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁকে জড়িয়ে ধরেছিলেন ও ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প ভারতকে শাস্তি দিলেন। ভারতের পররাষ্ট্রনীতি সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্কের পাশাপাশি ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, রাশিয়া থেকে জ্বালানি ও অস্ত্র কেনার কারণে ভারতকে অতিরিক্ত জরিমানাও দিতে হবে।
ট্রাম্প আরও বলেন, ভারত ও চীন রাশিয়ার যুদ্ধ খরচ বহন করছে। সেই যুদ্ধ এরই মধ্যে তিন বছর ধরে চলছে। ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, আবার প্রেসিডেন্ট হলে শপথ নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি যুদ্ধ শেষ করে দেবেন।
ট্রাম্প তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ভারত সব সময় রাশিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র কিনেছে এবং রাশিয়ার জ্বালানির সবচেয়ে বড় ক্রেতা। এমন এক সময়ে তারা এই কাজ করেছে, যখন সবাই চাইছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হোক। তাই আগামী ১ আগস্ট থেকে ভারতকে ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক ও অতিরিক্ত জরিমানা দিতে হবে।
কংগ্রেস–দলীয় সংসদ সদস্য মাল্লু রবি বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্টের হুমকিতে আমরা উদ্বিগ্ন। শুনে মনে হচ্ছে, তিনি যেন ভারতকে হুমকি দিচ্ছেন। আমাদের উচিত উপযুক্ত জবাব দেওয়া।’
কংগ্রেসের আরেক নেতা রাজীব শুক্লা এই পদক্ষেপকে ‘একেবারে ভুল’ বলে অভিহিত করে বলেন, ‘সরকার যাঁকে বন্ধু মনে করত, সেই ট্রাম্প এখন আমাদের আঘাত করেছেন। এর ফলে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আমরা সংসদে এ বিষয়ে কথা বলব। এত বন্ধুত্বের পরও ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে এমন করলেন কেন?’
আম আদমি পার্টির (এএপি) সংসদ সদস্য সঞ্জয় সিং বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রতিদিন ভারতের অপমান করছেন। ট্রাম্প তো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলকে পর্যন্ত ভারত থেকে আইফোন তৈরি না করতে হুমকি দিয়েছেন। এমনকি তিনি বলেছেন, তিনি পাকিস্তানকে ভালোবাসেন। এটি নিয়ে ভারতের ভাবা উচিত। মোদির উচিত, এ বিষয়ে কড়া প্রতিবাদ জানানো এবং তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করা।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারা ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে ‘দুঃখজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, ট্রাম্প প্রায়ই তাঁর বক্তব্য থেকে পেছনে সরে আসেন। তাই ভারতের সরকার কী বলে, তা না জানা পর্যন্ত অপেক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিজেপি–দলীয় আরেক সংসদ সদস্য প্রবীণ খান্ডেলওয়াল বলেন, ‘এটি দুঃখজনক। আমি নিশ্চিত, ভারত সরকার এর উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। ব্যবসা ও শিল্প খাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।’
বিজেপির হেমাং যোশি বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট একতরফা বিবৃতি দিতে থাকেন। ভারতের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে কিছু না বলা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করা উচিত। আগেও তিনি এক কথা বলেছিলেন, পরে আবার নিজেই তা বদলে ফেলেছিলেন।’
বিজেপির আরেক সংসদ সদস্য প্রতাপ সারাঙ্গি বলেন, ‘ভারত শক্তিশালী পাল্টা কৌশল তৈরি করবে। আমরা আত্মবিশ্বাসী, মোদির নেতৃত্বে আমেরিকার এই পদক্ষেপ সফল হতে দেওয়া হবে না। আমরা উপযুক্ত জবাব দেব।’
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে গত ২০ জানুয়ারি শপথ নেওয়ার পর থেকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের ওপরই পাল্টা শুল্ক বসিয়েছেন। তাঁর দাবি, এসব দেশ আগে থেকেই মার্কিন পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক বসিয়ে আসছিল।
আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’১৯ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনজাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সব পদক্ষেপ নেবে নয়াদিল্লি১৫ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত র ওপর পদক ষ প সরক র ভ রতক
এছাড়াও পড়ুন:
পাল্টা শুল্ক কার্যকরে নতুন সময়সূচি ঘোষণা ট্রাম্পের
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া সর্বশেষ নির্বাহী আদেশে বিভিন্ন দেশের ওপর আরোপিত নতুন শুল্কহার কার্যকর হওয়ার সময়সূচিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ৭ আগস্ট থেকে তা কার্যকর হবে।
এর আগে ট্রাম্প ১ আগস্টের মধ্যে বাণিজ্যচুক্তি সম্পন্ন করার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। তখন তিনি বলে দিয়েছিলেন, এ সময়ের মধ্যে চুক্তিতে না পৌঁছালে চড়া শুল্ক আরোপ করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার নতুন নির্বাহী আদেশে ৭০টির বেশি দেশের ওপর নতুন পাল্টা শুল্কহার ঘোষণা করেছেন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সেগুলো আগামী সাত দিনের মধ্যে কার্যকর হবে।
যেসব পণ্য ৭ আগস্টের মধ্যে জাহাজে তোলা হবে বা বর্তমানে যাত্রাপথে রয়েছে এবং সেগুলো যদি ৫ অক্টোবরের আগে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে যায়, তবে সেগুলোর ক্ষেত্রে শুল্ক প্রযোজ্য হবে না।
অবশ্য কানাডার ওপর যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক ১ আগস্ট অর্থাৎ আজ থেকেই কার্যকর হচ্ছে।
আরও পড়ুনকোন দেশে কত শুল্ক বসালেন ট্রাম্প৪ ঘণ্টা আগেউত্তর আমেরিকার এই দুই প্রতিবেশী দেশ একে অপরের অন্যতম বড় বাণিজ্য সহযোগী হলেও ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে অস্বস্তিকর দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।
কানাডা যেসব পণ্য রপ্তানি করে, তার প্রায় তিন-চতুর্থাংশই যায় যুক্তরাষ্ট্রে। ধাতব পদার্থ ও কাঠের পাশাপাশি কানাডা বিপুল পরিমাণে তেল, গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশ, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, খাদ্যপণ্য এবং ওষুধ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যারা বাণিজ্য চুক্তি করেনি, তাদের জন্য অনেক দেরি হয়ে গেছে: ট্রাম্প১ ঘণ্টা আগেডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা চালিয়ে যেতে আগ্রহী। তবে তিনি সতর্ক করেছেন, নতুন ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে আর কোনো চুক্তির সুযোগ নেই।