দশ বছর ধরে চালু থাকা দলীয় প্রতীক ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ফিরছে নির্দলীয়তা। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটি করপোরেশন—স্থানীয় নির্বাচনে এবার থেকে ভোটাররাই প্রার্থী বেছে নেবেন দল নয়, প্রার্থীর যোগ্যতা, পরিচিতি ও কাজ দেখে। দলীয় প্রতীকহীন প্রতিনিধিত্ব নির্বাচনের ব্যবস্থায় ফেরায় অধিকাংশ রাজনৈতিক দল স্বস্তি প্রকাশ করেছে।

গত ২৪ জুলাই নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের পরিচয় ও প্রতীক ব্যবহার করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের নিয়ম বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

ওই দিন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, “স্থানীয় সরকার নির্বাচনে থাকছে না দলীয় প্রতীক। ২৪ জুলাই উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে উত্থাপিত সংশোধনী সর্বসম্মতভাবে অনুমোদিত হয়।” 

সংশোধিত চারটি আইন ও সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো হলো—
সিটি করপোরেশন আইন ২০১৫: ৩২ (ক) ধারা, পৌরসভা আইন ২০১৫: ৩০ (ক) ধারা, উপজেলা পরিষদ আইন ২০১৫: ১৬ (ক) ধারা, ইউনিয়ন পরিষদ আইন ২০১৫: ১৯ (ক) ধারা।

২০১৫ সালের এই ধারাগুলোর ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাধ্যতামূলক ছিল। সেই বাধ্যবাধকতাই এবার তুলে দিচ্ছে সরকার।

উপদেষ্টা বলেন, “দলীয় প্রতীক পাওয়া না পাওয়াকে কেন্দ্র করে বিগত সময়ে হানাহানি, সহিংসতা, মনোনয়ন বাণিজ্য—সবই আমরা দেখেছি। এখন থেকে প্রার্থীরা নিজের প্রতীক নিয়ে দাঁড়াতে পারবেন, আর যোগ্যতাই হবে নির্বাচনের মাপকাঠি।” 

২০১৫ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক চালু করে। যুক্তি ছিল রাজনীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ও দলীয় জবাবদিহি। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়
প্রার্থী নির্বাচনে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ। স্থানীয় রাজনীতিতে পেশিশক্তির আধিপত্য। দেখা দেয় মনোনয়ন বাণিজ্য ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বহুদিন ধরেই স্থানীয় সরকারে নির্দলীয় নির্বাচনের পক্ষে ছিল।

সুজন সভাপতি ড.

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “দলীয় প্রতীক চালুর পর জনগণের ভোটাধিকার সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল। জনগণের প্রতিনিধি নয়, দলের প্রতিনিধি জয়ী হতেন। সেই কাঠামো ভাঙার এই উদ্যোগ সাহসী ও সময়োপযোগী।” 

তিনি আরো বলেন, “এখন যোগ্যতা, পরিচিতি, জনগণের সঙ্গে সম্পর্কই হবে প্রার্থীর সাফল্যের ভিত্তি।”

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, “দলীয় পরিচয়কে অনেকে ব্যবহার করেছেন স্রেফ জেতার মাধ্যম হিসেবে। এতে যোগ্য প্রার্থীরা মনোনয়ন না পেয়ে বাদ পড়েছেন, আবার অযোগ্যরাও জিতেছেন। এই সংস্কার মূলত রাজনীতিকে সেবা কেন্দ্রিক করতে সহায়ক হবে।” 

তিনি আরো বলেন, “এটি কোনো চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত নয়। নির্বাচন সংস্কার কমিশন ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের যৌথ সুপারিশে, এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতেই এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাদ দিতে বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে। বিএনপির ৩১ দফা রোডম্যাপেও এই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। দলীয় প্রতীকের কারণে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো রাজনৈতিক সহিংসতায় রূপ নেয়, স্থানীয় নেতৃত্বের জায়গায় জাতীয় রাজনীতির প্রতিফলন ঘটে। দলীয় প্রতীক বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বিএনপির দাবির প্রতিফলন।” 

ঢাকার দোহার উপজেলার মুদি দোকানি আমির হোসেন বলেন, “আগে এলাকার ভালো প্রার্থী থাকলেও দল না থাকলে ভোট দেওয়া যেত না। এখন নিজের বিবেক দিয়ে ভোট দিতে পারব এটাই সবচেয়ে বড় স্বস্তি।”

চট্টগ্রামে পটিয়ার সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী মনিরুল ইসলাম বলেন, “গত নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে দাঁড়াতে পারিনি। এবার নিজের প্রতীক নিয়ে দাঁড়াতে পারব। এটা আমার মতো মানুষের জন্য বিশাল সুযোগ।” 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী বলেন, “এই সিদ্ধান্ত স্থানীয় সরকারের প্রকৃত বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করবে। আগে জনপ্রতিনিধিরা দলীয় নেতার কাছে দায়বদ্ধ থাকতেন, এখন জনগণের কাছে থাকবেন। নেতৃত্বে সত্যিকারের প্রতিযোগিতা ফেরানোর উদ্যোগ হবে।” 

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা আনিচুর রহমান বলেন,“দলীয় প্রতীকের পরিবর্তে নির্দলীয় প্রতীকে নির্বাচন মানে, মানুষের ভোটাধিকার ও বিশ্বাস ফেরানোর সুযোগ। আগে মানুষ ভাবতো ভোট আগেই ঠিক হয়ে গেছে, এখন ভাববে আমি ঠিক করব কে জয়ী হবে।” 

ঢাকা/এএএম/ইভা 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আইন ২০১৫ র জন ত ক উপদ ষ ট জনগণ র ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, ‘‘বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি তোলা উচিত, চব্বিশ এবং আগের গণহত্যা, নির্যাতন-নিপীড়ন, ভোটাধিকার হরণ—এসবের জন্য যদি আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হতে পারে। তাহলে একাত্তরে গণহত্যা, ধর্ষণ, নারকীয় হত্যাযজ্ঞের জন্য জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করতে হবে। তাদের কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করতে হবে। একই অপরাধে দুই রকমের বিচার হতে পারে না।’’

শনিবার (১ নভেম্বর) রাজধানী ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আয়োজনে ‘স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য’ শীর্ষক মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন: দুলু

নৌকা ডুবেছে, শাপলা ভাসবে: এনসিপির তুষার

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘‘যদি আওয়ামী লীগের মতো একই ধরনের অপরাধে জামায়াতের বিচার না হয়, তাহলে সেটা হবে ইতিহাসের প্রতি অবিচার।’’

তিনি বলেন, ‘‘আজকে জামায়াত তাদের পোশাক-চেহারা, আচরণ পাল্টে নতুন রূপে হাজির হয়েছে। তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে বৈঠক করছে। কিন্তু, মূল উদ্দেশ্য বিএনপিকে আক্রমণ করা। এই বহুরূপীদের চেহারা জনগণ চিনে ফেলেছে।’’

বিএনপির এই নেতা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে বিএনপিই একমাত্র শক্তি। অথচ এই শক্তিকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র চলছে। সরকার নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে নির্বাচনের নামে প্রক্রিয়া চালালেও জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা কেড়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

আলাল আরো বলেন, ‘‘বর্তমান সরকার মনে করেছে, দেশের সব অনাচারের মূলে সংবিধান। কিন্তু সমস্যার মূল সংবিধান নয়—ক্ষমতার অপব্যবহার ও জনগণের ভোটাধিকার হরণ। শেখ হাসিনার ১৬-১৭ বছরের শাসনে এই অন্যায়, নির্যাতন, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারই হয়েছে সবচেয়ে বড় বাস্তবতা।’’

ঢাকা/রায়হান/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদ জনগণের নয়, কিছু উপদেষ্টার প্রয়োজন: হাফিজ
  • একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল
  • জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিতে সংগ্রাম, শপথ যুব সংসদের সদস্যদের
  • বন্দরে বিএনপি নেতা তাওলাদের উপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে আল্টিমেটাম
  • বিএনপি ও জামায়াত কে কোন ফ্যাক্টরে এগিয়ে
  • অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে: ফখরুল
  • সরকার নিরপেক্ষতা হারালে জনগণ মাঠে নামবে: তাহের
  • সংস্কার ইস্যুতে সব দল ঐক্যবদ্ধ থাকলেও বিএনপি অবস্থান পরিবর্তন করে
  • বিএনপি-জামায়াত দেশকে অন্য এক সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
  • জনগণের সঙ্গে এটা প্রতারণা: মির্জা ফখরুল