ডেঙ্গুতে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু, সরকারি অবহেলার পরিণতি বলছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা
Published: 5th, November 2025 GMT
ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। চলতি নভেম্বর মাসের শুরু থেকেই প্রতিদিন ডেঙ্গুতে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে শুরু করে আজ বুধবার সকাল আটটা পর্যন্ত) দেশে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১০ জন। একদিনে চলত বছর এটি সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এর আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে ডেঙ্গুতে ১২ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছিল। তবে সেই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছিল, এর মধ্যে তিনটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল আগের দিন অর্থাৎ ২০ সেপ্টেম্বর। সেই হিসেবে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে এডিস মশা কামড় হওয়া ডেঙ্গু রোগে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেলেন। আর এ নিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে ৩০২ জন।
জনস্বাস্থ্যবিদ ডা.
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৬৯ জন। এ নিয়ে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা হলো ৭৪ হাজার ৯৯২ জন।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় পাঁচজনেরই মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এলাকায় থাকা হাসপাতালগুলোতে। এর মধ্যে তিনজন মারা গেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আর দুজন ল্যাবএইড হাসপাতালে। ১০ জনের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন উত্তর সিটি করপোরেশনের হাসপাতালে। তাদের মধ্যে দুজন মারা গেছেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এবং একজন মারা গেছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দুজনের মৃত্যু হয়েছে ভোলা ও খুলনায়। মোট আক্রান্তদের মধ্যে ৪০৮ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন। দুই সিটির বাইরে সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়েছে ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলায়, এ সংখ্যা ২১৪। ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়েছে গাজীপুর জেলায়, রোগী সংখ্যা ৬৫। চলতি বছরের শুরু থেকে সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়েছিল যে বরিশাল বিভাগে সেখানে একদিনে রোগী হয়েছে ১২৮ জন। আর এ বিভাগের জেলায় বরগুনায় রোগী সংখ্যা ছিল ৪৭। এ বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে এ সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ।
চলতি বছরে যে ডেঙ্গুতে সংক্রমণ বাড়তে পারে, তার ইঙ্গিত শুরুতেই দিয়েছিলেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা। কিন্তু বিষয়টি আদৌ আমলে নেয়নি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো। জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়েছে। আবার তাপমাত্রাও ছিল এডিস মশার প্রজনন বৃদ্ধির সহায়ক। কিন্তু মশা নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ছিল চরম। আবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার সহায়তায়। দীর্ঘ সময় পর এসে গত অক্টোবর মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সতর্ক করে জানায়, জ্বর হলেই ডেঙ্গুর পরীক্ষা করতে হবে। এটুকু বলে মোটামুটি দায়িত্ব শেষ করেছে তারা। কিন্তু সহজে এবং কম খরচে ডেঙ্গুর পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়নি।
ডেঙ্গু মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। এর দায়িত্ব মূলত পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকার পরিষদগুলোর। কিন্তু সরকার পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকার পরিষদগুলো ভেঙে দেয়। মশা নিয়ন্ত্রণে পৌরসভাগুলো যে খুব ভালো কাজ করত তা কেউই দাবি করেন না। কিন্তু জনস্বাস্থ্যবিদদের কথা, অন্তত সেখানে জনপ্রতিনিধি থাকলে কিছুটা হলেও মশা নিধনসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ হতো। কিন্তু পরিষদগুলো ভেঙে দিয়ে পুরো ব্যবস্থাপনা নষ্ট করে ফেলা হয়েছে বলেই মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা।
এর মধ্যে অক্টোবরের শেষে এবং চলতি মাসের শুরুতে বৃষ্টিপাত ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে একাধিক বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা করেছিলেন। এখন মাসের শুরু থেকে যে হারে রোগী বাড়ছে এবং ডেঙ্গুতে মৃত্যু ঘটছে তাতে এসব শঙ্কা এখন সত্যি হওয়ার পথে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস থ স ক রমণ জন ম র ক র পর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
মাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের কারণ পাইলটের উড্ডয়ন ত্রুটি
পাইলটের উড্ডয়ন ত্রুটির কারণে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর বিধ্বস্ত হয়। বিমানের উড্ডয়নের সময় ত্রুটি ছিল। প্রশিক্ষণের জন্য পাইলট ফ্লাই করার পর পরিস্থিতি তার আয়ত্তের বাইরে চলে যায়।
গত ২১ জুলাই উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বুধবার তদন্ত কমিটির প্রধান সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লে. জেনারেল এস এম কামরুল হাসানসহ একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তদন্ত প্রতেবদনটি জমা দেয়। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমীতে প্রেস ব্রিফিং করে এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ওই ঘটনায় পাইলটসহ অন্তত ৩৫ জন নিহত ও শতাধিক আহত হন। ঘটনা তদন্তে ২৭ জুলাই ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তিন মাস তদন্ত শেষে কমিটি এ রিপোর্ট দেয়।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, তদন্ত কমিটি ১৫০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে। এর মধ্যে বিশেষজ্ঞ ও ভুক্তভোগীরা আছেন। সবার সঙ্গে কথা বলে তারা ১৬৮টি তথ্য উদঘাটন করেছেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য তদন্ত কমিটি ৩৩টি সুপারিশ করেছে। প্রধান সুপারিশ হলো, জননিরাপত্তার স্বার্থে এখন থেকে বিমানবাহিনীর সব প্রাথমিক প্রশিক্ষণ ঢাকার বাইরে পরিচালিত হবে।
শফিকুল আলম বলেন, ‘দুর্ঘটনার মূল করণ ছিল পাইলটের উড্ডয়নের ত্রুটি। ট্রেনিংয়ের সময় যখন তিনি ফ্লাই করছিলেন, পরিস্থিতি তার আয়ত্তের বাইরে চলে যায়। এটা হচ্ছে কনক্লুশন।’
প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘এই স্কুল রাজউকের বিল্ডিং কোডের অনুমোদনে হয়নি। বিল্ডিংয়ে ন্যূনতম তিনটি সিঁড়ি থাকার কথা ছিল, সেখানে মাইলস্টোনের বিধ্বস্ত বিল্ডিংয়ে ছিল একটি সিঁড়ি, মাঝ বরাবর। বিশেষজ্ঞ কমিটি বলছে, তিনটি সিঁড়ি থাকলে হতাহতের সংখ্যা আরও কম হতো।’
এছাড়া অন্য সুপারিশের মধ্যে বরিশাল ও বগুড়ায় রানওয়ে সম্প্রসারণের কথা বলা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন দেওয়ার সময় এ ব্যাপারে তিনি নির্দেশনাও দিয়েছেন। রাজউকের বিল্ডিং কোড যাতে নতুন সম্প্রসারিত এলাকায় পালিত হয়, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়।
প্রেস সচিব বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানবাহিনীর বিমানের স্বল্পতা আছে। এয়ারপোর্টের আশেপাশে যেন ‘ফোম টেন্ডার’ (বিশেষ ধরনের অগ্নিনির্বাপক গাড়ি যা দাহ্য তরল পদার্থে লাগা আগুন নেভাতে ব্যবহৃত হয় থাকে) সে বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। এটা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। বিমানবন্দরে টেক অফ এবং ল্যান্ডিংয়ের জন্য বাড়ি বানানোর ক্ষেত্রে উচ্চতার একটা বিধিনিষেধ আছে। অন্যান্য দেশে দেখা গেছে, টেক অফ এবং ল্যান্ডিংয়ের পথে কিছু স্থাপনার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আছে, যেমন হাসপাতাল, স্কুল, ওয়ারহাউজ, ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আছে, এই দিকে যাতে সিভিল এভিয়েশন নজর রাখে, সে বিষয়ে বলা হয়েছে।
তিনি জানান, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে অনেক জায়গায় বিমানবন্দর আছে, সেগুলো যাতে ঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।