বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসতে চান না; কারণ, এর চেয়ে ভালো বিকল্প রয়েছে তাঁদের কাছে। আবার এ দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক বাধা রয়েছে। বড় বাধা নীতির ধারাবাহিকতা না থাকা। এ ছাড়া রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতাও বিনিয়োগ না আসার অন্যতম কারণ।

রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে চার দিনের বিনিয়োগ সম্মেলনের তৃতীয় দিনে আজ বুধবার একটি প্যানেল আলোচনায় দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা এমন অভিমত দেন।

স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ-পরবর্তীকালে দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগকৌশল নিয়ে প্যানেল আলোচনাটির আয়োজন করে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।

বক্তারা আরও বলেন, শিল্পের জন্য এখনো অতিরিক্ত দামে গ্যাস-বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে। যার ফলে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে রয়েছে অসামঞ্জস্য। এ পরিস্থিতিতে বিদেশি বিনিয়োগ আনতে নীতি ও কাঠামোগত পরিবর্তনের দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন তাঁরা।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, বাংলাদেশ একটি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যমান নীতিগুলো নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। বিনিয়োগসংক্রান্ত ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো সমাধানের কাজও চলছে।

শেখ বশিরউদ্দীন আরও বলেন, ‘কেন বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবেন, এ প্রশ্ন সব সময় আসে। এ বিষয়ে বলব, বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের নবম ভোক্তা বাজার হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের শক্তিশালী জনবল রয়েছে। এ ছাড়া বিনিয়োগবান্ধব অনেক নীতি আছে। আর বিনিয়োগের বিদ্যমান বাধাগুলো চিহ্নিত করে বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে।’

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি

আলোচনায় বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, বিনিয়োগের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি। বিনিয়োগকারীরা নীতির ধারাবাহিকতা চান। তাঁরা হঠাৎ নীতির পরিবর্তনকে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখেন। আরও সমস্যা রয়েছে। যেমন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে নীতির সমন্বয় নেই। এসব জায়গায় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন।

অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘আমরা কি আসলেই বিনিয়োগবান্ধব হতে পেরেছি? আমাদের কাছে প্রশ্ন আসে, বাংলাদেশে কেন বিনিয়োগ করবে। বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসতে চান না; কারণ, তাঁদের কাছে এর চেয়ে ভালো বিকল্প রয়েছে। তাঁদের সামনে ভারত, চীন ও মালয়েশিয়া ভালো বিকল্প। ফলে এখন আমাদের প্রয়োজন নীতির প্রাসঙ্গিকতা ও তার সঠিক বাস্তবায়ন।’

বস্ত্রকলের মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিনা শুল্কে সুতা আমদানি করে। এটা অব্যাহত রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য–ঘাটতি কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশের উচিত পণ্য ধরে ধরে আলোচনা করা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক আরোপের কারণে দ্রুত কোনো দুর্যোগ হবে বলে মনে করেন না এই ব্যবসায়ী নেতা।

বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, বাংলাদেশে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান খুবই কম। যারা আছে, তাদের নিবন্ধন–জটিলতা অনেক বেশি। বিএসইসিসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে নিবন্ধন নিতে হয়।

এইচঅ্যান্ডএম ও প্রাণ-আরএফএলের চুক্তি

বিনিয়োগ সম্মেলনে আজ বিশ্বের খ্যাতনামা পোশাক বিপণনকারী সুইডিশ ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম (হেন্স অ্যান্ড মরিটজ) ও দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএলের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) হয়েছে।

মৌলভীবাজার জেলায় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সমন্বিত কৃষি খামার রয়েছে। সেখানে তাদের ৩৫০ একর জমি আছে। ওই জমিতে সৌর প্যানেল স্থাপন করবে গ্রুপটি। সেখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ কিনবে এইচঅ্যান্ডএমকে পোশাক সরবরাহকারী বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো। এই জ্বালানি উৎপাদনে প্রাণ-আরএফএলকে অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)।

এমওইউ স্বাক্ষরের পর সেখানে একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতে বিপুল ভর্তুকি দেওয়া হয়। সরকার এখানে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য জ্বালানি একটি ভালো সহায়ক হতে পারে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

২২ বছর পর চাকা ঘুরছে রাজশাহী টেক্সটাইলের

দীর্ঘ ২২ বছর পর আবার চাকা ঘুরতে যাচ্ছে রাজশাহী টেক্সটাইল মিলসের। এরই মধ্যে কারখানাটিতে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়েছে। তাতে কর্মসংস্থান হয়েছে এক হাজার জনের। সরকারি মালিকানাধীন বস্ত্রকলটি সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারত্বে (পিপিপি) আবারও চালু করতে যাচ্ছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। আজ সোমবার প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কারখানাটি পরীক্ষামূলক চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পিপিপিতে নেওয়ার পর রাজশাহী টেক্সটাইল মিলসের নাম বদলে রাখা হয়েছে বরেন্দ্র রাজশাহী টেক্সটাইল। পরীক্ষামূলক উৎপাদন শেষে শিগগিরই কারখানাটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হবে। এটি পুরোদমে চালু হলে ১২ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। আজ দুপুরে রাজশাহী নগরের একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রাণ-আরএফএলের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল, গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মাল্টি লাইন ইন্ডাস্ট্রিজের নির্বাহী পরিচালক আনিসুর রহমান, গ্রুপের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (জনসংযোগ) তৌহিদুজ্জামান ও বরেন্দ্র রাজশাহী টেক্সটাইলের সহকারী মহাব্যবস্থাপক শরীফ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, রাজশাহীতে অবস্থিত সরকারি এই টেক্সটাইল মিলটি ২২ বছর ধরে বন্ধ ছিল। সম্প্রতি সরকারের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে এটি পিপিপিতে চালুর উদ্যোগ নেয় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। প্রায় ২৬ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত এই কারখানাকে প্রাণ-আরএফএল উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ পরিবেশবান্ধব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে পরিণত করার উদ্যোগ নিয়েছে। কারখানাটিতে তৈরি হবে শতভাগ রপ্তানিমুখী পণ্য। এসব পণ্যের মধ্যে থাকবে বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, জুতা ও তৈরি পোশাক। দুই বছরের মধ্যে কারখানাটিতে ১২ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরিতে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত বছরের অক্টোবরে চুক্তি স্বাক্ষরের পর ডিসেম্বরে কারখানার দায়িত্ব বুঝে নেয় গ্রুপটি। এরপর তিন মাসের মাথায় কারখানায় পরীক্ষামূলক উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। দুই বছরের মধ্যে কারখানাটি পুরোদমে চালু হবে।

সংবাদ সম্মেলনে কামরুজ্জামান কামাল বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য ঢাকাকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বের হয়ে তারা উত্তরবঙ্গে এই বৃহৎ শিল্প প্রকল্প শুরু করেছেন। এর মাধ্যমে রাজশাহীর হাজার হাজার মানুষ কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন এবং স্থানীয় অর্থনীতি গতিশীল হবে।

আনিসুর রহমান বলেন, কারখানায় বর্তমানে সীমিত পরিসরে জুতা ও ব্যাগ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাতে রাজশাহীর প্রায় এক হাজার লোক কাজের সুযোগ পেয়েছেন। স্থানীয় কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এখানে একটি ‘স্কিলস ডেভেলপমেন্ট সেন্টার’ স্থাপন করা হবে। কারখানায় উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি হবে।

রাজশাহী টেক্সটাইল মিলসে কারখানা চালু করার প্রক্রিয়ায় কয়েক শ গাছ ও পুকুর ভরাটের বিষয়ে রাজশাহীতে সমালোচনা হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধনও করেছে। এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাইলে কামরুজ্জামান কামাল বলেন, গাছ কাটা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। তাঁরা সঠিক উপায় অবলম্বন করেই এগুলো করেছেন। বন বিভাগকে চিঠি দিয়েছেন। তার বিপরীতে তিন হাজার নতুন গাছ লাগানো হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান নেবে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার, এমবিএতে আবেদন
  • ২২ বছর পর চালু হচ্ছে রাজশাহী টেক্সটাইল মিল
  • ২২ বছর পর চাকা ঘুরছে রাজশাহী টেক্সটাইলের