দেশের নানা ঘটনাকে ‘মব সন্ত্রাস’ আখ্যা দিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের একাংশ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭১ জন শিক্ষক স্বাক্ষর করেছেন বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।

তবে অভিযোগে উঠেছে অনেক শিক্ষককে না জানিয়ে তাদের নাম বিবৃতিতে ব্যবহার করা হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ভুক্তভোগী শিক্ষকরা।  

ভুক্তভোগী শিক্ষকদের দাবি, গতকাল বুধবার (৯ জুলাই) বিকেলে মব সন্ত্রাস নিরসন ও প্রতিরোধের দাবি জানিয়ে একটি বিবৃতি দেয় ঢাবি শিক্ষকদের একাংশ। ওই বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭১ জন শিক্ষক সই করেছেন বলে দাবি করা করা হয়। কিন্তু না জানিয়েই তাদের নাম বিবৃতিতে ব্যবহার করা হয়েছে । এ নিয়ে লিখিত প্রতিবাদও জানিয়েছেন অনেক শিক্ষক।  

আরো পড়ুন:

ঢাবি ক্লাবে তালা মারার হুঁশিয়ারি শিক্ষার্থীদের

গোপালগঞ্জে ছাত্রীকে যৌন হয়রানি, শিক্ষক বহিষ্কার 

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুরে এ নিয়ে লিখিত বক্তব্য দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক। তারা হলেন- সহযোগী অধ্যাপক ড.

মুহাম্মাদ আরশাদুল হাসান, ড. মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, আহমদ হাসান চৌধুরী, প্রভাষক ইমরান হোসাইন ও নাঈমুল ইসলাম।

লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, বুধবার “মব ও মানবাধিকার ইস্যুতে উদ্বেগ জানিয়ে ঢাবির ‘আওয়ামীপন্থি’ ৭১ শিক্ষকের বিবৃতি” শিরোনামে কিছু নিউজ পোর্টালে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭১ জন শিক্ষক এতে স্বাক্ষর করেছেন। এতে আমাদের নামও উল্লেখ করা হয়েছে (যদিও উল্লিখিত নামগুলোতে যথেষ্ট অসঙ্গতি রয়েছে)।

তারা আরো বলেন, আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই যে, এ বিষয়ে কেউ আমাদের সম্মতি নেয়নি, আমরা কোনো স্বাক্ষরও করিনি। ওই বিবৃতির সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা মনে করি, পূর্ব সম্মতি না নিয়ে কারো নাম বা স্বাক্ষর ব্যবহার করা সম্পূর্ণ অনৈতিক। অতএব, আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ভবিষ্যতে এ রকম কাজের ক্ষেত্রে সব পক্ষের সচেতনতা কামনা করছি।

শুধু আরবী বিভাগ নয় এ বিবৃতির নাম নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজাউল করিমসহ আরো অনেকে।

এ বিষয়ে উর্দু বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, “কে বা কারা এ বিবৃতি দিয়েছে, সে সম্পর্কে আমি জানি না। আমি এসব রাজনীতির মধ্যে নেই। আমাকে কেউ জিজ্ঞাসা করেনি। বিষয়টি জানার পর আমার খারাপ লাগছে। এসব কাজ কখনই উচিত নয়।”

ঢাবির আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. আমজাদ আলী বলেন, “এ বিবৃতি সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। নীল দল এ সম্পর্কে জানে না। যারা এ বিবৃতি দিয়েছে, এটা তাদের নিজস্ব মতামত। নীল দলের সঙ্গে এ বিবৃতির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।”   

এ বিষয়ে জানতে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আওয় ম ল গ শ ক ষকদ র ন ল দল

এছাড়াও পড়ুন:

লাখো শরণার্থীর অনিশ্চিত যাত্রা

‘১৯ এপ্রিল ৮-১০ জনের কাফেলায় রওনা হই। ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে হাঁটছি তো হাঁটছি। বাচ্চারা খুব কষ্ট পাচ্ছে। রাত কত জানি না, চারদিক নিস্তব্ধ। কোন দিকে বর্ডার, তা-ও জানি না। কিছু দূর যাওয়ার পর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি নামে।’—বাংলা সিনেমার স্বনামধন্য অভিনেত্রী কবরীর লেখা।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে রুপালি পর্দার সে সময়ের জনপ্রিয় এই নায়িকা হয়ে যান শরণার্থী। প্রাণ বাঁচাতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে বহু পথ পাড়ি দিয়ে ভারতের ত্রিপুরার আগরতলায় পৌঁছান। এরপর পশ্চিমবঙ্গ হয়ে মুম্বাইয়ে কাটে ‘অনাহারক্লিষ্ট কর্মহীন, জীবন-মরণ লড়াইয়ে নামা’ শরণার্থীজীবন। সেই অনিশ্চিত যাত্রা, জীবনের কথা লিখেছেন আত্মজীবনী স্মৃতিটুকু থাক বইয়ে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে শুরু হয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন সার্চলাইট’। চলে নির্বিচার হত্যা-বর্বরতা। প্রাণ বাঁচাতে হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন নিজের ঘরবাড়ি-বসতি ছাড়েন। দেশের নানা প্রান্তে তখন দেখা যায় মানুষের ছোট-বড় কাফেলা। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে তাঁরা অজানা-অচেনা পথে চলেছেন। সেখানে কবরীর মতো পরিচিত মুখ যেমন আছেন; আছেন কৃষক-শ্রমিক, নারী-শিশুসহ নানা এলাকার, নানা পেশার মানুষ।

চলতি পথে অনেকে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন, অনেককে গুলি করে হত্যা করা হয়, কেউ কেউ হামলার মুখে পড়ে স্বজনের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন, কারও কারও সামনে প্রিয়জনকে হত্যা করা হয়, কেউ কেউ যাত্রার ধকল সইতে না পেরে পথে মারা যান। বাকিরা পথ চলতে থাকেন।

শরণার্থী হওয়ার যাত্রায় শিশুটি সঙ্গে নিয়েছিল দেশের পতাকা

সম্পর্কিত নিবন্ধ