মামদানি দেখালেন কীভাবে নির্বাচিত হতে হয়
Published: 6th, November 2025 GMT
যে ব্যবস্থায় রাজনীতিতে টাকার জোর আর পেশিশক্তিকেই সবকিছু বলে মনে করা হয়, সেই পুরোনো রাজনৈতিক ধ্যানধারণাকে নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির জয় ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। বিরোধী প্রার্থীর নির্বাচনী তহবিলে কোটিপতিদের অকাতর অনুদান, সংবাদমাধ্যমের নিরন্তর নেতিবাচক প্রচারণা, ইসলামবিদ্বেষ, এমনকি নিজের দলের নেতাদের বিরোধিতা—সব বাধা পেরিয়ে মামদানি জয়ী হয়েছেন। এই জয় প্রমাণ করেছে, শুধু টাকা আর প্রভাব থাকলেই এখন আর ক্ষমতা পাওয়া যায় না।
দীর্ঘদিন ধরে ডেমোক্রেটিক পার্টির শীর্ষ নেতৃত্ব জনকল্যাণের ভাষায় কথা বলেছেন, কিন্তু বাস্তবে তাঁরা অর্থশালী দাতা আর লবিস্টদের স্বার্থই দেখেছেন। মামদানির প্রচারণা সেই ভণ্ডামিটা স্পষ্ট করে দিয়েছে। তিনি তাত্ত্বিক বা বড় বড় কথায় যাননি। গেছেন একদম মূল প্রশ্নে, ‘এই শহরে আসলে কারা থাকতে পারে?’
এ প্রশ্নের উত্তর মামদানি নিজেই দিয়েছেন সরলভাবে। তিনি বলেছেন, সরকার যেন নিজেই ঘর তৈরি করে সাধারণ মানুষের থাকার জায়গা দেয়, ভাড়াটেদের জন্য ন্যায্য ভাড়া ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, সবার জন্য বিনা মূল্যের শিশুযত্নকেন্দ্র (চাইল্ড কেয়ার) করে, শহরের বাসভাড়া তুলে দিয়ে গণপরিবহন যেন সবার জন্য উন্মুক্ত করে।
মামদানি আরও বলেছেন, সরকারের মালিকানায় থাকা মুদিদোকান গড়ে তোলা উচিত, যাতে সাধারণ মানুষ সাশ্রয়ী দামে খাবার পায় এবং ক্ষুধার সুযোগ নিয়ে ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যবসায়ী চেইনগুলোর একচেটিয়া দৌরাত্ম্য শেষ হয়। তিনি ধনীদের কাছে রাষ্ট্রের পাওনা ন্যায্য ট্যাক্স দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন।
আরও পড়ুনমামদানির জয় যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি যেভাবে বদলে দিতে পারে১৬ ঘণ্টা আগেশুধু কর্মসূচির বিষয়বস্তুতে নয়; বরং যেভাবে তিনি খোলাখুলি তাঁর মূল বক্তব্য বলেছেন, সেটিতেও মামদানির বিশেষত্ব ছিল। তিনি বলেছেন, সরকারের কাজ হলো যারা পরিশ্রম করে, তাদের সেবা করা; যারা টাকার জোরে প্রভাব খাটায় বা লবিং করে, তাদের নয়। তিনি স্পষ্ট করে ঘোষণা দিয়েছেন—এই শহর নাগরিকদের, কোনো ডেভেলপার, ব্যাংকার বা বড় দাতাদের নয়।
অন্যদিকে মামদানির প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমো এমন এক ধরনের রাজনীতির প্রতীক হয়ে উঠেছেন, যে রাজনীতিকে ভোটাররা এখন ঘৃণা করতে শিখেছেন। ওয়াল স্ট্রিটের বড় বড় ব্যবসায়ী আর দীর্ঘদিন ধরে টাকার বিনিময়ে রাজনৈতিক প্রভাব কেনা দাতাদের সমর্থনে কুমো আবার ক্ষমতায় ফিরে নিজের অতীত কেলেঙ্কারি ঢাকতে চেয়েছিলেন।
কুমোর নির্বাচনী প্রচারে অহংকার ও আত্মগরিমা ভরপুর ছিল। তিনি নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করছিলেন, যেন তিনি খুব অভিজ্ঞ, দক্ষ এবং জানেন কীভাবে শহর বা দেশ চালাতে হয়। কিন্তু তাঁর ‘অভিজ্ঞতা’র কথা ছিল শুধু বাহ্যিক সাজ বা মুখোশ, যার আড়ালে ছিল আত্মম্ভরিতা। কিন্তু কুমোর পক্ষে যত বিজ্ঞাপন, যত সমর্থন আর যত অর্থই আসুক না কেন, তা ভোটারদের চোখে ধুলা দিতে পারেনি। ভোটাররা ভালো করেই জানতেন, কুমো ও তাঁর অর্থদাতারা আসলে সেই পচে যাওয়া ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রতিচ্ছবি, যে দল বিবেকহীনভাবে ধনীদের সেবা করাকেই রাজনীতি মনে করে।
আরও হতাশাজনক ছিল প্রাইমারির সময় ডেমোক্রেটিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বের আচরণ। কুমোর বিরুদ্ধে একাধিক যৌন অসদাচরণের অভিযোগ আছে, যার কারণে তিনি গভর্নরের পদ হারিয়েছিলেন। বিষয়টি সবাই জানত। তা সত্ত্বেও দলের অনেক প্রভাবশালী নেতা তাঁকে প্রকাশ্যে সমর্থন দেন। এর মাধ্যমে তাঁরা দেখিয়ে দেন, তাঁদের নৈতিকতা বা সততার কথা আসলে শর্তসাপেক্ষ। অর্থাৎ দাতারা যেদিকে নির্দেশ দেন, তাঁদের নৈতিকতার দিকনির্দেশনাও সেদিকেই ঘুরে যায়।
কুমোকে রক্ষার এ আচরণ রিপাবলিকানদের ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আঁকড়ে ধরা আচরণের থেকে কোনো অংশে আলাদা ছিল না। দুই দলই প্রমাণ করেছে, তাদের রাজনীতি থেকে মূল্যবোধ হারিয়ে গেছে; এখন সেটি কেবল ক্ষমতা আর নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্যই পরিচালিত হয়।
প্রাইমারি বিতর্ক চলাকালে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থীরা একে একে ঘোষণা দিতে লাগলেন, তাঁরা নির্বাচিত হলে প্রথম বিদেশ সফরে ইসরায়েলেই যাবেন।
কিন্তু মামদানি স্পষ্ট করে বললেন, তিনি নিউইয়র্কের মেয়র হতে নির্বাচন করছেন, কোনো বিদেশনীতি-দূত হতে নয়; তাই ইসরায়েল সফরে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনাও তাঁর নেই।
মামদানির এই সোজাসাপটা সততা রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও মিডিয়া মহলকে বিস্মিত করে তোলে। ডেমোক্রেটিক পার্টির মূলধারার নেতৃত্ব এবং সংবাদমাধ্যমের বড় অংশ মামদানির এ অবস্থানকে জায়নবাদী লবির তোষণ না করা হিসেবে দেখিয়ে তাঁকে অযোগ্য প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছিল।
কিন্তু ভোটাররা বিষয়টি অন্যভাবে দেখেছেন। তাঁরা ভান নয়, সত্যনিষ্ঠাকে বেছে নিয়েছেন; চাটুকারিতা নয়, নীতির প্রতি দৃঢ়তাকেই মূল্য দিয়েছেন।
যখন কুমোর সমর্থকেরা মামদানিকে ‘সমাজতান্ত্রিক’ বলে সমালোচনা করতে লাগলেন, তখন সেই পুরোনো ভয় দেখানোর কৌশল আর কাজ করল না। নিউইয়র্কের ভোটাররা বুঝে ফেলেছিলেন, যে বিষয়কে ট্রাম্পের মতো রাজনীতিকেরা মামদানির ‘কমিউনিজম’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন, সেটি আসলে ছিল জনগণের অর্থ জনগণের প্রয়োজনেই ব্যয় হবে—এমন নীতির প্রতি তাঁর অঙ্গীকার।
মামদানি জায়নবাদের সমালোচনা করেছেন এবং গাজায় ইসরায়েলের নৃশংসতার নিন্দা করেছেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে ইহুদিবিদ্বেষের (অ্যান্টিসেমিটিক) অভিযোগও আনা হয়েছে। একসময় এই অভিযোগ সত্যিকারের পক্ষপাত বা ঘৃণার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার জন্য ব্যবহৃত হতো। কিন্তু এখন সেটির এত বেশি অপব্যবহার হয়েছে যে তার নৈতিক গুরুত্ব প্রায় হারিয়ে গেছে।
এ নির্বাচনের সবচেয়ে বড় নৈতিক বিভাজনরেখা তৈরি হয়েছিল ইসরায়েল প্রসঙ্গে। মামদানি এমন কিছু করেছেন, যা খুব কম মার্কিন রাজনীতিক করার সাহস দেখিয়েছেন। তিনি ইসরায়েলকে একটি স্থায়ী বৈষম্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত ‘ইহুদি রাষ্ট্র’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেছেন। তিনি গাজায় ইসরায়েলের হামলাকে গণহত্যা (জেনোসাইড) বলে নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, ন্যায়বিচার কখনো মুখ চিনে বা বাছবিচার করে হয় না।ভোটাররা ব্যাপারটি ঠিকই বুঝেছিলেন। তাঁরা বুঝেছেন, এটি কেবল মামদানির বদনাম করার রাজনৈতিক কৌশল। এ কারণে তাঁরা সেই প্রোপাগান্ডায় বিভ্রান্ত হননি।
এ দুটি অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে নিউইয়র্কের মানুষ দেখিয়ে দিয়েছেন—নৈতিক স্পষ্টতা ও বাস্তব মানবতা কোনো ‘চরমপন্থা’ নয়; বরং এগুলোই সমাজের জন্য অপরিহার্য। কুমো ও তাঁর সহযোগীরা প্রকাশ্য বর্ণবাদ ও ইসলামভীতি ছড়ানোর আশ্রয় নিয়েছিলেন। ধর্মকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে পরিণত করতে চাওয়া সেই লোকদের বিরুদ্ধেই মামদানির এই জয়। এই জয় প্রমাণ করেছে, নিউইয়র্কের ভোটাররা ভয় কিংবা ভণ্ড বিচক্ষণতার মুখোশে লুকানো পক্ষপাত দ্বারা প্রভাবিত হননি।
এ নির্বাচনের সবচেয়ে বড় নৈতিক বিভাজনরেখা তৈরি হয়েছিল ইসরায়েল প্রসঙ্গে। মামদানি এমন কিছু করেছেন, যা খুব কম মার্কিন রাজনীতিক করার সাহস দেখিয়েছেন। তিনি ইসরায়েলকে একটি স্থায়ী বৈষম্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত ‘ইহুদি রাষ্ট্র’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেছেন। তিনি গাজায় ইসরায়েলের হামলাকে গণহত্যা (জেনোসাইড) বলে নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, ন্যায়বিচার কখনো মুখ চিনে বা বাছবিচার করে হয় না।
আরও পড়ুনমামদানির জয় থেকে ডেমোক্র্যাটরা কি শিক্ষা নেবেন২৭ জুন ২০২৫অন্যদিকে কুমো সুযোগসন্ধানী ভঙ্গিতে, এমনকি ব্যঙ্গাত্মক পর্যায় পর্যন্ত নেমে এসে ঘোষণা দেন—যদি কোনো দিন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গণহত্যার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হন, তবে তিনি তাঁকে সুরক্ষা দেবেন। তিনি ইসরায়েলের জাতিগত জাতীয়তাবাদের প্রতি নিজের আনুগত্য প্রকাশ করেন এবং মামদানির অবস্থানকে ‘চরমপন্থা’ বলে অভিহিত করেন। কিন্তু ভোটারদের দৃষ্টিতে চরমপন্থী ছিলেন কুমো নিজেই।
ভোটাররা তাঁদের অতি পরিচিত ওই ‘রাগের নাটক’ দেখে বিভ্রান্ত হননি। তরুণ প্রজন্ম আগে ইসরায়েলের সমালোচনাকে যে ধরনের সামাজিক বা রাজনৈতিক বাধা বা ‘নিষিদ্ধ বিষয়’ হিসেবে অনুভব করত, সেই চাপ এখন তাদের ওপর আর বর্তায় না। তারা কোনো ছাঁকনি বা মিডিয়ার ফিল্টার ছাড়াই গাজার বর্বরতার ছবি সরাসরি দেখেছে। ফলে ইসরায়েল হলো ‘মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র গণতান্ত্রিক দেশ’—এ কথা তারা আর বিশ্বাস করে না। ইসরায়েলকে বর্ণবাদী দেশ বলতে এখন অনেকেই আর ভয় পান না। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করার নাম ধর্মভ্রষ্টতা—এ কথা তাঁরা আর মেনে নিতে রাজি নন।
মামদানির জয় হলো এক প্রজন্মের বিদ্রোহের শিখরে পৌঁছানোর প্রতীক। প্রচলিত ব্যবস্থা অসম্পূর্ণ হলেও তা মানতে হবে—এ কথা শুনতে শুনতে তাঁরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। তাঁরা দেখেছেন, কীভাবে তাঁদের ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীজীবন ঋণের কাছে বন্ধক হয়ে গেছে, কীভাবে তাঁদের শ্রমের শোষণ করা হচ্ছে। তাঁরা আর কেবল প্রতীকী উদারবাদ বা ‘শেয়ারড ভ্যালুজ’-এর ফাঁকা বুলিতে সন্তুষ্ট নন। তাঁরা এমন রাজনীতি চান, যা সত্য বলে এবং সে অনুযায়ী কাজ করে। তাঁদের এ প্রতিবাদই নতুন পুনর্নির্মাণের সূচনা।
প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক স্তর হয়তো এই ফলকে স্থানীয় অস্বাভাবিকতা বা শহুরে উগ্রতাবাদের একটা ঝাপটা হিসেবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবে। কিন্তু এটি মোটেও তা নয়। এটি তাদের একটি গৎবাঁধা অভিযোগমাত্র। এটি দেখায়, ডেমোক্রেটিক পার্টি নৈতিক দৃঢ়তার বদলে অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যকে এবং জনমতের বিশ্বাসের পরিবর্তে বিশেষ সুবিধাভোগীদের কাছে আনুগত্য বিকিয়ে দিয়েছে। এটি প্রকাশ করে, নেতারা জনগণের চেয়ে ওয়াল স্ট্রিট ও জায়নবাদী লবির প্রতি বেশি দায়বদ্ধ।
নিউইয়র্ক থেকে আসা বার্তা স্পষ্ট করেছে: যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জটিল এবং বৈচিত্র্যময় শহরের নাগরিকেরা (যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম ইহুদি জনসংখ্যা বাস করে) দ্বৈত চরিত্র ও অনুগত রাজনৈতিক কৌশলকে মেনে নিচ্ছেন না।
মামদানি নির্বাচিত হওয়ায় নিউইয়র্কবাসী তাঁদের গণতন্ত্রকে সেই ব্যক্তিদের হাত থেকে ফিরিয়ে এনেছেন, যাঁরা তাঁদের বিক্রি করে দিয়েছিলেন। তাঁরা দেখিয়ে দিয়েছেন, নীতি এখনো ক্ষমতাকে হারাতে পারে, বিবেক এখনো পুঁজির চেয়ে বেশি শক্তিশালী হতে পারে। তাঁরা দেখিয়ে দিয়েছেন, যে দল শুধু ধনিকদের সেবা করে এবং সত্যকে ভয় পায়, সে দল জনগণের পক্ষে থেকে কাজ করতে পারে না। এই জয় যদি ডেমোক্রেটিক পার্টিকে সচেতন না করে, তবে এই জয় সেই নতুন প্রজন্মকে জাগিয়ে তুলবে, যারা খোদ ডেমোক্রেটিক পার্টিরই খোলনলচে বদলে দেবে।
জিয়াদ মোটালা হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অব লর আইন বিষয়ের অধ্যাপক
আল–জাজিরা থেকে নেওয়া, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন উইয়র ক র র জন ত ক ক ইসর য় ল র র র জন ত জনগণ র কর ছ ন বল ছ ন র জন য প রক শ এই জয় ক ষমত ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন হলে দেশ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে: সেনাসদর
দেশের জনগণের মতো সেনাবাহিনীও চায় সরকারের রূপরেখা অনুযায়ী একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। নির্বাচন হলে দেশের স্থিতিশীলতা আরো ভালো হবে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে।
বুধবার (৫ নভেম্বর) সেনাসদরে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কিত আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন জেনারেল অফিসার কমান্ডিং, সদর দপ্তর আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড (জিওসি আর্টডক) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাইনুর রহমান।
আরো পড়ুন:
‘নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা বহাল থাকবে’
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ, নির্বাচনি প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা
তিনি বলেন, “দেশের জনগণের মতো সেনাবাহিনীও চায় সরকারের রূপরেখা অনুযায়ী একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। সে রূপরেখার মধ্যে সময়সীমাও দেওয়া আছে। আমরা আশা করি নির্বাচন হলে দেশের স্থিতিশীলতা আরো ভালো হবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে আারো স্বাভাবিক হবে এবং সেনাবাহিনী তখন সেনানিবাসে ফিরে যেতে পারবে। আমরা সেদিকে তাকিয়ে আছি।”
লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইনুর রহমান আরো বলেন, “সরকার এখন পর্যন্ত নির্বাচনের যেটুকু রূপরেখা প্রণয়ন করেছে সেটার ওপর ভিত্তি করে সেনাবাহিনী যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। আমাদের যে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এখন সীমিত আকারে চলছে তার মধ্যে নির্বাচনের সময় আমাদের কী করণীয় সেটাকে ফোকাসে রেখেই প্রশিক্ষণ করছি।”
তিনি আরো বলেন, “প্রশিক্ষণের সঙ্গে একটি বিষয় সম্পর্কিত তা হলো শান্তিকালীন সময়ে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব হলো যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। আমরা বলে থাকি ‘উই ট্রেইন এজ উই ফাইট'।”
গত ১৫ মাস সেনাবাহিনী বাইরে আছে উল্লেখ করে সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা বলেন, “নির্বাচন পর্যন্ত বা তার কিছুটা পরেও যদি বাইরে থাকতে হয় তাহলে আরো কিছুদিন বাইরে থাকতে হবে। এতে করে আমাদের প্রশিক্ষণ বিঘ্নিত হচ্ছে।”
লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইনুর রহমান বলেন, “এর পাশাপাশি যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গত ১৫ মাস যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে সেনাবাহিনী, এটা সহজ পরিস্থিতি ছিল না। এ ধরনের পরিস্থিতি বাংলাদেশ প্রতিদিন ফেস করেনি। এজন্য আমরাও চাই একটা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক এবং আমরা সেনানিবাসে ফেরত আসতে পারি।”
গত ১৫ মাস সেনাবাহিনী বেসামরিক প্রশাসনের সহয়তায় নিয়জিত আছে এবং অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং ও প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দায়িত্ব পালন করছে। এই ১৫ মাস সেনাবাহিনী অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে,” বলেও উল্লেখ করেন এই কর্মকর্তা।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ