সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহায়তা পেল ২ হাজার ৯৪ যৌনকর্মী
Published: 10th, July 2025 GMT
দুই হাজার ৯৪ জন যৌনকর্মীর প্রত্যেকে ১০ হাজার টাকা করে সরকারি সহায়তা পেয়েছেন। তাদের জন্য মোট দুই কোটি ৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তহবিল থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ১ জুন এ বরাদ্দের চেক যৌনকর্মীদের সংগঠন ‘সংহতি’র সভাপ্রধান ও নারীপক্ষের প্রতিনিধির হাতে তুলে দেন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংহতির সভাপতি ও নারীপক্ষের সদস্য মাহবুবা মাহমুদ লীনা এ তথ্য জানান।
জানা গেছে, যৌনকর্মীদের মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করে এমন বিভিন্ন সংগঠনের যৌথ প্ল্যাটফর্ম ‘সংহতি’র আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর আগে ২০২৪ সালের ২২ আগস্ট যৌনকর্মীদের একটি দল ‘সংহতি’র প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর যৌনকর্মীদের নামে ব্যাংক হিসাব খোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
মঙ্গলবার নারীপক্ষ ও ‘সেক্স ওয়ার্কার্স নেটওয়ার্ক’-এর নেতাদের উপস্থিতিতে সংহতির সচিবালয়ে এই সরকারি সহায়তার চেক বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে ব্যাংক হিসাব অনুযায়ী ধাপে ধাপে বিতরণ চলমান রয়েছে।
এই সহায়তার বিষয়ে সংহতি ও নারীপক্ষ যৌনকর্মীদের প্রতি রাষ্ট্রের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা জানিয়েছে। সংহতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই সহায়তা কেবল আর্থিক নয়, এটি যৌনকর্মীদের অধিকার ও মর্যাদাকে স্বীকৃতি দেওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
বিবৃতিতে মাহবুবা মাহমুদ লীনা বলেন, যৌনকর্মীদের নিয়ে প্রতিটি দায়িত্বশীল উদ্যোগই সমাজে একটি ইতিবাচক বার্তা দেয়। আমরা বিশ্বাস করি- রাষ্ট্র, সিভিল সোসাইটি ও মিডিয়ার সমন্বিত প্রচেষ্টায় যৌনকর্মীদের মর্যাদা ও ন্যায্য অধিকার রক্ষা সম্ভব।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য নকর ম য নকর ম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
১৮ মাসে এসেছেন নতুন করে দেড় লাখ রোহিঙ্গা
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাত ও সহিংসতার কারণে গত ১৮ মাসে নতুন করে দেড় লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছেন। গতকাল শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। সংস্থাটি আরও বলেছে, ২০১৭ সালের পর বাংলাদেশে সর্বোচ্চসংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা এটি।
ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে গত জুন পর্যন্ত কক্সবাজারে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোয় এসব রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে জুন পর্যন্ত নিবন্ধিত হয়েছেন ১ লাখ ২১ হাজার। আর অন্যরা নিবন্ধন ছাড়াই আশ্রয়শিবিরগুলোতে বসবাস করছেন। নতুন করে আসা এসব রোহিঙ্গার বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
গতকাল সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ইউএনএইচসিআরের সদর দপ্তরে সংস্থাটির মুখপাত্র বাবর বালুচ সাংবাদিকদের বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের নিশানা করে সহিংসতা ও তাদের ওপর নিপীড়ন চলছে। এ ছাড়া মিয়ানমারজুড়ে চলছে সশস্ত্র সংঘাত। এতে বাধ্য হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে সীমান্ত পেরিয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গার বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া অব্যাহত রয়েছে।
বাবর বালুচ বলেন, ‘২০১৭ সালের পর সবচেয়ে বেশিসংখ্যক রোহিঙ্গার বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা এটি। সেই বছর প্রাণঘাতী সহিংসতার মুখে ৭ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা রাখাইনে তাঁদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন।’
রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা আগে থেকেই বাংলাদেশে আছেন। বেশির ভাগই ২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। তাঁদের সঙ্গে নতুন করে আরও দেড় লাখ রোহিঙ্গা যুক্ত হলেন।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র। মাত্র ২৪ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাস করছেন জানিয়ে বাবর বালুচ বলেন, এসব আশ্রয়শিবির বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার একটি হয়ে উঠেছে।
তহবিল–সংকটে ঝুঁকিতে রোহিঙ্গারাবাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য তহবিলের তীব্র সংকট চলছে বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর। সংস্থাটি জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় তহবিল পাওয়া না গেলে এসব রোহিঙ্গাকে খাবারের মতো জরুরি সহায়তা প্রদান বন্ধ হয়ে যেতে পারে। রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য ২৫ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের তহবিলের জন্য আবেদন জানালেও এর মাত্র ৩৫ শতাংশ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর।
রোহিঙ্গাদের সহায়তার ক্ষেত্রে তহবিলের এ ঘাটতি অনেক বেশি উল্লেখ করে বাবর বালুচ বলেন, ‘আমাদের যা প্রয়োজন আর যা পেয়েছি সেই হিসাব যদি করেন, তাহলে এ ব্যবধান অনেক বেশি। এ তহবিল–ঘাটতি রোহিঙ্গাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের ওপর বড় প্রভাব ফেলবে। কারণ, দৈনিক ভিত্তিতে খাবার ছাড়াও স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মতো ক্ষেত্রে এসব রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী পুরোপুরি মানবিক ত্রাণসহায়তার ওপর নির্ভরশীল।’
ইউএনএইচসিআর বলছে, প্রয়োজনীয় তহবিল না পেলে আগামী সেপ্টেম্বের থেকে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত ও ডিসেম্বরের মধ্যে তাঁদের যে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হচ্ছে, তা বন্ধ হয়ে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও পশ্চিমা দেশের সরকারগুলো তহবিল বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ার কারণে বিশ্বজুড়ে ত্রাণসহায়তা কার্যক্রমে বড় সংকট দেখা দিয়েছে। রাশিয়া ও চীনের দিক থেকে হুমকি ক্রমেই বাড়ছে—এমন উদ্বেগ থেকে প্রধান দাতা এসব দেশ ত্রাণসহায়তার বদলে তাদের প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক ত্রাণসহায়তা কার্যক্রমে।
বাংলাদেশে আগে থেকে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা তহবিল–সংকটে ঝুঁকির মুখে ছিলেন। এর মধ্য নতুন করে দেড় লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ায় ত্রাণসহায়তার ক্ষেত্রে সংকট আরও বাড়বে বলে জানান বাবর বালুচ। তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই তহবিলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে আরও লাখো রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ায় নতুন করে আসা রোহিঙ্গা ও আগে থাকা অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের দৈনন্দিন চাহিদা অপূর্ণ থেকে যাবে। এখন নতুন করে অতিরিক্ত তহবিল যদি পাওয়া না যায়, তাহলে খাবার ও সব রোহিঙ্গার জরুরি ত্রাণসহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।