কানাডায় পোস্টগ্র্যাজুয়েশন ওয়ার্ক পারমিট, যে ১০ ভুলে বাতিল হয় আবেদন
Published: 6th, November 2025 GMT
কানাডায় পড়াশোনা শেষে সেখানে কাজ করার লক্ষ্য থাকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের। তবে পোস্টগ্র্যাজুয়েশন ওয়ার্ক পারমিট (পিজিডব্লিউপি–PGWP) আবেদনে ছোটখাটো ভুলও বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। কানাডার অভিবাসন, শরণার্থী ও নাগরিকত্ববিষয়ক সংস্থা (আইআরসিসি) সম্প্রতি কিছু নিয়ম পরিবর্তন করায় আবেদনপ্রক্রিয়া আরও কঠিন হয়েছে।
পিজিডব্লিউপি হলো একটি ওপেন ওয়ার্ক পারমিট, যা কানাডিয়ান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের কানাডার যেকোনো নিয়োগদাতার অধীনে কাজ করার সুযোগ দেয়। পড়াশোনার সময়কাল অনুযায়ী এর মেয়াদ সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত হতে পারে। এমন দশটি কারণ তুলে ধরা হলো, যেগুলোর কারণে পিজিডব্লিউপি আবেদন বাতিল হতে পারে—
১.অযোগ্য প্রোগ্রাম নির্বাচন
সব প্রোগ্রাম পিজিডব্লিউপির আওতায় পড়ে না। ২০২৪ সাল থেকে শুধু আইআরসিসি অনুমোদিত Classification of Instructional Programs (CIP) তালিকাভুক্ত প্রোগ্রামগুলোই যোগ্য বলে গণ্য হবে। সম্প্রতি ১১৯টি নতুন বিষয় যুক্ত হলেও ১৭৮টি প্রোগ্রাম বাদ দেওয়া হয়েছে, যা কার্যকর হবে ২০২৬ সালের শুরু থেকে।
বিশেষ করে ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট কোর্সের শিক্ষার্থীদের তাদের প্রোগ্রামের সিআইপি কোড নিশ্চিত করতে হবে। মাঝপথে প্রোগ্রাম পরিবর্তন করলে নতুন কোড অনুযায়ী যোগ্যতা পুনরায় যাচাই করতে হবে।
২. ফুলটাইম স্ট্যাটাস বজায় না রাখাপিজিডব্লিউপির জন্য শিক্ষার্থীকে পুরো পড়াশোনার সময় ফুলটাইম এনরোলমেন্ট বজায় রাখতে হয়। শুধু শেষ সেমিস্টারে খণ্ডকালীন (পার্টটাইম) অনুমোদিত। অন্য সময় পার্টটাইম হলে আবেদন অযোগ্য হতে পারে।
৩. অনুমোদন ছাড়া কাজ করাশিক্ষা পারমিটে নির্ধারিত শর্ত মেনে কাজ করতে হয়। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা ক্লাস চলাকালে সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা অফ-ক্যাম্পাসে কাজ করতে পারেন। অনুমোদন ছাড়া কাজ করলে স্টুডেন্ট স্ট্যাটাস বাতিল হতে পারে এবং পিজিডব্লিউপি আবেদন প্রত্যাখ্যান হতে পারে।
৪. কানাডার বাইরে থেকে পড়াশোনা শেষ করাকোভিড সময়ে অনলাইনে পড়াশোনার অংশকে পিজিডব্লিউপি যোগ্যতার মধ্যে ধরা হতো, কিন্তু ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের পর শুরু হওয়া প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে এই নিয়ম আর প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ এখন পড়াশোনা কানাডায় উপস্থিত থেকে সম্পন্ন করতে হবে।
৫. পরীক্ষার শর্ত পূরণ না করা২০২৪ সালের ১ নভেম্বর থেকে ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ন্যূনতম মানদণ্ড:
—কলেজ গ্র্যাজুয়েটদের জন্য: সিএলবি–৫ (CLB 5)
—ব্যাচেলর, মাস্টার্স বা পিএইচডি গ্র্যাজুয়েটদের জন্য: সিএলবি-৭ (CLB–7)
পরীক্ষার ফলাফল দুই বছরের বেশি পুরোনো হলে গ্রহণযোগ্য হবে না।
আরও পড়ুনকিউএস এশিয়া র্যাঙ্কিং: দেশসেরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সেরা ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই বাংলাদেশের একটিও১৯ ঘণ্টা আগেপিজিডব্লিউপি হলো একটি ওপেন ওয়ার্ক পারমিট, যা কানাডিয়ান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের কানাডার যেকোনো নিয়োগদাতার অধীনে কাজ করার সুযোগ দেয়।উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা
লরা উলভার্ট- দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। বয়স মাত্র ছাব্বিশ, কিন্তু মনের দৃঢ়তায় যেন পাহাড়। এবারের ২০২৫ নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন প্রোটিয়া আশার একমাত্র আলোকবর্তিকা। নিজের একক নৈপুণ্যে, এক অসম্ভব সাহসিকতায় দলকে টেনে তুলেছিলেন ফাইনালের মঞ্চে।
সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলে ফেলেছিলেন ১৬৯ রানের অনবদ্য ইনিংস। যেন একক নাটকের একমাত্র নায়িকা তিনি। আর ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন হিমালয়ের মতো দৃঢ় হয়ে। একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন অনবদ্যভাবে। শতরান ছুঁয়ে যখন আকাশে ছুড়লেন ব্যাট, তখন মনে হচ্ছিল, স্বপ্নের ট্রফি যেন হাতের নাগালেই। কিন্তু ক্রিকেটের নির্মম বাস্তবতা! উলভার্ট যখন সাজঘরে ফিরলেন, ঠিক তখনই প্রোটিয়া শিবিরে নেমে এল নীরবতা। জয় হাতছাড়া হলো নিঃশ্বাস দূরত্বে।
আরো পড়ুন:
আরব আমিরাতকে ৪৯ রানে গুঁড়িয়ে ইতিহাস গড়ল যুক্তরাষ্ট্র
মিতালিকে ছাড়িয়ে ইতিহাস গড়লেন মান্ধানা
চোখের কোণে জলের কণা তখনও ঝলমল করছিল। সেটা ঘামের ছিল, নাকি অপূর্ণতার অশ্রু, তা কেউ জানে না। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল, হৃদয়ের গভীরে আগুন জ্বলছে। একটা স্বপ্নের দগ্ধ ছাই হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা।
তবুও এই ব্যর্থতার মাঝেই উলভার্টের জয় আছে। বিশ্বকাপে তিন ফাইনাল, টানা তিনবার! এবং প্রতিবারই দলের একমাত্র ভরসা ছিলেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে করেছেন ৯ ম্যাচে ৫৭১ রান, গড়ে ৭১.৩৭। যা নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ। এর আগে অ্যালিসা হিলির ৫০৯ রান ছিল শীর্ষে।
শুরুটা ছিল নিস্তরঙ্গ- প্রথম ম্যাচে মাত্র ৫, পরেরটিতে ১৪। কিন্তু ধীরে ধীরে আগুন জ্বলে উঠল তার ব্যাটে। ভারতের বিপক্ষে ৭০, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৬০, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯০, আর সেমিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৯। প্রতিটি ইনিংস যেন নিজের সীমাকে ছাপিয়ে যাওয়া একেকটি যাত্রা।
তবে উলভার্টের কীর্তি শুধু এই বিশ্বকাপেই নয়। ২০২৩ ও ২০২৪ দুই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। প্রতিবারই দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে। কিন্তু ভাগ্য যেন নিষ্ঠুরভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তার দিক থেকে। তিনটি ফাইনাল, তিনটি পরাজয়।
তবু লরার গল্পটা হারের নয়- এ এক অনমনীয়তার গল্প, এক নিঃসঙ্গ অভিযাত্রার গল্প। যেমন শেরপা অক্সিজেনহীন উচ্চতায় পৌঁছে দেয় অন্যদের। কিন্তু নিজে ফিরে আসে নীরবে, তেমনি উলভার্টও দলের স্বপ্নগুলো কাঁধে তুলে বয়ে নিয়েছেন, একা।
ফাইনাল শেষে ভারতীয় খেলোয়াড়রাও যখন এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন, তখন বোঝা গেল; এই হার, এই অশ্রু, এই নীরবতা- সবই সম্মানের প্রতীক।
রবিবার ফাইনাল শেষে লরা বলেছেন অনেক কথা। সেখানে হাতাশার কিছু পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেছে প্রেরণা ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস।
“আমি মনে করি, ২০২৩ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের (নিউল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত) পর থেকেই আমাদের জন্য অনেক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল। সেই সময় থেকেই ঘরোয়া পর্যায়ে কেন্দ্রীয় চুক্তির ব্যবস্থা চালু হয়। আমাদের দলের গভীরতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটা ছিল এক বিশাল পদক্ষেপ।”
“এরপরের (২০২৪ সালের) বিশ্বকাপটা আমাদের দলের নামটা বিশ্ব ক্রিকেটে আরও বড় করে তুলেছে, আমার তাই মনে হয়। এখন আমরা এমন একটি দল, যারা নিয়মিত ফাইনালে পৌঁছাচ্ছে। যেখানে আগে এটা একবারের সাফল্য বলেই ধরা হতো।”
“টানা তিনবার ফাইনালে উঠতে পারাটা সত্যিই গর্বের বিষয়। এটা প্রমাণ করে আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটে এবং দলীয় কাঠামোয় সঠিক দিকেই এগোচ্ছি। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের এই ফলেই আমরা এখানে পৌঁছেছি। আশা করি, আমরা এমন আরও ফাইনাল খেলতে থাকব… আর একদিন, হ্যাঁ, একদিন আমরা অবশ্যই একটা জিতব।”
টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স নিয়ে উলভার্ট বলেন, “আমার মনে হয়, আমাদের এই আসরটা অসাধারণ কেটেছে। ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছানোই একটা বড় সাফল্য। আমরা পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ ক্রিকেট খেলেছি। এই বিষয়টা নিয়েই আমি সবচেয়ে বেশি গর্বিত।”
“একপর্যায়ে আমরা টানা পাঁচটা ম্যাচ জিতেছিলাম। যা আমাদের দলের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। দুই দলের মধ্যকার সিরিজগুলোতে আমরা সবসময় এই ধারাবাহিকতা পাই না। তাই বড় মঞ্চে, বড় টুর্নামেন্টে এমন পারফরম্যান্স দিতে পারাটা সত্যিই গর্বের। আমরা প্রমাণ করেছি, বড় আসরে দক্ষিণ আফ্রিকাও এখন বড় দল।”
সত্যিই তাই। লরার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা এখন বড় দল। হয়তো একদিন, কোনো এক প্রভাতে, লরা উলভার্ট সেই অধরা ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখবেন। কিন্তু আজকের দিনে, তিনি রয়েছেন বিশ্বকাপের হিমালয়ের চূড়ায়, এক নিঃসঙ্গ শেরপা হয়ে। যিনি নিজের কীর্তিতে চূড়ায় উঠেছেন।
ঢাকা/আমিনুল