বলিউডের অন্যতম প্রভাবশালী অভিনেত্রী ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন। তার শরীরি সৌন্দর্য, অনন্য রুচি, নিখুঁত ফ্যাশন সেন্স ও অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা দিয়ে সারা বিশ্বের দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন। ১৯৯৪ সালের ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিজয়ের মুকুট ছিনিয়ে আনেন।

১৯৯৭ সালে তামিল সিনেমার মাধ্যমে রুপালি জগতে পা রাখেন ঐশ্বরিয়া। একই বছর ববি দেওলের সঙ্গে পর্দা ভাগ করে বলিউডে যাত্রা শুরু করেন। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য দর্শকপ্রিয় ও প্রশংসিত সিনেমা উপহার দিয়েছেন। কিন্তু বলিউডের ব্লকবাস্টার ‘রাজা হিন্দুস্তানি’ সিনেমার প্রস্তাব ফেরান এই অভিনেত্রী। 

আরো পড়ুন:

বিলাসবহুল দুটো ফ্ল্যাট বেচে দিলেন অমিতাভ

নিউ ইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়রের মাকে কতটা জানেন?

আমির খান অভিনীত আলোচিত ‘রাজা হিন্দুস্তানি’ সিনেমার প্রস্তাব কেন ফিরিয়েছিলেন ঐশ্বরিয়া? ২০১২ সালে ভোগ ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তার পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করেন এই অভিনেত্রী।

এ আলাপচারিতায় ঐশ্বরিয়া রাই বলেন, “অনেকে মনে করেন, আমি-ই নাকি বিউটি পেজেন্ট থেকে সিনেমায় আসার পথটা তৈরি করেছি। কিন্তু বিষয়টা আসলে তা নয়। সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার আগেই আমার হাতে চারটি সিনেমার প্রস্তাব ছিল।”

কারণ ব্যাখ্যা করে ঐশ্বরিয়ার রাই বলেন, “মূলত, চলচ্চিত্র জগৎ থেকে কিছু কাল দূরে থাকার জন্য মিস ইন্ডিয়াতে অংশ নিয়েছিলাম। আমি যদি মিস ইন্ডিয়াতে অংশ না নিতাম, তাহলে ‘রাজা হিন্দুস্তানি’ আমার প্রথম সিনেমা হতো।”

‘রাজা হিন্দুস্তানি’ সিনেমা পরিচালনা করেন ধর্মেশ দর্শন। কিছু দিন আগে বলিউড হাঙ্গামাকে সাক্ষাৎকার দেন এই পরিচালক। এ আলাপচারিতায় ঐশ্বরিয়ার বক্তব্যকে ‘সত্য’ বলে মন্তব্য করেন। 

ধর্মেশ দর্শন বলেন, “সে (ঐশ্বরিয়া) আমার প্রথম পছন্দ ছিল। কিন্তু তাকে তৎকালীন সময়ে মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতার জন্য জরুরিভিত্তিতে বিদেশ যেতে হয়েছিল। আমি এমন কাউকে চেয়েছিলাম যে, তার সম্পূর্ণ সময়টা দিতে পারবে। ঐশ্বরিয়া অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বিষয়টি গ্রহণ করেছিলেন, কোনো কষ্ট পাননি।”

সর্বশেষ ‘রাজা হিন্দুস্তানি’ সিনেমায় ঐশ্বরিয়ার চরিত্রে অভিনয় করেন কারিশমা কাপুর। সিনেমাটি মুক্তির পর অসাধারণ অভিনয়ের জন্য দর্শক-সমালোচকদের ব্যাপক প্রশংসা কুড়ান এই অভিনেত্রী। কেবল তাই নয়, বক্স অফিসে দারুণ সাড়া ফেলেছিল। নব্বই দশকের অন্যতম সফল ও সর্বাধিক ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রে পরিণত হয় এটি।

স্যাকনিল্ক এক প্রতিবেদনে জানায়, ১৯৯৬ সালের ১৫ নভেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘রাজা হিন্দুস্তানি’ সিনেমা। ৬ কোটি রুপি বাজেটের এ সিনেমা ভারতে আয় করে ৬০.

৪৮ কোটি রুপি (গ্রস)। বিদেশে আয় করে ১৫.৯ কোটি রুপি। সিনেমাটির মোট আয় দাঁড়ায় ৭৬.৩৮ কোটি রুপি। 

ঢাকা/শান্ত

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ন ম র প রস ত ব

এছাড়াও পড়ুন:

ইলন মাস্কের বেতন-ভাতা নিয়ে আজ শেয়ারহোল্ডারদের ‘গণভোট’

আজ বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক বৈদ্যুতিক গাড়ি কোম্পানি টেসলার বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম)। খবর হিসেবে এটা বিশেষ কিছু নয়। কিন্তু বিশেষ এক কারণে টেসলার এবারের এজিএম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। শুনুন তাহলে, এবারের এজিএমের আগে কোম্পানির মূল বার্তা হলো—‘আমাদের বসের মূল্য এক লাখ কোটি ডলার’।

একজন মানুষের বেতন কত হতে পারে। বেসরকারি খাতে বেতনের সীমা সেভাবে নির্ধারিত নেই। কোম্পানির প্রতি কর্মীর অবদান বা তাঁর যোগ্যতার ভিত্তিতে সাধারণত বেতন নির্ধারিত হয়। কিন্তু টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কের যে বার্ষিক বেতন–ভাতা প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে অনেকেরই চোখ কপালে উঠতে পারে—ওয়ান ট্রিলিয়ন বা এক লাখ কোটি মার্কিন ডলার। খবর বিবিসির।

এজিএমে প্রস্তাবটির প্রতি শেয়ারহোল্ডারদের রাজি করাতে টেসলা ডিজিটাল বিজ্ঞাপন দিয়েছে। এর লক্ষ্য হলো ইলন মাস্কের প্রস্তাবিত বিশাল বেতনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা। ওয়েবসাইট ভোতেৎসলা ডট কমে আছে এক ভিডিও; যে ভিডিওতে বোর্ড চেয়ারম্যান রবিন ডেনহোম ও পরিচালক ক্যাথলিন উইলসন-থম্পসন মাস্কের প্রশংসা করছেন, নেপথ্যে বাজছে বিজয়োল্লাসের সুর।

তবে সবাই যে একই সুরে কথা বলছেন, তা নয়। ফলে টেক্সাসের অস্টিনে হতে যাওয়া এই এজিএম কার্যত ‘গণভোটে’ পরিণত হচ্ছে। এতে নির্ধারিত হবে, ইলন মাস্কের নেতৃত্বে টেসলার ভবিষ্যৎ গড়ে উঠবে নাকি টেসলার ভবিষ্যৎ বদলে দেবে।

নিজস্ব সামাজিক মাধ্যম এক্সে ইলন মাস্ক বলেছেন, টেসলার ভাগ্যই ‘সভ্যতার ভবিষ্যৎ প্রভাবিত করতে পারে’। তিনি নিজের সমর্থকদের কথাও বলছেন। তাঁরা হলেন ডেল টেকনোলজির মাইকেল ডেল, আর্ক ইনভেস্টের প্রধান ক্যাথি উড ও ইলন মাস্কের ভাই কিমবাল মাস্ক (টেসলার বোর্ড সদস্য)।

কিমবাল মাস্ক বলেন, ‘আমার ভাইয়ের মতো কেউ নেই।’ মাস্ক পাল্টা লেখেন, ‘ধন্যবাদ ভাই। কিন্তু সবাই তা মানছেন না।’

অনেক বিনিয়োগকারীর মতে, মাস্ককে ঘিরে যে নাটক আর বেতন নিয়ে যে বিতর্ক দেখা যাচ্ছে তাতে বোঝা যায়, কোম্পানিটি দিক হারিয়েছে—বিশেষ করে যখন বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি কমছে।

গারবার কাওয়াসাকি ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্টের প্রধান রস গারবার বলেন, যে কোম্পানি গাড়ি বিক্রি করতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে, সেই কোম্পানি যখন বসের বেতন বাড়ানো নিয়ে বিজ্ঞাপন দেয় তখন বুঝতে হবে, কিছু গড়বড় আছে। টেসলার এখন মূল ব্যবসায়ে ফেরা দরকার, অর্থাৎ বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রিতে মনোযোগ দেওয়া।

কীভাবে এই বেতন

এজিএমে পাস হলেই যে ইলন মাস্ক সরাসরি এই বেতন পাবেন, তা নয়। এ জন্য তাঁকে লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে, টেসলার বর্তমান বাজার মূলধন ১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার থেকে ৮ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন বা ৮ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করা।

এর সঙ্গে কোম্পানির চালকবিহীন ‘রোবোট্যাক্সি’ প্রকল্পের আওতায় বাণিজ্যিকভাবে ১০ লাখ গাড়ি রাস্তায় নামানো। এসব লক্ষ্য পূরণ করতে পারলে মাস্ক ৪২ কোটি ৩৭ লাখ নতুন শেয়ার পাবেন, যার মূল্য হবে প্রায় ১ লাখ কোটি ডলার। এ বিষয়ে বিবিসি টেসলার মন্তব্য জানতে চাইলেও তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।

নতুন রূপে পুরোনো বিতর্ক

মাস্কের বেতন নিয়ে এবারই যে প্রথম বিতর্ক হচ্ছে, তা নয়। এর আগে শেয়ারহোল্ডাররা তাঁর জন্য এমন এক প্যাকেজ অনুমোদন করেছিলেন, যেখানে টেসলার বাজারমূল্য ১০ গুণ বাড়লে তিনি ১০ কোটি ডলার পাবেন, এমন শর্ত দেওয়া হয়েছিল। সেই লক্ষ্য তিনি অবশ্য অর্জন করেছিলেন। কিন্তু ২০২৪ সালে ডেলাওয়ারের এক আদালত রায় দেন, পর্ষদের সদস্যরা মাস্কের সঙ্গে অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠ, ফলে চুক্তিটি অবৈধ।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল হয়েছে, যা এখনো চলছে। এর মধ্যেই মাস্কের জন্য আরও বড় বেতন প্যাকেজের প্রস্তাব ভোটে যাচ্ছে।

কলাম্বিয়া ল স্কুলের অধ্যাপক ডরোথি লুন্ড বলেন, ‘এটা টেসলার পুরোনো কৌশল, নতুন কিছু নয়। এমন প্রচারণা সাধারণ ঘটনা নয়, টেসলা কোনো সাধারণ কোম্পানিও নয়।’ তিনি আরও বলেন, যখন কোনো বড় বিনিয়োগকারী পর্ষদে পরিবর্তন নিয়ে আসার চেষ্টা করে, তখন এমনটা হয়। কিন্তু তাঁর বিস্ময়, বেতন প্যাকেজ ঘিরে এমন প্রচারণা তিনি কখনো দেখেননি। সেই সঙ্গে এবার মাস্ক ও তাঁর ভাই কিমবাল—দুজনই ভোট দিতে পারবেন, যা আগেরবার হয়নি।

বিতর্কিত কিন্তু অপরিহার্য

ইলন মাস্ক এখন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। এ বছরই এক পর্যায়ে তিনি বিশ্বের প্রথম হাফ ট্রিলিয়নিয়ার বা ৫০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের সম্পদের মালিক হন। যদিও পরে শেয়ারের দাম কমলে তাঁর সম্পদের মূল্য কমে যায়।

টেসলার দাবি, বেতন প্রস্তাব অনুমোদিত না হলে মাস্ক হয়তো কোম্পানি ছেড়ে দেবেন। তাঁকে হারানো মানে নেতৃত্ব হারানো। টেসলার পর্ষদ সদস্য উইলসন-থম্পসন বিবিসিকে জানান, সাত মাস ধরে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে এই প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে।

তবে মাস্ক বলছেন, বিষয়টি বেতনের নয়, নিয়ন্ত্রণের। তিনি যেন কোম্পানি ঠিকভাবে চালাতে পারেন, সে জন্য এই নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু ইয়েলের অর্থনীতিবিদ ম্যাথিউ কচেন বলেন, পর্ষদের কাজ সিইওর প্রচারণা চালানো নয়, বরং শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষা করা।

টেসলার বিনিয়োগকারীরা সবাই যে মাস্কের বেতন বাড়ানোর প্রস্তাবের সঙ্গে একমত, তা নয়। দুটি বড় বিনিয়োগ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গ্লাস লুইস ও আইএসএস এই বেতন প্যাকেজের বিরোধিতা করেছে। তাদের মতে, এই বেতন–ভাতা অতিরিক্ত। এটা পাস হলে শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। টেসলার বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নরওয়ের সার্বভৌম তহবিল, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় পাবলিক পেনশন তহবিল ক্যালপার্স ও নিউইয়র্ক রাজ্যের কম্পট্রোলার থমাস ডিনাপোলিও প্রস্তাবটির বিরোধিতা করেছে।

ফলে মাস্ক এখন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ওপর ভরসা রাখছেন, যাঁরা সাধারণত তাঁর পক্ষেই ভোট দেন।

মরগ্যান স্ট্যানলির বিশ্লেষক অ্যাডাম জোনাস বলেছেন, ‘বৃহস্পতিবারের ভোট টেসলার ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার একটি হতে পারে। সম্ভবত এই ভোটের ফল মাস্কের পক্ষে যাবে না।’

এমনিতে মাস্ককে নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকারে যোগ দিয়ে তাঁর ভাবমূর্তির বারোটা বেজেছে। সরকারের ভেতরের সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে খুব বেশি দিন টিকতেও পারেননি সেখানে। এমনকি ট্রাম্পের সঙ্গেও সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে তাঁর, যদিও ট্রাম্পকে নির্বাচনে জেতাতে কত কিছুই না করেছেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ