দ. আফ্রিকা সিরিজে ভারতের দল ঘোষণা: টেস্টে ফিরলেন পন্ত
Published: 5th, November 2025 GMT
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) আজ বুধবার (০৫ নভেম্বর) ঘোষণা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আসন্ন টেস্ট ও সীমিত ওভারের সিরিজের দল। যেখানে সবচেয়ে বড় খবর টেস্ট দলে ফিরেছেন উইকেটকিপার-ব্যাটার ঋষভ পন্ত। অন্যদিকে, ভারত ‘এ’ দলের নেতৃত্বে ওয়ানডে সিরিজে থাকছেন তিলক ভার্মা।
ইংল্যান্ড সফরে পায়ের আঘাতের কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঘরের মাঠের টেস্ট সিরিজ মিস করেছিলেন পন্ত। এবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ দিয়েই তিনি ফিরছেন লাল বলের ক্রিকেটে।
আরো পড়ুন:
৩৫ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে আফগানিস্তানের কাছে হারল বাংলাদেশ
দ.
সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’-এর বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ভারত ‘এ’ দলকে নেতৃত্ব দেন পন্ত এবং দুটি ইনিংস মিলিয়ে ১০৭ রান করেন। তার পারফরম্যান্সে নির্বাচকরা আবারও আস্থা রেখেছেন। তিনি জায়গা নিচ্ছেন নারায়ণ জগদীশনের পরিবর্তে। যিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে দলে ছিলেন।
দলের নেতৃত্বে থাকছেন শুভমন গিল। ব্যাটিং বিভাগে আছেন যশস্বী জয়সওয়াল, লোকেশ রাহুল, সাই সুদর্শন ও দেবদত্ত পাডিক্কল। অলরাউন্ডার হিসেবে আছেন রবীন্দ্র জাদেজা, ওয়াশিংটন সুন্দর, অক্ষর প্যাটেল ও নীতিশ রেড্ডি। বোলিং আক্রমণে আছেন মোহাম্মদ সিরাজ, জাসপ্রিত বুমরা, কুলদীপ যাদব ও আকাশ দীপ।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ভারতের টেস্ট দল:
শুভমন গিল (অধিনায়ক), ঋষভ পন্ত (সহ-অধিনায়ক ও উইকেটকিপার), যশস্বী জয়সওয়াল, লোকেশ রাহুল, সাই সুদর্শন, দেবদত্ত পাডিক্কল, ধ্রুব জুরেল, রবীন্দ্র জাদেজা, ওয়াশিংটন সুন্দর, জাসপ্রিত বুমরা, অক্ষর প্যাটেল, নীতিশ কুমার রেড্ডি, মোহাম্মদ সিরাজ, কুলদীপ যাদব ও আকাশ দীপ।
ওয়ানডেতে তিলক ভার্মার নেতৃত্বে ভারত ‘এ’ দল:
একই সঙ্গে বিসিসিআই ঘোষণা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’-এর বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের ভারত ‘এ’ দলও। তিলক ভার্মা থাকছেন অধিনায়ক হিসেবে, আর সহ-অধিনায়কের দায়িত্বে রুতুরাজ গায়কোয়াড়।
দলে আছেন তরুণ প্রতিভারা- অভিষেক শর্মা, রিয়ান পরাগ, ঈশান কিশান, আয়ুষ বাদোনি, নিশান্ত সিন্ধু ও প্রভসিমরন সিংহ। বোলিংয়ে আছেন হর্ষিত রানা, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা, আর্শদীপ সিং ও খালিল আহমেদ।
ভারত ‘এ’ ওয়ানডে দল:
তিলক ভার্মা (অধিনায়ক), রুতুরাজ গায়কোয়াড় (সহ-অধিনায়ক), অভিষেক শর্মা, রিয়ান পরাগ, ঈশান কিশান (উইকেটকিপার), আয়ুষ বাদোনি, নিশান্ত সিন্ধু, বিপরাজ নিগম, মানব সুথার, হর্ষিত রানা, আর্শদীপ সিং, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা, খালিল আহমেদ, প্রভসিমরন সিং (উইকেটকিপার)।
তিলক, অভিষেক, হর্ষিত রানা, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা ও আর্শদীপ সিং- এই পাঁচজনই অস্ট্রেলিয়া সফরে যাওয়া মূল দলের সদস্য। যাদের এবার ‘এ’ দলেও রাখা হয়েছে। তবে সঞ্জু স্যামসন ও রাজত পতিদারকে রাখা হয়নি। আইপিএল ২০২৫-এ নজরকাড়া পারফরম্যান্সের পুরস্কার হিসেবে সুযোগ পেয়েছেন আয়ুষ বাদোনি, রিয়ান পরাগ, বিপরাজ নিগম ও প্রভসিমরন সিং।
সিরিজ সূচি:
ভারত ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুটি টেস্ট খেলবে-
প্রথম টেস্ট: ১৪ থেকে ১৮ নভেম্বর, কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে।
দ্বিতীয় টেস্ট: ২২ থেকে ২৬ নভেম্বর, গুয়াহাটির বারসাপাড়া স্টেডিয়ামে (প্রথমবারের মতো টেস্ট আয়োজন করবে ভেন্যুটি)।
অন্যদিকে, ভারত ‘এ’ ও দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’-এর মধ্যকার তিন ওয়ানডে হবে রাজকোটের নিরঞ্জন শাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১৩, ১৬ ও ১৯ নভেম্বর।
ঢাকা/আমিনুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত লক ভ র ম উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা
লরা উলভার্ট- দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। বয়স মাত্র ছাব্বিশ, কিন্তু মনের দৃঢ়তায় যেন পাহাড়। এবারের ২০২৫ নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন প্রোটিয়া আশার একমাত্র আলোকবর্তিকা। নিজের একক নৈপুণ্যে, এক অসম্ভব সাহসিকতায় দলকে টেনে তুলেছিলেন ফাইনালের মঞ্চে।
সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলে ফেলেছিলেন ১৬৯ রানের অনবদ্য ইনিংস। যেন একক নাটকের একমাত্র নায়িকা তিনি। আর ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন হিমালয়ের মতো দৃঢ় হয়ে। একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন অনবদ্যভাবে। শতরান ছুঁয়ে যখন আকাশে ছুড়লেন ব্যাট, তখন মনে হচ্ছিল, স্বপ্নের ট্রফি যেন হাতের নাগালেই। কিন্তু ক্রিকেটের নির্মম বাস্তবতা! উলভার্ট যখন সাজঘরে ফিরলেন, ঠিক তখনই প্রোটিয়া শিবিরে নেমে এল নীরবতা। জয় হাতছাড়া হলো নিঃশ্বাস দূরত্বে।
আরো পড়ুন:
আরব আমিরাতকে ৪৯ রানে গুঁড়িয়ে ইতিহাস গড়ল যুক্তরাষ্ট্র
মিতালিকে ছাড়িয়ে ইতিহাস গড়লেন মান্ধানা
চোখের কোণে জলের কণা তখনও ঝলমল করছিল। সেটা ঘামের ছিল, নাকি অপূর্ণতার অশ্রু, তা কেউ জানে না। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল, হৃদয়ের গভীরে আগুন জ্বলছে। একটা স্বপ্নের দগ্ধ ছাই হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা।
তবুও এই ব্যর্থতার মাঝেই উলভার্টের জয় আছে। বিশ্বকাপে তিন ফাইনাল, টানা তিনবার! এবং প্রতিবারই দলের একমাত্র ভরসা ছিলেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে করেছেন ৯ ম্যাচে ৫৭১ রান, গড়ে ৭১.৩৭। যা নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ। এর আগে অ্যালিসা হিলির ৫০৯ রান ছিল শীর্ষে।
শুরুটা ছিল নিস্তরঙ্গ- প্রথম ম্যাচে মাত্র ৫, পরেরটিতে ১৪। কিন্তু ধীরে ধীরে আগুন জ্বলে উঠল তার ব্যাটে। ভারতের বিপক্ষে ৭০, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৬০, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯০, আর সেমিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৯। প্রতিটি ইনিংস যেন নিজের সীমাকে ছাপিয়ে যাওয়া একেকটি যাত্রা।
তবে উলভার্টের কীর্তি শুধু এই বিশ্বকাপেই নয়। ২০২৩ ও ২০২৪ দুই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। প্রতিবারই দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে। কিন্তু ভাগ্য যেন নিষ্ঠুরভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তার দিক থেকে। তিনটি ফাইনাল, তিনটি পরাজয়।
তবু লরার গল্পটা হারের নয়- এ এক অনমনীয়তার গল্প, এক নিঃসঙ্গ অভিযাত্রার গল্প। যেমন শেরপা অক্সিজেনহীন উচ্চতায় পৌঁছে দেয় অন্যদের। কিন্তু নিজে ফিরে আসে নীরবে, তেমনি উলভার্টও দলের স্বপ্নগুলো কাঁধে তুলে বয়ে নিয়েছেন, একা।
ফাইনাল শেষে ভারতীয় খেলোয়াড়রাও যখন এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন, তখন বোঝা গেল; এই হার, এই অশ্রু, এই নীরবতা- সবই সম্মানের প্রতীক।
রবিবার ফাইনাল শেষে লরা বলেছেন অনেক কথা। সেখানে হাতাশার কিছু পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেছে প্রেরণা ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস।
“আমি মনে করি, ২০২৩ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের (নিউল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত) পর থেকেই আমাদের জন্য অনেক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল। সেই সময় থেকেই ঘরোয়া পর্যায়ে কেন্দ্রীয় চুক্তির ব্যবস্থা চালু হয়। আমাদের দলের গভীরতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটা ছিল এক বিশাল পদক্ষেপ।”
“এরপরের (২০২৪ সালের) বিশ্বকাপটা আমাদের দলের নামটা বিশ্ব ক্রিকেটে আরও বড় করে তুলেছে, আমার তাই মনে হয়। এখন আমরা এমন একটি দল, যারা নিয়মিত ফাইনালে পৌঁছাচ্ছে। যেখানে আগে এটা একবারের সাফল্য বলেই ধরা হতো।”
“টানা তিনবার ফাইনালে উঠতে পারাটা সত্যিই গর্বের বিষয়। এটা প্রমাণ করে আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটে এবং দলীয় কাঠামোয় সঠিক দিকেই এগোচ্ছি। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের এই ফলেই আমরা এখানে পৌঁছেছি। আশা করি, আমরা এমন আরও ফাইনাল খেলতে থাকব… আর একদিন, হ্যাঁ, একদিন আমরা অবশ্যই একটা জিতব।”
টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স নিয়ে উলভার্ট বলেন, “আমার মনে হয়, আমাদের এই আসরটা অসাধারণ কেটেছে। ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছানোই একটা বড় সাফল্য। আমরা পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ ক্রিকেট খেলেছি। এই বিষয়টা নিয়েই আমি সবচেয়ে বেশি গর্বিত।”
“একপর্যায়ে আমরা টানা পাঁচটা ম্যাচ জিতেছিলাম। যা আমাদের দলের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। দুই দলের মধ্যকার সিরিজগুলোতে আমরা সবসময় এই ধারাবাহিকতা পাই না। তাই বড় মঞ্চে, বড় টুর্নামেন্টে এমন পারফরম্যান্স দিতে পারাটা সত্যিই গর্বের। আমরা প্রমাণ করেছি, বড় আসরে দক্ষিণ আফ্রিকাও এখন বড় দল।”
সত্যিই তাই। লরার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা এখন বড় দল। হয়তো একদিন, কোনো এক প্রভাতে, লরা উলভার্ট সেই অধরা ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখবেন। কিন্তু আজকের দিনে, তিনি রয়েছেন বিশ্বকাপের হিমালয়ের চূড়ায়, এক নিঃসঙ্গ শেরপা হয়ে। যিনি নিজের কীর্তিতে চূড়ায় উঠেছেন।
ঢাকা/আমিনুল