দেড় দশক আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে যে রায় সর্বোচ্চ আদালত দিয়েছিল, তার পেছনে রাজনৈতিক বিদ্বেষ ছিল বলে আদালতে শুনানিতে দাবি করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

আজ বুধবার আসাদুজ্জামান আপিল বিভাগে এ–সংক্রান্ত শুনানিতে বলেছেন, বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ‘শর্ট অর্ডার’ (সংক্ষিপ্ত রায়) যেদিন ঘোষণা করেন, সেদিনই রায়ের দিন। ঘোষিত রায় ১৬ মাস পর পরিবর্তন করা হয়। এ ক্ষেত্রে আইন ও রীতি অনুসরণ করা হয়নি। ঘোষিত রায় নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়াই পরিবর্তন করা হয়েছিল, যা দণ্ডবিধির ২১৯ ধারার অপরাধ।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের ওপর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চে আজ অষ্টম দিনের মতো শুনানি হয়। গত ২১ অক্টোবর এই শুনানি শুরু হয়েছিল। পরবর্তী শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন রাখা হয়েছে।

১৯৯৬ সালে সংবিধানে যোগ হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে বাদ পড়ে। তার জন্য সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধন আনা হয়েছিল। ওই সংশোধনের ঠিক আগে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অবৈধ বলে রায় দিয়েছিলেন।

ওই রায় হয়েছিল সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে। সংক্ষিপ্ত রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা আরও দুটি নির্বাচনের জন্য রাখার বিষয়টি সংসদ বিবেচনা করতে পারে বলে উল্লেখ ছিল। তবে পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ বিষয়ে কিছু ছিল না।

আজ শুনানিতে সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, ‘দেশের মেঠো পথ ধরে যারা হাটে যায়, তারাও জানে হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না। হুকুমটা নড়ানোর জন্য যে পদ্ধতি আছে, সেই পদ্ধতি অবলম্বন করে হুকুম নড়াতে হয়। উনি (খায়রুল হক) হুকুম নাড়িয়ে দিয়েছেন। এ জন্য প্রক্রিয়া আছে। সংক্ষুব্ধ পক্ষ রিভিউ করতে পারে কিংবা আদালত সুয়োমটো (স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে) পারে। এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের রুলস ভঙ্গ হয়েছে। আইন ও রীতি অনুসারে হয়নি। এই রায় আইনের দৃষ্টিতে অকার্যকর।’

আসাদুজ্জামান বলেন, কোনো সরকারি কর্মচারী যদি দুর্নীতিগ্রস্ত বা বিদ্বেষপূর্ণভাবে এমন কোনো প্রতিবেদন, আদেশ, রায় বা সিদ্ধান্ত প্রদান করে, যা সে জানে যে আইনের পরিপন্থী, তাহলে তাঁকে সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

অ্যাটর্নি জেনারেলের শুনানি শুরুর আগে শুনানিতে অংশ নেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।

গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ২০১১ সালের ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো.

মোফাজ্জল হোসেন পৃথক আবেদন (রিভিউ) করেন। সেই আবেদনগুলোর ওপর শুনানি শেষে গত ২৭ আগস্ট লিভ মঞ্জুর (আপিলের অনুমতি) করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। তারপর এই শুনানি শুরু হয়।

‘সামরিক শাসনে মানুষের মুক্তি বিরল ঘটনা’

গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা মৌলিক অধিকার উল্লেখ করে শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর সংবিধান গৃহীত হলে আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের হাঁটা শুরু হয়েছিল। দুই বছরের মাথায় গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছিল। বাক্‌স্বাধীনতার কণ্ঠরুদ্ধ করা হয়। জনগণ তখন ফুঁসে উঠেছিল।

আসাদুজ্জামান বলেন, ‘তখন গণতন্ত্র হত্যার সাথে যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁরা বললেন, আমরা যেটা বলব, সেটাই গণতন্ত্র, একদলীয় শাসন থাকবে। আমি যেটা বলব, সেটা গণতন্ত্র, আমি রাষ্ট্রপতি যেটা বলব, সেটি বিচার বিভাগ। আইনের শাসন বলতে আমি যেটা বলব, বাকশাল রক্ষীবাহিনী যেটা বলবে, সেটা আইনের শাসন। কথা বলবেন, আপনার কণ্ঠ রুদ্ধ করা হবে। সব পত্রিকার স্বাধীনতা হরণ করলেন। প্রতিবাদ উঠেছিল, প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বিগত দুই বছর সময়ের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম বিরল ঘটনা সামরিক শাসনে সেই মানুষকে মুক্তি দিয়েছিলেন।’

১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন নিয়ে মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ‘১৯৭৫ সালের একটি পর্বের পরে দেশের মানুষকে মুক্তি দিয়েছিলেন একটি সামরিক শাসন। গণতন্ত্রের স্বাদ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। আজকের আওয়ামী লীগ, সেটা কিন্তু সামরিক শাসনের করুণায়।’

পদ ছেড়ে ভোট করবেন আসাদুজ্জামান

পদ ছেড়ে দিয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে প্রার্থী হওয়ার কথা জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান। আজ বুধবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পাওয়া আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমি ভোট করব। আমি নমিনেশন ওখানে চেয়েছি। আমি ভোট করব, আমি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে আছি এখনো। আমার অ্যাটর্নি জেনারেল পদ ছেড়ে গিয়ে আমি ভোট করব। যখন সময় আসবে, তখন করব।’

গত বছরের ৮ আগস্ট রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পান আসাদুজ্জামান। তিনি বিএনপির মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

তাহলে এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল কে হচ্ছেন, এমন প্রশ্নে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশ যাকে মনে করে।’

আরও পড়ুনতত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা বাতিল: সংক্ষিপ্ত ও পূর্ণাঙ্গ রায়ে অসংগতি তুলে ধরে আপিল মঞ্জুরের আরজি০৪ নভেম্বর ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল আস দ জ জ ম ন গণতন ত র ন র জন য ব যবস থ ভ ট করব আপ ল ব হয় ছ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতের ১ শতাংশ ধনকুবেরের সম্পত্তি ৬২ শতাংশ বেড়েছে

ভারতের সবচেয়ে ধনী মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তির সম্পত্তি গত প্রায় আড়াই দশকে দেড় গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী ‘জি২০’র সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এমনটাই দেখা গিয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০০-২০২৩ সালের মধ্যে দেশের সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশ ব্যক্তির সম্পত্তি ৬২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। খবর আনন্দবাজার অনলাইন।

স্বতন্ত্র অর্থনীতিবিদদের নিয়ে তৈরি জি২০ গোষ্ঠীর ‘এক্সট্রাঅর্ডিনারি কমিটি অব ইনডিপেনডেন্ট এক্সপার্টস অন গ্লোবাল ইনইকুয়ালিটি’ এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেলজয়ী মার্কিন অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগ্লিট্‌জ়। এ ছাড়া কমিটিতে রয়েছেন জয়তী ঘোষ, উইনি ব্যানয়িমা, ইমরান ভালোদিয়াসহ অন্যেরা। তাদের প্রতিবেদনে বিশ্বের সার্বিক পরিস্থিতির কথাও উল্লেখ রয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, গত আড়াই দশকে (২০০০-২০২৪) বিশ্বে যত নতুন সম্পত্তি তৈরি হয়েছে, তার ৪১ শতাংশই রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশের কব্জায়।

কমিটির নেতৃত্বে থাকা স্টিগ্লিট্‌জ় এই বিশ্বব্যাপী বৈষম্য নিয়ে সতর্ক করে করে দিয়েছেন। তার মতে, এই বৈষম্য ‘জরুরি’ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে, যা গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং জলবায়ুগত দিক থেকে উদ্বেগজনক।

জি২০ গোষ্ঠীর ওই প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০০-২০২৩ সালের মধ্যে ভারতে সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশের সম্পত্তি ৬২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ওই একই সময়ে চীনেও সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশের সম্পত্তি প্রায় ৫৪ শতাংশ বেড়েছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “সম্পত্তির ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য কখনো কাম্য নয়। এটি ঠেকানো যায় এবং রাজনৈতিক ভাবে এটিকে বদলানো যেতে পারে।”

এতে জানানো হয়েছে, ২০২০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র দূরীকরণ মন্থর হয়ে গেছে। কিছু কিছু এলাকায় প্রায় থেমে গিয়েছে দারিদ্র দূরীকরণ। কোথাও কোথাও দারিদ্র বৃদ্ধি পেতেও শুরু করেছে। যে দেশগুলোতে আর্থিক বৈষম্য বেশি, সেখানে গণতন্ত্রের অবক্ষয়ের আশঙ্কাও তুলনামূলকভাবে বেশি।

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্ব ঘোচাতে আলোচনায় ৯ দল
  • বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে সবাইকে কাজ করতে হবে: নজরুল ইসলাম খান
  • নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়া, জনতাকে ‘শাস্তি’ ও গণতন্ত্র নিয়ে কয়েকটি কৌতুক
  • দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের জন্য বিএনপিকে দায়ী করলেন আখতার হোসেন
  • সরকারের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার মানসিকতা রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যে ফাটল ধরিয়েছে
  • ভারতের ১ শতাংশ ধনকুবেরের সম্পত্তি ৬২ শতাংশ বেড়েছে
  • ভারতে রাজনৈতিক নেতৃত্ব কি পৈতৃক সম্পত্তি