মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রকে জড়ালেন ট্রাম্প
Published: 22nd, June 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল শনিবার ঘোষণা দেন, মার্কিন সামরিক বাহিনী ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফর্দো ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। এই হামলার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধে জড়াল।
ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় রাত আটটার একটু আগে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প এ ঘোষণা দেন।
ট্রাম্প লিখেছেন, ‘আমরা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় সফলভাবে হামলা সম্পন্ন করেছি, যার মধ্যে রয়েছে ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান। সব উড়োজাহাজ এখন ইরানের আকাশসীমার বাইরে।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও লিখেছেন, প্রধান লক্ষ্যবস্তু ফর্দোয় সর্বোচ্চ পরিমাণ বোমাই ফেলা হয়েছে। সব উড়োজাহাজ নিরাপদে ফিরছে। মহান মার্কিন যোদ্ধাদের অভিনন্দন। বিশ্বের আর কোনো সামরিক বাহিনী এটি করতে সক্ষম হতো না। এখন শান্তির সময়।
হোয়াইট হাউস গত বৃহস্পতিবার রাতে বলেছিল, ট্রাম্প দুই সপ্তাহের মধ্যে ইরানে হামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। এ কথা বলার দুই দিন পরই ইরানে হামলা চালাল যুক্তরাষ্ট্র।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলার ব্যাপারে জানতেন। পরে ট্রাম্প নিজেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব তথ্য জানান এক কর্মকর্তা।
ট্রাম্প ইতিমধ্যে হামলা নিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন।
তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয় স্পষ্ট নয় যে যুক্তরাষ্ট্র ঠিক কতগুলো বোমা ফেলেছে। কিংবা এই বোমা হামলার কারণে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানবিরোধী যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের যুক্ত হওয়া উচিত হবে কি না, তা নিয়ে ট্রাম্প দ্বিধায় ছিলেন। তব শেষ পর্যন্ত তিনি ইরানে হামলা চালালেন।
তবে ট্রাম্প এখনো বলছেন, কূটনৈতিক সমাধান সম্ভব। কিন্তু ইরান এতে আগ্রহ দেখাবে কি না, তা স্পষ্ট নয়।
ট্রাম্প যখন প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ইরানে হামলার কথা ভাবছেন, তখনই তিনি তাঁর রিপাবলিকান পার্টির সমালোচক-সমর্থকদের চাপের মুখে পড়েন। বিষয়টি দলটির অভ্যন্তরীণ বিভাজনকে স্পষ্ট করে তোলে।
হোয়াইট হাউসের ভেতরে-বাইরের কিছু উপদেষ্টা ট্রাম্পকে বোমা হামলা থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করেছিলেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা ইসরায়েলকে মার্কিন সহায়তা শুধু গোয়েন্দা সাহায্যের মধ্যেই সীমিত রাখতে বলেছিলেন।
অন্যরা যাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন ট্রাম্প এই হামলা চালানোর ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তাঁরা নিশ্চিত করতে চেয়েছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট যেন হামলার সম্ভাব্য পরিণতি পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারেন। আর প্রাথমিক হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা যেন সীমিত রাখা হয়।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স কয়েক মাস ধরে ইরানে সরকার পতনের লক্ষ্য নিয়ে যুদ্ধের বিপদের বিষয়ে সতর্ক করে আসছিলেন।
ট্রাম্প নিজেও সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর উপদেষ্টা ও ঘনিষ্ঠজনদের জানিয়েছিলেন, ইরানের সরকার পতনের জন্য দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে যুক্ত হওয়ার কোনো আগ্রহ তাঁর নেই।
ট্রাম্প বহুবার বলেছেন, তিনি বিদেশে মার্কিন সেনা পাঠাতে চান না।
ইরানে ইসরায়েলি বোমা হামলা শুরুর পর ট্রাম্প তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স ও বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফকে ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক উদ্যোগ চালিয়ে যেতে বলছিলেন।
তবে এ ব্যাপারে ইরানি কর্মকর্তাদের ধীর প্রতিক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন।
তখন ট্রাম্পের দল অভিযোগ করে, তারা বুঝতে পারছে না, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা ইরানি কর্মকর্তারা আদৌ দেশটির সর্বোচ্চ নেতার পক্ষ থেকে কথা বলছেন কি না।
আর এখন ট্রাম্পের দল ইরানের পাল্টা হামলা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
৯ জুন এক ফোনকলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে বলেছিলেন, তিনি ইরানে হামলার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
যে ট্রাম্প মাসের পর মাস ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির পক্ষে কাজ করছিলেন, সেই তিনি অনিচ্ছায় হলেও ইসরায়েলকে গোয়েন্দা সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে রাজি হন। কিন্তু ইসরায়েল যখন ইরানে হামলা শুরু করে, তখনো স্পষ্ট ছিল না ট্রাম্প পুরোপুরি সেই মিশনকে সমর্থন করবেন কি না।
১৩ জুন ইসরায়েল হামলা শুরু করলে ট্রাম্প প্রশাসনের তরফ থেকে প্রথম বিবৃতি দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধ থেকে দূরে রাখা হয়। ইসরায়েলের পাশে থাকার কোনো উল্লেখও বিবৃতিতে ছিল না। বিষয়টি ছিল অস্বাভাবিক ঘটনা।
পরে যখন দেখা গেল, ইসরায়েলের প্রথম রাতের হামলা সফল, তখন ট্রাম্প সেই অভিযান নিয়ে নিজের কৃতিত্ব দাবি করতে শুরু করেন। সাংবাদিকদের তিনি ইঙ্গিত দেন, এই মিশনে তাঁর ভূমিকা লোকের ধারণার চেয়েও বেশি।
সেই সপ্তাহান্তে যখন ট্রাম্প কানাডায় জি-৭ সম্মেলনে যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে বলেছিলেন, সম্ভবত তাঁকে ‘সবচেয়ে বড়টি’ ফেলতে হবে।
ট্রাম্প এ কথা বলে ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের বাংকার–বিধ্বংসী বোমাকে বোঝাচ্ছিলেন, যেগুলো কেবল যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই আছে।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর ইরাক যুদ্ধের সমালোচনা করে আংশিকভাবে নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছিলেন ট্রাম্প।
তবে ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদের যে ঘটনা নিয়ে সবচেয়ে গর্ব করেন, তা হলো ইরানি জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা। এই ঘটনা তাঁর অনড় হস্তক্ষেপবিরোধী সমর্থকদের অনেককে দূরে ঠেলে দেয়। তবে ট্রাম্প বারবার বলে আসছিলেন, এটি প্রয়োজনীয় ছিল। এটি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থেই করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ইসর য় ল র প কর মকর ত বল ছ ল ন
এছাড়াও পড়ুন:
১০ বছরের বেশি কারও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পক্ষে নয় জামায়াত
একজন ব্যক্তি তাঁর জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, এর বেশি নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এই মত দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
আজ রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের বৈঠকের পঞ্চম দিনের আলোচনার বিরতিতে জামায়াতের এই অবস্থানের কথা সাংবাদিকদের জানান দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, যেকোনো ব্যক্তি জীবনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সর্বোচ্চ ১০ বছর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, এ বিষয়ে রাজি জামায়াত। এর বেশি মেয়াদের ব্যাপারে জামায়াত রাজি নয়।
জামায়াতের এই নায়েবে আমির বলেন, ‘আমাদের পাঁচ বছরের টার্ম। সে হিসাবে দুবার কেউ যদি পরিপূর্ণ টার্ম পূর্ণ করেন, তিনি আর প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। দুনিয়ার বহু দেশে এমন নজির আছে। বাংলাদেশের জন্য এটা আমরা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করি এবং এটির ব্যাপারে প্রায় আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি।’
আজকের আলোচনায় অংশ নিয়েছে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ, গণসংহতিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।
আরও পড়ুনরাজনৈতিক দলগুলোকে আরেকটু ছাড়ের জায়গায় আসার আহ্বান আলী রীয়াজের৩ ঘণ্টা আগেএর আগে গত বৃহস্পতিবারের আলোচনায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, সংবিধান ও রাষ্ট্রের মূলনীতি এবং নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হয়। তবে সেদিন এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি।