হেলিও ৪৫: বাজেটের মধ্যে ফ্ল্যাগশিপের ছোঁয়া
Published: 5th, November 2025 GMT
এডিসন গ্রুপের প্রিমিয়াম হ্যান্ডসেট ব্র্যান্ড হেলিও তাদের স্মার্টফোন লাইনআপে যুক্ত করেছে ‘হেলিও ৪৫’ (Helio 45)। গতকাল মঙ্গলবার নতুন এই স্মার্টফোনটি উদ্বোধন করা হয়েছে।
বাজারে দুটি ভেরিয়েন্টে পাওয়া যাবে স্মার্টফোনটি—৬ ও ১২৮ জিবি এবং ৮ ও ১২৮ জিবির দাম যথাক্রমে ১১ হাজার ৯৯৯ টাকা এবং ১২ হাজার ৯৯৯ টাকা, সঙ্গে থাকছে গ্রামীণফোনের বান্ডেল অফার। স্মার্টফোনটিতে রয়েছে বর্তমান বাজারের দাম অনুযায়ী সবচেয়ে অত্যাধুনিক ফিচার।
এডিসন গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাকারিয়া শাহিদ বলেন, ‘স্মার্টফোন শুধু একটি ডিভাইস নয়, এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। হেলিও ৪৫ সেই অভিজ্ঞতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে, যেখানে পারফরম্যান্সের পাশাপাশি প্রিমিয়াম ডিজাইনের মিশ্রণ ঘটেছে।’
হেলিও ৪৫–এ আছে লেটেস্ট অ্যান্ড্রয়েড–১৫ অপারেটিং সিস্টেম, ফলে ব্যবহারকারীরা পাবেন গুগলের অত্যাধুনিক সব ফিচার এবং ইউজার–ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেইস। এ ছাড়া অ্যান্ড্রয়েড–১৫–তে গ্রাহকেরা উপভোগ করতে পারবেন হাই পারফরম্যান্স, অ্যাপ ওপেনিং এবং অত্যাধুনিক কাস্টমাইজেশন অপশন।
হেলিও ৪৫ স্মার্টফোনটিতে আছে ২০: ৯ অ্যাসপেক্ট রেশিওর ৬.
চিপসেট হিসেবে এই হ্যান্ডসেটটিতে আছে মিডিয়াটেকের ১২ ন্যানোমিটার প্রিমিয়াম চিপসেট হেলিও জি৮১ এবং প্রসেসরে আছে ২.০ গিগাহার্টজ অক্টাকোর প্রসেসর। এই ডায়নামিক ডুও আপনাকে দেবে মাল্টিটাস্কিং, স্মুথ অ্যাপ ট্রানজিশন এবং গেমস খেলার সুপার ফাস্ট ইউজার এক্সপেরিয়েন্স। তা ছাড়া মাল্টিটাস্কিং এবং হাই পারফরম্যান্স এনশিওর করার জন্য এই ফোনে আছে ৬ জিবি এবং ৮ জিবি র্যাম। এ ছাড়া মেমোরি ফিউশনের মাধ্যমেও র্যাম বাড়ানো যাবে যথাক্রমে ৬ জিবি এবং ৮ জিবি করে। ১২৮ জিবি রম দেবে অনেক বেশি অ্যাপ এবং ছবি বা ভিডিও স্টোর করার ব্যবস্থা।
ফটোগ্রাফিপ্রেমীদের জন্য হেলিও ৪৫ নিয়ে এসেছে ৫০ মেগাপিক্সেল সনি সেন্সরের ট্রিপল রিয়ার ক্যামেরা সেটআপ, যার অ্যাপারচার এফ/১.৮। ডিএসএলআর মানের ছবি তোলা যাবে হেলিও ৪৫–এর এই ক্যামেরা দিয়ে। ৩২ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরাসহ ফেস–ফোকাস ফিচারটি ব্যবহার করে তোলা যাবে নিখুঁত সব সেলফি এবং ভিডিও কলও হবে অত্যন্ত মসৃণ।
এই স্মার্টফোনটিতে রয়েছে ৫০০০এমএএইচ লি-পলিমার ব্যাটারি, যা সারা দিন ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে ব্যবহার করা যাবে। এই ব্যাটারি ব্যবহারকারীর দৈনন্দিন লাইফস্টাইলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম। এ ছাড়া দ্রুত চার্জ করার জন্য হ্যান্ডসেটটির সঙ্গে থাকছে ১৮ ওয়াটের ফাস্ট চার্জিং সাপোর্টযুক্ত চার্জার, যার মাধ্যমে মাত্র দেড় ঘণ্টায় ফোনটি ফুল চার্জ হয়ে যাবে।
বৃষ্টি বা ধুলোবালি থেকে রক্ষা পেতে এই স্মার্টফোনটিতে আছে আইপি ৬৪–এর রেটিং। হেলিও ৪৫ ফোনটিতে রয়েছে ফোরজি/থ্রিজি/টুজি ওয়াই–ফাই, জিপিএস এবং ওটিজি ব্যবহার করার সুবিধা।
নিরাপত্তার দিকটিও যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই ফোনটিতে আছে সাইড মাউন্টেড ফিংগারপ্রিন্ট সেন্সর এবং ফেস আনলক ফিচার, যা দ্রুত এবং নিরাপদে ব্যবহারকারীর ডিভাইসে অ্যাক্সেস নিশ্চিত করে। এ ছাড়া জি সেন্সর, প্রক্সিমিটি সেন্সর, লাইট সেন্সরের পাশাপাশি ম্যাগনেটিক সেন্সরও আছে এই হ্যান্ডসেটটিতে।
স্পেশাল ফিচারের মধ্যে রয়েছে রিভার্স চার্জিং, অ্যাপ হাইড, অ্যাপ লক, ব্যাকগ্রাউন্ড স্ট্রিম এবং নয়েজ ক্যানসেলেশন ইত্যাদি।
অবিশ্বাস্য ফিচার এবং প্রিমিয়াম ডিজাইনের সঙ্গে তিনটি চমৎকার কালার অপশন—মিন্ট গ্রিন, স্পেস ব্ল্যাক এবং ক্ল্যাসিক নেভি ব্লুসহ হেলিও ৪৫ ব্যবহারকারীর দৈনন্দিন জীবনে এনে দেবে প্রিমিয়াম ফিল।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ নন দ ন হ ল ও ৪৫ ব যবহ র ফ নট ত
এছাড়াও পড়ুন:
লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা
লরা উলভার্ট- দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। বয়স মাত্র ছাব্বিশ, কিন্তু মনের দৃঢ়তায় যেন পাহাড়। এবারের ২০২৫ নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন প্রোটিয়া আশার একমাত্র আলোকবর্তিকা। নিজের একক নৈপুণ্যে, এক অসম্ভব সাহসিকতায় দলকে টেনে তুলেছিলেন ফাইনালের মঞ্চে।
সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলে ফেলেছিলেন ১৬৯ রানের অনবদ্য ইনিংস। যেন একক নাটকের একমাত্র নায়িকা তিনি। আর ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন হিমালয়ের মতো দৃঢ় হয়ে। একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন অনবদ্যভাবে। শতরান ছুঁয়ে যখন আকাশে ছুড়লেন ব্যাট, তখন মনে হচ্ছিল, স্বপ্নের ট্রফি যেন হাতের নাগালেই। কিন্তু ক্রিকেটের নির্মম বাস্তবতা! উলভার্ট যখন সাজঘরে ফিরলেন, ঠিক তখনই প্রোটিয়া শিবিরে নেমে এল নীরবতা। জয় হাতছাড়া হলো নিঃশ্বাস দূরত্বে।
আরো পড়ুন:
আরব আমিরাতকে ৪৯ রানে গুঁড়িয়ে ইতিহাস গড়ল যুক্তরাষ্ট্র
মিতালিকে ছাড়িয়ে ইতিহাস গড়লেন মান্ধানা
চোখের কোণে জলের কণা তখনও ঝলমল করছিল। সেটা ঘামের ছিল, নাকি অপূর্ণতার অশ্রু, তা কেউ জানে না। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল, হৃদয়ের গভীরে আগুন জ্বলছে। একটা স্বপ্নের দগ্ধ ছাই হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা।
তবুও এই ব্যর্থতার মাঝেই উলভার্টের জয় আছে। বিশ্বকাপে তিন ফাইনাল, টানা তিনবার! এবং প্রতিবারই দলের একমাত্র ভরসা ছিলেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে করেছেন ৯ ম্যাচে ৫৭১ রান, গড়ে ৭১.৩৭। যা নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ। এর আগে অ্যালিসা হিলির ৫০৯ রান ছিল শীর্ষে।
শুরুটা ছিল নিস্তরঙ্গ- প্রথম ম্যাচে মাত্র ৫, পরেরটিতে ১৪। কিন্তু ধীরে ধীরে আগুন জ্বলে উঠল তার ব্যাটে। ভারতের বিপক্ষে ৭০, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৬০, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯০, আর সেমিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৯। প্রতিটি ইনিংস যেন নিজের সীমাকে ছাপিয়ে যাওয়া একেকটি যাত্রা।
তবে উলভার্টের কীর্তি শুধু এই বিশ্বকাপেই নয়। ২০২৩ ও ২০২৪ দুই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। প্রতিবারই দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে। কিন্তু ভাগ্য যেন নিষ্ঠুরভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তার দিক থেকে। তিনটি ফাইনাল, তিনটি পরাজয়।
তবু লরার গল্পটা হারের নয়- এ এক অনমনীয়তার গল্প, এক নিঃসঙ্গ অভিযাত্রার গল্প। যেমন শেরপা অক্সিজেনহীন উচ্চতায় পৌঁছে দেয় অন্যদের। কিন্তু নিজে ফিরে আসে নীরবে, তেমনি উলভার্টও দলের স্বপ্নগুলো কাঁধে তুলে বয়ে নিয়েছেন, একা।
ফাইনাল শেষে ভারতীয় খেলোয়াড়রাও যখন এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন, তখন বোঝা গেল; এই হার, এই অশ্রু, এই নীরবতা- সবই সম্মানের প্রতীক।
রবিবার ফাইনাল শেষে লরা বলেছেন অনেক কথা। সেখানে হাতাশার কিছু পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেছে প্রেরণা ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস।
“আমি মনে করি, ২০২৩ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের (নিউল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত) পর থেকেই আমাদের জন্য অনেক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল। সেই সময় থেকেই ঘরোয়া পর্যায়ে কেন্দ্রীয় চুক্তির ব্যবস্থা চালু হয়। আমাদের দলের গভীরতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটা ছিল এক বিশাল পদক্ষেপ।”
“এরপরের (২০২৪ সালের) বিশ্বকাপটা আমাদের দলের নামটা বিশ্ব ক্রিকেটে আরও বড় করে তুলেছে, আমার তাই মনে হয়। এখন আমরা এমন একটি দল, যারা নিয়মিত ফাইনালে পৌঁছাচ্ছে। যেখানে আগে এটা একবারের সাফল্য বলেই ধরা হতো।”
“টানা তিনবার ফাইনালে উঠতে পারাটা সত্যিই গর্বের বিষয়। এটা প্রমাণ করে আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটে এবং দলীয় কাঠামোয় সঠিক দিকেই এগোচ্ছি। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের এই ফলেই আমরা এখানে পৌঁছেছি। আশা করি, আমরা এমন আরও ফাইনাল খেলতে থাকব… আর একদিন, হ্যাঁ, একদিন আমরা অবশ্যই একটা জিতব।”
টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স নিয়ে উলভার্ট বলেন, “আমার মনে হয়, আমাদের এই আসরটা অসাধারণ কেটেছে। ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছানোই একটা বড় সাফল্য। আমরা পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ ক্রিকেট খেলেছি। এই বিষয়টা নিয়েই আমি সবচেয়ে বেশি গর্বিত।”
“একপর্যায়ে আমরা টানা পাঁচটা ম্যাচ জিতেছিলাম। যা আমাদের দলের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। দুই দলের মধ্যকার সিরিজগুলোতে আমরা সবসময় এই ধারাবাহিকতা পাই না। তাই বড় মঞ্চে, বড় টুর্নামেন্টে এমন পারফরম্যান্স দিতে পারাটা সত্যিই গর্বের। আমরা প্রমাণ করেছি, বড় আসরে দক্ষিণ আফ্রিকাও এখন বড় দল।”
সত্যিই তাই। লরার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা এখন বড় দল। হয়তো একদিন, কোনো এক প্রভাতে, লরা উলভার্ট সেই অধরা ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখবেন। কিন্তু আজকের দিনে, তিনি রয়েছেন বিশ্বকাপের হিমালয়ের চূড়ায়, এক নিঃসঙ্গ শেরপা হয়ে। যিনি নিজের কীর্তিতে চূড়ায় উঠেছেন।
ঢাকা/আমিনুল