বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্যোগের বিস্তার একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকজুড়ে এক বৈপ্লবিক গতি পেয়েছে। স্টার্টআপ এখন শুধু একটি ব্যবসা উদ্যোগ নয়, বরং নতুন অর্থনীতির প্রতিচ্ছবি। প্রযুক্তি, সৃজনশীলতা ও উদ্যোক্তামনস্কতার সংমিশ্রণে এই স্টার্টআপ মডেল তরুণদের মধ্যে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই স্বপ্নযাত্রার প্রধান বাধা অর্থায়ন বা ফান্ডিং। দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে, বিশেষত বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই চ্যালেঞ্জ আরও ঘনীভূত হয়ে উঠেছে। এখানে সম্ভাবনা থাকলেও কাঠামোগত জটিলতা, অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা ও বিনিয়োগকারীদের অনীহার কারণে অনেক স্টার্টআপ অঙ্কুরেই 
ঝরে পড়ে। 

বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগের প্রবণতাও বড় পরিবর্তন এসেছে। নিউইয়র্কভিত্তিক ক্যাপিটাল মার্কেট কোম্পানি সিবি ইনসাইটসের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক স্টার্টআপ ফান্ডিং ৩৮ শতাংশ হ্রাস পেয়ে প্রায় ২৮৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। অর্থনৈতিক মন্দা, উচ্চ সুদের হার এবং লাভজনকতার প্রতি বিনিয়োগকারীদের অধিক মনোযোগ এই পরিবর্তনের পেছনে দায়ী। এই বাস্তবতা দক্ষিণ এশিয়ার মতো উদীয়মান বাজারের জন্য একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। 

বাংলাদেশের চিত্রটিও মোটেই ভিন্ন নয়। বাংলাদেশের ম্যানেজমেন্ট কনসাল্টিং লাইটক্যাসেল পার্টনার্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের স্টার্টআপ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল মাত্র ৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৪২ শতাংশ কম। একই বছরে বিনিয়োগের ৯৯ শতাংশই এসেছে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে, যা দেশে স্থানীয় পুঁজির সীমাবদ্ধতাকে স্পষ্ট করে তোলে। ২০২৩ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে বিনিয়োগ আরও কমে দাঁড়ায় মাত্র ৪ মিলিয়ন ডলারে, যেখানে ২০২২ সালের একই সময়ের তুলনায় পতন ছিল ৭৭ শতাংশ (সূত্র: দ্য ডেইলি স্টার, অক্টোবর ২০২৩)। এই সংকটের পেছনে রয়েছে একাধিক কাঠামোগত দুর্বলতা। স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের স্টার্টআপ সম্পর্কে সচেতনতার অভাব, বিনিয়োগ ঝুঁকি গ্রহণে অনীহা এবং নীতিগত অস্বচ্ছতা একটি বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। 
বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে আরও গভীরভাবে বুঝতে হলে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা জরুরি। ২০২৪ জানুয়ারি ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের খবর অনুযায়ী, ভারতে ২০২৩ সালে স্টার্টআপ ফান্ডিং ৬০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে। পাকিস্তানেও পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয়। রেস্ট অব ওয়ার্ল্ডের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে পাকিস্তানে স্টার্টআপ ফান্ডিং নেমে এসেছে ১৫ দশমিক ১৫ মিলিয়ন ডলারে, যা ২০২০ সালের পর সর্বনিম্ন। অথচ এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ভারত ইতোমধ্যে একটি শক্তিশালী স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম গড়ে তুলেছে, যেখানে সরকার, করপোরেট ও একাডেমিয়া মিলিতভাবে কাজ করছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই সমন্বয় এখনও অনুপস্থিত। 

বিষয়টি আরও গভীরভাবে বোঝার জন্য আমাদের বুঝতে হবে, কেন বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীরা এখনও স্টার্টআপকে ‘নিরাপদ’ বিনিয়োগ বলে বিবেচনা করেন না। এর উত্তর লুকিয়ে আছে দেশের বিনিয়োগ সংস্কৃতিতে। স্টার্টআপের সবচেয়ে বড় সম্পদ মানুষ ও মেধাসম্পদ– যা প্রথাগত ব্যবসার দৃষ্টিতে অদৃশ্য বা অননুমেয়। ফলে প্রতিষ্ঠানের মূল্যায়নে এসব অ্যাসেট বিবেচনায় না নিয়ে তাকে কম মূল্য দিয়ে থাকে অনেক বিনিয়োগকারী। 

এখানে যদি দক্ষিণ কোরিয়ার উদাহরণ দেখি, ২০১৯ সালে দেশটির সরকার প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের একটি স্টার্টআপ ইনিশিয়েটিভ চালু করে। সরকারি তহবিল, কর ছাড় ও প্রযুক্তি পার্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে তারা পাঁচ বছরে ইউনিকর্ন স্টার্টআপ সংখ্যা ১৫ থেকে ৩৪-এ উন্নীত করে। বাংলাদেশেও ২০২০ সালে আইসিটি ডিভিশনের অধীনে ‘স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড’ গঠিত হয়, যার প্রাথমিক তহবিল ছিল ৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু এই তহবিল থেকে কার্যকর প্রকল্পে কতটা বণ্টন হয়েছে, সে বিষয়ে এখনও পর্যাপ্ত স্বচ্ছতা নেই। 
এই সংকট উত্তরণে সরকারি পর্যায়ে প্রয়োজন একটি জাতীয় স্টার্টআপ নীতি, যেখানে কর রেয়াত, রপ্তানি প্রণোদনা, সহজতর কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন এবং আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সুবিধা নিশ্চিত থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর উচিত স্টার্টআপ লোন প্যাকেজ চালু করা এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগে আংশিক গ্যারান্টি প্রদানের চিন্তা করা। একসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ‘ইনোভেশন হাব’ বা ইনকিউবেটর তৈরির সুযোগ দিলে তরুণ উদ্যোক্তারা গবেষণা থেকে ব্যবসার বাস্তবায়ন পর্যন্ত একটি পরিপূর্ণ যাত্রা সম্পন্ন করতে পারবেন। 

প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন। তাদের কাছে বাংলাদেশের স্টার্টআপগুলোকে পিচ করার জন্য একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম গঠন করা যেতে পারে, যেটি হবে সরকার-প্রণোদিত এবং স্বচ্ছ পদ্ধতিতে পরিচালিত। একইভাবে আন্তর্জাতিক ডেভেলপমেন্ট পার্টনারদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়েও স্টার্টআপ পুঁজি সংগ্রহ সম্ভব। 
স্টার্টআপ এখন শুধু ব্যবসা নয়, এটি একটি ‘ভিশন’। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবনে স্টার্টআপের ভূমিকা অপরিসীম। সরকার, বিনিয়োগকারী এবং সমাজের সমন্বিত উদ্যোগ 
ছাড়া বাংলাদেশ এই সম্ভাবনার দিগন্তে পৌঁছাতে পারবে না। 

মীর হাসিব মাহমুদ: সহ-প্রতিষ্ঠাতা-লিড নেশন একাডেমি (এলএনএ), চিফ বিজনেস অফিসার-গোইয়ারা লিমিটেড ও ফাউন্ডার-বেস্ট এইড

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ট র টআপ ২০২৩ স ল ব যবস সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ পরীক্ষা, ফরম পূরণের সময় বাড়ল ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪ সালের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ পরীক্ষার ফরম পূরণের প্রক্রিয়ার সময় ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

ফরম পূরণের বর্ধিত সময়—

১. আবেদন ফরম পূরণের বর্ধিত তারিখ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫।

২. ডাটা এন্ট্রি নিশ্চয়নের শেষ তারিখ: ২৮ সেপ্টেম্বর ১১:৫৯ মিনিট পর্যন্ত।

৩. সোনালী সেবার মাধ্যমে টাকা জমার শেষ তারিখ: ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

যারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে—

২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের নিয়মিত, ২০১৯-২০২০, ২০২০-২০২১ ও ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের অনিয়মিত ও গ্রেড উন্নয়ন এবং ২০১৭-২০১৮ ও ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের শুধুমাত্র Promoted শিক্ষার্থীরা ‘F’ গ্রেড পাওয়া কোর্সে ২০২৪ সালের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে।

নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের জন্য—

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে রেজিস্ট্রেশন করা অনার্স কোর্সের সকল ছাত্রছাত্রী ২০২৩ সালের অনার্স প্রথম বর্ষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে Promoted হয়ে ২০২৪ সালের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের কোর্স সম্পন্ন করেছে তারা নিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবে অনার্স কোর্সের সিলেবাস ও সংশোধিত রেগুলেশন অনুযায়ী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।

আরও পড়ুনআয়ারল্যান্ড সরকারের বৃত্তি: মাস্টার্স ও পিএইচডি শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ৮ ঘণ্টা আগেঅনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের জন্য—

২০১৯-২০২০, ২০২০-২০২১ ও ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের যেসব শিক্ষার্থী অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে Not Promoted হয়েছে অথবা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি ওই সব শিক্ষার্থী অনিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবে ২০২৪ সালের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে। Not Promoted শিক্ষার্থীকে আগের বছরের পাস করা কোর্সের পরীক্ষা দিতে হবে না। তবে যারা ২০২৩ সালের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে প্রথমবারের মতো পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ‘C’ বা ‘D’ গ্রেড পেয়েছে শুধুমাত্র তারাই ২০২৪ সালের পরীক্ষায় উচ্চতর গ্রেডে উন্নীত করার জন্য পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবে সর্বোচ্চ দুটি কোর্সে এবং ‘F’ গ্রেড প্রাপ্ত সব কোর্সে পরীক্ষা দিতে হবে।

# বিস্তারিত তথ্য জানতে ওয়েবসাইট

আরও পড়ুনবিনা মূল্যে ২ লাখ টাকার প্রশিক্ষণ, নন-আইটি স্নাতক শিক্ষার্থীদের সুযোগ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মোদির সফরের এক সপ্তাহ পর মণিপুরে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলায় দুজন নিহত
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ পরীক্ষা, ফরম পূরণের সময় বাড়ল ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত
  • সন্তানকে গলা কেটে হত্যার পর অন্তঃসত্ত্বা মায়ের আত্মহত্যার অভিযোগ
  • সুপারিগাছের ফেলনা খোলে থালা–বাটি, তৈজস, বদলাচ্ছে গ্রামটি
  • মায়ামিতেই থাকছেন মেসি, নতুন চুক্তি চূড়ান্ত
  • গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬৫ হাজার ছাড়াল
  • খেলাপি ঋণে বাংলাদেশ এশিয়ায় কেন শীর্ষে
  • কালচে হয়ে যাচ্ছে মোগল আমলের লালকেল্লা