মোদির ‘সেক্যুলার-এলিট’ বিরোধিতার রাজনীতি

মনমোহন-আমলে ভারতীয় কৃষকের আত্মহত্যা রেকর্ড ভেঙেছিল। কংগ্রেসের দুর্নীতির তালিকাও ছিল দীর্ঘ। তার ওপর আবার কংগ্রেস ‘সেক্যুলার’পন্থী, মুসলমানপন্থী। হিন্দুত্ববাদী বিজেপির জন্য এটা ছিল সুবর্ণ সুযোগ।

সেক্যুলার কংগ্রেসের সীমাহীন দুর্নীতির অসিলায় ভারতের সমগ্র ‘সেক্যুলার-এলিট’ গোষ্ঠীকেই সাধারণ ভারতীয়দের প্রধানতম শত্রু হিসেবে হাজির করা ছিল মোদির টার্গেট। এই টার্গেটের মধ্যে ছিল ভারতের ইংরেজিভাষী মিডিয়া, দেশি-বিদেশি এনজিও এবং পশ্চিমে শিক্ষিত অভিজাত ‘সিভিল সোসাইটি’।

আবার রাহুল-প্রিয়াঙ্কার মতো সোনার চামচ মুখে নিয়েও মোদি জন্মাননি, বরং ভাটনগর রেলস্টেশনের ঝুপড়ি চায়ের দোকান থেকে উঠে এসেছেন। মোদি তাই ভারতের ‘ওয়ার্কিং ক্লাস’–এর প্রতিনিধি। আর অন্যদিকে পরিবারতন্ত্র ও আভিজাত্যের প্রতীক গান্ধী পরিবার ভারতের কালো মানুষের জীবন থেকে বহুদূরে। বিজেপির রাজনীতিতে এলিটের ‘অ্যান্টিথিসিস’ হিসেবে তাই মোদির উত্থান। যা কিছু এলিট, মোদি তার উল্টো। মোদি রক্ষণশীল, চোস্ত হিন্দি বলেন, স্বদেশি খাদি পরেন, মোদি নিরামিষভোজী। মোদি পশ্চিমের আইভি লিগের পণ্য নন, মোদি মনমোহন-চিদাম্বরম-রাহুলের মতো অক্সফোর্ড-হার্ভার্ডে পড়েননি। পশ্চিমের তত্ত্ব দিয়ে ভারতের কৃষক–শ্রমিকের সর্বনাশ করেননি। পশ্চিমের কলোনিয়াল প্রভুদের বিপরীতে মোদির উপনিবেশবিরোধী রাজনীতি তাই দেশপ্রেমিক ইন্ডিয়ার ঝান্ডা।

কিন্তু বাস্তবে?

মোদির সঙ্গে ‘পশ্চিমের পণ্য’ মনমোহন-চিদাম্বরমের পার্থক্য কী? মোদি নাকি ভারতের ‘মিট্টি’ থেকে উঠে আসা? তাহলে ভারতের কয়েক লাখ কৃষক মোদির বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিলেন কেন? ভারতের বহু বছরের গ্রামীণ মান্ডি ব্যবস্থাকে হটিয়ে আম্বানির অ্যাগ্রো-কোম্পানিকে খুশি করতে কৃষকবিরোধী বিল পাস করল কে? মাত্র এক রুপিতে ভাগলপুরের এক হাজার একর কৃষিজমি আদানির হাতে তুলে দিয়েছিল কে? ঝাড়খন্ডের হাজারো সাঁওতাল আদানির গোড্ডা পাওয়ার প্ল্যান্টের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল, অথচ মোদির পুলিশ ঠেঙাল কাকে? আদানিকে, না সাঁওতাল কৃষককে?

আদানির প্রাইভেট বিমানে চেপেই ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল নির্বাচনী প্রচারণাগুলো চালিয়েছেন মোদি। আদানি–আম্বানিকে একের পর এক বিদেশি প্রকল্প পাইয়ে দিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় সমঝোতার ফলে পাঁচ বছরের মাথায় মুকেশ আম্বানির সম্পদ বেড়েছে পাঁচ গুণ। গৌতম আদানি হয়েছেন পৃথিবীর দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী।

একদিকে ভারতের এক লাখ কৃষক সরকারি ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন মোদির আমলেই। এ সময় কংগ্রেসের তুলনায় কৃষি খাতের মজুরি কমেছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ। একই সময়কালে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো থেকে আদানির কোম্পানিকে ঋণ দেওয়া হয়েছে প্রায় ৮০ লাখ কোটি টাকা!

বৈষম্যের প্রতিবাদে প্রায়ই রাস্তায় নামেন পোশাকশ্রমিকেরা.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

পোশাকশিল্পের টেকসই প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিজিএমইএ-আইএমএফ বৈঠক

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মধ্যে পোশাকশিল্পের টেকসই প্রবৃদ্ধি ও রূপান্তর নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (৫ নভেম্বর) রাজধানীর উত্তরায় এই বৈঠক হয়।

আরো পড়ুন:

উৎপাদনশীলতা বাড়াতে বিজিএমইএ-এনপিও সমঝোতা স্মারক

শুল্ক হ্রাসে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই, আরো কমাতে আলোচনার পরামর্শ

বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এজেন্ডায় পোশাক খাতের অবদানকে উচ্চ প্রশংসা করে এবং শিল্প খাতের চলমান রূপান্তর প্রচেষ্টায় সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেয়।

বৈঠকে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান সভাপতিত্ব করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহসভাপতি ইনামুল হক খান, সহসভাপতি মো. রেজোয়ান সেলিম, সহসভাপতি ভিদিয়া অমৃত খান, পরিচালক নাফিস-উদ-দৌলা এবং পরিচালক ড. রশিদ আহমেদ হোসাইনী।

আইএমএফ প্রতিনিধি দলে ছিলেন সিনিয়র ইকোনমিস্ট কিয়াও চেন, সিনিয়র ইকোনমিস্ট রুইফেং ঝাং এবং ইকোনমিস্ট আয়া সাইদ।

আইএমএফের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পোশাকশিল্পের ভূমিকা, চ্যালেঞ্জ এবং ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বৈশ্বিক অস্থিরতা সত্ত্বেও কিভাবে পোশাকশিল্প প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়।

বিজিএমইএ নেতারা জানান, প্রতিষ্ঠানটি এখন শ্রমনির্ভর মডেল থেকে বেরিয়ে এসে মূল্য সংযোজিত পণ্য, উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তিগত মানোন্নয়নের মাধ্যমে উচ্চমূল্যের উৎপাদন ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে। তারা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে, ম্যান-মেইড ফাইবার (এমএমএফ) ও টেকনিক্যাল টেক্সটাইল উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

বৈঠকে এলডিসি উত্তরণের পর বাংলাদেশের জন্য সম্ভাব্য শুল্ক পরিবর্তন ও বাণিজ্য সুবিধা হ্রাসের বিষয়েও আলোচনা হয়। বিজিএমইএ নেতারা জানান, তারা সরকারকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, জাপান, কানাডা ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) সম্পাদনের পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে বাজারে প্রতিযোগিতা বজায় থাকে।

বিজিএমইএ নেতারা বৈঠকে শিল্প খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে ব্যবসা পরিচালন সহজীকরণ ও ব্যয় হ্রাসের ওপর জোর দেন। তারা উল্লেখ করেন, বোর্ড ইতিমধ্যে সরকারকে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহের স্থিতিশীলতা, বন্দর ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বৃদ্ধি, কাস্টমস ও বন্ড প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং সুদের হার এক অঙ্কে রাখার বিষয়ে সুপারিশ করেছে। এছাড়া তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়ন দ্রুত সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন।

ঢাকা/নাজমুল/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ