আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আকস্মিক অভিষেক মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের। বিকেএসপিতে প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলছিলেন তিনি। সেখান থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চট্টগ্রামে টেস্ট দলে যোগ দেন তিনি। জাকের আলী কনকাশন ইনজুরিতে (মাথায় আঘাত) পড়ায় অঙ্কন দলে ডাক পান। ম্যাচের আগের রাতে লিটন দাস গুরুতর জ্বর নিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যান।

দলে ডাক পাওয়া অঙ্কনের অভিষেকও হয়ে যায়। তার মাথায় তখনও ঘুরছিল ফাস্ট ক্লাস ম্যাচ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য প্রস্তুতি তো দূরের কথা ভাববারও সময় পাননি তিনি। যার সম্ভাব্য ফল পড়ে পারফরম্যান্সে। উইকেটের পেছনে ক্যাচ ফেলেন তিনি। ব্যাট হাতে শূন্য মেরে শুরু হয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পথ চলা। দ্বিতীয় ইনিংসে অবশ্য ২৯ রান করেন তিনি।

ওই অঙ্কন সর্বশেষ বিপিএলে দারুণ ক্রিকেট খেলেছেন। চলতি ডিপিএলে মোহামেডানের টিম ম্যানেজমেন্ট তাকে তিনে ব্যাট করাচ্ছে। সেখানেও রান পাচ্ছেন তিনি। অঙ্কন মনে করেন, এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য আগের চেয়ে বেশি প্রস্তুত তিনি।

ক্রিকেট বিষয়ক সংবাদ মাধ্যম ক্রিকবাজকে অঙ্কন বলেন, ‘আমি তখন এনসিএলে ম্যাচ খেলছিলাম, আমার মাথায় ছিল এনসিএল। তবে (অভিষেক টেস্টে ব্যর্থ হওয়ার জন্য) এটাকে আমি অজুহাত দেব না। এখন মনে হয়, এবার সুযোগ পেলে আমি মানসিকভাবে বেশি প্রস্তুত থাকব।’

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এপ্রিলে দুই টেস্টের সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। লিটন দাস পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) খেলার জন্য ছুটি নেওয়ায় দ্বিতীয় সুযোগ মিলতে পারে অঙ্কনের। তার মতে, এবার তিনি নিজেকে প্রস্তুত রাখার যথেষ্ট সময় পাবেন, ‘এখন মানসিকভাবে ভালো অবস্থানে আছি। আসন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছি। এবার প্রস্তুতির জন্য ভালো সময় পাচ্ছি। আশা করি, সুযোগ পেলে ভালো করবো।’

জাতীয় দলের সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন থাকায় ড্রেসিংরুমে নির্ভার থাকবেন বলেও জানিয়েছেন অঙ্কন, ‘তিনি আমাকে খুব ভালো করে জানেন। অতিরিক্ত চিন্তা করলে তিনি আমাকে নির্ভার করতে পারেন। ঘরোয়া অভিজ্ঞতা থেকে বলতেই পারি, উনাকে পাশে পাওয়া সবসময়ই আমার জন্য ভালো।’  

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রস ত ত র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য

কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।

মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।

দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।

লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।

দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।

জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।

রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।

দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ