৩৫ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে আফগানিস্তানের কাছে হারল বাংলাদেশ
Published: 5th, November 2025 GMT
বোলিংটাও শুরুতে ঠিকঠাক হলো না। ব্যাটিংটা হলো হলো বাজে। তাতে আফগানিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কাছে পাত্তা পেল না বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। রাজশাহীতে দুই দল পাঁচ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে আফগানিস্তান ৭ উইকেটে ২৭৫ রান করে। জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশের ইনিংস গুটিয়ে যায় ১৭৩ রানে।
চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে ১০২ রানের পরাজয়কে সঙ্গী করেছে স্বাগতিকরা। শেষ ৭ উইকেট বাংলাদেশ হারায় মাত্র ৩৫ রানে। শেষ ছয় ব্যাটসম্যানের কেউ দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৭১ রান করেন কালাম। ১ ছক্কা ও ৮ চারে সাজান ইনিংসটি। এছাড়া ৪টি ছক্কা ও ৩টি চারে ৫০ বলে ৫২ রান করেন রিজান। এই দুইজনের জুটিতে আসে ৯৩ রান। এরপরই টপাটপ উইকেট হারিয়ে পরাজয় বরণ করে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের সেরা বোলার জাতিউল্লাহ শাহিন ৪০ রানে ৪ উইকেট নেন। ২৩ রানে ৩ উইকেট পেয়েছেন ওয়াহিদউল্লাহ জাদরান।
আরো পড়ুন:
দ.
বিসিবির পরিচালক আসিফ আকবরের বান্দরবান স্টেডিয়াম পরিদর্শন
এর আগে আফগানিস্তানের হয়ে সেঞ্চুরি করেন ফয়সাল। ১০৫ বলে ১৪ চার ও ২ ছক্কায় ১০০ রান করেন তিনি। এছাড়া ৬৮ রানের ইনিংস খেলেন অধিনায়ক মাহবুব খান। ৩১ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন উজাইরুল্লাহ নিয়াজাই। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে আল ফাহাদ ও আজিজুল হাকিম ২টি করে উইকেট নেন। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথমটি বগুড়ায় জিতেছিল বাংলাদেশ। একই মাঠে দ্বিতীয় ওয়ানডে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে ম্যাচ পণ্ড হয়। তৃতীয় ম্যাচ জিতে আফগানিস্তান সিরিজে সমতা ফেরাল। রাজশাহীতেই সিরিজের শেষ দুই ম্যাচ শুক্র ও রোববার।
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আফগ ন স ত ন র ন কর উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপির বিক্ষোভের মধ্যে ছড়ানো হচ্ছে বাসে–ট্রেনে আগুনের পুরোনো ভিডিও
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। ৩ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে সারা দেশের কোন আসনে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন, সেই তালিকা প্রকাশ করে দলটি।
সেই ঘোষণার পর সারা দেশের কয়েকটি স্থানে মনোনয়ন না পাওয়া নেতাদের অনুসারীরা সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে। জাতীয় সংবাদমাধ্যমেও সেই খবর এসেছে।
তবে তার মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দাবি করা হচ্ছে ‘মনোনয়নবঞ্চিতদের অনুসারীরা বাস, রেলস্টেশনে আগুন দিয়েছে’।
তবে এই সব ভিডিও যাচাই করে দেখা গেছে, তা পুরোনো এবং ভিন্ন প্রসঙ্গের ঘটনা, যা বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পর্কিত নয়।
২০২৩ সালের বাসে আগুনের ভিডিওকে নারায়ণগঞ্জে এখনকার বলে দাবিসামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ৩ ও ৪ নভেম্বর ‘নারায়ণগঞ্জের মনোনয়ন না পেয়ে জাকির খানের নেতৃত্বে বাসে আগুন দিয়েছে তাঁর অনুসারীরা। লাগারে লাগা, আগুন লাগা’ শীর্ষক ক্যাপশনে ভিডিওটি প্রকাশ করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি ব্যবহার করা ‘আমরা হারবো না’ নামের একটি ফেসবুক পেজে।
লিংক: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে
ভিডিও যাচাই করতে গিয়ে প্রথমে ভিডিওর ক্যাপশনের কি–ওয়ার্ড ‘নারায়ণগঞ্জে বাসে আগুন’ লিখে সার্চ করা হলে দেখা যায় নারায়ণগঞ্জের একাধিক আগুন লাগার ভিডিও আসে, তার মধ্যে দেখা যায় দাবি করা ভিডিওর সঙ্গে একটি ভিডিও মিলে যায়। সেই ভিডিও হলো ২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর একটি বাসে আগুন লাগার ঘটনার।
এই আগুন লাগার ঘটনা নিয়ে ওই সময় একাধিক অনলাইন পোর্টাল সংবাদ প্রকাশ করেছিল।
প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ২ নং ঢাকেশ্বরী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নাফ পরিবহনের একটি বাসে আগুন লাগে। ২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর সন্ধ্যায় দুর্বৃত্তরা সেই আগুন দেয় বলে স্থানীয়রা দাবি করেন। তবে পুলিশ বলেছিল, ইঞ্জিনের ত্রুটি থেকে এ আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘একটি বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে কেউ আগুন লাগিয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। ইঞ্জিনের কোনো ত্রুটির কারণে আগুন লাগতে পারে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
অর্থাৎ, এটি এখনকার কোনো ঘটনা নয়। নারায়ণগঞ্জে জাকির খানের নেতৃত্বে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা দাবিতে প্রচার করা ভিডিওটি মিথ্যা।
বিএনপির প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হলেও এখন পর্যন্ত ট্রেনে কিংবা বাসে আগুন ধরানোর কোনো খবর সংবাদমাধ্যমে আসেনি।
চট্টগ্রামে ট্রেনে আগুন দেওয়ার দাবিতে পুরোনো ভিডিও প্রচার‘বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে চট্টগ্রাম অলংকার স্টেশনের কাছে ট্রেনে আগুন দিল বিএনপির নেতা–কর্মীরা।’ ক্যাপশনে একটি ভিডিও ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ থেকে প্রচার করা হচ্ছে। ভিডিওটি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট নামের একটি ফেসবুক পেজে আছে, সেখান থেকেই বেশি শেয়ার হচ্ছে।
একই ভিডিও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি ব্যবহার করে ‘আমরা হারবো না’ নামের ফেসবুক পেজ থেকেও পোস্ট করা হয়। তার ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে চট্টগ্রাম অলংকার, স্টেশনের কাছে ট্রেনে আগুন দিল বিএনপির নেতা–কর্মীরা। লাগারে লাগা, আগুন লাগা, পেট্রলবোমা মারিয়া দে। দেশে আবারও বিএনপির আগুন–সন্ত্রাস শুরু।’
ভিডিওতে দেখা যায়, একটি থেমে থাকা ট্রেনের একটি বগিতে আগুন জ্বলছে। সামনে বেশ কিছু ব্যক্তি মোবাইলে ভিডিও করছেন। ভিডিওর নিচে ডান পাশে বেসরকারি সম্প্রচারিত চ্যানেল সময় টিভির লোগো দেখা যায়।
লিংক: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে
ভিডিওর সূত্র যাচাই করতে গিয়ে ইনভিড টুলসে ভিডিওটি নিয়ে কি–ফ্রেমে ভাগ করে গুগল লেন্সে সার্চ করা হয়। সার্চে সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ৫ জানুয়ারি ‘এবার গোলাপবাগে ট্রেনে আগুন নাশকতাকারীদের, দগ্ধ অনেকে’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এখন ছড়ানো ভিডিওটির বেশ কিছু অংশের সঙ্গে দাবি করা ভিডিওটির দৃশ্যের সাদৃশ্য রয়েছে।
আলোচিত ঘটনার কি–ওয়ার্ড সার্চ করে প্রথম আলোসহ একাধিক জাতীয় গণমাধ্যমের এই বিষয় নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
প্রথম আলোর প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত বছরের ৫ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেওয়া হয়। যশোরের বেনাপোল থেকে ট্রেনটি ঢাকায় আসছিল। আগুনে ট্রেনটির তিনটি কোচ পুড়ে যায়। মৃত্যু হয় চারজনের। দগ্ধ হন বেশ কয়েকজন।
অর্থাৎ, বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে চট্টগ্রামে অলংকার স্টেশনের ট্রেনে আগুন দেওয়ার দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি আসলে এক বছর আগে রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার। আলোচিত ভিডিওর ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং ঘটনাটি চট্টগ্রামে ঘটেনি।
চট্টগ্রামের বলে রূপগঞ্জে বাসে আগুনের ২০২৩ সালের ভিডিও প্রচার৩ নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দেখা যায় সোহাগ পরিবহন নামে একটি বাস কোম্পানির বাস পুড়ছে।
ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সীতাকুণ্ড এলাকার বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত আসলাম চৌধুরীর সমর্থকেরা। সোহাগ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দিয়েছে…দেশ আবারও আগুন–সন্ত্রাস ফিরে আসল।’
লিংক: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে
ভিডিওটি ইনভিডে নিয়ে কি ফ্রেমে ভাগ করে গুগল লেন্সে সার্চ করে দেখা যায়, যমুনা ইউটিউব প্লাস তাদের ইউটিউব চ্যানেল ‘নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আগুনে পুড়ে গেছে একটি বাস’ একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর আপলোড করা হয়।
ভিডিও প্রতিবেদনটির ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়, ‘ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাচ্ছিল সোহাগ পরিবহনের গাড়িটি। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রূপগঞ্জে পৌঁছালে আগুন ধরে যায় গাড়িতে। খবর পেয়ে ডেমরা ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট স্থানীয়দের সহায়তায় প্রায় আধা ঘণ্টা চেষ্টা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।’
দাবি করা ভিডিওর সঙ্গে ২০২৩ সালের প্রকাশিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এ ছাড়া কি ওয়ার্ড ‘সোহাগ পরিবহনে আগুন’ লিখে সার্চ করা হলে দেশের জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদনও পাওয়া যায়।
চট্টগ্রাম-৪ আসনে আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেওয়ায় ৩ নভেম্বর রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং রেলপথ অবরোধ করেন তাঁর অনুসারী নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলা বিএনপির চার নেতাকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি।
প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনে বাসে আগুন দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। সুতরাং আসলাম চৌধুরীর সমর্থকেরা বাসে আগুন দিয়েছেন দাবিতে প্রচার করা ভিডিওটি ২০২৩ সালের।
সিলেটের ২০২২ সালের ভিডিও প্রচারবাসে আগুন দেওয়ার আরেকটি ভিডিও প্রচার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, ‘সিলেটে মনোনয়ন না পেয়ে বিএনপির প্রার্থীর অনুসারীরা বাংলাদেশের সম্পদ বিআরটিসি বাসে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে.... আরে ভাই এটা মনোনয়ন–বাণিজ্য চলতেছে, নির্বাচন তো হচ্ছে না, দেশের সম্পদ কেন নষ্ট করছে...।’
ভিডিওটি যাচাইয়ে ইনভিড টুলসে নিয়ে কি–ফ্রেমে ভাগ করে সার্চ করে ইউটিউবে তিনটি ভিডিও পাওয়া যায়। এ বিষয়ে Shebul ahmed Raju নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘সিলেটের মালনীছড়া রাস্তায় বিআরটিসি বাসে আগুন, এই শিরোনামে ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি ভিডিওর সঙ্গে আলোচিত ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। একই বিষয় নিয়ে অপর দুটি ভিডিও ১৪ সেপ্টেম্বর আপলোড করা হয়।
আপলোডকৃত অপর দুটি ভিডিওর বিবরণী থেকে জানা যায়, সিলেট নগরীর মালনীছড়ায় বেড়াতে যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বহনকারী বিআরটিসি বাসে হঠাৎ করে আগুন লেগে যায়। তবে এতে কারও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে আরও যাচাই করার জন্য ‘সিলেটে বাসে আগুন’, ‘সিলেটে বিআরটিসি বাসে আগুন’ এই দুটি কি–ওয়ার্ড সার্চ করা হলেও ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে জাতীয় প্রথম আলোসহ একাধিক সাংবাদমাধ্যমে এই ঘটনায় সংবাদ পাওয়া যায়।
সুতরাং বাসে আগুন লাগার ভিডিওর সঙ্গে বিএনপির বর্তমান বিক্ষোভের কোনো সম্পর্ক নেই।